গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

সিদ্ধার্থ সিংহ

ঘুমকাতুরে



শময়িতার সন্দেহটা এখন আর সন্দেহের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। সে বুঝে গেছে, তার কপাল পুড়তে চলেছে। না-হলে যে শ্রয়ন সন্ধে গড়াবার সঙ্গে সঙ্গে ঘুমে ঢলে পড়ত। বিছানাটা পর্যন্ত ঝাড়তে দিত না। একটু উঠতে বললে কোন ঘরে গিয়ে যে শুয়ে পড়ত বোঝা যেত না। খুঁজতে খুঁজতে ওর দম বেরিয়ে যেত। সেই শ্রয়নই কিনা এখন রাত এগারোটাতেও বাড়ি ঢোকে না! কোথায় যায়! নিশ্চয়ই কোনও মেয়ের পাল্লায় পড়েছে!
নাকি আমি যাতে ওর ঘুমের ব্যাঘাত না ঘটাই, সে জন্য অফিস থেকে চুপিচুপি বাড়ি ঢুকে অন্য কোনও ঘরে গিয়ে একচোট ঘুমিয়ে নেয়! তার পর পেটের মধ্যে যখন ছুঁচোয় ডন মারে, তখন আর থাকতে না পেরে খাওয়ার জন্য জামাটামা গুঁজে বুটটুট পরে এমন ভাবে ঘরে ঢোকে যেন এক্ষুনি অফিস থেকে ফিরল!
কিন্তু না। সেটাও যে না, তাও প্রমাণ হয়ে গেল।  দিন ধরে তন্ন তন্ন করে গোটা বাড়ি খুঁজেও সে তার স্বামীকে কোত্থাও পায়নি। তা হলে কি এই বাড়ির মধ্যে এমন ঘরও আছে, যার হদিশ সে জানে না!
হতেই পারে। এখন অবস্থা অনেকটা পড়ে গেলেও এক সময় তো সবই ছিল। লোক-লস্কর। লেঠেল-বাহিনী। এমনকী বিশ্বস্ত গুপ্তচরও। ছিল প্রচুর জমিজমাও। ওদের জমিদারি নাকি বহু দূর অবধি বিস্তৃত ছিল। এখন অবশ্য সেই অর্থে বলতে গেলে কিছুই নেই। থাকার মধ্যে শুধু আছে ওর বাপ-ঠাকুর্দার তৈরি করে যাওয়া এই বাড়ি। কেন যে এত বড় বাড়ি বানিয়েছিলেন কে জানে! এক একটা ঘর তিন তলার সমান উঁচু উঁচু। কড়িবরগার ছাদ। সেখান থেকে লম্বা লম্বা রড দিয়ে আদ্যিকালের সিলিং ফ্যান ঝোলানো। চালালেই ঘটাং ঘটাং আওয়াজ হয়। যত না হাওয়া লাগে, তার চেয়ে বিরক্ত লাগে বেশি। ওগুলো খুলে ফেলে নতুন ফ্যান লাগানোর কথা বলতে গেলেই শ্রয়ন একেবারে রে রে করে ওঠে। বলে, না না না। ওগুলো খোলা যাবে না। ওগুলো আমাদের পূর্বপুরুষের স্মৃতি।
গোটা বাড়িতে লোক বলতে সাকুল্যে তিন জন। সে, তার স্বামী আর তাদের একমাত্র ছেলে। অথচ দোতলাতেই বিশাল বিশাল এগারোখানা ঘর। ঘর তো নয়, এক-একটা ফুটবল খেলার মাঠ। কেউ হুট করে ঢুকলে ডবল বেডের খাটটাকেও তার মনে হবে ঘরের কোণে যেন একটা ছোট্ট জলচৌকি পড়ে আছে।
ছাড়া, দিকে দিকে ছোট ছোট ঘর তো আছেই। কিছু তালা দেওয়া, কিছু হাট করে খোলা। এখান সেখান থেকে নেমে গেছে চোরাগোপ্তা সরু সরু সিঁড়ি। উপরেও উঠে গেছে বেশ কয়েকটা। বাইরে থেকেও আছে খানকয়েক লোহার ঘোরানো সিঁড়ি। কোনওটা দোতলা, কোনওটা তিনতলা অবধি। সেগুলি আর ব্যবহার হয় না। বেশির ভাগ পা-দানিই উধাও হয়ে গেছে। কারা যে নিয়ে গেছে!
