গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

রবিবার, ১৬ জুলাই, ২০১৭

নীহার চক্রবর্তী

প্রেমানল জ্বলিয়াছে 


''জাবেদা তুই আমাকে এড়িয়ে যাবি না কখনো সে আমি জানি । আমি তোকে চিনে গেছি । বুঝে গেছি তোর ভেতরে দিনে-দিনে আমার জন্য একটা প্রেমের সাগর তৈরি হয়েছে ।''
প্রমোদ এক-মুখ হেসে একনাগাড়ে কথাগুলো বলে গেলো । জাবেদা শুনে অনিন্দ্য-সুন্দর হাসি হাসল । 
পরে বলল,''আমিও তোকে বুঝি রে । আমার জন্য তোর মধ্যে একটা প্রেমার্ণব গড়ে উঠেছে । কিন্তু সমস্যা তো তুই জানিস সব ।''
জাবেদার কথা শুনে প্রমোদ চুপ করে কীসব ভাবতে থাকলো তখন ।
বেশ কিছু পরে ও মুখ খুলল । 
বলল অস্ফুট-গলায়,''সে আমি খুব বুঝিতোর বাবা হিন্দু মানেই বোঝে শত্রু । আমার বাবাও মুসলমানদের শত্রু বলে ভাবে । আসলেই কি তাই ? ঈশ্বর কি আমাদের হিন্দু-মুসলমান করে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন ? আর প্রেমের কাছে সব তুচ্ছ । তাই না ? দেখিস আমাদের মনের জোর থাকলে সব বাধা পেরিয়ে যাবো একদিন । তুই শুধু ভয় পাস নারে ।''
প্রমোদের কথাগুলো শুনে তখন জাবেদার মুখে হাসি ফুটল ।
হেসে উত্তর দিলো,''বেশ । ভয় পেলাম না । তবে তুই দায়িত্ব নে আমার মেজাজি বাবাকে ম্যানেজ করার ।'' 
জাবেদার কথা শোনার পর স্মিত হেসে প্রমোদ বলল,''আমার বাবাকে আমি ম্যানেজ করতে পারবো না । সে একদম বোঝার মানুষ নয় । দেখি কাকুর সঙ্গে কথা বলে । আমাকে কিন্তু একটু হলেও ভালোবাসে । তাই নারে ?''
জাবেদা তখন প্রমোদের কথা শুনে অম্লান হেসে বলে,''সে আমি জানি । তবে দেখ । তবে দেশ ছাড়ার হিড়িক পড়ে গেছে হিন্দুদের মধ্যে । যা করার এখুনি কর ।''

তার দু-একদিন পর প্রমোদের পাশের বাড়ির বংশী হালদার বলল প্রমোদের বাবাকে,''দাদা,এ দেশ ছেড়ে আমরা চললাম । এ দেশ আর আমাদের নয় বুঝে গেছি । সামান্য দামে কেদার মোল্লার হাতে বাড়ি তুল দিচ্ছি । আগামী পরশু আমরা পশ্চিমবঙ্গে চললাম । জানি না কি আছে কপালে আমাদের ।''
পাশের ঘর থেকে সব শুনল প্রমোদ শুনে বেশ আতঙ্কিত হল । বেরিয়ে এলো ঘর থেকে ।
ও বংশী হালদারকে বলল,''এভাবে তো দিনে-দিনে অনেকেই চলে যাবে । তাই না ? জানি না আমরা কি করবো ।''
প্রমোদের বাবা শুনে মাথা নিচু করে বসে থাকলো খানিকক্ষণ । মুখ তুললে তাকে খুব উদাসী দেখাল । চোখের কোণে তার জল চিকচিক করছে । বংশী হালদারের চোখেও জল ।
প্রমোদ সইতে না পেরে আবার ঘরে ঢুকে জাবেদাকে ফোন করলো । জাবেদা একটু অবাক হল শুরুতেই ওর থমথমে গলা শুনে ।
জাবেদা প্রমোদের সব কথা শোনার পর একটা লম্বা শ্বাস ফেলে বলল,''জানি না কি হচ্ছে । এ আমার মাথায় আসে না। মুক্তিযুদ্ধ তো আমরা একসাথেই করেছিলাম । তবে আজ ভাগাভাগি কেন ? তোমরা কিন্তু ঠিক থেকো । আমাকে ভালো যদি বেসেই থাকো,তবে এ দেশ ছাড়ার কথা ভেবো না । কেমন ?''
প্রমোদ স্পষ্ট অনুভব করলো জাবেদার কান্না-ভেজা গলা ।
ও তখন অস্ফুট-গলায় বলল,''আমার তো এ দেশ ছাড়ার ইচ্ছে নেই । এখানেই তো চাকরী করছি আমি । ও বাংলায় গেলে ভবিষ্যৎ তো অনিশ্চিত । তাই না ?''
শুনে একটু স্বস্তি পেলো তখন জাবেদা । 
একটুখানি হেসে উত্তর দিলো,''দেখো তবে । ভেঙে পড় না । তোমার বাবাকে বুঝিও ।''
প্রমোদ উত্তর দিলো মধুর হেসে,''আমাদের ইচ্ছের জয় হোক ।''

