রাতের একপশলা বৃষ্টিতে মেঘ কেটে হয়ে বেশ ঝলমলে রোদ উঠেছে আজ,
চায়ে
চুমুক দিতে দিতে চারতলার ব্যালকনি থেকে রাস্তার ওপাশের মাঠটাতে ছেলেগুলোর
প্র্যাকটিস দেখছিল সন্দীপ।নাহ্ ! চা টা বেশ ভালোই বানিয়েছে ! নিজেই নিজের তারিফ করে ।
দশ মাস হলো হাকিমপাড়ার এই ফ্ল্যাটটা নিয়েছে।১২০০ স্ক্যোয়ার ফিট।সবমিলিয়ে ত্রিশ
লাখের ওপর পড়েছিল।ছোট নিলেই হতো, অতসীর জেদ। আজ অব্দি এর কাছে
কোনদিনই জিততে পারলো না।
শুতে শুতে বেশ রাত হয়ে গেল কাল…..আজকের দিনটাও ব্যস্তই কাটবে। ঘরে ঠুকে শেভিং ক্রিমটা গালে
লাগালো, অতসী এখনও বেরোয়নি বাথরুম থেকে।
….ফিরতে দেরী হবে। তুমি খেয়ে নিও…..বেরোনোর জন্য রেডি সন্দীপ।
ড্রেসিং-টেবিলের সামনে তুলির শেষটান দিতে দিতে অতসী বললো….নতুন শিকার নাকি?
…নানা ! অফিসে অনেক কাজ বাকি। তোমার
ব্যাঙ্কেও যাবো-লোনটার জন্য। আর…..সেটা অবশ্য চুনোপুটি।
….লোনটার ব্যাপারে কথা বলবো নাকি ?
….
নাহ ! শৈবালদা
ঠিক ম্যানেজ করে নেবে। বেরিয়ে পরলো সন্দীপ।
এখনও হামারা বাজাজটাই ওর ভরসা। সাত বছর হলো, অনেক দিয়েছে দু’চাকার লাকি বাহনটি। আজকাল বেশ
তাড়াতাড়িই কলকব্জাগুলো সারাতে হচ্ছে বটে তবু,…..মায়া ছাড়তে পারে না সন্দীপ।
অতসীও জ্বালাচ্ছে বেশ কিছুদিন। প্রেস্টিজ নেই ! চারচাকা নিয়েই নেও না ! EMI হয়ে যাবেখন, দুজনের মিলিয়ে !
বৌকে লুকিয়ে মাকে পাঠানো মাসে মাসে পাঁচহাজার টাকার কথা ভাবে সন্দীপ।
পয়সা না হলেও ভালোই নাম ছড়িয়েছে ওর….অন্তত নিজের জগতে।‘জাগরণ’
পত্রিকার
এডিটর শৈবাল দের সবচেয়ে কাছের আর কাজের লোক। বাইরের লোক জানতেও পারে না শহরের সব
সাড়া জাগানো খবরের অন্তর্তদন্তের পেছনে মাস্টারমাইন্ড সন্দীপ সরকার।
আগেরদিনের রয়ে যাওয়া কাজ সেরে উঠতেই তিনটে বেজে গেল।শৈবালদা এখনও এসে
পৌঁছননি।ডেস্ক থেকে উঠে পড়লো সন্দীপ, লাঞ্চ সেরেই বেরোতে হবে।
ভেনাস মোড় ক্রস করে হিলকার্ট রোড ধরতেই যেন মুখের সামনে নেচে উঠলো সোনালী
চূড়াটা, মেঘমুক্ত আকাশে রোদ পোয়াতে।
…..আমিও পৌঁছব একদিন…শিলিগুড়ি কলকাতার সীমানা ছাড়িয়ে
তোমার উচ্চতায়, দেখে নিও!
অ্যাপয়েনমেন্ট ছিল সাড়ে চারটাতে। পাঁচমিনিট আগেই পৌঁছে গেল সন্দীপ।
ঠিক জালে ফেঁসে গেলেন অতসীদের ব্যাঙ্কের ম্যানেজার ভদ্রলোক- মিঃ সরখেল
। সূদর্শন , প্রায় ৬ ফিটের কাছাকাছি…চেইন স্মোকার-555 । একমুঠ ধোঁয়ার কুন্ডলির ফাঁক গলিয়ে বল্লেন 15%...চোখেমুখে কনফিডেন্স।
…ফুসফুস দুটোতো নিজেই খেয়েছিস…বাকিটা আমি দেখছি।
মনেমনেই হাসে সন্দীপ।
২৫ লাখের লোন-কাগজপত্র আগেই দেখানো ছিল। আজ ছিল ফাইনাল ডিল । অনেক বলেকয়ে 10%এ রাজি হলেন…তবে অ্যাকাউন্ট নাম্বার দেবেন না-ক্যাশেই
নেবেন।
গোপন ক্যামেরায় রেকর্ডেড হয়ে রইলো সব কথোপকথন…এবার বমাল ধরার অপেক্ষা মাছটাকে।
সেদিন পার্টিতে অতসী আলাপ করিয়ে দেওয়ার পর, দুচার কথার পরেই সরখেল সোজাসুজি
যখন…আপনারদের অফিসের জন্য লোন লাগলে
বলবেন, ব্যবস্থা হয়ে যাবে বলেছিল, সন্দেহটা তখনই হয়েছিল। নতুন
এসেছে, ব্যাটা তো আর জানে না…
যা ভেবেছিল সেটা হলোনা-অফিসেই আসেননি শৈবালদা। ফোন করেছিলেন সাব-এডিটর মুকুলকে। মেয়েকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেছেন-কাল আলোচনা করবেন সন্দীপের সাথে।
সবাইকেই যেন কেমন ঠেকছে আজকাল সন্দীপের। আগরওয়ালদের কেসটা যেভাবে চেপে দিলেন
শৈবালদা…..ব্ল্যাকমেল করে টাকা কামাচ্ছে
নাতো!!
ধুর!
বড়োবেশি সন্দেহপ্রবন হয়ে উঠছি আজকাল!
নিজেকেই বকে দিল সন্দীপ।
৮টার মধ্যেই বাড়ী ফিরে এল।
বেজেই চলেছে কলিং-বেলটা।
সেকি !
এখনো ফেরেনি অতসী ?...ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে দরজা খুলে
ভেতরে ঢুকলো সন্দীপ।
খুউউব চেনা একটা সিগারেটের গন্ধ ধক্ করে নাকে এলো…..একটা চিনচিনে জ্বালা….ছড়িয়ে পরছে বুক থেকে মাথায়।
এত কাছে , তবু অধরা !!