দুই মেরু
কাশী নামে একটা বছর দশ-বারো বয়সের ছেলে আমাদের বাড়িতে এসে জুটলো। কোথা থেকে কার
সৌজন্যে তার এই বাড়িতে প্রবেশ, আজ আর মনে
করতে পারি না। তবে ছেলেটা বেশ ভালো ছিল, ও টুকটাক
ফাইফরমাশ খাটা, হঠাৎ
প্রয়োজনে কাছাকাছি দোকান থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এনে দেওয়া, সে হাসিমুখে করতো। ও আমাদের বাড়ির ছেলের মতো ছিল, এবং আমাদের খুব ভালওবাসতো।
আমাদের বাড়ি থেকে বড়রাস্তা পাঁচ মিনিটেরও পথ নয়। লোক
বসতি ও যানবাহন প্রচুর হলেও, সামান্য বৃষ্টি হলেই, নির্দিষ্ট বেশ কিছুটা রাস্তায় এক কোমড় জল জমে যেত। এই বড় রাস্তার
ওপর ‘কর কাফে’ নামে একটা রেস্টুরেন্ট্ ছিল। এখনকার মতো তখন আধুনিক কায়দার রেস্টুরেন্ট, বা আধুনিক
সব অদ্ভুত নামের খাবার পাওয়া যেত না। রেস্টুরেন্ট বলতে এই ‘কর কাফে’, ও আরও কিছু দূরে একই মালিকের ‘ওরিয়েন্টাল
কেবিন’ ছাড়া আর কিছু ছিল না। এই দুই দোকানের কিমা কাটলেট্ ও
ব্রেস্ট কাটলেট্ সম্ভবত পঁয়ত্রিশ পয়সা ও পঁচাত্তর পয়সা দাম ছিল, ও খেতেও
মন্দ ছিল না। এছাড়া বড় রাস্তার ওপর উনুন জ্বেলে গরম তেলে ভাজা রামপ্রসাদের আলুর চপ, বেগুনি, পেঁয়াজি বা ফুলুরি, সে তো অমৃত ছিল।
যাহোক, সপ্তাহে প্রায় দু’-তিন দিন এই কিমা কাটলেট, না পেলে ব্রেস্ট কাটলেট বা মোগলাই পরোটা, সাথে গরম গরম চা, আমাদের
ভাই-বোনেদের সান্ধ্য আড্ডার আসর মাতাতো। কাশীর ওপরেই এইসব অমৃত
আহরণ করার দায়িত্বটা পাকাপাকি ভাবে অর্পণ করা হয়েছিল। প্রায় রোজই করকাফে তে যাওয়ার
ফলে, দোকানের লোকজনও তাকে নিয়মিত ও বড় খদ্দের হিসাবে চিনে ফেলেছিল। সে
কোন্ বাড়ি থেকে খাবার কিনতে আসে তা তারা জানতো না ঠিকই, জানার প্রয়োজনও ছিল না, কারণ কাশী
প্রতিদিনই নগদ টাকায় খাবার কিনতো। তবে যে বাড়ি থেকেই তার আগমন হোক না কেন, তারা যে এই দোকানের বড় খদ্দের, ও ধার
বাকির রাস্তায় হাঁটেন না, এইটুকু
বৈষয়িক বুদ্ধি দোকানের সকলেরই অবশ্যই ছিল। আর তাই কাশীর পছন্দের চাহিদা মতো চপ বা
কাটলেট না থাকলে, তারা নিশ্চিন্তে ও নির্ভয়ে অধিক মূল্যের কোন খাদ্যবস্তু তার হাতে দিয়ে, বাকি টাকা পরে এসে দিয়ে যেতে বলতো।
এক প্রচন্ড দুর্যোগের দিনে, সন্ধ্যার পর দাদা ক্যানিং থেকে কাকভেজা হয়ে বাড়ি ফিরলো।
বিকাল থেকে বিদ্যুৎ নেই। ভালো করে স্নান সেরে চা জলখাবার খেয়ে মোমবাতির আলোয়
গুছিয়ে বসে কিছুক্ষণ পরে দাদা হঠাৎ বলে বসলো, “এই ওয়েদারে চপ্-কাটলেট কিছু খেতে পারলে বেশ হতো, কিন্তু সারাদিন যা