এর কিছুদিন পর প্রমোদের বাড়ির আশেপাশের আরও দুই হিন্দু-পরিবার তাদের দেশ ছেড়ে পশ্চিমবঙ্গে চলে গেলো । বিদায়ের আগে দুই বাড়ির মালিক দেখা করে প্রমোদের বাবার সঙ্গে ।
তাদের একইরকম বক্তব্য,’’এ দেশ আর আমাদের নয়,দাদা । মুসলমানরা ছেয়ে ফেলেছে সব । আমাদের আত্মসম্মান বলে আর কিছু নেই । ভবিষ্যৎ অন্ধকার আমাদের । পারলে আপনিও আমাদের পিছনে আসুন । ভারতে কিছু একটা হবেই ।‘’
তাদের কথা শুনে খুব চিন্তায় পড়ল প্রমোদের বাবা । প্রমোদের সঙ্গে এ নিয়ে একান্তে কথা বলল ।
সারা মুখে বিষণ্ণতা নিয়ে সে বলতে থাকলো,’’শুনলি তো সব । এবার বল আমাদের কি করার আছে । এখানে প্রশাসন বলে কিছু নেই । মারি তো গণ্ডার লুটি তো ভাণ্ডারের দেশ হয়ে গেছে । বাড়ি বেচেসামান্য় কিছু নগদ পেলেও এ দেশ আমি ছেড়ে দেবো । আমার প্রিয়জনদেরও আমার সঙ্গ নিতে বলবো ।‘’ 
 কথাগুলো বলসে সে একরাশ হতাশা নিয়ে বসে থাকলো ।
অনেকক্ষণ চুপচাপ থেকে প্রমোদ বলল,’’তা কেন ? আর কিছুদিন আমরা অপেক্ষা করতেই পারি দিন ভালো হতেও পারে । দেখাই যাক না,বাবা ।‘’
কিন্তু পরে একইরকম কথা শোনালো প্রমোদের বাবা । প্রমোদ অসহায়ের মতো তখন তার দিকে তাকিয়ে থাকলো । সেখান থেকে সরে যাওয়ার পর প্রমোদের চোখে জল ভরে এলো জুনিয়ার ডাক্তার তথা ওর স্বপ্ন-কুঁড়ি জাবেদা খাতুনের জন্য ।

