গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

রবিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৯

মনোজিৎকুমার দাস


প্রেমের ফাঁদে

 এক সময় এলাকাটা সন্ত্রাসীদের আস্থানায় পরিণত হয় ।সাধারণ মানুষ কখনোই সন্ত্রাসীদের সাথে সহাবস্থান করতে চায়নি । তবুও অনেককে অনিচ্ছা সত্বেও করতে হয়েছিল । ঘনারাও একসময় এর শিকার হয় ।কয়েক মাস যেতে না যেতেই বিপদ ঘনাদের ঘাড়ে চেপে বসে । ঘনার মা বেঁচে নেই। ঘনার বাবা ভাল করে চোখে না দেখলেও সে বুঝতে পারে তাদের বাড়িতে কী হচ্ছে !সে সব দোষ তার ছেলে ঘনাকেই দেয়।
ঘনার বউ হেমাঙ্গীর তিনটা ছেলেমেয়ের মা !শরীর স্বাস্থ্যে সে ফিটফাট, তাকে দেখে বোঝবার উপায় নেই যে সে তিন সন্তানের মা । ঘনা চাল -আটার ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় সংসারের দিকে নজর দেবার ফুসরত নেই । ঘনা নিজের বউকে সমীহ করে চলে সংসারের দায়দায়িত্ব বউয়ের উপর চাপিয়ে।

অঘটনটা ঘটে যাওয়ার পরও ঘনা বিশ্বাস করতে পারে না যে তার বউ হেমাঙ্গী একজন পরপুরুষের সাথে ঘরছাড়া হতে পারে । কারণ সে তো তাকে কম কিছু দেয় না। ভরণ পোষণ থেকে আরম্ভ সোহাগ তো কম দেয় না! ঘনা চালের আড়ত থেকে খবরটা শুনে ভাবে, হয়তো সে বাপের বাড়ি আমতলিতে গেছে ।বড়ছেলে মামাবাড়ি থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দেবে, টেস্ট পরীক্ষা চলছে ।

ঘনা বাড়ি ফেরে উদ্বেগের সাথে ।ঘনা বাড়ি ফিরেছে বুঝতে পেরে ঘনার বাবা বিছানায় শুয়ে শুয়ে বকরবকর করতে থাকে । "তোর জন্নিই এডা হলো ,তুই আমার জুয়ানমদ্দ ছাওয়াল,বউকে ঠিক রাখতি পারিস না !" ঘনার কানে তার বউ সম্বন্ধে অনেক কথাই আসে ।সন্ত্রাসী দলের লিডারের সাথে বউয়ের দহরমের সুযোগটা ঘনা নিজেই করে দিয়েছিল তার চিরশত্রু জগাকে জব্দ করার উদ্দেশে ।

 ঘনা দুই হাঁটুর মাঝে মাথা গুঁজে ভাবতে থাকে । বউটা মুখটা মনের পর্দায় ভেসে ওঠে । সে ভাবতে থাকে তিন ছাওয়ালের মা হলিও ওকে দেখ কেউ বুঝতে পারতো না ।ওই বয়সে বউটা অন্যের নজরে পড়াতে পারে, কারো প্রেমের ফাঁদে আটকে যেতে পারে তা ঘনা কোনদিন ভাবেনি । এক সময় ঘনার মাথা গরম হয়ে ওঠে ।সে রুষে উঠে বউটা উদ্দেশে খিস্ত কাটে। কয়েকদিন যেতে না যেতেই ঘনার বাবা ব্রেনস্ট্রেকে মারা যায়। ঘনা চোখে সরসে ফুল দেখে। এখন তার সংসারে তিন ছেলেমেয়ে আর সে নিজে ।ব্যবসাপাতি লাটে উঠে।বসতবাড়িটুকু ছাড়া তার আর কোন সহায় সম্বল নেই।

ঘনা একটা মতলব আটে, বউকে তার উদ্ধার করতেই হবে যেনতেন প্রকারে। ভাড়া দোকানের মালপত্র জলের দামে বিক্রি করে দিয়ে মহাজনকে দেনাদাইক পরিশোধ করে ভিটে মাটিটুকু আর এক মস্তানের কাছে বন্ধক রেখে তিন সন্তানকে নিয়ে রাতের অন্ধকারে বাড়ি থেকে চম্পট দেয় । লোকে বলাবলি করে ঘনা মনের দু:খে ইন্ডিয়াতে চলে গেছে। আসলে কিন্তু সে আসলে কিন্তু সে ইন্ডিয়াতে যায় না। ঘনা তার ধারে কাছের আত্মীয় বাড়িতে সন্তানদের রেখে এসে কয়েকদিন পড়ে রাতের আঁধারে গ্রামে ফিরে এসে সন্ত্রাসীদের খোঁজখবর নেয়। সে জানতে পারে সন্ত্রাসীরা তাদের এলাকা থেকে পালিয়ে গেছে পুলিশের বিশেষ অভিযানের ফলে। সে এও জানতে পারে সন্ত্রাসী কোন মহিলাকে সাথে নিয়ে পালায়নি। এ খবর শোনার পর ঘনা পাগলা কুকুরের মত সে তার বউ হেমাঙ্গীকে খুঁজতে থাকে।