বৃষ্টি হয়েছে, তাতে কর কাফের কাছে যা জল জমে, এতক্ষণে
বোধহয় জলে ডুবে গেছে। মোমবাতির আধো আলো আধো অন্ধকারে এই আবহাওয়ায় বসে, ওর বোধহয় মনে মনে ক্যান্ডেল লাইট চপাহারের বাসনা জেগেছে।
কাশীর ‘কর কাফে’ যাওয়ার
ব্যাপারে কোনদিনই আগ্রহের অভাব লক্ষ্য করিনি, আজও নয়। সেটাই
স্বাভাবিক, আমাদের যদি চপ কাটলেটে এতো আসক্তি থেকে থাকে, তাহলে ওর
দোষটা কোথায়? সেও তো প্রায় সমপরিমাণে ভাগ পেয়ে থাকে। অতি উৎসাহে সে বেশ
চিৎকার করেই বলে উঠলো, “আমি একবার
গিয়ে দেখবো বড়মামা, দোকান খোলা থাকলে আমি ঠিক নিয়ে আসবো”।
ওর কথা শুনে ভিতরের ঘর থেকে বাবা ওকে এই ওয়েদারে দোকানে
পাঠাতে বারণ করলেন। আবহাওয়াটা কোন সমস্যা নয়, আসল সমস্যা জল জমা। অভিজ্ঞতা বলছে, সারাদিন যা বৃষ্টি হয়েছে, তাতে কর
কাফের কাছে কাশীর গলা পর্যন্ত জল জমে থাকতে বাধ্য। ইচ্ছা থাকলেও আমরাও ওকে দোকানে
পাঠাতে সাহস করছিলাম না। কিন্তু কাশীর উৎসাহ ও বার বার “কিচ্ছু হবে নাগো, আমি মাথার
ওপরে হাত তুলে ঠিক নিয়ে আসতে পারবো, দেখো
একটুও ভিজবে না” বলায়, আমরাও শেষপর্যন্ত রাজি হয়ে গেলাম। কাশী ছাতা নিয়ে ব্যাগ হাতে দশ টাকার একটা
নোট নিয়ে দুগ্গা দুগ্গা করে বেড়িয়ে গেল।
বাবাকে আর জানাতে সাহস হলো না, যে কাশীকে দোকানে পাঠানো হয়েছে। আমরা মোমবাতির আলোয় আধো আলো
আধো অন্ধকারে কাশীর প্রতীক্ষায় বসে থাকলাম। ধীরে ধীর ঘড়ির ছোট কাঁটা সাতের ঘর ছেড়ে
আটের ঘরে গিয়ে ঠেকলো, কাশীর দেখা নেই। একসময় ঘড়ির ছোট কাঁটাটা যখন নয়ের ঘর ছুঁই ছুঁই করছে, তখন আমরা
রীতিমতো ভয় পেয়ে গেলাম, কারণ কাশী
মোটেই পালাবার ছেলে নয়। আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে, বাবা যাতে জানতে না পারেন, তাই
চুপিসারে কাশীর খোঁজে বেরোবো বলে ছাতা নিয়ে তৈরি হয়েছি, এমন সময় শ্রীমান কাশী একটা আধভেজা বিশাল ঠোঙা, ও একটা
পাঁচ টাকার ভিজে নোট হাতে ফিরে এসে, আমাদের
আসন্ন বিপদের হাত থেকে রক্ষা করলো।
জানা গেল যে কর কাফের ভিতর জল ঢুকে যাওয়ায়, সে প্রায়
তার বুক সমান জল পেরিয়ে অনেক কসরত করে স্টেশনের কাছ থেকে পাঁচ টাকার আলুর চপ কিনে, ওই একই ভাবে জল ভেঙে ফিরে এসেছে। তখন দশ পয়সা আর পাঁচ পয়সা মূল্যের দু’রকম সাইজের আলুর চপ সর্বত্র পাওয়া যেত। দশ পয়সা মূল্যের আলুর চপ পাওয়া যায়নি বলে, সে পাঁচ
পয়সা দামের পাঁচ টাকার চপ নিয়ে এসেছে। পাঁচ টাকার, অর্থাৎ মাত্র একশ’টা
বরফশীতল আলুর চপ, সে এরকম