জাবেদাও শত কাজের মাঝে একটু-একটু করে খবর পাচ্ছে চারদিকের । মন তাই ভালো নেই ওর । বারবার ভেবে ও খুব কষ্ট পাচ্ছে প্রমোদের জন্য । দুজনের চলার পথ বুঝি রুদ্ধ হল এবার ।
এ ভেবে প্রমোদ ফোন করলো ওকে । বাবার মনের কথা সব শোনালো । অনেক হিন্দু যে দেশ ছাড়ছে,সেকথাও জানালো জাবেদাকে সখেদে । 
সব শুনে বলল জাবেদা,’’বুঝি সব । জেনেছি অনেক । কিন্তু এমন হবে কেন ? শেখ মুজিবের দেশের এমন হওয়ার তো কথা নয় । কেন হচ্ছে এমন ? তুমি কিছু জানো, প্রমোদ ?’
প্রমোদ তখন এক চিলতে কষ্টের হাসি হেসে উত্তর দেয়,’’জানলে তো হয়েই যেত । আসলে এ অপশক্তির সুপ্তকামনা । আজ জেগে উঠেছে । এ বুঝি থামার নয় আর । কিন্তু আমার বাবাকে কে ঠেকায় ? কিছুই মাথায় আসছে না আমার,জাবেদা ।‘’
‘’
কিন্তু আমাদের দুজনের চলার পথ কি একেবারে রুদ্ধ হয়ে গেলো ? সে কি হওয়ার ছিল ? কী ভাবছ তুমি এ নিয়ে বল ।‘’
জাবেদার কান্না-ভেজা কথায় প্রমোদ তখন একেবারে নিরুত্তর । জল-ভরা চোখ নিয়ে ওর দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলো শুধু ।
দেখে জাবেদার চোখেও জল এলো । 
কিন্তু ও রুমাল দিয়ে চোখ মুছে নিয়ে আশাসূচক স্মিত হাসি হেসে বলল ওকে তখন,’’আর দেরী কর না । আমার বাবার সঙ্গে কথা বল । কাল তোমার ছুটি । চলে এসো আমাদের বাড়িতে ।‘’
জাবেদার কথা শুনে প্রমোদ এক ঝলক হেসে বলে উঠলো,’’আমি কালই যাচ্ছি কাকুর কাছে । মার হাতের তৈরি নাড়ু নিয়ে তৈরি থেকো কিন্তু ।‘’ 
প্রমোদের কথায় জাবেদার সারা মুখে ওর কিশোরী-বেলার হাসি লুটোপুটি খেতে থাকলো ।

''আরে,বলছ কী তুমি,প্রমোদ ? এ বুঝি হয় ? আমরা ভিন্ন ধর্মের মানুষ । তোমরা ভিন্ন ধর্মের মানুষ । মেলে কখনো ? আর আমি সব বুঝে মিলিয়ে দিলেই হল ? আমাকে আস্ত রাখবে আমাদের মানুষরা ? তুমি অন্য চিন্তা কর । এ হয় না ।''
দু'চোখ বিস্ফারিত করে কথাগুলো বলে গেলো জাবেদার বাবা সালাউদ্দিন প্রমোদকে । 
প্রমোদ তার কথায় কিছুটা দমে গেলেও অনাবিল হেসে বলল,''সে আমি কিছুটা হলেও বুঝি,কাকু । কিন্তু আমি যে জাবেদাকে ভালোবাসি । জাবেদাও আমাকে মন-প্রাণ থেকে চার । আমাদের প্রেমের কি কোন মূল্য নেই ?''
পাশের ঘর থেকে জাবেদা সব শুনছে তখন । ওর গাল বেয়ে টপটপ করে জল ঝরেই চলেছে । পাশে বসে ওর মা সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে । 
সালাউদ্দিন প্রমোদের কথা শুনে খানিকক্ষণ কিছু ভেবে নিলো । 
পরে বলল,,''দুজন দুজনের বন্ধু ভাবতে পারো । তার চেয়ে বেশী কিছু নয় । বুঝলে ? এ নিয়ে আর কথা না বলাই ভালো ।'' 
এরপর প্রমোদ কষ্টের হাসি হেসে তাকে বলল,''ঠিক আছে,কাকু । আমি ভেবে দেখি । তবে আর একটা কথা মনে এলো । বলি ?''
সালাউদ্দিন উদাসভাবে বলল,''বলে ফেলো । তবে ঘর বাঁধার কথা নিশ্চয় না সে ?''