বিয়ের পর এতগুলো বছর কেটে গেলেও বাড়ির সব টা ঘর এখনও তার খুলে দেখা হয়নি। নীচে টা ঘর আছে কে জানে! উপরের কয়েকটা ঘর তো পায়রাদের দখলে চলে গেছে। তাদের বকম বকমে প্রথম দিকে ওর ঘুমই হত না। এখন অবশ্য অভ্যাস হয়ে গেছে।
কত লোক এসে ওদের ধরে। থাকার জন্য তো বটেই, কেউ কেউ বন্ধ ঘরগুলো গো-ডাউন হিসেবেও ভাড়া নিতে চায়। তার উপরে আছে নতুন নতুন গজিয়ে ওঠা প্রমোটারদের নানা প্রলোভন। শুধু সে ভাবে চাপ দিতে পারে না শময়িতার মামাতো ভাইয়ের জন্য।
শময়িতা বহু বার তার স্বামীকে বলেছে, নীচের ঘরগুলো তো খোলাও হয় না। পড়ে থেকে থেকে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পয়-পরিষ্কার করে ভাড়া দিয়ে দাও না টাকার টাকাও আসবে। ঘরগুলোতেও আলো-বাতাস ঢুকবে।
কিন্তু শ্রয়নের সেই এক কথানা। আমাদের বংশের কেউ কখনও বাড়িঘর ভাড়া দেয়নি। আমিও দেবো না। না খেতে পেয়ে মরে গেলেও দেবো না। এটা আমাদের ঐতিহ্য।
শময়িতা বহু বার চেষ্টা করেও ওকে বোঝাতে পারেনি, দিন বদলে গেছে। সময়ও পাল্টে গেছে। সময়ের সঙ্গে পা মিলিয়ে চলতে না পারলেই পিছিয়ে প়ড়বে। বিপদে পড়বে। তোমাদের খুড়তুতো ভাইদের দেখো
ওদের খুড়তুতো ভাইদের বাড়িটাও ওদের মতোই বিশাল। ওদের বাড়ির লাগোয়াই। খুড়তুতোরা চার ভাই। কেউই কিছু করে না। ওদের গায়ের রং এত ফর্সা যে, যে-পাড়ার লোকেরা দুপুরুষ আগেও ওদের দিকে চোখ তুলে তাকাবার সাহস পেত না, ওদের প্রজা ছিল, অবস্থা পড়ে গেছে দেখে তারাও ওদের পিছনে লাগে। দেখলেই, সাদা পাটালি বলে খেপায়।
আর ওদের বাবা? মানে শ্রয়নের কাকা? প্রত্যেক দিন সকালে বাজার যাওয়ার আগে ব্যবহারে-ব্যবহারে শতচ্ছিন্ন ময়লা একটা ফর্দ পাড়ারই একটা মুদিখানা দোকানে জমা দিয়ে যান। ফেরার সময় সেই ফর্দ মিলিয়ে মুদিওয়ালার রেডি করে রাখা প্রতিদিনকার তেল, নুন, মশলা নিয়ে বাড়ি আসেন।
শ্রয়ন নাকি একবার তার কাকাকে জি়জ্ঞেস করেছিল, এক মাসের না হোক, অন্তত সারা সপ্তাহেরটা তো একসঙ্গে কিনে রাখতে পারেন।
উনি বলেছিলেন, সে তো পারিই। কিন্তু কাল যদি মরে যাই?
