গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

রবিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১৬

পার্থ রায়

বিবর্ণ শরৎ

দেখতে দেখতে আর একটা শরৎ এসে গেলো, পুজো আসছে।যদিও বর্ষা যাই যাই করেও রয়ে গেছে খানিকটা- আবহাওয়াতেও, ঈশানীর মনেও।গত লক্ষ্মী পুজার পর পরই লোকটা যেন বেমালুম উধাও হয়ে গেলো। ফেসবুকে, হোয়াট্স অ্যাপে খুব কম আসে এখন ঈশানী। ভালো লাগে না, আরণ্যক ছাড়া খাঁ খাঁ করে । ওর আই ডি টা ফাঁকা, ইনবক্সে উঁকি মারে, যদি মেসেজ আসে। প্রথম দিকে অস্থির হয়ে ভয়ে ভয়ে বার দুই ফোন করেছিল ওর নাম্বারে। প্রতিবারই মহিলা কণ্ঠের হ্যালো শুনে ফোন নামিয়ে রেখেছে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। নানা রকম খারাপ চিন্তা মাথায় আসে, বড় কোন অসুখ বিসুখ হোল না কোন দুর্ঘটনা হোল। কত চোখের জল ফেলেছে ঈশানী, নিঝুম রাত আর খাঁ খাঁ করা দুপুর গুলো তার সাক্ষী।আরণ্যকের এই আচরণে প্রথম দিকে অভিমান, রাগ সব মিশে একটা অনুভূতি ছিল।সময়ের পলি পড়তে পড়তে এখন শুধু রয়ে গেছে এক হাহাকার আর কিছুটা আক্ষেপ।এখন মনে হয় ফেসবুকে আরণ্যকের সাথে এই ভালবাসার সম্পর্কে জড়ানো ঠিক হয় নি, তাহলে এই কষ্ট পেতে হতো না। বিবাহিত জীবনে সুখী  দুটো মন কিভাবে যে এক আত্মিক বন্ধন আর নির্ভরতায় জড়িয়ে গেছিল, তার ব্যাখ্যা বা কোন উত্তর দুজনের কেউই খুঁজে পায় নি।ঝগড়াও যে হতো না তা নয় কিন্তু ভালবাসার টানে খুব সহজে মিটেও যেতো। কার কি পছন্দ, কি অপছন্দ সব জানা ছিল একে অন্যের।ঈশানী জেনে গেছিল, পুজো আসলেই নুতন শাড়ি পড়ে, দুই ভ্রূর মাঝখানে বড় টিপ লাগিয়ে, কানে ঝুমকো পড়ে আলতো ঘোমটা দেওয়া ছবি ইনবক্সে দিতে একটু দেরী হলেই বাবুর গোঁসা হয়ে যেত। আরণ্যকের এই ইচ্ছের মেসেজ যেন মুখস্থ ঈশানীর। ##
মেয়েটা আজ হস্টেলে ফিরে গেলো, পুজোর আগে আবার আসবে।স্বামী অফিসে। স্নান সেরে, ঠাকুরকে জল দিয়ে আলসে ভাবে ঈশানী বিছানায় এসে বসল।এই বিশ্রাম, এই অবসরটা আর আনন্দ দেয় না ঈশানীকে। অথচ আগে এই অবসরটা বের করার একটা তাড়না থাকতো ওর। আরণ্যক যে অপেক্ষা করতো।  
ও কি ভুল শুনল? সেলফোনটাতে সেই পরিচিত শব্দ নিয়ে একটা মেসেজ ঢুকল? বুকটা ধক করে উঠল।হে ভগবান!যেন সত্যি হয়।কাঁপা কাঁপা হাতে হোয়াট্স অ্যাপে গেল ঈশানী। ভুল দেখছে? না! ভুল না।
Tomake ekbar dekhte chai. Khub icche korche.. sei saje tumi vule jao ni to amake?? Plz, plz raag koro na, Misti. Inbox e ekbar sei saje aso tumi. Somoy beshi nei. Plzz”.

খুব খুব অভিমান হচ্ছে ঈশানীর কিন্তু মেসেজগুলো ক্রমশ ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। অভিমানের মেঘ গুলো গলে গিয়ে কখন যেন এক পশলা বৃষ্টি এসে ভিজিয়ে দিয়ে গেল ঈশানীকে। 

      সেই শেষবারের মতো ঈশানী আরণ্যকের ইচ্ছে পূরণ করেছিল। তারপরে আর কোন দিন মেসেজ আসেনি, ঈশানীও আর ঝুমকো পড়ে নি কানে, মাথায় ঘোমটা দেয় নি, দুই ভ্রূর মাঝে টিপ পড়ে নি। নুতন শাড়ি পড়তে হয়, তাই পড়ে। ফুসফুসের ক্যান্সারের সাথে লড়াই করতে করতে ক্লান্ত আরণ্যক একদিন চির অসীমে মিলিয়ে গিয়েছিল। ঈশানী জানতেও পারেনি কারণ আরণ্যক যে কিছুই বলে যায় নি। নিরালা দুপুর গুলোতে  ঈশানীর কান, মন প্রাণ অপেক্ষায় থাকে সেই বিশেষ আওয়াজ শোনার জন্য। কখনও এক শূন্যতা গ্রাস করে, কখনও ভীষণ কান্না পায়। শরত এসেছে, মা দুর্গাও আসবেন, শুধু…….