গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

রবিবার, ১৬ জুলাই, ২০১৭

সুমন মাইতি-

সেতুবন্ধন

ইউনিভার্সিটির শেষবছরে এক নতুন সমস্যা উপস্থিত – ছোটবেলা থেকে শুনতে অভ্যস্ত “বড় হয়ে কি হতে চাও?” গোছের প্রশ্ন তখন দমকলের ঘন্টি বাজিয়ে একেবারে ঘাড়ের উপর এসে পড়েছে – বঙ্কিমি ডেপুটি আর রাশভারী মেঘনাদ সাহার মাঝে এক্সপ্লোরার অন রেসিডেন্ট আর প্রেমেন মিত্তিরকে মেলানোর চেষ্টায় বিফলমনোরথ আমি রোজ শেষরাতে চুনকাম করা দেওয়ালেপানে চেয়ে শুয়ে শুয়ে কাকের ডাক শুনে সকাল হতে দেখি তখন আবার সদ্য প্রেমে পড়েছি, সমস্ত বাক্যের সামনে বা পেছনে অভ্যাসবশতঃ জোড়া দুই বা তিন অক্ষরের অপশব্দ নিজেই কিরি কেটে কমিয়ে দিচ্ছি – প্রগলভ ছোকরা থেকে প্রাজ্ঞ পুরুষ হবার পথে পায়ে পায় এগোনোকিন্তু বেকার প্রেমিক আর বেকার হবু-জামাতা দুটো জীবনের বিপ্রতীপ সত্য। প্রথমটায় জগতের অনিত্যতা আর দ্বিতীয়টায় জগতের নিত্যতা লুকিয়েকাজেই “উড বি ফাদার-ইন-ল”  খুব একটা যে প্রসন্ন ছিলেন না এটা কোপার্নিকাসের সত্য বলে তখনই জেনে গিয়েছিকিন্ত ঘরে-বাইরে কাঁহাতক আর এত ঝামেলা সহ্য হয়? শ্যাম আর কূল রাখার খেলায় ক্ষান্ত দিয়ে ইংরেজী বর্ণমালার প্রায় সমস্ত আদ্যক্ষর নিয়ে বানানো লিস্ট ধরে ধরে – ক্যাট, ম্যাট, গেট, স্লেট, নেট, ডাব্লুবিসিএস সবকটাই ট্রাই করব মনস্থ করলামঅন্যান্য পরীক্ষাগুলো সামলে নিলেও চাপে পড়লাম সিভিল সার্ভিসের জন্য। পাহাড় প্রমাণ সিলেবাস, তার ওপর দু-দুটো ঐচ্ছিক বিষয়...স্নাতকোত্তর স্তরের, এরসাথে আরো প্রায় গোটা দশেক আবশ্যিক সাবজেক্ট - একে বাংলা মিডিয়াম, তার ওপর অধিকাংশ বই ইংরেজীতে, পড়তে গিয়ে একেবারে কাহিল হয়ে যাছিলাম। কোয়ালিফাই করতে পারব না একরকম নিশ্চিত। প্রেমিকার সাথে কথাবার্তা প্রায় হয়ই না – মনে মনে একটু ডিপ্রেসডসরকারি আবাসনের একপ্রান্তে সদ্য তৈরি করা ফ্ল্যাটে তখন আমরা উঠে এসেছি, পিছনে একফালি জমি, তারপর পাঁচিল, পাঁচিলের ওপারে আগাছার জঙ্গলমতো আর একটা পুকুর। আর ফ্ল্যাটের একদম পিছনের দেওয়ালের গা-ঘেঁষে এক কৃষ্ণচূড়া গাছ - গরমকালের শেষরাতে তার ভেতর দিয়ে ঝিরঝিরে হাওয়া বয়, আমার ঘরের দক্ষিণের জানালা দিয়ে ঢুকে সে হাওয়া বয়ে উত্তরদিকের জানালা হয়ে বেরিয়ে যায়। ফুলস্পীডে পাখা চললেও শেষরাতের সেই হাওয়ায় ভারী আরাম সারারাত পড়তে পড়তে বহুদিন ভোরের দিকে ঘুমিয়ে পড়েছি আরামের মৌতাতেএকদিন খুব সকালে  ধড়ফড় করে উঠে বসলাম। বোন এসে ধাক্কা দিচ্ছে –

“দাদা, ওঠতো একবার...”
“কেন রে?”  
“পাশের ঘরে আয়, মা ডাকছে
বোন আর মা রাতে শোয় পাশের ঘরে। গেলাম। গিয়ে দেখি মা উঠে বসে আছে বিছানায়। রক্তজবার মতো চোখদুটো ছলছলে। রাতে ঘুমাতে পারেনি। জানি মায়ের খুব গরম লাগেহাঁসফাঁস করে, হয়ত সেরকম কিছু হবে।
বললাম – “কি হয়েছে মা?”
