গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

রবিবার, ১৬ জুন, ২০১৯

সর্বাণী রিঙ্কু গোস্বামী

সময় .........


বাড়ি থেকে ঝোপঝাড় পেরিয়ে গেলে পাক্কা সাড়ে মিনিট,সোজা রাস্তায় গেলে বারো।সকালবেলায় সাড়ে পাঁচমিনিট যে কতোখানি, তা জানে মানসী।কাজকম্মো সেরে একটু সেদ্ধভাত মুখে দিয়েই ঘাড়গলার পাউডার মুছতেমুছতে ঝোপজঙ্গল ভেদ করে দৌড়!একমিনিট দেরী হলেই সকালের ট্রেনটা বেরিয়ে যায়। নার্সিংহোমের এই চাকরীটায় সংসার চলে তার।মন্টু তো কাঠচেরাইগুদামে ডানহাতটা কাটা যাওয়ার পর থেকেই বাজারে সব্জীবেচতে বসে ঝাঁকা নিয়ে, তাতে আর কতো।ঘরভাড়াতেই বেরিয়ে যায় সেটুকু।ঐ ডানহাতটা ধরেই একদিন ঘর ছেড়েছিল মানসী।করিমপুর থেকে পালাতেপালাতে এই রেলশহর।তখন মন্টু ঝাঁ চকচকে জ্যান্ত পঁচিশ,মানসীও কুড়ি।স্বপ্নগুলোও এত কাছের ,যেন আঙুল ছোঁয়ালেই রংধনু। তারপরটুকু খালি ভেঙে যাওয়া, ছিঁড়ে ফেলা আর টুকরো টুকরো হয়ে থাকা।তবু ভেসে থাকা,যেমন করে ভাসে টোপরছেঁড়া শোলারটুকরো ঘোলাজলে।এই নার্সিংহোমের মালকিনের সঙ্গে মানসীর আলাপ বিউটিপার্লারে কাজ করতে গিয়ে।কাটাচুল ঝাড়ুদেওয়ার কাজও সে করেছিলো কিছুদিন।মন্টুর হাতকাটা যাওয়ার পরপর কি কিই না করতে হয়েছে! আজ সকালে দেড়মিনিট গেছে বাড়িওলার সাথে আকচাআকচিতে।হতচ্ছাড়ার আর ভাড়া নিতে আসার সময় হয়না, ঠিক বেরোনোর মুখে।ঐ সময়টুকু বাঁচাতে চোখকান বুঁজে ঝোপজঙ্গল ভেদ করে রেললাইন বরাবর ছুটছিলো মানসী।পায়ে কি ঠেকতে একেবারে হুমড়ি।কি গো?তোয়ালেজড়ানো,খুব হাল্কা কান্নাও,গলাটা একদমই শুকিয়ে গেছে বুঝি!রোজ তাদের নার্সিংহোমে সময় না পুরোতেই যাদের, তাদেরই কেউ নাকি? না তারটাই,তখন রাখতে পারেনি বলে আবার ফিরে এলো?বুকের শিরাগুলো টনটন করে উঠছে যে ভীষণ।কবেকার ভুলে যাওয়া যন্ত্রণাটাও!কানের পাশ দিয়ে তীব্র হুইসল দিয়ে চলে গেল সকালের লোকাল।আজ মানসী আরেকটু সময় চেয়ে নেবে কপালের কাছে, আরেকবার বাঁচবার,আরেকবার!