গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

শুক্রবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

সুবীর কুমার রায়


মহাভোজ

প্রত্যেক মানুষের জীবনে তিনটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য দিন থাকেজন্ম, মৃত্যু, ও বিবাহ। যদিও এই বিশেষ তিনটি দিনের, প্রথম দুটি তার অজান্তে ও অগোচরে ঘটে। প্রথমটি নিয়ে হয়তো অনেক কিছুই সে পরবর্তীকালে গল্প শুনে জানতে পারে, কিন্তু দ্বিতীয়টি তার আর দেখে, শুনে, বা জেনে যাওয়ার সুযোগ থাকে না। তাই এই তিনটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য দিনের তৃতীয়টি যে তার কাছে সত্যিই একটি স্বপ্নের, কল্পনার, ভাললাগার, ভালবাসার, ও সারা জীবন মনে রাখার মতোই দিন হয়ে থাকে, এ বিষয় কোন দ্বিমত থাকতে পারে না।
কলেজ জীবন শেষ করে বেকার অবস্থায় আমরা কয়েকজন সকাল-সন্ধ্যা নেপালদার দোকানে ভেরেন্ডা ভাজতে যেতাম। যদিও নেপালদা আমাদের থেকে বয়সে বেশ কিছুটা বড় ছিল, তবু সে ছিল আমাদের বন্ধুর মতো। তাকে নিয়ে কত স্মৃতি! একদিন আমার খুব কাছের বন্ধু সমর, যার সুত্রে নেপালদার সাথে পরিচয়, ও ওই দোকানে আড্ডা মারতে যাওয়া, আমাকে জানালো যে বাদলদার বিয়ে এবং তাকে বরযাত্রী যাওয়ার জন্য বিশেষ করে ধরেছে। যদিও সে বৌভাতে যেতে রাজি থাকলেও, বরযাত্রী যেতে মোটেই আগ্রহী নয়, কিন্তু কিছুতেই কাটাতে পারছে না। তার ইচ্ছা তার সাথে আমিও বাদলদার বিয়েতে বরযাত্রী যাই। আমি পরিস্কার ভাবে জানিয়ে দিলাম যে বিয়েটা তার নয় বাদলদার, র বাদলদা আমায় তার বিয়েতে নিমন্তণও করেনি। যদিও বাদলদার বিয়েতে নিমন্ত্রণ করলেও আমি বরযাত্রী যেতাম না।
বাদলদা ছিল ওই দোকানের মালিক, নেপালদার বিশেষ বন্ধু। বাদলদা যদিও ওই দোকানে খুব কমই আসতো, তবু আমাদের সাথে পরিচয় ছিল। যাহোক্, দুদিন পরে দোকানে বসে আড্ডা দিচ্ছি, বাদলদা এসে হাজির। দোকানে এসেই সে আমাকে তার বিয়েতে বরযাত্রী যাওয়ার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করলো। এই নিমন্ত্রণ তার ইচ্ছায় না সমরের, বোঝা গেল না। অদ্ভুত ব্যাপার সে কিন্তু আমাদের কাউকেই তার বৌভাতে যাওয়ার জন্য নিমন্ত্রণ করলো না। নিজের খরচ বাঁচিয়ে আমাদের নিমন্ত্রণ, না বিয়ের আসরে লোকবল বাড়ানো, কোনটা প্রকৃত উদ্দেশ্য বোঝা গেল না।