-“জানি না রে, এ কদিন রাতে ঘুম হচ্ছে না”
-“কেন?”
-“রাতে মনে হয় ঘরে কেউ আসে, কাল রাতে আওয়াজ পেয়ে সেই যে ঘুমটা ভেঙে গেল আর ঘুমাতে পারিনি।”
-“ঘরে কে আসবে, দুদিকের দরজাই তো বন্ধ থাকে। কালকে বারান্দার দিকের দরজা বন্ধ করেছিলি বোন?”
বোন হায়ারসেকেন্ডারি দেবে সামনের বছর। শুনে চিড়বিড়িয়ে  উঠল -
“রাতে শোয়ার আগে  দুটো দরজাই প্রত্যেকদিন আমি চেক করি...কি শুনেছ তুমি বলত? না স্বপ্ন দেখেছ !”  
“শোন তপু তুই একদম বাজে কথা বলবি না...পরিষ্কার আওয়াজ শুনেছি ঘরের মধ্যে...তোর মতো ক্যালাস না আমি!” 
কথাবার্তার ভাবগতিক অন্যদিকে যাচ্ছে, বেশী দেরী করলে এটা আর আলোচনা থাকবে না, হাল্ক হোগান আর আন্ডারটেকারের টাইটেল ম্যাচ হয়ে দাঁড়াবে! বোন উত্তর দেওয়ার আগেই বললাম -“বোন একবার রান্নাঘরের পাশের দরজাটা দেখে আয় তো অনেক সময় রাতে খোলা থাকে...” যদিও চোর তিনতলা বেয়ে ওপরে উঠে কিছু না নিয়েই কেন চলে যাবে তার কারণ খুঁজে পেলাম না কিন্তু সেটা আর মাকে বলে কি লাভ। শান্ত করলাম - “মা এইসব ছাড়ো তো, রাতে ঘুমাওনি, এখন অফিসে যাওয়ার আগে একটু ঘুমিয়ে নাও
আমায় সেদিন ধর্মতলায় একটু আসতে হতো, দুটো বইয়ের অর্ডার দিয়েছিলাম, সেগুলো আনতে বই কেনার পর ফুটপাথে দাঁড়িয়ে চিত্তদার দোকান থেকে একপ্লেট স্টু খেয়ে ওর বাড়িতে বারকরতক কল দিলাম, রিং বেজে বেজে থেমে গেল। রেগে আছে। কল দিয়ে লাভ নেই। বুথ থেকে বেরিয়ে ময়দানের ধারে বসে দুপুরটা কাটিয়ে সন্ধ্যে নাগাদ এসে দেখি একটু আগে মা অফিস থেকে ফিরেছে আর এসেই রানি মাসির সাথে খিটির মিটির লাগিয়েছে। সপ্তাহের তিনদিন একবেলা করে এসে রান্নাটা করে দিয়ে যায় মাসি – প্রায় বছর দশেকের ওপর হয়ে গেল আছে – কিন্তু প্রায়ই দুজনের মধ্যে খিচিমিচি লেগে থাকে। যাকগে, স্নান করে এসে নিজের ঘরে বসলাম। সারাটা দিন পড়া হয়নি সেজন্য চিন্তা হচ্ছিল। রাতে খাওয়ার পরই পড়ার অভ্যেস আমার সেদিনও বসেছি। টেবিলে বসে ইকোনমিক্সের বইটা খুলতে গিয়ে দেখি মলাটের ওপর কিছু গুঁড়ো পড়ে আছে, দেখে মনে হল মাটি-বালির ধূলো, তুলে ঝেড়ে দিলাম। সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার ভারী শিল্পনীতির অ্যাপ্রেইজাল পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পড়েছি। হঠাৎ চটকা ভাঙল একটা আওয়াজে। আসছে পাশের ঘর থেকে থেকে। মায়ের গলা। দৌড়ে গিয়ে দেখি মা ভীষণ ঘামছে, পাশে বোন মাকে ধরে আছে। উদভ্রান্ত দৃষ্টি।
-“কি হয়েছে মা?”
-“আমাকে আঁচড়ে দিয়ে গেছে দেখ!”
-“আঁচড়ে দিয়েছে? কে? কোথায়?”
-“হ্যাঁ রে, আমার পেটের ওপর...”