একটা ভয়ঙ্কর দুর্যোগের দিনে রাত প্রায় সোয়া ন’টার সময়
এনে হাজির করেছে।
একসাথে অতগুলো চপ কিনলে ফুচকা খাওয়ার মতো দু-চারটে ফাউ
পাওয়ার হক, অবশ্যই আশা করা যেতে পারে, কিন্তু
বাস্তবে দেখা গেল সংখ্যাটা সেঞ্চুরির থেকে অনেকটাই কম। কারণ হিসাবে কাশী জানালো, চপওয়ালার কাছে আর চপ ছিল না। সে একটা দশ টাকার নোট নিয়ে চপ কিনতে গিয়েছিল।
আমাদের সকলের, হয়তো বা চপওয়ালারও গত জন্মের অনেক পুণ্যের ফল, যে তার কাছে ওই কয়েকটাই অবিক্রিত ঠান্ডা চপ পড়ে ছিল।
এতক্ষণের টেনশনে দাদা এতটাই ভীত ও উত্তেজিত হয়ে ছিল, যে হাতের
কাছে কিছু না পেয়ে, টেবিল
থেকে প্রায় শেষ হয়ে আসা জ্বলন্ত মোমবাতিটা নিয়ে, দশ-বারো ফুট দূরে দাঁড়িয়ে থাকা কাশীকে লক্ষ্য করে ছুঁড়ে মারলো। মোমবাতিটা কৃত্রিম
উপগ্রহের মতো যাত্রা শুরু করেও, মাঝপথে নিভে গিয়ে গোটা বাড়ি তমসাচ্ছন্ন করে দিয়ে, যুদ্ধ সমাপ্তির পথ সুগম করে দিল। শেষে অনেক খুঁজেপেতে দেশলাই বার করে মোমবাতি
জ্বালা হলো। বারো-চোদ্দটা
মতো ঠান্ডা চপ গলাধঃকরণ করে, বাকিগুলো
ফেলে দিয়ে, সেদিনের চপ ভক্ষণ পালার সমাপ্তি ঘোষণা করা হলো।
**************************************************************
একদিন হঠাৎ অফিস থেকে ফেরার সময় বাবা একটা বছর বারো-তেরোর
ছেলেকে সঙ্গে করে নিয়ে এসে হাজির করলেন। জানা গেল, যে সে হাওড়া স্টেশনে বাবার কাছে ভিক্ষা চাওয়ায়, বাবা
ছেলেটির দুঃখ, কষ্ট, অনিশ্চিত
ভবিষ্যতের কথা ভেবে এতটাই উতলা ও চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন, যে ছেলেটিকে সঙ্গে করে একমাত্র নিরাপদ আশ্রয়ে না নিয়ে আসা ছাড়া, দ্বিতীয় কোন উপায় খুঁজে পাননি।
বাবা নিজেই ছেলেটির পরিচয় দিয়ে জানালেন, যে এই
উড়িয়া ছেলেটির নাম শিবো, ভদ্র ঘরের ছেলে, তবে খুবই
গরিব। তাঁর কাছে কিছু সাহায্য চাওয়ায় তিনি সাহায্যের ভাণ্ডার উজাড় করে
তাকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। আমাদের বাড়িতে থাকবে, মা’কে হাতে
হাতে তাঁর কাজে একটু সাহায্য করবে। এখানেই শেষ নয়, তিনি
ছেলেটিকে সাহায্যের জন্য এক বিশাল পরিকল্পনাও অতটুকু সময়ের মধ্যেই বানিয়ে
নিয়ে এসেছেন। তিনি শিবোকে লেখপড়াও শেখাতে চান।
আমরা সবাই আপত্তি জানিয়ে বললাম, যে অজানা অচেনা একটা ছেলেকে হুট করে বাড়িতে নিয়ে এসে স্থান
দেওয়া খুবই ঝুঁকি সম্পন্ন। যেকোন সময় বাড়ির কিছু হাতিয়ে নিয়ে কেটে পড়বে, চাই কি
আরও বড় কোন ক্ষতি করাটাও অসম্ভব নয়। কোন বড় অসামাজিক দল, একে এই জাতীয় কাজে ব্যবহার করছে, তাও হতে
