গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই, ২০১৪

অরিন্দম চন্দ্র


এক বালকের আখ্যান

         বালক ও বালিকা সমুদ্রতীরে বেড়াইতে আসিয়াছে,সঙ্গে তাহাদের তরুণী কন্যা বালক ও বালিকার উভয়েরই দ্বিতীয়বার বিবাহ, তাই পাঠক আন্দাজ করিয়া নিবেন সব কিছু ইহা বলিবার অপেক্ষা রাখে না।যাহা হউক,দ্বিপ্রাহরিক সঙ্গমকালে বালক ও বালিকার মধ্যে কিঞ্চিত বাদানুবাদ হয়,যাহা বালিকাকে বাধ্য করে উহাদের তরুণী কন্যার ঘরে স্থানান্তর করিতে এবং তথা হইতেই এই বিড়ম্বনার উৎপত্তি। বালক, বালিকা ও তাহাদের কন্যা সন্ধ্যার পর সমুদ্রতীরে গিয়া বসিল।বালক অতি ক্রুদ্ধ,সাগর পাড়ে অধুনা নির্মিত খট্টাঙ্গ ছাড়িয়া সমুদ্র তীরের প্রস্তরখণ্ডের উপর বসিল,বালিকা ও তাহাদের কন্যা খট্টাঙ্গে বসিয়া নাসিক্য বর্ণে গান জুড়িল।ইহা কবিগুরু রচিত গীতমালা,তাই ইহার সম্বন্ধে লেখকের মন্তব্য অসংখ্য চপেটাঘাত আনিতে পারে,তাই বালককে আপনার স্থানে ছাড়িয়া দেওয়াই বাঞ্ছনীয়

        বালক ইতোমধ্যেই কারণবারির সুবাদে যথেষ্ট নাবালক হইয়াছিল,আর সমুদ্র দেবতাও তাহা বুঝিতে পারিয়া অজস্র ঢেউ প্রস্তরখণ্ডের উপর আছড়াইয়া ফেলিতছিল।ইহা বালকের অসমাপ্ত সঙ্গম হেতু ক্রন্দন না সমুদ্র দেবতার ক্রোধোচ্ছাস,তাহা আমি বলিতে পারি না,কিন্তু প্রকৃতির শোভায় সাময়িক পুলকিত হইয়া বালক সমুদ্রের আরও নিকটবর্তী একটি উপলখণ্ডে বসিল এবং তাম্ব্রকূট জ্বালাইয়া সুখটানে মগ্ন হইল।তাহার চেতনায় তখন নব নব দার্শনিক বোধের উদয় হইতেছে,তথাপি বালিকার দ্বিপ্রহরের দু-একটি কথার স্মৃতিচিহ্ন তাহাকে জীবনবিমুখ ও হতাশ করিতেছিল এবং তাহার কেবলই মনে হইতেছিল এই প্রবল জলোচ্ছাস যদি তাহাকে আজই গ্রাস করে তবে বালিকার প্রাণ জুড়ায়,তাহার নিজেরও,যদিচ মৃত্যুকালে কাহার কি ভাবে প্রাণ জুড়াইবে তাহা বালকেরও অজানা,বোধ করি লেখক ও পাঠকও তাহা ঠিক মত জানেন না। আজ গুরুপূর্ণিমা,তাই সমুদ্রের জলোচ্ছাস ক্রমে বাড়িয়া চলিতেছে রাত যত বাড়িতেছে আরও ফেনিল ঊর্মিমালা প্রস্তরখণ্ডগুলিকে চূর্ণ করিয়া দিতে উদ্যত হইয়া প্রবল পরাক্রমে ধাইয়া উঠিয়াছে এমতঃ, বালক কিঞ্চিত ভীত হইল পিছনে তাকাইয়া দেখিল কেহ তাহাকে ডাকে কি না,বালক বাঙ্গালী কি না । 

        কেহ ডাকিবার নাই দেখিয়া তাহার পৌরুষ আহত ব্যাঘ্রের মত ক্ষেপিয়া উঠিল,বীরদর্পে আরেকটি তাম্ব্রকূট জ্বালাইয়া বালক মনে মনে মার্ক্স,ভারতীয় আধ্যাত্মবাদ ও পোস্ট-মর্ডানিসমের তত্বগত মিলনের বিষয়ে তাত্বিক আলোচনা জুড়িল

         সমুদ্রের দেবতার বুঝি কিছু অন্য অভিপ্রায় ছিল প্রবল ফেনিল স্রোত আছড়াইয়া পড়িতে লাগিল,সফেন বীচিমালার ধূম্রজাল সমুদ্রতটকে আচ্ছন্ন করিল।বালকের চেতনা যখন দূর নীলিমায় মগ্ন সহসা সে আবিস্কার করিল যে সে এক্ষণ বড় মুক্ত ও স্বাধীন,যাহা বালিকার স্নেহচ্ছায়ায় পাওয়া দুস্কর। উপরন্ত, তাহার উপরোক্ত চিন্তাজাল শুধু মিলাইয়াই যায় নাই,সম্পূর্ণ নির্মোহ তন্ময় এক ভাব আসিয়াছে।বালক কিঞ্চিৎ দূরে তাকাইয়া দেখিতে পারিল সমুদ্রতীরের প্রস্তরখণ্ডের উপর একটি ঘুমন্ত মানুষের দেহ। সে ছুটিয়া গেল। লোকটিকে তাহার খুব চেনা মনে হইল,কোথায় দেখিয়াছে ঠিক মনে পড়িল না।ঘুমন্ত ব্যক্তির ললাটে ফাটা দাগ দেখিয়া সে শিহরিত হইল,বাল্যকালে পড়িয়া গিয়া তাহারও তদ্রুপ চিহ্ন ছিল।সহসা মনে হইল তবে কি সে...?? একটি ভিজা ভিজা ভাব তার চেতনাকে গ্রাস করিল।হারামজাদা মাতাল,এখানে এসেও আমাকে শান্তি দেবে না,ঢাল বুঁচকি আরও জল।”...বালকের চেতনা ফিরিল । প্রতিজ্ঞা করিল আর কোন দিন সে মার্ক্স নিয়ে কিছু ভাবিবে না।