কাকার কথা শুনে শ্রয়ন হয়ে গিয়েছিল। শ্রয়নদের অবস্থা অবশ্য তার কাকাদের মতো নয়। কাকারা কোনও কিছুই ধরে রাখতে পারেননি। বহু আগেই সব বেচেবুচে দিয়েছেন। এখনও এই বাড়িটা ছাড়াও শ্রয়নদের আরও একটা বাড়ি আছে। দেশের বাড়ি। সেই বাড়িটা আরও বড়। সাত ভূতে খাচ্ছে। শময়িতা ওই বাড়ির কথা জানার পরে মাসে মাসে অন্তত একবার কোনও রকমে ঠেলেঠুলে শ্রয়নকে পাঠাত। যারা ওদের জমি ভাগে চাষ করে তাদের কাছ থেকে টাকা তুলে আনার জন্য। কিন্তু যেহেতু জমিগুলো একলপ্তে নয়, ভিন্ন ভিন্ন লোকে ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় চাষ করে এবং এখন নতুন নতুন নিয়মকানুন যা হচ্ছে, আর যে ভাবে রন্ধ্রে রন্ধ্রে রাজনীতি ঢুকে পড়ছে, তাতে জমিতে থেকেই জমি রক্ষা করা যাচ্ছে না। আর তারা তো গ্রাম থেকে পাঁচশো মাইল দূরে বসে আছে। সুতরাং ছড়ানো-ছেটানো চাষের জমিগুলো সব দখল হয়ে যাবার জোগাড়়।
শময়িতা কত বার বলেছে, জমি কখনও কারও বাপের হয় না। দাপের। আমরা ওখানে থাকিই না, তো দাপট দেখাব কী! তা ছাড়া, আমরা তো আর ওখানে থাকতে যাব না। শুধু শুধু অত জমি ওখানে ফেলে রেখে কী হবে? একদিন দেখবে সব দখল হয়ে গেছে। বার আস্তে আস্তে জমিজমাগুলো বিক্রি করার চেষ্টা করো। দরকার হলে টা দিন ওখানে গিয়ে থাকো। কিন্তু কে শোনে কার কথা! ঘুম পেলে আর কিচ্ছু চায় না।
এই ঘুমের জন্যই শ্রয়ন কোনও দিন চাকরি বাকরি করেনি। খুড়তুতো ভাইদের মতোই পূর্বপুরুষের রেখে যাওয়া টাকাতেই বসে বসে খেত। বিয়ের পর শময়িতাই বলেছিল, জানো তো, রাজার ধনও ঝিনুক মাপতে ফুরিয়ে যায়। শুধু পড়ে পড়ে ঘুমোলে চলবে? এত ভাল রেজাল্ট তোমার, কিছু একটা করো। না। তোমাকে টাকার জন্য চাকরি করতে বলছি না। আসলে, কাজের মধ্যে থাকলে তোমার মনটাও ভাল থাকবে, তাই
সে হ্যাঁ- বলেনি, না- বলেনি। তার পর এমপ্লয়মেন্ট গ্রেজেট দেখে শময়িতাই একটা চাকরির সন্ধান দিয়েছিল। ওকে দিয়ে শময়িতাই দরখাস্ত লিখিয়েছিল। এবং শময়িতা নিজে গিয়েই সেটা পোস্ট করে এসেছিল। ইন্টারভিউয়ের দিন শময়িতাই সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিল। এবং ইন্টারভিউয়ে ঢোকার ঠিক আগের মুহূর্তে শ্রয়নের কানের কাছে মুখ নিয়ে বলেছিল, তুমি যদি খুব ভাল করে ইন্টারভিউ দাও, তা হলে টানা তিন দিন তোমার ছুটি। যত ইচ্ছে ঘুমিয়ো। আমি তোমাকে একবারও ডাকব না।
ওই কথা শুনে চকচক করে উঠেছিল শ্রয়নের চোখ। সত্যি?
শময়িতা বলেছিল, সত্যি। আর তাতেই কাজ হয়েছিল। কিন্তু এই ঘুমের জন্য কম দিন অফিস কামাই করেছে? গেলেও, অফিসে বসে বসেই ঘুমোত। সেই জন্য ওর সহকর্মীরা পর্যন্ত ওর নাম দিয়ে দিয়েছিলঘুমকাতুরে। সেই বদনাম ঘোচানোর জন্যই শময়িতা রোজ সকালে তাকে জোর করে ঘুম থেকে তুলে দিত।
দিন আগে হঠাৎ কী হল, শ্রয়ন অফিস থেকে ফিরেই চা খেতে খেতে শময়িতাকে বলল, জানো তো, আমাদের অফিসের কলিঙ্গদা, যে সব থেকে বেশি সিগারেট খেত, একেবারে চেনস্মোকার, গত কাল থেকে সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন।
শময়িতা জানতে চাইল, কেন?