''আমি তো জাবেদাকে নিয়ে বিদেশে চলেই যেতে পারি । তাই না,কাকু ? আমরা শিক্ষিত দুজনেই । যেকোনো দেশে কিছু একটা কাজ জুটিয়ে নিতে পারবো । আর আপনার মনে হয় কোন সমস্যা হবে না ।''
প্রমোদের পরের কথাগুলো বুকে আগুন জ্বলিয়ে দিলো সালাউদ্দিনের ।
সে বেশ মেজাজের সঙ্গে বলে উঠলো প্রমোদকে,''মানে চুরি ? আর সে আমাকে জানিয়েই ? এ কেমন কথা ? তোমার কথাগুলো খুব বুকে লাগলো আমার । তওবা,তওবা । এমন কথা আর মনে এনো না । প্রেম বাঁচানোর জন্য এ দেখছি বড় নীচ পথ ।''
তখন প্রমোদ অস্ফুট-গলায় বলল তাকে,''না হয় দোষ চাপাবেন আমার ওপর । সবাই আমাকে খারাপ মানুষ হিসাবেই জানুক । তবু আমার আর জাবেদার প্রেম বেঁচে যাবে । তাই না ?''
সালাউদ্দিন এরপর প্রমোদের সঙ্গে কথা বলতে রাজী ছিল না । সারা মুখ কালমেঘের মতো করে নমাজ পড়তে চলল সে । প্রমোদ অপলকে তাকিয়ে তাকিয়ে এক তথাকথিত ধার্মিকের যাওয়া দেখতে থাকলো । ক্ষণে-ক্ষণে ওর চোখেমুখে পশ্চিমী মেঘ জমতে শুরু করলো ।

সেখান থেকেই প্রমোদ বাড়ি ফিরে যাচ্ছিলো । এমন সময় জাবেদার মা একটা প্লেটে নাড়ু এনে ওর সামনে দাঁড়ালো । মুখে তার তখন শ্রাবণ-সন্ধ্যায় বৃষ্টি-ধরা এক চিলতে স্বস্তির হাসি । 
প্রমোদকে বলল,’’তোমার প্রিয় জিনিস নাড়ু । খাবে না তুমি ?’’ 
প্রমোদ নিজের ব্যথা সামলে নিয়ে তখন তার কাছে একটুকরো হেসে এগিয়ে গেলো ।
বলল তাকে,‘’দিন । কেন খাবো না,শুনি ? জাবেদাকে তো বলেই রেখেছিলাম আমি ।‘’ 
দুটো নাড়ু একসাথে মুখে দিয়ে প্রমোদ তৃপ্তির হাসি হাসল ।
তারপর এক ঢোঁক জল খেয়ে জাবেদার মাকে বলল,’’তাহলে আসি ? আপনারা সবাই ভালো থাকবেন । আমি অজানার উদ্দেশ্যে বেরচ্ছি খুব শিগগির । আমাকে দোয়া করবেন খুব ।‘’ 
কথাগুলো বলেই বেরিয়ে যাচ্ছিলো প্রমোদ । কিন্তু সামনে তখন উপস্থিত হল জাবেদা । অঝোরে কাঁদছে ও । জাবেদার মা তা দেখে মুখে কাপড় দিয়ে কান্না সামলাতে সামলাতে অন্যদিকে চলে গেলো । 
সহসা প্রমোদ জাবেদার হাত ধরে চোখেমুখে অতীব ব্যথা নিয়ে বলে উঠলো,’’যা হারিয়ে যায়,তা আগলে বসে রইবো কত আর ? ভেঙে পড় না । আমাদের স্মৃতি কম নেই । স্মৃতি আঁকড়ে ধরে আমরা দুজন বেঁচে থাকবো । কান্না থামিয়ে একবার হাসো । তোমার হাসিটা পাথেয় করে বেরিয়ে যাই এবার ।‘’
জাবেদা প্রমোদের হাত থেকে নিজের হাত ঝটপট সরিয়ে নিয়ে আধ-ফোটা গলায় বলে উঠলো,’’কে তোমাকে থাকতে বলেছে ? যাও,যাও ।‘’
জাবেদার মুখে হাসি না দেখেই প্রমোদ বেরিয়ে গেলো তারপরেই । তবে ও এক ঝলক হাসতে ভুলল না । বুঝি জাবেদার পাথেয়র কথা ও তখন ভেবেছিলো ।