-“কই দেখি”
সত্যি পেটের ওপর গোটাতিনেক হাল্কা সাদা দাগ, পাশাপাশি। বোন বা মা, কারুরই লম্বা নখ নেই। কিন্তু এটা পরিষ্কার আঁচড়ের দাগ। ব্যাপারটা দেখে একটু ভাবনায় পড়ে গেলাম। কিন্তু বললাম – “দেখো নিজেই ঘুমের মধ্যে আঁচড়ে দিয়েছ – যা গরম পড়েছে এ কদিন।” মনে প্রশ্নটা থেকেই গেল ঘর থেকে বেরিয়ে দেখি ভোর হয়ে আসছে, আকাশটা মেঘলামতো। অসময়ে ঘুম ভেঙে যাওয়ায় মাথাটা ধরে ছিল। আজকে পড়াতে যেতে হবে না, ভাবলাম একটু ঘুমিয়ে নিই। উঠলাম দুপুরের দিকে। বোন স্কুলে। মা অফিসে। আকাশ আরোও ভারাক্রান্ত – কালবৈশাখী আসবে মনে হচ্ছে। এসেও গেল তবে পুরোপুরি ভেজানোর আগে চলেও গেল। ঝড় থামার পর পাশের কৃষ্ণচূড়ায় কিচকিচ আওয়াজ শুনে তাকিয়ে দেখি খানকয় কাঠবেড়ালি ডালে ডালে দৌড়ে বেড়াচ্ছে। “চুলোয় যাক” বলে পড়ায় মন দিলাম; সিভিল সার্ভিস বড্ড জ্বালাচ্ছে, আর মাস দুই পরে প্রিলিম, মনে হয় না কোয়লিফাই করতে পারব : “অনেকেই বছর চার-পাঁচ ধরে ট্রাই করে যাচ্ছে, আমার এটা প্রথমবার, বেশী আশা করি না কিন্ত অন্তত প্রিলিমটা যেন কোয়ালিফাই করি সেটা অন্তত দেখো ঠাকুর” জানলা থেকে চোখ সরিয়ে ডি ডি বাসুর ভারতীয় সংবিধান খুলে বসি, পাতলা কাগজের ওপর ক্ষুদে ক্ষুদে প্রিন্টে লেখা কালো কালো অক্ষর। পড়তে পড়তে বিকেল গড়িয়ে গেছে কখন খেয়াল নেই। সন্ধ্যের মুখে নিচেরতলার শচীনকাকু এসে দুটো প্রসাদী প্যাকেট দিয়ে গেল; পুরীতে গেছিল, মায়ের মানত ছিল। বোন আর আমার দুজনেরই পুরীর প্যাঁড়া খুব প্রিয়, ছোটবেলায় এটা নিয়ে দুজনের মধ্যে কম মারামারি হয়নি। বাবা ছাড়িয়ে দিত তখনএখন বোন আমাকে একটা দিয়ে নিজে আরেকটা নিল, বড় হয়ে যাচ্ছে ব্যাটা দিনকে দিনমাও নিল তবে একটা প্রসাদী আপেলের টুকরো,ডায়বেটিস ধরা পড়ার পর মা মিষ্টি খাওয়া কমিয়ে দিয়েছে। রাতে খাওয়া হয়ে যাবার পর অনেকটা জল খেলামভ্যাপসা গরমটা ফুলস্পীডে পাখা চালানোর পরেও কিছুতেই কমছে না। সারাদিন সংবিধানের ধারা-উপধারা পড়ে, কিটকিটে কিং জেমসেরসুলভ ইংরেজীর ভদ্রস্থ বঙ্গানুবাদ নিয়ে বিস্তর ধ্বস্তাধ্বস্তি করে ক্লান্ত ছিলাম, তাই তাড়াতাড়ি ঘুমটাও এসে গেলভোররাতের দিকে বাথরুম করতে উঠেছি। বাথরুমে আমাদের ড্রয়িং কাম ডাইনিংরুমের ভেতর দিয়ে যেতে হত – একদিকে রান্নাঘরের দরজা তারপাশে পেছনের বারান্দায় যাবার দরজা, অন্যদিকে দেওয়ালে পাশাপাশি আমাদের দুটো শোবার ঘরের দরজা, আরেকদিকে বাথরুমের দরজা, পাশে বড় জানলা। ঘরের মধ্যে নীচের রাস্তার সোডিয়াম ভেপারের আভা এসে পড়ছে - আলোছায়ায় টেবিল, চেয়ার, ফ্রিজের আবছা অবয়বগুলো ফুটে উঠেছেজানলা দিয়ে দেখছি দূরের শেষ রাতের তারাগুলো ঝলমল করছে। হঠাৎ পায়ের কাছে শিরশিরানি, গায়ের রোমগুলো আপসে খাড়া হয়ে গেছে, পায়ের ওপর যেন কে আঁচড়ে দিল, স্পষ্ট বুঝতে পারছি ঘরের মধ্যে কেউ আছে, আমাকে কেউ দেখছে! গলার কাছে ধাক্কা দিয়ে হৃৎপিন্ডটা লাফিয়ে উঠে আসছে সেকেন্ডে-সেকেন্ডে! কতক্ষণ ছিলাম মনে নেই –ঘোর ভাঙ্গল মেঝেতে হাল্কা খড়খড় আওয়াজ, তারপর জানলার পাদানিতে একটা ছায়া ফুটে উঠল...অজান্তেই গলাচিরে চিৎকার করতে যাবো ততক্ষণে অপসৃয়মান ছায়াটার অবয়ব  জানালার গোবরাটে ফুটে উঠেছে – ভেপার ল্যাম্পের আলোয় মোটা লেজের শিল্যুয়েট পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। প্রাথমিক স্তম্ভণভাবটা কাটিয়ে নিজের মনেই হেসে ফেলিহাসি শুনে বোন পাশের ঘর থেকে চেঁচাচ্চে – “দাদা, দাদা, কি রে...কি হয়েছে?”
