দেশলাইয়ের বাক্সটায় বিড়ি ঠুকতে ঠুকতে করিম
চাচা বলে , ভাড়া বিশ টাকা লিবো
যাইতে হইলে চল না হলে অন্য কারে ডাক ।
...
সে কি ! তোমারে না কাল থেকে বলেছি আমার ইন্টারভ্যু আছে দশটায় । এখান থেকে ষ্টেশন
পৌঁছতে কুড়ি মিনিট লাগবে । অত টাকা কেন চাও । গ্রামের ভ্যান রিক্সা , গ্রামের ছেলেদের কাজে আসবে না ত কাদের কাজে আসবে ?
...তা আমি কি করবো ! আমার ও ত প্যাটটারে
খিধা লাগে না কি , তার ওপর ছাওলদের প্যাটের খিধা , বিবির আজ এটা কাল ওটা । আমার কি ভালো লাগে তদের লইগ্যা চাইতে ?
...উপায় না দেখে অর্ণব উঠে পড়ে । বসেই বলে
তাড়া তাড়ি চল লোকালের টাইম হয়ে
গিয়েছে ।
...তর
অত তাড়া কিসের ? আমি তরে ঠিক সময়
ইষ্টিসনে পৌঁছে দিমু। চাকরি পেলে খাওয়াইবি ত না কি চাচারে ভুইলা যাবি । দম বিরিয়ানি খামু বলে খক খক করে কাশে ।
দুর্গা
দুর্গা বলে সারা রাস্তা অর্ণব ওই খেঁকুড়ে বুড়ো করিম চাচা নামক বুড়োটাকে বরদাস্ত করে । স্টেশন পৌঁছতেই অর্ণবের
ধড়ে প্রাণ এলো । ভাড়া মিটিয়ে নেমে পোঁ পা ছোটে ষ্টেশনে । গাড়ি ইন করতে সময় আরও
বাকি । টিকিট কাউন্টার থেকে টিকিট কেটে অপেক্ষা করে প্ল্যাট ফর্মের ধারে । আজকের
টাইমস অফ ইন্ডিয়া কাগজটা কিনে চোখ বুলিয়ে নেয় । আজকাল সিভিল সার্ভিসের পরীক্ষায় viva তে কি প্রশ্ন সব হতে পারে তা কেউ বলতে পারেনা । স্রেফ ভাগ্যের ওপর
নির্ভর আর ঠাকুরের আশীর্বাদ না থাকলে ......
ট্রেন
এসেগেল । বাঁচা গেল । একটা বসার যায়গা পেয়ে-গেল অর্ণব। মনে মনে নিজেকেই প্রশ্ন করে
চলে । বিগ ব্যাং থেকে ন্যানো টেকনোলজি .. গ্লোবাল ওয়ার্মিং আরো কত সব কি । অর্ণব
ফিজিক্স নিয়ে এম.এস.সির পর এম.ফিল করে । পি.এচ.ডি র জন্য চেষ্টা করছে । কোন ভালো
প্রতিষ্ঠানে ও রিসার্চ করতে চায়। সিভিল সার্ভিস না পেলে রিসার্চ করবে। বাইরে কোথাও
চলে যাবে । যেখানে অধ্যাপকের সম্মান আছে সেই ইউনিভার্সিটি ওর পছন্দের তালিকায় ।
বাবা মার অমত থাকলেও নিজের ক্যারিয়ার এর জন্য বাইরে যেতেই হবে ।
সিভিল
সার্ভিস মেন ক্লিয়ার করে ভাইভা দিতে গেলে অনেক বিষয়ে
জ্ঞান থাকা প্রয়োজন । কি প্রশ্ন আসবে কেউ জানেনা । ওদের অঞ্চল-থেকে ওই বোধহয় এক
মাত্র ক্যান্ডিডেট । ও ইন্টিমেসন লেটার পেয়ে খুশি ছিল । বাবা মা এই বিষয়ে অতটা বোঝেন না । ছাত্র
ছাত্রীরা এই সম্বাদ পেয়ে সকলে তাদের স্যারকে অভিনন্দন জানায় । ওর মা খুব ই সাদা মাটা
মানুষ। বাবা
প্রাইভেট ফার্মের চাকরি। সর্বদাই টেনশনে থাকেন। ওনাদের প্রতিক্রিয়া সেরকম ছিলনা ।
তবুও মা বলেন , “হ্যাঁরে তুই কি
বাইরে চলে যাবি আমাদের ছেড়ে ?”