পারে, ইত্যাদি ইত্যাদি। প্রয়োজনে তাকে কিছু টাকা দিয়ে বিদায় করে
দেওয়া হোক। আমাদের এই যুক্তি ধোপে টিকলো না। একনায়কতন্ত্র শাসনের এটাই সমস্যা।
বাবা জানালেন, অহেতুক কাউকে আগেই সন্দেহ করাটা ঠিক নয়। দু’-চার দিন দেখাই যাক না, সেরকম বুঝলে চলে যেতে বললেই হবে। অতএব সমস্ত ভেটো অগ্রাহ্য করে পাসপোর্ট ভিসা ছাড়াই, শিবো এই
বাড়ির নাগরিকত্ব পেয়ে গেল।
নতুন একটা সাবান দিয়ে তাকে ভালো করে স্নান করে আসতে বলা
হলো। পুণ্যস্নান সেরে বাইরে আসলে, তাকে আমাদের একটা হাফপ্যান্ট ও টিশার্ট পরতে দেওয়া হলো। আর
সকলকে নির্দেশ দেওয়া হলো, যে আজ যেন তাকে কেউ কোন কাজ করতে না বলে, কারণ ছেলেটি অভুক্ত ও ক্লান্ত, তার একটু বিশ্রামের প্রয়োজন। সেইমতো শিবো নতুন ঢাউস প্যান্ট ও টিশার্ট পরে, মাদুর পেতে শুয়ে পড়ে বিশ্রাম নিতে শুরু করলো। আমাদের খাওয়ার আগে তাকে ডেকে
তুলে রুটি তরকারি খেতে দেওয়া হলো। পারলে বাবা হয়তো নিজে দাঁড়িয়ে থেকে তার খাওয়ার
তদারকি করতেন, কিন্তু আমাদের অপছন্দের কারণ হতে পারে ভেবে, আর সেটা
করলেন না। শিবো চন্দ্র খানপাঁচেক রুটি, তরকারি
সহযোগে উদরস্থ করে, আবার তার মাদুরে পরিপাটি করে শুয়ে পড়লেন, এবং
কিছুক্ষণের মধ্যেই আবার যোগনিদ্রায় নিমগ্ন হলেন। বাবা শুধু বললেন “দেখছিস ও কতটা ক্লান্ত, সন্ধ্যে
থেকে এক নাগাড়ে ঘুমিয়ে যাচ্ছে”।
পরদিন সকালে উঠে শ্রীমান শিবো চন্দ্র দাঁত মেজে মুখ ধুয়ে
চা বিস্কুট খেয়ে, উচ্চৈঃস্বরে “হাগুচি হাগুচি হাগুচি, মরি মরি
পাতালগুচি, হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ” বলে পড়ে
যাওয়ার মতো করে মাটিতে শুয়ে পড়লেন। এর অর্থ আমাদের জানা নেই, তবে এতক্ষণে প্রকাশ পেলো, যে তিনি
নাকি ওড়িয়া যাত্রায় অভিনয় করতেন। এহেন একজন যাত্রা সম্রাটের দেখা দৈবাৎ মেলে।
আমাদের বাড়িতে তিনি অবস্থান করছেন ভেবে বেশ গর্বও হলো।
বাবা অফিসে চলে গেলে, বাধা দেবার কেউ নেই বুঝে মা তাকে টুকটাক ফাইফরমাশও করলেন। সকালের জলখাবার, দুপুরের
আহার সেরে, তিনি আবার একপ্রস্থ নিদ্রামগ্নও হলেন, তবে এই সময়ের মধ্যে আরও বার দু’-তিন হাগুচি হাগুচি শোনার ও দেখার সৌভাগ্যও আমাদের সকলের হলো। আহা, কি বলিষ্ঠ
অভিনয়! সন্ধ্যেবেলা অফিস থেকে ফেরার পথে বাবা না আবার অক্সফোর্ড
ইউনিভার্সিটির কিছু বই তার উচ্চ শিক্ষার্থে কিনে নিয়ে আসেন, আমরা সেই আশঙ্কায় সারাটা দিন কাটালাম।
সন্ধ্যার বেশ কিছু পরে বাবা অফিস থেকে ফিরে প্রথমেই তার