তার এক সপ্তাহ না কাটতে কাটতে জাবেদার সতীর্থ জুনিয়র ডাক্তার মাসুদ রানা জাবেদাকে ফোনে জানায় ওর বাড়িতে,’’তোমার বন্ধু প্রমোদ তো এ দেশ ছেড়ে চলে গেছে । সাথে ওর বাবা-মাও গেছে শুনলাম । রাসেদুল ভাই আমাকে জানালো কাল । ও তো প্রমোদের বন্ধু ।‘’ 
শুনে চমকে উঠলো জাবেদা । তারপর হাপুস-নয়নে কাঁদতে শুরু করলো । কথা বলতে পারলো না মাসুদের সঙ্গে । নিজেই ফোন কেটে দিলো । মাসুদ আবার চেষ্টা করল । কিন্তু রিং হয়ে হয়ে ফোন কেটে গেলো । পরে জাবেদার মুখে জানলো ওর মা । মা কিছু সময় অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলো বাইরের ঘোলাটে আকাশের দিকে । ফুঁফিয়ে কাঁদতে কাঁদতে সে নিজের কাজে চলে গেলো ।
তার মুখেই পরে শুনল জাবেদার বাবা ।
সে থম মেরে থেকে থেকে শেষে বলল নিচু-গলায়,’’কি যে হচ্ছে কে জানে । মাথায় আসে না আমার ।‘’

তারপর কুড়ি-কুড়ি বছর পার । 
জাবেদা এখন দেশ-বিখ্যাত শল্য-চিকিৎসক করিম শেখের স্ত্রী । তাকে নিয়ে জাবেদা অসুখী নয় । কিন্তু একান্ত সময়ে ওর মনে পড়ে যায় প্রমোদের বড় শান্ত মুখটা । একেবারে নির্ভেজাল প্রেমিক পুরুষ ও । চোখ বুজলে জাবেদা ওর মুখ-ভরা হাসিটাও চাক্ষুষ করে । তখন ওর গাল বেয়ে ঝরতে থাকে অবিরাম অশ্রু । 
অনেক পরে জাবেদা শুনেছে,প্রমোদ এখন কোলকাতায় আছে । কি এক কোম্পানিতে কাজ করে ও । বিয়েও নাকি করেছে । একটা বুঝি ছেলে ওর । প্রমোদের মা-বাবা ইহলোক ত্যাগ করেছে দেশ ছাড়ার কয়েকবছরের মধ্যে ।
জাবেদা শুধু ভাবে । ভেবেই যায়,আমার খুব মনে আছে প্রমোদকে । ওর মনে আছে তো আমাকে ? ভুলে গেলো না তো আমাকে অভিমানে একেবারে ? তখন জাবেদার সম্বল শুধু কান্না । 
স্বামী করিম শেখ তখন জাবেদার পিঠে হাত রেখে অম্লান-হেসে বোঝায়,’’নিশ্চয় মনে আছে তার । এ প্রাণের ডাক । সে ডাকে সাড়া না দিয়ে পারে ও ? স্মৃতিপথ ধরে তোমরা এখনো দুজন হাঁটছ । সে কি কম ব্যাপার ? পরম করুণাময় আল্লাহ্ জেনে নিশ্চয় খুব খুশী ।‘’ 
স্বামীর কথা শুনে তখন জাবেদা কিশোরীর মতো মৃদু-মৃদু হাসতে হাসতে চোখের জল মুছতে থাকে ।