অর্ণবের প্রতিক্রিয়া কিছুই ছিলোনা । শুধু
বলে এখন কিছুই বলতে পারবোনা । তবে যেখানে যাব তোমাদের সঙ্গে নিয়ে যাব ।
অর্ণব ভালো ছেলে । টিউশনি করে পড়ার খরচ চালাত । আজকাল ফিজিক্সের টিচারের
অনেক দর । উচ্চ মাধ্যমিকের ছেলে মেয়েদের অঙ্ক ফিজিক্স দুটোই পড়াত । তা ছাড়া আই আই
টি এবং জয়েন্ট এন্ট্রান্সের জন্য খুব ভালো কোচিং দিত। ওর নাম আছে সেই বিষয় । নিজের
কোচিং ক্লাস করলে বেশ দু পয়সা রোজগার হত কিন্তু ওর ইচ্ছা ছিল আই.এ.এস অফিসার হওয়ার
। তাই ও সব সময় ছাত্রদের বলত ঃ অল্পে সন্তুষ্ট হলে তোমার লক্ষ্য পূরণ হবেনা । অধ্যবসায় , মেধা , ব্যক্তি চরিত্র দুটোরই প্রয়োজন । শুধু
ভালো ছাত্র হলে চলবেনা । ভালো মানুষ হতে হবে। মা বাবাকে কখন অবজ্ঞা করবেনা ।
তাঁদের আশীর্বাদ ছাড়া সাফল্য অসম্ভব। এ যুগে সব অধঃপতনের মূল কু শিক্ষা কু সঙ্গ ।
আমি তোমাদের স্বামী বিবেকানন্দ হতে বলছিনা কিন্তু তাঁর আদর্শকে অনুসরণ কর ।
মহিলাদের সম্মান দাও তারা তোমাদের মা , বোন , মাসি , পিসী , মামি ......... । এ যুগে এটার ই বড্ড অভাব। আমি যদি ভগবানের
আশীর্বাদে আই.এ.এস অফিসার হতে পারি আমার প্রথম কর্তব্য যে কথাগুলো তোমাদের বললাম
সেগুল কর্ম ক্ষেত্রে করে দেখান ।
ওর
ছাত্র ছাত্রীরা এই জন্য ওদের স্যারকে শ্রদ্ধা করতো , সম্মান করত । আজকাল এরকম
শিক্ষক পাওয়া বিরল। অর্ণব আরো বলত অর্থ উপার্জনের জন্য অর্থের পশ্চাৎ ধাবন বাঞ্ছনীয়
নয়। নিজের
মনকে আয়ত্তে রাখলে তবেই সফলতার শিখরে পৌঁছন যায়।
এসব ভাবার সময় এটা নয় । প্রসংগ পাল্টালো
.........
