পাহাড়ে
পাহাড়ে একটা সময় খুব ঘুরে বেড়িয়েছি ।হিমালয়ের আনাচে কানাচে ট্রেকিং করার নেশায় বছরে দুবার ঠিক বেড়িয়ে পড়তাম।আমাদের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন
বন্ধু ছিল ।ছ সাতজনের মতো।নিজেরা ম্যাপ দেখে জায়গা ঠিক করে সমস্ত খবরাখবর নিতাম।যোগাযোগ করতাম
গাইড দের সঙ্গে।তারপর সবকিছু বাঁধাছাঁদা করে জয় মা বলে তরী টি ভাসিয়ে দিতাম । কিছুদিনের জন্য এই সভ্য জগতটিকে ভুলে মনের আনন্দে পাহাড়ের
সরল মানুষ গুলির সঙ্গে দিন কাটিয়ে
আসতাম ।এতো শান্তিতে দিনগুলো কাটতো যেন ফিরতে ইচ্ছে করতো না।মনে
হতো চিরটাকাল যদি এখানে ই থেকে যেতে পারতাম। এই রকম এক ট্রেকিং এর পথে আলাপ হয়েছিল
জন আর মারিয়া র সঙ্গে।হিমাচলের কিন্নর
উপত্যকায় সেবারের ভ্রমণ ঠিক হয়েছিল। অনেক কাল আগে প্রায় চল্লিশ বছর আগে
র পুরনো স্মৃতি । কিন্তু মনের মধ্যে এখনও
স্পষ্ট হয়ে আছে।
কোজাগরী পূর্ণিমা ছিল সেদিন । আমরা কল্পা
ফরেস্ট বাংলোর কাচে ঘেরা বারান্দা থেকে সামনের পাহাড়ের চাঁদের আলো ভরা রূপ মোহিত হয়ে
দেখছি।আমাদের পাশের ঘরে দুজন বিদেশী এসেছেন আমাদের গাইড আগেই বলেছিল।রাত হয়ে গেছে তাই ওরা শুয়ে পড়েছে।কাল সকালে আলাপ হবে।হঠাত খুট করে আওয়াজ হলো।ঘাড় ঘুরিয়ে
দেখি এক মেমসাহেব হন্তদন্ত হয়ে আমাদের কাছে এলো।"এক্সকিউস মি "আমরা কিছু বলার আগেই বলতে শুরু করলো" তোমাদের কাছে মাথা যন্ত্রণার মেডিসিন আছে।আমার ফ্রেন্ড অসহ্য মাথা যন্ত্রণায়
ছটফট করছে "।আমরা
একটু অবাক হয়ে ওর হেল্পলেশ অবস্থা দেখে বললাম এই অলটিচুডের জন্য হতে পারে । ও প্রায় কেঁদেই ফেললো।বললো
এর আগে অনেক অনেক
হাই অল্টিচুডে গেছি এরকম হয় নি কখনও।আজকের যন্ত্রণাটা আমি দেখতে পারছি না। প্লিজ তোমরা আমাকে একটু হেল্প করো । আমাদের ডাক্তার বন্ধু
জিৎ উঠে পড়ল । চলো আমি দেখে আসি আমি ডক্টর তুমি কোন চিন্তা কোরো না ।আমি মারিয়া।আমরা একে
একে সবাই হ্যালো বললাম
। জিৎ ওর সঙ্গে গেল ।মারিয়া খুব সুন্দরী ছিল অল্প বয়সে দেখেই বোঝা যাচ্ছে । এখন পঞ্চাশ মতো হবে তাও কি রূপ । নীল
চোখে যেন পরীর মতো
লাগে । আমাদের গ্রুপের সব ছেলেরা যেন ওর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে । আমরা দুজন মেয়ে ছিলাম শ্রেয়া
আর আমি । দুজনে চোখ টিপে হাসতে লাগলাম। জিৎ আসতে দেরী করছে দেখে জয় আর অংশু বললো চল কি ব্যাপারটা
দেখে আসি । আমরা দুজনেও বললাম চল আমরাও যাই ।সদলবলে ওদের ঘরের দিকে যাবো বলে উঠতে যাবো জিৎ ফিরে
এলো।মুখটা খুব সিরিয়াস ।কি রে কেমন দেখলি? ও বলে এখন ঠিক আছে । ঘুমিয়ে পড়েছে । সকালে
মনে হচ্ছে ঠিক হয়ে যাবে ওষুধ দিয়ে এসেছি। তাহলে তোর মুখটা এতো গম্ভীর কেন? না না একটু ভাবছি । আমাকে একটু চুপ করে বসতে