এরপর থেকে বাদলদা ঘনঘন নেপালদার দোকানে আসা শুরু করলো এবং সুর করে ন্যাকা ন্যাকা গলায় সমরকে বলতে লাগলো যে তার বিয়ে করতে যেতে ভীষণ ভয় করছে, বিয়ে করার তার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই, ইত্যাদি ইত্যাদি। সে বিয়ের আসরে সাহস যোগাবার জন্য সমরকে সাথে পেতে চায়। বাদলদা আমাদের থেকে বয়সে অনেকটাই বড়। এটা যে তার অত্যন্ত বিয়ে করার ইচ্ছা ও বুড়ো বয়সে বিয়ে করার ন্যাকামি ও আনন্দের বহিঃপ্রকাশ, বুঝিয়ে বলার প্রয়োজন নেই। সে চলে গেলে আমি সমরকে পরিস্কার জানিয়ে দিলাম যে আর যেই সঙ্গে যাক, আমি অন্তত তার বিয়েতে বরযাত্রী যাচ্ছি না।
বাঘে ছুঁলে আঠারো ঘা বলে শুনি, কিন্তু বাদলদা ছুঁলে যে ছত্রিশ ঘা, তাকি ছাই আগে জানা ছিল! এরপর থেকে বাদলদা প্রায় রোজই আমাদের আড্ডার দোকানে এসে তার বিয়ে করার অনিচ্ছা, একা একা বিয়ে করতে যাওয়ার ভয়, লজ্জা, ইত্যাদি নিয়ে তার মূল্যবান মতামত শুনিয়ে যেত। বিয়ের পর সন্তানসন্ততি না হলে, বা হতে বিলম্ব হলে, বন্ধুবান্ধবরা অনেকের বাড়িতেই কার্তিক ঠাকুর ফেলে যায় বলে শুনি। অতি উৎসাহে কেউ কেউ আবার জোড়া কার্তিক ফেলে যায় বলেও শুনেছি, কিন্তু একা একা বিয়ে করতে যেতে ভয় করছে শুনে ভয় হলো, জোড়া কার্তিকের মতো বাদলদা সমরকে সঙ্গে নিয়ে যেতে চাইছে নাতো?
সে যাহোক্, সমর কিছুতেই সঙ্গে যাওয়ার জাল থেকে বেরতে না পেরে, প্রবলভাবে আমায় আঁকড়ে ধরলো। স্বাভাবিক, ডুববার আগে মানুষ খড়কুটোও আঁকড়ে ধরে বাঁচার চেষ্টা করেফলে বাদলদার হাত থেকে মুক্তি না পেয়ে সমর, ও সমরের হাত থেকে মুক্তি না পেয়ে আমাকেও বাদলদার বিয়ে করতে যাওয়ার একাকীত্ব, লজ্জা, ও ভয় ভাঙাতে সঙ্গে যাবার প্রতিশ্রুতি দিতেই হলো।
নির্দিষ্ট দিনে সন্ধ্যাবেলা সমরের সাথে বাদলদার বাড়িতে আমরা দুই ব্ল্যাকক্যাট গিয়ে হাজির হলাম। বাদলদা দেখলাম চন্দনচর্চিত কপাল নিয়ে, মাঞ্জা দিয়ে ধুতি পাঞ্জাবি পরে, এক কান থেকে অপর কান পর্যন্ত দাঁত বার করে হাসি মুখে, ভয় ভয়ে, ‘দুর বাবা আর কতক্ষণ অপেক্ষা করবো একাই চলে গেলে ভালো করতাম ভাব নিয়ে বসে আছে। আমাদের দেখে বিরক্তি প্রকাশ করে জানালো, “দেখ্ না, এখনও গাড়ি এসে পৌঁছয়নি আর কখন যাবো বলতো, দেরি হয়ে যাবে না?”
যদিও তিন-সাড়ে তিন কিলোমিটার দুরে বিয়ের আসর, তবু বাইরে কোন গাড়ির দেখা না পেয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, বরযাত্রীরা কিসে যাবে? বরযাত্রীরা কিসে করে ও কখন বিয়ের আসরে যাবে, তা নিয়ে বাদলদার খুব একটা চিন্তা বা মাথাব্যথা আছে বলে মনে হলো না। গাড়ি এসে যাবে, খুব ক্যাজুয়ালি কথাকটা বলে সে উদ্বিগ্ন হয়ে পায়চারি শুরু করে দিলো। আমার আবার অন্য চিন্তা শুরু হলো, বাদলদা যদি শেষপর্যন্ত প্রবল ভয় ও লজ্জা নিয়ে সমরকে সঙ্গী করে ফুলেঢাকা গাড়ি হাঁকিয়ে বিয়ের আসরে চলে যায়, তাহলে আমার কি করা উচিৎ?
