গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই, ২০১৪

দোলনচাঁপা ধর

বন্ধন

সকালের নরম সূর্য এখন মাথার উপর,যদিও এই ভরা শীতে তার আমেজটা মন্দ লাগছিল না বংশীর।তার গ্রাম থেকে পাকা সড়ক মাইল খানেকের পথ সেখান থেকে রেল স্টেশন আবার সাড়ে তিন মাইল,আগে আগে এই পথটাও হেঁটেই পার করতে হত তবে তারপর ভ্যান আর এখন তো বাইক ভ্যান যার ডাক নাম নাকি লাদেন তাই হয়েছে ওর নাম লাদেন কেন তা নিয়ে বংশীর খুব কিছু মাথা ব্যাথা নেই কারণ ঈশ্বরের ইচ্ছায় পা দুখানা থাকতে সে কাছে পিঠে যেতে আর কোন কিছুর উপর ভরসা করে না । ভরসা না করার আর এক কারণ হল ভাড়ার টাকার অপ্রতুলতা, তার দিন আনি দিন খাই এর সংসার চাকায় তালি মারা সাইকেলের মত চলে কোনমতে খুঁড়িয়ে,তার মধ্যে ভ্যান চড়া তার কাছে বাবুগিরি ছাড়া কিছু না

চ্যাটার্জি বাবুরা যেদিন কাঠের ব্যাবসা ছেড়ে প্রোমটারই শুরু করলেন বেশী লাভের চেষ্টায় সেদিন থেকেই বংশীর অকাল অবসর,এমনিতে বরাবরই সে ভোলা ভালা গোছের আর তা নিয়ে বউএর গঞ্জনাও কম শুনতে হয়নি চটপট কোন একটা কাজ জুটিয়ে ফেলা তার পক্ষে অসম্ভব,এদিকে বাড়িতে খাওয়ার লোক নয় নয় করে নয় জন,চারটি ছেলে মেয়ে নিয়ে তারা স্বামী স্ত্রী তে ছয় জন,বাবা , মা, আর মুক্তা তার বিধবা বোন।বাবা সারাদিন হাঁপায়,সেই কবে যখন রং এর কারখানায় কাজ করত তখন কি গ্যাস লেগে পর্যন্ত এই রোগ,আর মা সারাদিন বিলাপ করে আজকাল, কাকে যে এত গাল দেয় দিনভর বংশী তা জানে না। সংসারের হাল দেখে পারুলকে তাই মজুমদার গিন্নী ডেকে বললেন- ----- বাছা সেই যখন গতর খাটিয়ে খাচ্ছ তখন শহরে গেলে দুটো পয়সার মুখ দেখতে পেতে,সোয়ামীর কাজ যাওয়া ইস্তক তো হাঁড়ির হাল দেখছি, তাই বলা

রাতে মুক্তার সঙ্গে পারুল অনেক পরামর্শ করে স্থির করল, যাবে তারা শহরে, এভাবে সত্যি দিন কাটে না,ননদ ভাজে গেলে ভয়টাও কম।সেই মত মজুমদার গিন্নিকে সব বলে কয়ে তৈরি হয়ে পরদিন ভোরের ট্রেন ধরতে স্টেশনে পৌঁছতে ওরা বেশ অবাক হয়ে গেল,ওদেরই মত কত মেয়েরা এসে জুটেছে, সবার গন্তব্য এক।অদ্ভুত এক ভরসা আসল মনে,সকলের সাথে নিজেদের কোথাও একটা মিল খুঁজে পেল ওরা আর কদিন যেতে না যেতেই ওরা সব এদের বিনিদি, ভারু বৌদি,সুন্দুরি দি,তাপসী কাকি আরও কত কি হয়ে উঠল একে একে

রোজ পাঁচটার ট্রেনে যাওয়া আর তিনটের ট্রেনে হই হই করতে করতে আসাতে ওরা বেশ রপ্ত হয়ে উঠল সংসারের অবস্থাও আগের মত নেই,মাথায় তেল, পেটে ভাত,পরনের ভদ্র পোশাক এমনকি তালদির গুনিনের দেওয়া দৈব তেলও এসেছে মুক্তার বাবার জন্য।শাশুড়ির বকবকানিও গায়েব কোন ওষুধ ছাড়াই ভাল দিন গড়ায় তাড়াতাড়ি,পারুল আর মুক্তার দিনগুলোও বছরে গড়িয়ে গেল,মুক্তা এখন শিফন শাড়ি পরে,বেণী বেঁধে কবার সিনেমা হলে ঘুরে এসেছে শশাঙ্কর সাথে,শশাঙ্ক ড্রাইভারই করে নিউ আলিপুরে এক বাড়ি,তাদের ওদিকেই থাকে পাথরপ্রতিমা তে, ভাল ছেলে। পারুল বলেছে যদি মন চায় তবে ভাব করতে দোষ কি ? তা মন মুক্তার সত্যিই চায়,সেই কোনকালে যেন সে সুখে ছিল আর মনে পড়ে না,আজ যদি আবার সুযোগ আসে তাকে ছাড়ে কোন বোকায়? শশাঙ্ক সব জেনেই তাকে পছন্দ করে
,একেবারে নিজের করে চায়,তাই তাকে ফেরাতে পারবে না মুক্তা

বংশী যখন স্টেশনে পৌঁছাল তখন বেলা যায় যায়,আবার যখন সে ফিরবে তখন আঁধার গভীর, কিন্তু এই সময়েই তাকে যেতে হয় মাসে একবার মুক্তার কাছে মুক্তা এখন কালীঘাটে থাকে,শেষ যেবার শশাঙ্কর সাথে সিনেমায় গেল সেই থেকেই,গতর খাটিয়ে খায় তবে এখন আগের মত কম টাকায় খাটে না সে,খদ্দের মালদার হলে সেও টাকা নেয় হাঁকিয়ে,তাই পারুলকে আর শহরে আসতে হয় না।মাসের খরচটা বংশীর হাতেই সে পাঠায় যাতে সংসারটা ভদ্র ভাবে চলে