কুশল সংবাদ নিলেন। এরও বেশ কিছুক্ষণ পরে বাবা শিবোর হাতে একটা সিকি দিয়ে চীপ
ভ্যারাইটি স্টোরের পথ নির্দেশ ভালো করে বুঝিয়ে দিয়ে বললেন, “আমার জন্য এক বান্ডিল বিড়ি নিয়ে
আসতে পারবি? সবুজ সূতোর বিড়ি চাইবি। হারিয়ে যাবি নাতো”? চীপ ভ্যারাইটি স্টোর, আমাদের বাড়ি থেকে হেঁটে পাঁচ মিনিটেরও পথ নয়, তাছাড়া শিবোও হারিয়ে যাবার পাত্র বলে মনে হয় না। শিবো
সম্মতি জানিয়ে পয়সা নিয়ে চলে গেল।
সন্ধ্যা শেষ হয়ে রাত বাড়তে লাগলো, শিবো ফিরে এলো না। ক্রমে রাত আটটা, ন’টা পার হয়ে যখন দশটা বাজলো, তখন সবাই
একটা বিষয় একমত হলাম, যে শিবো
সিকিটা নিয়ে পগার পার হয়ে গেছে। বাবা মানসিক ভাবে বেশ ভেঙে পড়ে বার বার বলতে
লাগলেন, “ছেলেটা চার আনা পয়সার লোভ সামলাতে পারলো না? সত্যি মানুষকে বিশ্বাস করা যায় না”।
রাত যখন প্রায় এগারোটা বাজে, শিবো আর কিছু নিয়ে পালিয়ে গেছে কী না, তার সন্ধানে আমরা লেগে পড়লাম। রাত প্রায় সোয়া এগারোটার সময় দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে দরজা খুলে দেখা গেল
শিবো চন্দ্র দাঁড়িয়ে আছেন। মুঠো করা হাতের আঙুলের ফাঁকে জ্বলন্ত একটা বিড়ি। মুঠো
করা হাতেই বিড়িটাতে বার দু’-তিন সুখটান দিয়ে ফেলে দিয়ে, সে ভিতরে ঢুকলো। আমি জিজ্ঞাসা করলাম “কোথায় গিয়েছিলি, এতটুকু
ছেলে তুই বিড়ি খাস, তোর লজ্জা করে না”? উত্তরে সে
পরিস্কার জানালো, “তাতে কি হয়েছে? আমরা বলে মায়ের পেট থেকে পড়েই বিড়ি খাই”।
এতক্ষণে গোটা ঘটনাটা জানা গেল। শিবো এখান থেকে বড়
রাস্তায় গিয়ে জুয়া খেলেছে। একটা কাঠের গোল চাকতির একবারে শেষপ্রান্তে ছোট ছোট
পেরেক মারা, মাঝে একটা জিভছোলা লাগানো। প্রতিটা পেরেকের মাঝে কিছু না কিছু আঁকা বা লেখা
আছে। কোন কোন পেরেকের মাঝে পয়সার উল্লেখ করা আছে। চাকতিটাকে জোরে ঘোরালে, থামার সময়
জিভছোলাটা যে ঘরে এসে থামবে, সেই ঘরে
কোন পয়সার উল্লেখ থাকলে, জুয়ারি
ততো পয়সা পাবে। শিবো ওই সিকি দিয়ে এই খেলা খেলে, যা পয়সা
লাভ করেছে, তাই দিয়ে এক বান্ডিল বিড়ি কিনে, শ্যামলী সিনেমা হলে নাইট শোয়ের টিকিট কেটে সিনেমা দেখে ফিরে এসেছে।
সব শুনে বাবাতো তাকে তখনই বাড়ি থেকে ঘাড় ধরে বার করে
দিতে গেলেন। আমরাই এবার বাবাকে বারণ করলাম। এতো রাতে সে কোথায় যাবে ইত্যাদি বোঝাতে, তিনি রাজি হলেন
বটে, তবে হুকুম হলো কাল সকালেই যেন তাকে বার করে দেওয়া হয়। হলোও তাই, আমরা এক মহান যাত্রা সম্রাটের সাহচর্য থেকে বঞ্চিত হলাম।