গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

মঙ্গলবার, ২ আগস্ট, ২০১৬

অলভ্য ঘোষ

বজবজ স্টেশনে

-অরবিন্দ দা কেমন আছ ?
-ভাল নেইরে
-দেখেতো মনে হচ্ছে বেশ ভাল মাথায় একটা বড় হ্যাট ;চেহারা টাতেও দেখছি বেস তিলে তিলে মেদ জমিয়েছ কোট প্যান্ট পরে তোমাকে তো জেমন্স বন্ডের নাতি দেখাচ্ছে ভাল নও কেন ?পরমার সাথে সংসার টা কী জমল না ? ওকি ওর আগের পক্ষের বরের কাছে ফিরে গেল শেষমেষ ? সত্তর বছরের যে বুড় টার কাছে টাকা নিয়েছিল ওকে বিয়ে করবে বলে যা তুমি বাড়ি বেচে শোধ করলে ; সে কী আবার পরমাকে ফাঁসিয়ে ছে ? ওই যে শেয়াল শকুন গুলো যারা সবসময় পেছনে লেগে থাকতো ওকে খাবে বলে তাদেরয়ই কেউ কী ওকে গ্রাস করেছে ? পৈত্তিক বাড়িটা বেচে দেবার পর তুমি কী এখন আশ্রয় হীন ? ওর প্রাক্তন স্বামীর যেমন সুখ দেবার ক্ষমতা ছিলনা ; যার জন্য তোমাকে বিয়ে করলো ; সে অসুখ কী তোমার মধ্যেও আবিষ্কার করেছে ? পরমা কী নতুন পুরুষ খুঁজছে ? তোমাকে বলা হয়নি কিছু মনে করবে ভেবে; জলদা পড়ার জঙ্গলে পিকনিকের ফাঁকে নিরালায় আমাকে একাকী বলেছিল '' তোমায় একবার ঘেঁটে দেখতে চাই ; সত্যিই তোমার কোন ফিলিংস নেই আমার ওপর নাকি ভানকরো ঋষি মুনিদের '' আমাকে জাগিয়ে কী খুঁজতে চেয়েছিল পরমা ? সত্যিই আমার কী কোন অনুভূতি নেই ? ভালবাসা, স্নেহ, মমতা, এসব কী পৃথিবীর কিছু বোকা শব্দ;মেঘের আড়ালের মেঘদূত কামনা কে রক্ষা করে চলে ? তুমি যে পরমার জন্য সবকিছু ছাড়লে ঘর আত্মীয় পরিজন তাকি শুধু এটুকুর জন্য তো তুমি সোনাগাছিতেও চরিতার্থ করতে পারতে কি বলছ ;সুন্দর ছারা তৃপ্তি হয়না ? এখন কী তুমি তৃপ্ত ? আমার সবকিছু কেমন যেন গুলিয়ে যাচ্ছে অরবিন্দ দা। পুরুলিয়ার জঙ্গলে মনে আছে তুমি মহুয়া খেয়েছিলে নেশা করবে বলে এক সন্ধ্যেয় সাঁওতাল কুঠিরে বসে বলেছিলে এদের কোন দুঃখ নেই সভ্যতা থেকে দূরে বলে বুক খোলা যে মেয়েটা মহুয়ার মদ দিচ্ছিল ; আমার খুব তার প্রেমিক হবার ইচ্ছে-করছিল তেঁতুল আর শুঁটকি মাছের চাটে টাকনা দিতে দিতে ইচ্ছে-করছিল আদিম হয়ে যেতে চলো আজ আর একবার সভ্যতা থেকে মুখ ফেরাই ; বন্ধ্যা যে সুখ দিতে জানেনা কেন আমি সুখে নেই?কেন তুমি সুখে নেই ? কেন কেউ সুখে নেই ? কে সুখ চুরি করলো আমাদের ! অরবিন্দ দা বলতে পার তোমার অসুখটা কী ?
-মাথা খানা পচে গেছে
-হৃদয় ?
-ওটা এখনো জীবিত তাইতো কবিরা কবিতা লেখে আজও
