গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

রবিবার, ১৬ জুলাই, ২০১৭

তাপসকিরণ রায়

জবলপুর, হান্টেড কাহিনী--

ভিক্টোরিয়া হসপিটালের স্ট্রেচার


জবলপুরের ভিক্টোরিয়া হসপিটাল। রেলওয়ে হসপিটাল। হসপিটাল বলতেই জন্ম মৃত্যুর আখাড়া বলা যায়। জন্মের পরে তো মানুষ বাস্তব জীবনে এসে ওঠে আর অন্যদিকে মৃত্যুর পরে নাকি পরলোকে বাস ঘটে। জন্মের পর বাস্তব জীবনে পরলোকের অভিজ্ঞতা থাকে না। তবু জ্ঞান, ধারণা ও ঘটনা পরম্পরা বিন্যাসে আমরা অনেকেই বিশ্বাস করি যে পরলোক আছে, জন্ম-জন্মান্তর আছে। এ ব্যাপারে অনেক অনেক ঘটনা ও গবেষণা হয়েছে, হচ্ছে বা হবে।

যাইহোক যে গল্প বলতে যাচ্ছিলাম তা কিন্তু গল্প হলেও সত্যি।
সব আত্মা, প্রেতাত্মা, বিদেহীরাই এই লোকে অদৃশ্যমান তা  কিন্তু নয়। দেখতে বা শুনতে পাওয়া যায় যে কিছু আত্মারা নাকি পৃথিবীর অগাধ মোহমায়া ছেড়ে সহজে বেরিয়ে যেতে পারে না বা চায় না। সে সব আত্মারা  তীব্র ইচ্ছের ফলে মানুষকে দেখা দেয় বা দেখা দিতে পারে। আর দেখা দেওয়াটাই তাদের অস্তিত্বের একমাত্র প্রমাণ নয়, তারা তাদের সক্রিয়তার প্রমাণ দিয়ে চলে অর্থাৎ তারা এ লোকে নিজেদের অপূর্ণ কাজ পূর্ণ করতেও সচেষ্ট থাকে।

এই ভিক্টোরিয়া হসপিটালেও এ ধরনের ঘটনা ঘটছিলো। রাত বারটার পর থেকে জেগে ওঠে সে বিদেহী আত্মা। আর জেগে উঠেই সে শুরু করে তার নিয়মিত ডিউটি। রাতের শান্তটা ভেঙে হঠাৎ ঠুকঠাক খুটখাট স্ট্রেচার নাড়াচাড়ার আওয়াজ পাওয়া যায়। এখানকার নার্স, ডাক্তার ও পেসেন্টরা ওই নিশুতিতে যারা জেগে থাকে তারা দেখে ও শোনে সেই শব্দ--কোন পেশেন্টকে নিয়ে আসার জন্যে কেউ যেন স্ট্রেচার ঠেলে হসপিটালের গেটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। না কাউকে দেখা যায় না--কোন ছায়া, ছায়াদেহ বা কোন অশরীরী ছাপ সেখানে পাওয়া যায় না--শুধু খালি স্ট্রেচার চলছেআবার ফিরে আসছে স্ট্রেচার, তাতে যেন কোন রোগী শায়িত আছে ! তৎপরতার সঙ্গে সেটা কোন খালি বেডের কাছে যাচ্ছে। ঘট ঘটাং শব্দ হয়ে স্ট্রেচার এদিক ওদিক দুলে উঠছে, মনে হচ্ছে কোন রোগীকে কেউ  খলি বেডে শুইয়ে দিচ্ছে। বিছানায় কোন পেসেন্ট নেই, তবু কোন পেসেন্ট যেন ভর্তি হল। স্ট্রেচার আবার ফিরে এলো তার নিয়ম মাফিক বিশ্রামের জাগায়।

এ ঘটনা ঘণ্টা খানেকের জন্যে প্রতিদিন ঘটে যাচ্ছে। কারো চোখে কিন্তু অন্য কিছুই পড়ছে না--কেবল খলি স্ট্রেচারের সময় ও নিয়ম মাফিক আনাগোনা অনেকেই দেখছে। এ এখন হসপিটালের নিত্যদিনের এক স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে গেছে।  কখনও নার্সের পাশ দিয়ে স্ট্রেচার চলে যাচ্ছে--হয়ত নার্স তাকে নিজের মত করে যেতে দিচ্ছে। কখনও ডাক্তার ভীত হয়ে দূরে সরে গিয়ে দাঁড়িয়ে স্ট্রেচারের যাওয়া আসা দেখছেন। জেগে থাকা রোগীরা ভয়ে জড়সড় হয়ে আড় চোখ নিয়ে দেখে যাচ্ছে সে দৃশ্য। একবার ভুল বশত: একজন স্ট্রেচারের সামনা সামনি হয়ে পড়েছিল। ভীত লোকটা থ মেরে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলো, সে সময় স্ট্রেচার আপনি আপনি থেমে গিয়েছিলো, মুহূর্ত পরেই সেটা সেই লোকটাকে পাশ কাটিয়ে নিজের গতিপথ পালটিয়ে চলে গিয়েছিল।

সংবাদ পত্রে এ ঘটনা এসেছে। এ ঘটনার একটা ভিডিও তৈরি হয়েছে। তাতে দেখানো হয়েছে, সে স্ট্রেচার যাচ্ছে, আবার ফিরে আসছে। স্ট্রেচার শেষ পর্যন্ত রোগীর খালি বেডের কাছে গিয়ে কিছুটা ওপর নিচে হয়ে আবার ফিরে এসে নির্দিষ্ট রাখার স্থানে এসে নিশ্চল পড়ে থাকছে।