দ্বিতীয় পর্ব
অর্ণব
১০ টার আগে পৌঁছে যায় নির্ধারিত স্থানে । প্রায় ১০০ জনের ওপর ইন্টার্ভিউ দিতে
এসেছেন বিভিন্ন জায়গা থেকে । একে একে প্রায় ১০জনের পর ওর নাম ঘোষণা হল। প্রথম সিভিল
সার্ভিসের জন্য ইন্টার্ভিউ একটু নার্ভাস তো লাগবেই ।
অর্ণব
ভালো করে যানে ইন্টার-ভিউয়াররা ; ম্যানারিসম , স্মার্টনেস , টু দি পয়েন্ট উত্তর
সিভিল সার্ভিসের ভাইভাতে অনেক প্রাধান্য দেন । সিভিল সার্ভিসের প্রিলিমিনারি , ফাইনাল ,ভাইভা সব গুলো ইম্পরট্যান্ট । এখন ওর ফাইনালে কত মার্ক আছে সেটা নির্ভর
করছে সিলেকশনের ওপর কারন দুটো মিলে র্যাঙ্ক ঘোষণা হবে । ভগবানের আশীর্বাদে সব
প্রশ্নের উত্তর দিতে পেরেছে তবে স্মার্ট সিটিতে আরও কিছু বলার ছিল কিন্তু
চেয়ারম্যান থামিয়ে দেন। তবুও যা বলেছে মনেহয় যথেষ্ট ।
ইন্টার্ভিউয়ের পর বাড়ি ফেরার পালা ।
একটা
ট্যাক্সি নিয়ে সোজা শিয়ালদাহ ষ্টেশন চলে যায় । ওখানেই সামনের হোটেলে লাঞ্চটা সেরে
ফেলে । খুব খিদে পেয়েছিল তাই হোটেলেই লাঞ্চ সারে । ষ্টেশনে পৌঁছে টিকিট
কাউন্টার-থেকে টিকিট
কেটে সোজা কৃষ্ণনগর লোকাল ট্রেনে উঠে পড়ে । সারা দিন খুব পরিশ্রম গিয়েছে এখন একটু
বিশ্রামের প্রয়োজন । ট্রেনের কামরায় উঠে জানলার ধারে একটা বসার যায়গা পেয়ে যায়।
কখন ঘুমিয়ে পড়েছে জানেনা । হটাত মোবাইলটা বেজে ওঠে। বিরক্তির সহকারে কল রিসিভ করে।
ওদিকে চেনা গলার স্বর ।
কিরে কেমন ইন্টার্ভিউ দিলি ? আমি কে বলতো ?
ও
মাসি ! হটাত অনেক দিন পর ... তোমরা কেমন আছো ? হ্যাঁ ইন্টার্ভিউ ভালোই
দিলাম । তবে কিছুই বলা যায়না । সব ভগবানের কৃপা । ট্রেনের মধ্যে কি ভালো শোনা যায়।
আমি বাড়ি পৌঁছে তোমায় কল করবো ।
চিন্তা করিস না তুই ঠিক পেয়ে-যাবি । আজ
পর্যন্ত তুই সবে ......... পরেরটা কিছু শোনা গেলনা...।
মোবাইল পকেটে রেখে একটু চোখ বুজেছে কি ...
লেবু লজেন্স ... হজমি... ধুপ-কাঠি সব একসঙ্গে হকারদের চিৎকার । ওদের ই বা দোষ কি
এই ভারতে বিশেষ করে আমাদের পশ্চিম বঙ্গে নিম্ন মধ্যবিত্ত আয় বর্গের ছেলে মেয়েরা
পড়াশুনো করে ফ্যা ফ্যা করে ঘুরে বেড়াচ্ছে নিজেদের অন্ন সংস্থানের জন্য । সকলে ত মেধাবী
ছাত্র ছাত্রী নয় । তাদের শিক্ষার পর সামান্য চাকরি পাওয়া খুব ই মুস্কিল । তাই যে যেমন
পথেই হোক নিজের পেটটা চালানোর জন্য নানান রুজি রোজগারের পথ বেছে নিচ্ছে ।
এর মধ্যে ওর ষ্টেশন এসে-গেল ।
প্ল্যাটফর্মে নেবেই হাঁটা দিল ওভার ব্রিজের দিকে। সন্ধ্যে প্রায় হয়ে এলো । ষ্টেশন থেকে
বাড়ি বেশ পথ । সকালে করিম চাচা ছিল এখন তার টিকি নেই । চাচার এখন শুঁড়ি খানায়
যাওয়ার সময় ।
এখন ভ্যান রিক্সা বলতে একটা দুটো আছে । অর্ণব হেঁটেই যাবে স্থির
করলো । হাঁটা পথ ঘণ্টা খানেক নেবে । নিজের মনে গুন গুন করতে করতে এই গানটা ধরল ...