দিবি ? আমি ওর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম মুড অফ কেন রে? ও বললো তোদের ও হবে সকাল
হতে দে। আমরা কিছু
বুঝতে না পেরে আমাদের ঘরে চলে গেলাম ।আর ভালো লাগছে না
সারাদিনের
ক্লান্তি এতক্ষণে মালুম হলো।শুয়ে পড়লাম ।
সকাল বেলা উঠে সবাই ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্টের জন্য ডাইনিং হল এর দিকে যাচ্ছি । সামনে
ছোট্ট একটা ঘাসের
লন। দেখি চেয়ার নিয়ে
এক সাহেব চব্বিশ পঁচিশ বছর বয়স হবে আনমনে বসে আছে । আমাদের খেয়ালও করলো না।কতো ফরেনার
যে এসেছে আমরা ভাবলাম ।জিৎ চুপচাপ কাল থেকেই।আমরা ওকে আর ঘাঁটাইনি। ডাইনিং হল এ মারিয়ার সঙ্গে দেখা হলো।ও একগাল হেসে গুড মর্নিং বললো।আমরাও
উইশ করে বললাম তোমার ফ্রেন্ড ভালো আছে ? ও হেসে বললো ফর গড সেক হি ইজ অল রাইট।
ও একটা ফ্লাস্ক নিয়ে
প্রায় দৌড়ে বাই বলে বেরিয়ে গেল।জিৎ যেন একটু ক্ষুন্ন হলো । ওকে আলাদা করে
কিছু বললো না।আমরাও একটু অবাক
। জয় একটু খোঁচা দিয়ে বললো গুরু তোমাকেও দেখতে পেলো
না !জিৎ গম্ভীর গলায় উত্তর দিল ফিঁয়াসে একা বসে আছে ।মন তো
ওখানেই। আমরা কিছু না বুঝে চা য়ে চুমুক দিলাম ।
ব্রেকফাস্ট সেরে বাইরে আসতেই আমাদের গাইড এসে হাজির।এখানকার গ্রামে বেড়াতে নিয়ে যাবে । উঁচু নীচু
পাহাড়ী পথ।মে জুন মাসের পাহাড়।চারিদিকে এতো ফুল ফুটে আছে চোখ জুড়িয়ে গেল। ক্ষেতে
ক্ষেতে সুন্দরী কিন্নরী রমনী।এতো রূপ তাদের সবকিছু ভুলে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকি। আমাদের বন্ধুরা বলে আর ফিরবো না এখানেই
থেকে যাবো। সারাদিন ঘুরে সন্ধ্যার একটু আগেই ফিরে এলাম। দেখি বাংলোর সামনে মারিয়া আর
ওর বন্ধু ঘাসের ওপর আধশোয়া হয়ে গল্প করছে । আমরা তো ওর বন্ধুকে কাল রাতে দেখি নি। এখন
দেখি সকালে সেই চেয়ারে
বসে থাকা যে সাহেবকে
দেখে ছিলাম সেই ছেলেটি ।এতো চব্বিশ পঁচিশ বছরের একটি ছেলে! ও মারিয়ার এতো ঘনিষ্ঠ হলো কীভাবে ।জিৎ রেগে বললো দ্যাখ কী প্রেম ।কাল জানিস আমার সামনে ওকে এতো অসভ্যের মতো আদর
করছিল আমার তো মনে
হচ্ছিল ঠাস করে বুড়িকে একটা চ্ড় মারি।কি করে ভিড়লো বল তো? জয় রেগে গিয়ে বললো ল্যাঙ্গুয়েজ ঠিক কর জিৎ। একজন অজানা ভদ্রমহিলার সম্পর্কে এটা
না বললেই ভালো করতিস । ওরা নিজেদের মধ্যে কথা কাটাকাটি করে চললো। আমরা পাত্তা না দিয়ে
ওদের কাছে গিয়ে বসলাম ।মারিয়া খুশি হয়ে বললো আজকে জন একদম ফিট। অনেক থ্যাঙ্কস জানালো আমাদের বন্ধুকে।জিৎ
ভাগ্যিস সেখানে ছিল
না কি যে হতো তাহলে ।ও এমনিতেই বদমেজাজি । গোঁয়ার টাইপের ।প্রথম দিনেই ওর এতো খারাপ লেগেছে মানতে দেরী
হবে ওদের সম্পর্কটা। এখন চার পাঁচ দিন থাকব অপ্রীতিকর
কিছু না ঘটলেই ভালো।বেড়াতে এসেছি
