চন্দনাদের বাড়ি থেকে খেয়ে-দেয়ে ছেলেটা যাচ্ছিলো বাড়ির
দিকে গুটগুট করে । হঠাত্ সীমার-মা কোথা থেকে
এসে ছোঁ মেরে কোলে তুলে নিলো ছোট্টটাকে| সেও
খলখল করে উঠলো "থালো, বাই দাবো...ঘুম পাত্তে ।"
-"আজ আমাদের ঘরেই ঘুমো|" আদর করে টোপলা গালে চুমো খায় সীমার-মা ।
গলা তুলে দুটো কুঁড়ে পেরিয়ে শুনিয়ে বলে, "বাপনসোনা আমাদের ঘরেই ঘুমোলো ।"
কোনো প্রতুত্তর আসেনা| অর্থাত্, মৌনতাই সম্মতির লক্ষন । শিশু কোলে মন্থর পদে চালাঘরের ভেতর ঢুকে যায় সীমার-মা|
একরত্তি শিশুটা জন্মেই মাতৃহীন । এই দুর্ভাগ্যই তাকে এই দশ-বিশ ঘর বস্তিটার সন্ত্বান করে
তুলেছে| সবাই তাকে ভালোবাসে আদর করে । মায়ের অভাব বুঝতে দেয়না কখনও| বাড়িতে বাবা-ঠাকুর্দা-ঠাকুমা আর এই বস্তির প্রতিটা
মানুষের স্নেহে ভালোই বেড়ে উঠছে ।
সে যখন সাত-আট বছরের হলো তখন তার মধ্যে একটা ভাবান্তর
লক্ষ্য করা গেলো । তার মনে মায়ের অভাব বড়
বেশীয় প্রকট হতে লাগলো দিনকে দিন । ভালোবাসার
মানুষের কোনো কমতি না থাকলেও সে একান্তভাবে মায়ের স্নেহের কাঙাল হয়ে পড়লো| সেই স্নেহ যা শুধু মা-ই দিতে পারে| হয়তো অনেকেই হতে পারে মাতৃসম কিন্তু তারা
মাসিমা-পিসিমা-কাকিমা-জ্যেঠিমা ইত্যাদিই হতে পারে মা নয়| যে দশ মাস দশ দিন নিজ শরীরে ধারন করে সন্ত্বানকে জন্ম
দেয়| স্নেহে-শাসনে বড় করে তোলে, সেই মা পৃথিবীতে একজনই হতে পারে| তার জায়গা কেউ নিতে পারে না । তার উপর দাবী, জোর
সবথেকে বেশী|
সে যে বড় আপন, বড় নিজের । এই ভাবনাগুলো বাপনকে তাড়িয়ে নিয়ে চলে
সারাক্ষন । অন্য মা-সন্ত্বানকে দেখলে
মনে মনে খুব কষ্ট পায় । তার
ব্যাথা আরও বেড়ে যায় ।
যৌবনে যেমন সঙ্গীর প্রয়োজন, শৈশবে মায়ের । "ইনি আমার মা"- এই জানাটাই সব । যা এনে দেয় এক পরম নীর্ভরশীলতা| এক শিশুর কাছে তা অনেকখানি । মানুষের এই অতি সাধারণ চাহিদা থেকে যারা বঞ্চিত তাদের
হতভাগ্য ছাড়া হয়তো আর কিছুই বলা যায়না । সারা জীবন তাদের মনের একটা বিরাট অংশ শূন্যই থেকে যায় ।