কেন আবার? ওর বউ খেতে বারণ করেছে, তাই।
বাঃ, তোমাদের কলিঙ্গদাকে তো বেশ ভাল বলতে হবে।
কেন? আমি ভাল না?
তোমাকে যে ভাল বলব, তুমি কি তোমার বউয়ের কথা শোনো?
শুনি না বুঝি? এক বড় অপবাদ? ঠিক আছে, কাল থেকে তুমি যেটা বারণ করো, আমি আর সেটা কিছুতেই কবর না।
কী?
পড়ে পড়ে আর ঘুমোব না।
তুমি? ঘুমোবে না? তা হলেই হয়েছিল।
এই তো? চ্যালে়ঞ্জ। কাল থেকে তোমাকে আর ডাকতে হবে না। আমি নিজে তেকেই সক্কালবেলায় উঠে যাব। দেখে নিয়ো।
শময়িতা একটু হেসে বলল, তার সঙ্গে তা হলে এটাও দেখতে হবে, সূর্য পশ্চিম দিকে উঠেছে কি না
সুর্যের কথা আমি বলতে পারব না। আমি আমার কথা বলছি।
ঠিক আছে, দেখা যাবে।
সত্যি সত্যিই শ্রয়ন যে এটা করতে পারবে শময়িতা তা কল্পনাও করতে পারেনি। হ্যাঁ, এখন দিন ধরে ওকে আর ডাকতে হচ্ছে না। শ্রয়ন নিজে থেকেই সকাল সকাল উঠে পড়ছে। অফিসেও বেরিয়ে পড়ছে ঠিক সময়ে। এই সব দেখে শময়িতার মনে হঠাৎ খটকা লাগল, আচ্ছা, অফিসে গিয়ে আবার ঘুমোচ্ছে না তো! একটা ফোন করে দেখব! মনে হতেই মোবাইলটা হাতে তুলে নিয়েছিল শময়িতা। তার পর বেশ কয়েক বার পর পর চেষ্টা করে গেল শ্রয়নকে মোবাইলে ধরতে। কিন্তু না। ওর ফোনে নট রিচেবল। অগত্যা শময়িতা ফোন করল, অফিসের ল্যান্ড নম্বরে। দুটো রিং হতে না-হতেই প্রান্ত থেকে ভেসে এল, হ্যালো?
শ্রয়ন আছে?
না। তো আজ আসেনি।
আসেনি?
না। তো দু’-তিন দিন ধরে আসছে না।
মানে?
আপনি কে বলছেন?
কথাটা শুনে শময়িতা বলতে যাচ্ছিল, আমি ওর ওয়াইফ বলছি। কিন্তু না। আর একটা কথাও বলল না। সঙ্গে সঙ্গে লাইন কেটে দিল।
রকম উত্তর শোনার জন্য শময়িতা একদম প্রস্তুত ছিল না। ভাবতে লাগল, দু’-তিন দিন ধরে অফিসে যাচ্ছে না! কিন্তু রোজই তো খেয়েদেয়ে অফিসের নাম করে বেরোচ্ছে। তা হলে যাচ্ছে কোথায়! তবে কী... হ্যাঁ, হতেই পারে। রাইয়ের হাজব্যান্ড হীমবন্তদা তো স্কুল টিচার। যথেষ্ট সচ্ছল অবস্থা। তবু বউ-ছেলেমেয়েকে আরও একটু ভাল রাখার জন্য একটা কোচিং সেন্টার খুলেছিলেন। পাশের পাড়ায় একটা গ্যারেজ ঘর ভাড়াও নিয়েছিলেন। শুধু সকালেই নয়, বিকেলেও দফায় দফায় ইলেভেন-টুয়েলভের ছেলেমেয়েরা সেখানে টিউশন নিতে যেত। শনি-রবিবারও বাদ যেত না।
সব ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু তার মধ্যেই ঘটে গেল একটা অঘটন। ওই পাড়ার ছেলেরা হঠাৎ একদিন তাঁকে শুধু বেধড়ক পেটালই না, মারতে মারতে প্রায় আধমড়া করে দিল। এবং বলে দিল, অঞ্চলের ত্রিসীমানার মধ্যে যেন আর না দেখি...