কি দরকার পরের চরকায় তেল দেওয়ার।
পরদিন সকালে ওরা খুব ঘনিষ্ঠ
হয়ে বসে একমনে একটা বিশাল ম্যাপ খুলে ঝুঁকে দুজনে দেখতে ব্যস্ত ।আমরা ডাইনিং হল এ সবাই একসঙ্গে ঢুকলাম। আমি জিৎ কে হাত ধরে টেনে এনে একপাশে বসলাম । ইশারায় ওকে কোন সিন ক্রিয়েট
করতে বারণ করলাম । ওরা মর্নিং বলে জয় অংশু আর শ্রেয়ার সঙ্গে গল্প করত লাগলো।হঠাত মারিয়া জিৎকে হেসে হেসে ডাকল ওদের টেবিলে বসার জন্য । আমি বললাম আমরা এখানেই
ঠিক আছি। কিছু মনে কোরো না। ও ঘাড় নেড়ে আবার গল্প করতে শুরু করলো।
আমাদের সঙ্গে ওরা খুব
সহজেই মিশে গেল। মারিয়া কোনকিছু গোপন না করে কীভাবে জনের সঙ্গে দেখা হল।দিল্লিতে প্রথম পরিচয়ে দুজনের দুজনকেই
ভালো লেগে গেলো ।সেইদিন থেকেই ওরা একসঙ্গে থাকতে শুরু করে দিল।পরিকল্পনা করে দুজনেই ইন্ডিয়া দেখতে এসেছিল একা একা
। এখানে এসে মনের
সাথী জীবনের সাথী পেয়ে গেল ।জন পাগলের মতো ভালোবাসে মারিয়াকে।প্রতি সেকেন্ডে সেকেন্ডে কিস না করে থাকতে পারে
না । ও যেন মারিয়ার মধ্যে ডুবে রয়েছে । মারিয়া বড়ো তাও ওর কাছে এসে শিশুর মতো হয়ে গেছে ।না দেখলে কেউ বিশ্বাস করতে পারবে না এরকমও হতে
পারে ? আমরা
জানি হিমালয়ের কাছে এলে সব মানুষ
সমাজ সংসার বাস্তব দুঃখ বেদনা সব ভুলে যায়। এই প্রশান্ত পরিবেশ সবাই
কে পাল্টে দেয় । বিশেষ করে প্রেমিক প্রেমিকাদের। ওদের
স্বপ্ন তো অলীক হয় আর হিমালয় সেই স্বপ্ন পূরণ করে ।
ওরা ছমাস ধরে ঘুরে চলেছে
পাহাড়ের পথে পথে ।যে জায়গাটা ভালো লাগে সেখানে অনেক দিন থেকে যায়।সোনালী চুলে বড় বড় নীল
চোখে মারিয়া কে আমরাও ভালোবেসে ফেলি,ও বিয়ে করে নি।মনের মতো মানুষ পায়
নি বলে। পাহাড়ই ওর নেশা ।
সেখানে
এসে পেয়ে গেল জীবনের সাথী। আমি ওর কথা শুনতে শুনতে প্রশ্ন করেছিলাম জন তো অনেক ছোট যদি ও কোনও দিন তোমাকে ছেড়ে দিতে চায়। অসীম বিশ্বাস ওর চোখে ফুটে উঠল।ঘাড় নেড়ে বললো
ও পারবেই না। আমি ওকে যত ভালোবাসি তার
থেকে হাজার গুণ ও
আমাকে ভালোবাসে । এটা আমি নিজের হৃদয় থেকে বুঝতে পারছি । ওদের দুজনকে দেখতে দেখতে আমরাও কেমন আচ্ছন্ন হয়ে পড়ি।কী সুন্দর সবসময়েই নানারকম ভাবে দুজনে এক
হয়ে বসে থাকে ।ঘোরাঘুরি করে সবসময়ই
কোন না কোন ভাবে
আদর করে চলেছে । যখন তখন জড়িয়ে ধরে বিশ্ব সংসার ভুলে
। সারা পৃথিবীতে যেন ওরা দু’জন ছাড়া আর কেউ নেই কিছু নেই । আমাদের খারাপ লাগে না ।বিশেষ করে আমার ওদের প্রেম কে খুব সন্মান করতে ইচ্ছে করে । অসম বয়সি হলেও
ওদের প্রেমের যে গভীরতা দেখেছি খুব কম মানুষের মধ্যে দেখা যায়। জিৎ এর অতো রাগ গলে
জল হয়ে গেছে।বলে প্রেম যদি করি এরকম করেই করবো। একদম সভ্য সমাজের আড়ালে এইরকম করে থাকবো। আমরা হাসি
আর বলি ওরে ওদের দেশে সব চলে তোর দেশে মানবে কি?
