দুষ্টুমির দিনগুলোয়
মা হাত থেকে কাঁচের গুলিগুলো ছিনিয়ে নিয়ে ফেলে দিলেন ইঁদারার ভিতর । জানি এরপর পিঠে কাঠের স্কেল ভাঙবে । নয়তো বেদম চড়চাপড় জুটবে কপালে । মায়ের হাত ছাড়িয়ে দুর্দারিয়ে সোজা নাগালের বাইরে । পিছনে তাড়া করছে মায়ের শাসানি, ‘একবার
ধরতে পারলে......বাড়ি তে ঢুকবি না ? তখন কে
বাঁচাবে তোকে ?’
মা শুধু জানতেন না । একটা কাঁচেরগুলি জুটিয়ে ফেলতে পারলেই একশোটা জিতে নেবার ক্ষমতা আমার আছে । জানতেন না বলে পাতকুয়োর পেটে কত যে কাচেরগুলি জমা পড়েছে তার হিসেব......এক একদিন খুব ইচ্ছে হতো, যখনই ওদের
হাঁক শুনতাম ‘পাতকুয়ো পরিষ্কার করাবেন-ন-ন-ন...’, ডেকে এনে কাঁচেরগুলিগুলো তুলিয়ে নিই পাতকুয়ো থেকে । না
পেরে অপেক্ষা করতাম বন্ধুরা কখন গুলি খেলা সাঙ্গ করে বাড়ি ফিরবে । ওরা চলে যাবার পর খেলার জায়গাটা তন্নতন্ন করে খুঁজতাম । কেউ যদি ভুল করে একটা কাঁচেরগুলি ফেলে রেখে.........
দুপুরে মা ভাত ঘুম দিচ্ছেন । ভাইবোনেরা গ্যাদগ্যাদে ঘামে জড়াজড়ি করে......তখনো ইলেকট্রিক আসেনি আমাদের বাড়িতে ।
গরমে ছটফট করতে করতে খুব সন্তর্পণে ঘরের দরজা খুলে বারান্দায় এসে
দাঁড়ালাম । অমনি চোখে পড়লো একটা চাঁদিয়াল ভোকাট্টা হয়ে
হেলেদুলে ভেসে চলেছে । পিছনে ছুটছে আমারই কিছু খেলার সাথী । দেখেই উড়ান দিলাম । অবশেষে কাটা ঘুড়ির সুতো ধরতে পেরে গর্বে বুক ফুলিয়ে মুখে বিজয়ের হাসি ঝুলিয়ে বাড়িমুখো হয়ে বাড়ান্দায় পা রাখতেই একেবারে মায়ের সামনে ! নিমেষেই
ঘুড়ি এবং আমার দু-চারগাছা চুলের কোনো অস্তিত্বই আর রইলো না !
আজ রাত্রের ঘটনা । ছোটবোন শীলা খুব মন দিয়ে পড়াশোনা করছে । কী কুবুদ্ধি হলো কে জানে । চুপিসারে পিছনে এসে দাঁড়িয়ে কাগজের ঠোঙায় হাওয়া ভরে ‘ফটাস্’ । শীলা তাতেই হাউমাউ কান্নায় ভেসে ভেসে সোজা মায়ের কাছে । এরপর ওই ‘ফটাস্’ শব্দটা ‘চটাস্’ এ বদলে
যেতে সময় নিলো না । মারধোর খেয়ে গলা ছেড়ে কাঁদতে কাঁদতে
গালে হাত দিয়ে ভাবছি, ‘একটা ফটাস্’এর বদলে এতোগুলো ‘চটাস্’ !
কান্নাটা বোধহয় একটু জোরেই হয়ে গিয়েছিলো । সহসা চমক ভাঙে গিন্নীর কথায় – ওকি ! ঘুমিয়ে
ঘুমিয়ে গোঙাচ্ছো কেন ! কোথায় কষ্ট হচ্ছে তোমার ?
বুঝলাম অফিস থেকে ফিরে এসে সংবাদপত্র পড়তে পড়তে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি জানতে পারিনি । সংবাদপত্রের খোলা পাতায় ছাপা হয়ে আছে ছবি সমেত ঘুড়ি ওড়ানোর উৎসবের বিস্তারিত সংবাদ ।