যাহোক শেষপর্যন্ত বাদলদার গাড়ি এসে হাজির হলো। একমুহুর্ত সময় অপচয় না করে, সে গাড়িতে ওঠার সময় আমাদের দুজনকে বাস আসলেই চলে আসতে বললো। বাদলদা তো চলে গেল, কিন্তু ধীরে ধীরে রাত বাড়তে থাকলেও, আমাদের বাসের আর পাত্তা নেই। এইভাবে আরও অনেকক্ষণ সময় কেটে গেল, আমাদের একটাই সান্তনা যে আমরা দুজন ছাড়াও আরও বেশ কয়েকজন পুরুষ ও মহিলা, বরযাত্রী যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। আরও দীর্ঘক্ষণ সময় কাটিয়ে ফিরে আসবো কী না যখন চিন্তা করছি, তখন আমাদের লজঝড়ে বাস এসে উপস্থিত হলো। এবার শুরু হলো বরযাত্রীদের যাওয়ার প্রস্তুতি। এর সাজের সামান্য ফিনিশিং টাচের বাকি আছে, তো ওর মেজো মেয়ে-জামাই এখনও এসে পৌঁছয় নি। সমরকে বললাম, এরপর আমরা যখন পৌছবো, তখনতো ও বাড়ির সবাই খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পড়বে। আমরা পৌঁছে চ্যাঁচামেচি করে তাদের ঘুম ভাঙাতে সক্ষম হলেও, ঘুম চোখে কেএএএএএ বলে দরজা খুলে ঢুকতে দেবে তো? তার থেকে চল্ কেটে পড়ি। কোথাও খেয়ে নিয়ে বাড়ি ফিরে যাই। সমর জানালো, সেটা ঠিক হবে না। হয়তো ও না পৌঁছলে বাদলদা ভয় ও লজ্জায় বরাসনে না বসে সমরের অপেক্ষায় বসে থাকবে, এটাও কারণ হতে পারে।
অবশেষে বাস ছেড়ে দিলো। অল্পই রাস্তা, তবু আমরা যখন হাজিরা দিলাম, তখন বেশ রাত হয়ে গেছে। ছোট্ট বাড়িটার ডানপাশে তেরঙা কাপড় দিয়ে তৈরি প্যান্ডেল, বুঝলাম এরা কংগ্রেসের ভক্ত। বিয়ে অনেকক্ষণ আগে শেষ হয়ে গেছে। শীতের রাতে বিয়ে বাড়ি প্রায় ফাঁকা, বাড়ির লোকজন ছাড়া বিশেষ কেউ আছে বলে তো মনে হলো না। বাস থেকে নামা মাত্রই বরকনের সাথে দেখা করার সুযোগ না দিয়ে, আমাদের প্রায় জোর করে প্যান্ডেলের ভিতর খাবার জায়গায় নিয়ে যাওয়া হলো। খুব ইচ্ছা করছিল ভয় ও লজ্জা জয় করে বাদলদা এখনও সুস্থ আছে কী না, বলা ভালো বেঁচে আছে কী না, একবার দেখে আসতে, কিন্তু সে সুযোগ পাওয়া গেল না।
আমরা বরযাত্রী কজনই বোধহয় খেতে বাকি আছি, আর বিশেষ কাউকে তো দেখলাম না। একজন একটা বড় ঝুড়ি নিয়ে এসে দুটো করে বরফ শীতল লুচি দিয়ে গেল। তারই জেরক্স কপি আর একজন, সম্ভবত ছোলার ডাল দিয়ে গেল, তারপর সব নীরব। কিছুক্ষণ পরে সেই দুজন আবার এসে লুচি বা ডাল নেবো কী না জিজ্ঞাসা করলো। তাদের উভয়ের বাহাত্তর ইঞ্চি বুকের ছাতি ও বাইসেপস্ ট্রাইসেপস্ দেখে আর লুচি বা ডাল চাওয়ার সাহস হলো না। একে একে ঠান্ডা চপ্, ফুলকপির তরকারি, মাছ, ত্যাদি সবই পাতে দেওয়া হলো। মাইক টাইসন বা মহম্মদ আলীর মতো প্রায় একই চেহারার চারজন আমাদের খাবার পরিবেশন করলেও, সাহস করে বিশেষ কিছু চাওয়া ক্ষমতায় কুললো না।