তুই কি ওদের মতো জীবনের অনেক টা সময় বিদেশে পাহাড়ে এরকম করে
কাটাতে পারবি? ও হেসে
বলে এরকম প্রেমিকা পাই তারপরে তো ভাববো।মারিয়া জনের জন্য কী করে দেখ। খাইয়ে দেওয়া থেকে ঘুম পাড়ানো সব। ও এক সেকেন্ডের জন্য ছাড়া ভাবতে পারে ?আর তোরা আগে নিজের কথা ভাবিস তারপরে অন্য কারোর। ও আমরা এখন খারাপ হয়ে গেলাম ।আয় তবে তোকে ঐরকম আদর
করি শ্রেয়া হাসতে হাসতে বলে। জিৎ ক্ষেপে গিয়ে একটা চড় তুলে মারতে যায়। আমরা
হো হো করে হেসে উঠি।
একদিন
ভোরে উঠে সান রাইজ দেখবো বলে সবাই গরম চাদর দিয়ে মাথাটাথা ঢেকে সামনের বনে গিয়ে হাজির হলাম । আধো অন্ধকারে দেখি একটা লাল কম্বল কেমন অদ্ভুত ভাবে নড়াচড়া করছে ।আলো ফুটে উঠেছে ।সোনার
সূর্য বরফের সাদা পাহাড়ের গায়ে নানা রঙের বাহার ছড়িয়ে উদয় হলো।এতো অপূর্ব সেই রূপ বলে
বোঝানো অসম্ভব ।তার পর দেখি জন
আর মারিয়া সেই লাল কম্বল থেকে জড়াজড়ি
করে বেরোচ্ছে । একগাল হাসি । বারবার বলতে থাকে নাইস নাইস। দুজনের কোমর দুজনে জড়িয়ে
গালে গাল ঠেকিয়ে ঘরে ঢুকে গেল ।
সূর্যোদয়
দেখা হলো এবার ঘরে লীলা হবে । জিৎ ফুট কাটলো। আমি প্রতিবাদ করে বললাম বেশ করবে। এরকম রোমান্টিক মুহূর্তে মানুষ কি করবে।এটাই তো প্রেম করার উপযুক্ত
সময়। ও তুইও? তো কি ওরা একে অপরকে প্রানের থেকেও ভালোবাসে।দেখছিস
একটা মুহুর্ত ও কেউ কাউকে ছেড়ে থাকতে পারে না ।আমাকে মারিয়া বলেছে ও জন কে একটুও ছেড়ে থাকতে পারে না । ওর মন খারাপ করে
।শরীর অস্থির হয়।পাগলের
মতো লাগে নিজেকে । ওর শরীরের স্পর্শ না পেলে ও থাকতে পারে না । জন ও ঠিক তাই। মারিয়া ছাড়া সে কিছু জানে না ।মারিয়া ওকে খাইয়ে দেয়।স্নান
করিয়ে দেয়। নিজে কিছু পারে না। এই পাহাড়ে একা কি সাহসে বেরিয়েছিল ভাবলে
মারিয়ার হাত পা ঠান্ডা হয়ে যায়। তাই ওকে আগলে আগলে রাখে । তোকে বললো তুই অন্ধ
হয়ে গেলি জিৎ খেঁকিয়ে ওঠে। নারে তুই রাগ করিস না জিৎ। আমি অনেক রকম ভাবে ওদের দেখেছি।এই ভালোবাসা সবাই পায় না ।জন ওর কোলে মাথা
রেখে সারারাত ঘুমিয়ে থাকে জানিস? মারিয়া সারারাত বসে ওর মাথায়। হাত বুলিয়ে দেয়।
ওর ক্লান্তি লাগে না ।ঘুম পায় না ।সারারাত
ভীষন আনন্দ নিয়ে বসে থাকে মুখের দিকে তাকিয়ে । জয় বলে বেটা ভাগ্য করে প্রেয়সী
পেয়েছে । আমাদের ফাটা কপালে এসব জুটবে না রে। আর বলিস না হিংসে এসে যাচ্ছে মনে।বিশ্বাস