- “মাকে যে আঁচড়াচ্ছিল তাকে পেয়েছি...”
- “অ্যাঁ কি হয়েছে? ইন্দ্র, এই ইন্দ্র...কে আমাকে বল? কি রে আমাকে বল একটু!” – মার গলা ততক্ষণে পুবের আকাশে হালকা কমলা রং ধরতে শুরু করে দিয়েছে।ভাবলাম একটু পাশে গিয়ে বসি। মাকে শান্ত করা দরকার।
-“ধুস তোমার ভয়ের কিছু নেই মা, কৃষ্ণচূড়ার ডাল থেকে কাঠবেড়ালিগুলোর একটা তোমার ঘরে চলে এসেছিল। গতকয়দিন ধরেই আসছে মনে হয়, ডাইনিংরুমের জানালা দিয়ে এসে তোমার ঘরে ঢোকে। তারপর তোমার ভূমিকম্পের মতো নাকডাকায় ভয় পেয়ে পালানোর সময় তোমার পেটে আঁচড়ে দিয়ে পালায়!”
বোন খ্যাঁক খ্যাঁক করে হাসছিল কিন্তু মায়ের চোখমুখের ভাব দেখে আমি থামিয়ে দিলাম – “অ্যাই ফালতু ফক্কড়ের মতো সবসময় হাসিস কেন রে – যা শুয়ে পর, চারটে বেজে গেছে!”
তারপর থেকে মাঝে মাঝেই ভোররাতে মায়ের হুঙ্কার আর বোনের হাসিতে বুঝতাম কাঠবেড়ালিটা এসেছে। পেছনের একচিলতে বারান্দায় ওদের সবার জন্য চিনেবাদাম রেখে দিতাম, এসে কুটুস-কুটুস করে খেত। বহুদিন দুপুরে ওদের আওয়াজ পেয়েছিমাঝে  মাঝে চোখেও পড়ে যেত। গতবছর কুচবিহার কালেক্টরেট থেকে দিনকয়েকের ছুটিতে ফিরে গেছিলাম পুরোনো আবাসনেকৃষ্ণচূড়া গাছটা আর নেই, পাশের পুকুরের ওপর বানানো বহুতলের ছায়া পড়ছিল কাটা গুঁড়িটার ওপর। অযত্নে গজিয়ে ওঠা দূর্বাঘাস ঘিরে রেখেছে “স্টাবি” গুঁড়িটাকে। কয়েকটা কালো ডেঁয়ো পিঁপড়ে ঘুরছে গুঁড়িটার ওপর। দাঁড়িয়ে ছিলাম কিছুক্ষন।তারপর ফিরে আসি।
সেইঘটনার পরের বছর অফিসার্স ট্রেনিংয়ে যাবার আগে কাঠবেড়ালিগুলোকে অনেকটা কাজু দিয়ে এসেছিলাম। এই কৃষ্ণচূড়ারতলাতেই ছড়িয়ে দিয়েছিলাম। আমার প্রথমবারেই হয়ে গিয়েছিল – গ্রুপ এলঙ্কায় সেতুবাঁধার সময় অনেকের সাথে মিলে এক কাঠবেড়ালিও এসেছিল। “ছোট্ট মানুষ”, পাথর বইতে তো পারত না, তাই নুড়ি বয়ে এনেছিলশ্রীরামচন্দ্র খুব খুশী হয়েছিলেন বাবা থাকতে ছোটবেলায় এই গল্পটা প্রায়ই বলত, বোনকে ঘুমপাড়ানোর সময়, আমি পাশে শুয়ে চুপ করে শুনতাম। বলত -  
-“যতটুকু পারবি চেষ্টা করবি, বড় বলে ভয় পাবিনা ইন্দ্র
রামচন্দ্রের কাঠবেড়ালি - পিঠে হাত বুলোনোর তিনটে দাগ।