অবশেষে পিতৃদত্ত প্রাণ না খুইয়ে নৈশভোজন সমাধা করে প্যান্ডেলের বাইরে এসে আজকের নায়ক, বাদলদার সাথে ভয় ভয়ে দেখা করতে গেলাম। জানি না, সে এখনও টিক আছে কী না। প্যান্ডেলের পাশেই ছোট্ট ঘরটা বাসরঘর হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে। দুটো সিঁড়ি ভেঙে লাল সিমেন্টের শুনশান চাতালটায় উঠেই ঘরের খোলা দরজা, একপাশে সিমেন্টের একটা বেঞ্চি মতো করা, যার দুপাশে আবার বেশ মোটা পাশবালিশের মতো হাতলও আছে। খোলা ঘরটার কার্পেট পাতা মেঝেতে দেখলাম বাদলদা নববধূকে নিয়ে ঘর আলোকিত করে বসে আছে। আমাদের আসতে বিলম্ব হওয়াতেই বোধহয় শ্রীমান বাদল চন্দ্র, সমরের হাত থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে আট-দশজন সুবেশিনী যুবতীকে, তার ভয় ও লজ্জার হাত থেকে বাঁচাবার পবিত্র দায়িত্ব অর্পণ করেছে। বাদলদা ভয় পায়, লজ্জা পায় জেনেছিলাম, কিন্তু সে যে গানও গায়, এ খবরটা জানা ছিল না। বাদলদা পাশের যুবতীদের সাথে গানের অন্ত্যাক্ষরি খেলায় ব্যস্ত ছিল। আমাদের দেখে চোখ তুলে তাকিয়ে একবার শুধু তোরা এসে গেছিস, খাওয়া হয়ে গেছে তো?বলেই গানের খেলায় মন দিলো
এখানেই জানলাম আমাদের মাতৃসম বাদলবৌদির পাঁচ পাঁচটি ভাই আছে, যাদের সহস্তে খাদ্য পরিবেশন, কিছুক্ষণ আগেই আমাদের উদর তৃপ্ত করেছিলতারা প্রত্যেকেই রাজনীতির সাথে সাথে, শরীর চর্চাও করে। তাদের প্রত্যেকেই কেউ পাড়াশ্রী, কেউ জেলাশ্রী, কেউ বা আবার অন্য কোন শ্রী। একজন কোন কাজে আটকে গিয়ে আজকে উপস্থিত থাকতে পারেনি। বাদলদা সহচরীদের সাথে গানের ভেলায় ভেসে বেড়াচ্ছে, তাই তার আমাদের সাথে কথা বলে মূল্যবান সময় অপচয় করার অবকাশ নেই। এটাও তো মানতে হবে যে এই সুযোগ জীবনে রোজ রোজ, বার বার আসে না।
কি করা যায় ভাবছি, এমন সময় আমাদের ত্রাতা সেই চার ভাইয়ের একজন এসে বললো, এই ঠান্ডায় বাইরে দাঁড়িয়ে কেন ভাই? রাতে থাকার জন্য ঘরের ব্যবস্থা তো করাই আছে, চলুন শুয়ে পড়বেন। হাতে যেন চাঁদ পেলাম, যাওয়ার পথেই একবার এই ভাইটিকে একটা প্রণাম ঠুকে দেবো কী না ভাবছি, এমন সময় ভারতশ্রী না বিশ্বশ্রী জানি না, এই ভাইটি আমাদের প্রায় জোর করেই পাশের একটি ঘরে নিয়ে গেল। না, ভুল বললাম। ঘর নয় বাড়ি, কারণ ফাঁকা জমির একপাশে এই একটিই ঘর। সেখানে গিয়ে দেখি আমাদের মতোই