গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

শুক্রবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

সর্বাণী রিঙ্কু গোস্বামী

দেরি


ফোন নেই কদিন ধরেই। অনলাইন থাকলে যে সবুজ আলো, তাও অনুপস্থিত। ফেসবুকেই আলাপ,একটু একটু করে গভীর। এতোটাই যে নিরুদ্দেশে যাওয়ার কথা ভাবলেও চৈতির নামটাই বুকের ভেতর।ঠিকানা,সুলুক সন্ধান সব আসল সেসব যাচিয়ে দেখা হয়ে গেছে।বাড়ির সামনে থেকে আশিস ঘুরেও এসেছে কয়েকবার।পুরোনো কলকাতার পুরোনো পাড়ার কয়েক সরিকের রঙচটা বাড়ি, যেমন হয় আর কি।জিজ্ঞাসা বাদের ভয়ে ভেতরে যাওয়া হয়নি।কিন্তু এবার বোধহয় না ঢুকলেই নয়,বিশেষ করে যখন স্থির ই করেছে বাকি জীবন চৈতির সঙ্গেই! মন স্থির করে অফিস ফেরত পুরোনো দরজায় কড়া নাড়ে আশিস।ইতিউতি দেওয়ালে অশ্বত্থগাছের চারা, পড়ন্ত বিকেলের রোদ মনমরা দেওয়ালের গায়ে।বাবা মা মারা যাওয়ার পর সামান্য পুঁজি আর টিউশনের কটা টাকা,এই চৈতির সম্বল। এক প্রকার কাকাজেঠাদের গলগ্রহ সে,আশিস জানে। সেও কিছু রাজপুত্র নয়,বাবার পেনশন অসুস্থ মা আর হলুদ বাল্ব জ্বলা একটা ঘর, তবু চলে যাবে। নির্বিকার মুখ করে এক মহিলা দরজা খোলে, চৈতির নাম করলে ভ্রু কুঁচকে আঙুল দিয়ে ঘর দেখিয়ে সরে যায়।সব কৌতূহল যেন কবেই মরে গেছে। নিরানন্দ শ্যাওলা ধরা উঠোন পার হয়ে ঘর, দিনের বেলাও আলো জ্বলছে,ধূপের গন্ধে বাতাস ভারি।সামান্য কজন,চালি তে বাঁধা সাদা চাদর জড়িয়ে আস্টেপৃষ্টে বাঁধা দুটো গাঁদার মালায়,চৈতি! দেওয়াল ধরে টাল সামলাতে সামলাতে আশিস একটা আবছা গলা শোনে,ক্যানসার...জানতে না!