“আমি পথভোলা এক পথিক এসেছি
সন্ধ্যা বেলার চামেলীগো,সকাল বেলার মল্লিকা
আমায় চেন কি?”
...
অর্ণব ওর বয়েস আন্দাজে রুচি সম্পূর্ণ এবং ওর গানের সিলেকশন ও অন্য রকমের । নানা
চিন্তা এবং তর্ক বিতর্ক মনে এলো ...। এইতো সেদিন অর্ণবের এক বন্ধু বলছিল , “আমরা বুঝিনা কোয়াণ্টম
থিওরি ; কিন্তু রবীন্দ্রনাথ বুঝতেন ?”
আমি
শুধু হেসে মাথা নেড়েছিলাম। ভাবছি এই পরিসরে তার সংক্ষিপ্ত একটা
আলোচনা সেরে নি ,পরে না হয়
অন্য কোন আলোচনায় আসবো ... বন্ধুটি বলতে লাগলো...
পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র না হয়ে , ইন্টারনেট আর দুএকটি বই পড়ে আমরা যেটুকু বুঝেছি , রবীন্দ্রনাথের মত একজন বিশ্বকবি ,স্বয়ং আইনস্টাইনের সাথে আলাপ ক'রে ,এতটুকু ও কম বোঝেননি। উনি এতটাই
হৃদয়ঙ্গম করতে পেরেছিলেন যে নিজের মতামতে অটুট থেকে আইনস্টাইনের সাথে বিতর্কে
গিয়েছিলেন। ১৯৩০ সালের ১৪ই জুলাই তারিখে কবি ও বিজ্ঞানীর এ কথাবার্তা ‘রিলিজিয়ন অব ম্যান’ বইটিতে প্রকাশিত হয় এবং
১৯৩০সালের ১০ই আগস্ট, 'নিউইয়র্ক টাইমস' এ প্রকাশিত হয়।
আমি বলি , “জানতাম না যাক ভালোই হল তুই বললি আমার ইন্টার্ভিউ তে কাজে লাগবে”
।
বাড়ি এসে-গেল ।
মা সন্ধ্যা দিচ্ছিলেন । আমাকে দেখে ইশারায়
ঘরে যেতে বলেন ।
হাত পা ধুয়ে গামছায় মুছে ঘরে গিয়ে দেখি
বাবার সঙ্গে এক ভদ্রলোক কথা বলছেন।
আমি নিজের ঘরে যাচ্ছিলাম হটাত বাবার ডাকে
পেছন ফিরি ।
বাবা পরিচয় করিয়ে দেন ইনি আমাদের মিলের
মালিকের ছেলে
হ্যালো আমি সিদ্ধার্থ জৈন ।
অর্ণব ব্যানার্জী ।
সিদ্ধার্থ - হ্যাঁ শুনেছি আপনার নাম ।
আপনার স্টুডেন্টরা ভালো র্যাঙ্ক রাখে জয়েন্ট এনট্রান্সে ।
অর্ণব - ও তাই ।
সিদ্ধার্থ - আমার মেয়ে এবারে বারো ক্লাস
সাইন্স নিয়ে পাস করলো । আইআইটি এনট্রানসে বসার ইচ্ছা। আপনি একটু গাইড করলে অনেক
উপকার হত ।
অর্ণব আমি খুব ই ব্যাস্ত । হয়তো আমাকে দিল্লী যেতে হবে
। কথা দিতে পাচ্ছিনা । আপনি বাবার সঙ্গে যোগা যোগ রাখবেন সম্ভব হলে নিশ্চই কিছু
উপায় হয়ে যাবে । এই বলে বিদায় নেয় ।
ঘরে গিয়ে প্রথমেই মাসীকে কল করে ।
ওপার থেকে মাসী ... হ্যাঁরে এতক্ষনে পৌঁছলি ।
আর বোলনা ট্রেনে যা ভীড় । ভারতের জন গণনা
লোকাল ট্রেনে হলে ঠিক হিসেব বেরুত । পা রাখার ঠাইঁ নেই।
তা যা বলেছিস । তুই দিল্লী কবে আসবি ?