অনাথ, অভাগা কয়েকজন এই ঠান্ডায় রাতের আশ্রয়ের জন্য বন্ধ দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। তালা খোলার পর ঘরে ঢোকার জন্য হুড়োহুড়ি পড়ে গেল। অপেক্ষারত সকলের ঘরে স্থান সংকুলান হওয়ার সম্ভাবনা কম জেনেও ঘরে প্রবেশ করতে যাবো, এমন সময় বিশ্বশ্রী জানালেন, ঘরটা ভিতর থেকে বন্ধ করার কোন ব্যবস্থা নেই, তাই আমি বাইরে থেকে বন্ধ করে দিয়ে যাবো। একটি মাত্র ঘর, ভিতরে কোন বাথরূম পর্যন্ত নেই। রাতে প্রয়োজন হলে তো বিপদে পড়বো। কিছুক্ষণ আগেও ভয়ে যাদের কাছ থেকে একটা ঠান্ডা লুচি বা একটু ডাল চাইতে সাহসে কুলয়নি, তাদেরকে মাঝ রাতে ঘুম ভাঙিয়ে ডাকার সাহস আমার কই? রাতে আমায় বাথরূমে যেতে হয় না ঠিকই, কিন্তু প্রয়োজন হলেও যাওয়ার উপায় নেই জেনে শুতে গেলে ওই চিন্তায় রাতে ওঠার প্রয়োজন হবেই, আমি লিখে দিতে পারি।
এইভাবে কি করবো ভেবে বাদলদার ঘরের কাছে ফিরে এসে দেখি আমাদের বাস ফিরে গেছে। সম্ভবত বাদলদা বেঁচে আছে, সুস্থ আছে, ্বচক্ষে দেখে নিশ্চিন্ত হয়ে, সমস্ত বরযাত্রীরা ঠান্ডা লুচি, ছোলার ডাল খেয়েই বাড়ি ফিরে গেছে। খাদ্যাভাবে বাড়ি ফিরে ভাত চাপাতে হবে বলেও ফিরে যেতে পারে। বাধ্য হয়ে অসহায় আমরা দুজন শীতের রাতে ওই ঠান্ডায়, ঘরের বাইরের ওই বেঞ্চে পাশবালিশের মতো সিমেন্টের হাতলে কাত হয়ে, প্রচন্ড মশার উৎপাত সহ্য করে বসে থাকলাম। ভিতরের জলসা জোরকদমে চলছে। আমাদের অতি আপনারজন বাদলদাই আমাদের ভিতরে আসতে বললো না, কাজেই আর কারো কাছে আশা করা শুধু মূর্খামি নয়, অন্যায়ও বটে।
বাকি রাতটুকু ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে, মশার কামড় খেয়ে, বেসুরো গান শুনে কাটিয়ে দিলাম। গতকাল রাতে ঠান্ডা লুচি খেয়ে যে দশ ফোঁটা রক্ত উপার্জন করেছিলাম, তার বিশগুণ মশাদের দান করে, অন্ধকার থাকতে ফেরার পথ ধরলাম। ওই অন্ধকারেও দেখলাম একটা চায়ের দোকান খুলেছে। হয়তো ইনি কোন অবতার, আমাদের কষ্টের কথা ভেবে মাঝ রাতের ঠান্ডাতেও আমাদের রক্ষার্থে ধরায় অবতরণ করেছেন।
গরম গরম চা খেয়ে একটু চাঙ্গা হয়ে, বড় রাস্তা ছেড়ে ভিতরের শর্টকাট সরু রাস্তা ও গলি দিয়ে একসময় নেপালদার বাড়িতে এসে হাজির হলাম। এতো ভোরে বাড়ি যাওয়ায় বেশ অসুবিধা আছে। সমরের পক্ষে তো অসম্ভবই বলা যায়, তাই একটু বেলা পর্যন্ত নেপালদার বাড়িতে একটা ছোট্ট ঘুম দিয়ে, চা খেয়ে যে যার বাড়ি ফিরে গেলাম। নেপালদাকে লজ্জায় আর জলখাবারের কথাটা মুখফুটে বলতে পারলাম না।