-এইযে তোমার গর্দানের ওপর বসানো একটা হাঁড়ির মত;হেডলাইটের মত চোখ,সাইলেন্সরের মত নাক; ঠোঁট-দুটো বিড়ি-খেয়ে চায়ের দোকানের উনুনের মুখ; আর গুটখার দৌলতে দাঁতগুলো বারোয়ারীর খাটা পায়খানা বানিয়েছ যার ওপর একটা টুপি খচিত স্টেশনে ঢোকার মুখে ; যেটার কপাল হাত ঠুকে শনি মন্দিরে নমস্কার করে এলে ; সেটা কী ?
-এটা বড়বাজারে কেনা দেখবি.....
কি দেখছি আমি উনুনের মুখের থেকে ভোজবাড়ির পেল্লায়ই হাড়ি নামানোর মতো গলা থেকে মাথাটা নামিয়ে দুই হাতে আমার মুখের সামনে তুলে ধরল অরবিন্দ দা। মাথাটা দেখতে অবিকল সত্যিকারের মত শুধু চোখের না পরা পাতা বলছে এটা নকল
-গলা কোথায় ? গলা তো দেখতে পাচ্ছি না
-ওটা কাটা গেছে রেল লাইনে
-কবে !
- যেদিন জানলাম পরমা সন্তান সম্ভবা
-এতো সুখের !
-ডি.এন. টেস্ট করলে বুঝতে পারবি; এটা সুখ না অসুখ
-তুমি ওকে সন্দেহ করছ ? এটা পাপ
-নারে সন্দেহ করছি নিজেকে হটাৎ আমি শুক্রাণু পেলাম কোথায় আমার অক্ষমতায় প্রথম বৌটা গলায় দোঁড়ি দিয়েছিল মা হতে না পাড়ার অতৃপ্ত বাসনা নিয়ে আমি এখন অতৃপ্ত রেললাইনের কাটা বডি। এনে...... আমার মাথাটা ধর তোকে দেখাই কাটা গলাটার মধ্যে রক্ত জমে জমাট বেঁধে কালশিটে পড়ে গেছে
অরবিন্দ-দার টুপিসহ মাথাটা আমার হাতে অরবিন্দ দা একটার পর একটা জামা খুলছে ; আর ভিতর থেকে বেড়িয়ে আসছে আর একটা জামা আস্তে আস্তে ওপর থেকে দেখা তার স্ফীত চেহারাটা ভেতরে শীর্ণ মনে হচ্ছে কি বেড়তে যাচ্ছে কঙ্কাল নাকি সভ্যতার যোগাযোগ ব্যবস্থায় থেঁতলানো পচা কালশিটে আধ-খাওয়া গলা
-না...না....আমি দেখতে চাই না
আমি ছুটছি আমার হাতের মধ্যে অরবিন্দ-দার মাথাটা হেসে বলে উঠলো;
- ছুটিস না আমার মতো হোঁচট খাবি ; আর উঠে দাঁড়াতে পারবি না
মাথাটা যে আমি হাতে নিয়ে ছুটছি বুঝতে পেরে ছুড়ে ফেলে দিলাম ওটা আরো জোরে অসুরের মত হাসছে অ্যানিমেশন ছবির মত মাথার ওপরের টুপিটা লাফিয়ে লাফিয়ে উঠছে হাঁসির চোটে
আমি ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটছি পিছেনে গলাকাটা বডিটা আমাকে ধাওয়া করলো নাকি ?
ঘুরে দেখি
একি ! আমার মাত্র দুহাত দূরে বজবজ লোকাল
একটুও সময় দিল না আমাকে ঝম;ঝম করেই সেই বাঁধা লাইনের বুকে আমাকে দুখণ্ড করে বেরিয়ে গেল সভ্যতার গতির উচ্ছ্বাস
ধরে চেতনা আছে মাথাটা সংজ্ঞাহীন অরবিন্দ দা বড়বাজারে পেতে পারি আমার মাথা
হয়তো পাব তবে চোখের পাতা পড়বে না