মেসো ত তোর আসার অপেক্ষায় দিন গুনছেন ।
কি যে বল মাসী ,
গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল । আগে দেখ কি হয়...
ও ঠিক হয়ে যাবে । আমি মানত করেছি বৈষ্ণ দেবীর কাছে । হলে তোকে মায়ের মন্দির দর্শন করিয়ে পুজো দিয়ে
আসবো । তোর মা কোথায় ?
পুজো করছে ।
ও তবে পরে কথা হবেখন । আহা সারা জীবন
দুঃখে কাটলো এবার ভগবান সুদিন দেবেন বোধ হয় । তোর মা’কে বলিস আমি ফোন করেছিলাম বলে।
বলেদেব । ফোনটা রেখে ঠাকুর ঘরে যায়
সন্ধ্যারতি করতে । ব্রাহ্মনের ছেলে সকাল সন্ধ্যা গায়ত্রী জপ অতি অবশ্যই করা উচিৎ ।
রাতে আরেকটা ফোন এলো অন্বেষার কাছ থেকে ।
অন্বেষা অর্ণবের কলেজের বন্ধু । ও দিল্লীথেকে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা দিয়েছে ।
ওখানেই কোচিং নিয়েছে । বাবার টাকা আছে তাই ওর চিন্তা কি ?
হ্যাঁরে কেমন ইন্টার্ভিউ দিলি ?
সো সো । তুই ?
বাজে বকিসনা । আমি জানি তুই খুব ভালো
প্রিপারেসন করেছিলি । আমি ওই একরকম । সব ই আন প্রেডিক্টেব্ল ,
বল !
হ্যাঁ । তা ঠিক ।
এবারে পনেরো দিনের মধ্যে রেসাল্ট বেরুবে ।
মানে ধর পরের মাসের ১৫ তারিখ নাগাদ তুই ইন্টার নেটে পেয়েযাবি তোর অল ইন্ডিয়া র্যাঙ্ক
।
তুইত আছিস ... আমায় জানিয়ে দিবি কি বল ?
হেঁয়ালি করিসনা । তোর কি প্ল্যান বল ?
আমার আবার কি ?
আমি টিউশনি করে চলি ......
ঠিক আছে রাখছি । বাই ......
বাই ।
অর্ণবের
সিভিল সার্ভিসের ফল জেনে বিভিন্ন খবরের কাগজ এর প্রতিনিধিরা ওর ইন্টার্ভিউ র ভিডিও রেকর্ডিং করে নিয়ে
যান। কাল দিল্লী-থেকে ফোন এসেছিল ইউ পি এস সি র অফিস থেকে । অভিনন্দন জানিয়ে ইউ পি এস সি বলে
অর্ণবের অল ইন্ডিয়া র্যাঙ্ক ১০৮ । ওয়েব সাইট থেকে ডিটেলস ডাউন লোড করে নির্দেশ
অনুযায়ী সব কাজ করতে।
অন্বেষার ১০০২ ওর কাছ থেকেই জানে ।
ওকেও অর্ণব অভিনন্দন জানায় ।
অর্ণবের
এত দিনের সাধনা সফল হল । ওর মনে হয়েছিল ও সিভিল সার্ভিস এবারে হয়তো পেতে-পারে কারন
প্রিলিমিনারি , ফাইনাল ও ভাইভা সব ভালো
হয়েছিল। তবুও আশঙ্কা ছিল বলা ত যায়না ।
মা
বাবার খুশীর ফোয়ারা ছোটে । গ্রামের সব গুনি মানুষ আসেন ওকে শুভেচ্ছা জানাতে । ওর
স্কুলের মাষ্টার মশাই ছুটে আসেন ওর ঘরে । ওকে জড়িয়ে ধরে বলেন “আমার জীবিত অবস্থায় এই
সুখবর আমাকে আমার মাষ্টারের জীবনের সার্থকতা এনে দিল । আমি ভগবানের কাছে প্রার্থনা
