মানবিক
লাদাখ ।শীতল মরুভূমি।মাইলের পর মাইল বালির ঢেউ ।স্যান্ড
ডিউনস ।
দেখে মনে হয় সমান্তরাল আঁজি কাটা সমুদ্রের ঢেউ কোন
জাদুকরের ম্যাজিকে স্তব্ধ স্থির হয়ে গেছে ।মরুভূমি বললেই ভাবি ফুটন্ত গরম । এখানে
ঠিক উলটো । হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডা ।শূন্য ছোঁয়া তাপমাত্রা ।আর বাতাসের স্রোত গায়ে লাগলে মনে হচ্ছে ছুরির ফলার মত
ধার।
মানুষ নামক জীবটি পৃথিবীকে শাসন করছে কি ওমনি ?এইখানেও দ্যাখো ব্যবসার সরঞ্জাম নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে । সমতল থেকে
বেড়াতে আসা টুরিস্ট জ্যাকেট টুপি উলেন গ্লাভস মোজা স্নিকার্স মাঙ্কিক্যাপ সব
জড়িয়েও ঠি ঠি করে কাঁপছে ।আর লোকাল হিরোরা ফিনফিনে টি শার্ট আর জিনসের সংগে কায়দার
গগলস ,
কেতার চুল দাড়ি , মুখে
বাতাস ঠেকানো প্লাস কেতের রুমাল ডাকাত স্টাইলে বেঁধে টু হুইলার আর খোলা জিপে ডাক
দিচ্ছে হৃত্বিক রোশান , পুরোনো শাহরুখ বা নতুন রনবীর কাপুর স্টাইলে । পাহাড়ি মানুষের রুমালের পিছনে কিছু শ্লেষের হাসি , আর তীব্র দরদাম । ক্ষোভ ত থাকবেই । এত তফাৎ আর্থিক মানের । এই কঠিন জীবনে পইসা
উড়িয়ে যারা দু দিনের ছুটিতে মজা করতে আসে তারা কি বুঝবে ; এইখানেই যাদের সমস্ত ঋতু খেয়ে না খেয়ে বরফে জমে সমস্ত জীবন
বিতাতে হয় তাদের কষ্ট ?
এরা খালি গ্ল্যামারাস ড্রেস পড়ে ছবি তুলবে , পোজ মারবে ,
আর উউউ আআআআ করে চেঁচাবে
।সাল্ললা !
পাশে বসা ডরপুক হিরোইনরা একটু ধাক্কাধুক্কি লাগলে কিছু
মনে করে না , বুঝে গেছে
অনেক গাইডই । এটাও পাহাড়ি মজা বলেই ধরে নেয় হয়ত ।মুখ বেঁকায় আঠারো বিশের গাইড ।
আজ খোলা জিপে বসেছে দুই সওয়ারি । না দুজন বসেনি। লম্বা
চওড়া লোকটি দাঁড়িয়ে আছে জিপের খোলা পিছনে , রড ধরে। লাল জ্যাকেট পরা গিন্নি স্টিয়ারিংএর পাশের সিটে । সামনে বসে ।গাইড খেয়াল করছে , গারিরসাম্নে লাগানো আয়নার ভিতর দিয়ে এক দৃষ্টে তাকিয়ে থাকছে
মেম সাহেব মার্কা ম্যাডাম তার দিকে । চুলে একটা ঝাঁকি দিয়ে নেয় হিরো । পাশে
বসেছে ত ,
একটু হাতের চাপ , কনুইয়ের
গরম টের পাওয়া যাবে মনে হয়। ডিউনেসের ওপর স্পিডে গাড়ি চালানোর খেলায় বয়স্ক
ম্যাডামরাও নিজেদের খুকি ভেবে নেয় হয়ত । ভালই ঠাণ্ডা হাওয়ায় একটু গরম পাওয়া যাবে ।
হিরোর গলায় বেপরোয়া হাসি , “কি মেমসাব, ভয় পাবেন না ত ?
একটু উপর থেকে লাফিয়ে নামি ? আপনিও
স্টিয়ারিং ধরে থাকতে পারেন। আমার হাতের ওপর দিয়ে ধরুন । কিচ্ছু ভয় নেই ।
আমি আছি না । সাহস করে বাইকেও চড়তে পারতেন ত। আমাকে ধরে থাকতেন না হয়।”
ওর হো হো হাসি হঠাত থেমে গেল মেম সাবের মৃদু জবাবে ।
“আমার ছেলেটা এক দম তোমার মত দেখতে , জানো । এই
রকমই হিরোগিরি করে বেড়ায়। কলেজে ছুটি নেই ত। কিন্তু তার কথাই মনে হচ্ছে সারাক্ষন এখানে এসে । বাইক ? থাকত আমার ডাকু এখানে ,
দেখতে । টু ফোর সিক্স যত যা যা
গাড়ি দেখাতে পারো সব নিয়ে তোমাদের সংগে দাপিয়ে বেড়াতো সে । এই রকমই এক খান রুমালের ফেট্টি মাথায় দিয়ে। থাকত যদি
সঙ্গে– আমার বাবু।”
হিরো আয়নায় তাকিয়ে দেখে মায়ের চোখ চক চক। মনে ভেসে ওঠে
কাঠের ঘরে মা রুটি বানাচ্ছে এখন ওর জন্য । আর ভুরু কুঁচকে রাস্তা দেখছে , কব আয়েগি বাবুয়া ।
পাশে ঠেস দিয়ে বসে যখন , এই রকমই নরম গরম মা । গলার কাছে কি যেন দলা পাকায়। চোখটা জ্বালা করে ওঠে । কত ঝগড়া
করে বেরিয়েছে সকালে।
“
পরে আবার তাকে নিয়ে এসো , আজ আমিই তোমায় নিয়ে
যাই ।কোই ফিকির না করো । মা –”
বালির ঢেউয়ে লাফ দিয়ে নামে জিপ । ভারতবর্ষের মায়েদের
সাবধানে নিয়ে ফিরে আসে তাদের লক্ষ্মীসোনা বাবুয়ারা ।