রাই অবাক। তার স্বামীর মতো স্বামী হয় না। একেবারে মাটির মানুষ। কোনও সাতেপাঁচে থাকেন না। আর তাঁকে কিনা ভাবে মারধড়? পা়ড়ার দুজনকে নিয়ে দৌড়ে গিয়েছিল সে। থানায় গিয়ে শুনেছিল তাঁর স্বামীর কেলোরকীর্তির কথা। লাস্ট ব্যাচ চলে যাওয়ার পরেও, অন্যদের থেকে পিছিয়ে পড়া সদ্য কোচিংয়ে আসা ক্লাস ইলেভেনের একটি মেয়েকে উনি স্পেশাল ক্লাস নেওয়ার জন্য থাকতে বলেছিলেন। কয়েকটি অঙ্ক দেখিয়ে দেওয়ার পরেই উনি নাকি আচমকা মেয়েটিকে জাপটে ধরে পাগলের মতো অসভ্যতা শুরু করে দেন।
প্রথমটায় হকচকিয়ে গেলেও পর মুহূর্তেই মেয়েটি চিৎকার করে ওঠে। আশপাশের লোক জড়ো হয়ে যায়। তারা দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে দেখে মাস্টারমশাই ঘরের কোণে সিঁটিয়ে আছেন আর মেয়েটি ভয়ে-আতঙ্কে হাউহাউ করে কাঁদছে। খবর পেয়ে দৌড়ে আসে গলির মুখে ক্যারামবোর্ড খেলতে থাকা পাড়ার ছেলেরা। তাদের বুঝতে অসুবিধে হয় না কী ঘটেছে। ওরা তার স্বামীকে কলার ধরে টেনে হ্যাঁচড়াতে হ্যাঁচড়াতে ঘর থেকে বার করে এনে রাস্তার উপরে ফেলে এলোপাথাড়ি কিল-চড়়-লাথি মারতে থাকে।
মার সহ্য করতে না পেরে অজ্ঞান হয়ে যান তিনি। খবর যায় লোকাল থানায়। পুলিশ এসে তাঁকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
শুধু ওই মেয়েটিই নয়, ওই ঘটনা জানাজানি হওয়ার পরে নাকি একে একে আরও অনেক মেয়েই মুখ খুলেছিল। বলেছিল, তাদের সঙ্গেও নাকি উনি অসভ্যতা করেছেন। কিন্তু ভয়ে, লজ্জায়, কে কী বলবে ভেবে তারা চেপে গেছে। কেউ কেউ বাড়িতেও জানিয়েছিল ব্যাপারটা। কিন্তু বেশির ভাগ বাড়ি থেকেই নাকি বলেছিল, যা হবার হয়ে গেছে। কাউকে কিছু বলতে যাস না। সব জানাজানি হলে মানসম্মান নিয়ে টানাটানি হবে। থানা পুলিশ হবে। আজেবাজে প্রশ্ন করবে। বিয়ে দিতে গেলে সমস্যা হবে। তার চেয়ে বরং চুপ করে থাকাই ভাল। দরকার হলে ওখানে আর পড়তে যাস না।
এই সব শুনে হাসিখুশি প্রাণোচ্ছল রাই কেমন যেন গুটিয়ে নিয়েছিল নিজেকে। কারও সঙ্গেই সে ভাবে আর মিশত না। শময়িতার সঙ্গেও না। যেন স্বামী নয়, দোষটা সে- করেছে। এটা দেখে রাইয়ের জন্য সমবেদনা হলেও মনে মনে বেশ খুশিই হয়েছিল সে, আর যাই হোক, তার স্বামী অন্তত রকম নয়।
কিন্তু অফিসে ফোন করে কী শুনল সে! দু’-তিন দিন ধরে অফিসে যাচ্ছে না! ভাগ্যিস ওর মোবাইলে নট রিচেবল আসছিল। তাই বাধ্য হয়ে অফিসের ল্যান্ড নম্বরে ফোন করেছিল। না হলে তো সে জানতেই পারত না, তার বিশ্বাসটাকে ঘুণপোকারা ভিতরে থেকে কী ভাবে কুরে কুরে ফোঁপরা করে দিয়েছে। (পরের অংশ আগামী সংখ্যায় )