করি তোর আরও উন্নতির জন্য । আজ আমি সব চেয়ে খুশি ”
অর্ণব মাষ্টার মশাই এর পায়ের ধুলো নিয়ে
ওনার আশীর্বাদ নেয় । বাবা মা এবং সকল গুরু জনদের প্রণাম সেরে দক্ষিণেশ্বরে মায়ের
দর্শনে বেরিয়ে পড়ে ।
মায়ের
দর্শন সেরে ফিরে আসে । দিল্লী যাওয়ার আয়োজন করে । তৎকালে টিকিট রিসার্ভে-সন করে
নেয় রাজধানীর । শিয়ালদহ রাজধানী এক্সপ্রেস হওয়াতে ওদের অনেক সুবিধে হয়েছে ।
মাসীকে বলাতে মাসী খুশীতে আত্মহারা । মেসো
অভিনন্দন তথা শুভেচ্ছা জানান ।
আজ সকলের আশীর্বাদ না থাকলে কিছুতেই এই
সাফল্য হত না। তাই অর্ণব ঈশ্বর বিশ্বাসী ।
সমুদায়
৯ লক্ষ ৪০ হাজার পরীক্ষার্থী র মধ্যে ১৭০০০ লিখিত পরীক্ষায় কৃতকার্য হয় ৩৩০০ জনকে
ইন্টার্ভিউর জন্য ডাকা হয় এবং ১২৩৬ জনকে নিয়োগ পত্র পাঠান হয় । ১২৩৬ জনের মধ্যে
১০৮ অসাধারণ সাফল্য এটা এক বাক্যে সকলে স্বীকার করবেন।
অর্ণব দিল্লী গিয়ে মাসীর বাড়িতে ওঠে ।
ওখানে অন্বেষার সঙ্গে দেখা হয় । দুজনে সমস্ত প্ল্যানিং করে মুসুরি যাত্রার।
তারপর
দিল্লী থেকে মুসুরি যাত্রা করে । ওখানে লাল বাহাদুর শাস্ত্রী ন্যাশনাল একাডেমী অফ এডমিনিস্ট্রেশন , মুসুরি তে এক বছরের ট্রেনিং । কর্মশালা বিল্ডিং এ সারা ভারতবর্ষের আই।এ।এস অফিসার গন
একত্রীত হন তালিমের জন্য । এই সময় ওনাদের সমস্ত বিষয় পুঙ্খানু পুঙ্খ ভাবে তালিম
দেওয়া হয় যেমন আইন শৃঙ্খলা , রাজস্ব , অর্থনীতি ইত্যাদি তে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয় ।
প্রায়
এক বছরের ট্রেনিং এর পর দুজনে ফেরেন স্বদেশে । এর মধ্যে ওদের মধ্যে একটা বন্ধুত্ব
থেকে প্রেমের সম্পর্ক সৃষ্টি হয় প্রায় অজান্তেই । এটাই প্রায় ঘটে ওই ট্রেনিং এর
সময়। যে যার পার্টনার নির্বাচন করে ।
ওদের দুজনের বিয়ে হয়ে যায় । অর্ণব এবং
অন্বেষা এখন স্বামী
স্ত্রী । খুব ধুম ধাম না হলেও ভালো ভাবেই বিয়ে হয় দিল্লীতে ।
অর্ণব
সামান্য ঘরের ছেলে হয়েও নিজের মেধা এবং অধ্যবসায়ের বলে ভারত বর্ষের সম্মান জনক
পরীক্ষা সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় সম্মানের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয় । তাই যখন হাত বাড়ালেই
আকাশ আর পা বাড়ালেই রাস্তা তখন ভুল রাস্তায় না গিয়ে ঠিক রাস্তায় যুব সমাজ গেলে
নিশ্চয় তার লক্ষ্য স্থলে পৌঁছবে অর্থাৎ আকাশ ছুঁতে সক্ষম হবে এতে সন্দেহ নেই।