কর সব সত্যি ।মারিয়া মিথ্যে বলতে জানেই না।আমি
ওর সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধুর মতো মিশি।ও আমাকে ওর সব কথা বলে।
কিছু লুকোয় না।
আমার কথা শুনে আমার বন্ধুরা চুপ হয়ে গেল । অনেকক্ষণ কেউ কোন কথা বললো না ।তারপর আস্তে আস্তে আমাকে বললো প্লিজ তুই আমাদের ক্ষমা করে
দে।আমরা ওদেরকে অনেক খারাপ কথা বলেছি খারাপ ইঙ্গিত করেছি।এখন আমরা সত্যিই
লজ্জিত । ভালোবাসা তো এরকমই হওয়া উচিত।বিদেশ বিভুঁই এ এসে যখন একা ফিল করে তখন সবাই অসহায় হয়ে
যায়।সেখানে এরকম একজন দরদী মহিলার সাহচর্য তাকে নতুন করে এগিয়ে নিয়ে
যাবে । আরো দুর্গম পথে দুজনে ঘুরে বেড়াবে।মনে কোথাও কোন দ্বিধা নেই
। সব বোঝা হয়ে গেছে। চলার পথে সুস্থ জীবনের পথে এইরকম সঙ্গী তো সবাই চায়।ক জন পাই এই রকম ভালোবাসা ।ক জন পারে এরকম ভালোবাসতে?
আমরা সবাই ওদের নতুন করে
ভালো ভাসতে শুরু করলাম । ওদের আনন্দে আমরাও যোগ দিতে শুরু করলা । সবাই মিলে একটা পরিবার হয়ে গেলাম ক'দিনে। জন তার উদাত্ত গলার সুন্দর সুন্দর গান উপহার দিত প্রতি সন্ধ্যা বাসরে। ভাষা অন্য কিন্তু সেই সুর আমাদের মুগ্ধ করে রাখত
অনেকক্ষণ । আমরা বুঁদ হয়ে শুনতাম আর ভালো লাগা ছড়িয়ে পড়তো সকলের হৃদয়ে ।জন যখন হো হো করে হেসে উঠতো ওর সরল হাসি সকলের মন ছুঁয়ে
যেতো।ওকে আমরাও ভালোবেসে ফেলেছিলাম ।এরকম একটি নিষ্কলুষ ছেলে টিকে কতো ভুল বুঝে অন্যায় করেছি ভাবলে মনে খারাপ
হয়ে যায়।মারিয়া আমাদের চা পরিবেশন করে ওর আনা কুকিস দিয়ে । কতো যত্ন করে জিজ্ঞেস করে আর নেবে? ওর ব্যাবহার আমাদের অনেক কিছু শেখায়।কী বিনয় ।আমরা মুগ্ধ হয়ে যাই ।
আমাদের পাহাড়ের দিন ফুরিয়ে
গেল । এবার ঘরে ফেরার পালা। জন আর মারিয়া কিছু দিন থাকবে এখানে । তারপর নতুন কোন জায়গা নতুন
কোনও পাহাড়ে ঘুরে বেড়াবে।ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে গেলে ফিরে যাবে নিজের দেশে । মনে হলে বিয়ে করবে
নাহলে এইভাবে কাটিয়ে দেবে সারাটা জীবন ।আমাদের সবার মনেই
কিন্তু এরকম একটি
জীবনের সাধ রয়ে গেল । এবারের পাহাড়ে এইরকম একটা ইচ্ছে মনে গেঁথে নিয়ে এলাম । হয়তো এখানে অবাস্তব
মনে হতে পারে কিন্তু সংগোপনে
এরকম একটি জীবন অংকুরের মতো সবার মনেই জন্ম নিল।
এটি
নিছক কল্পনা নয়। আমার ট্রেকিং জীবনে দেখা সত্যি ঘটনা।