হা হা করে
হাসছিল ছুটকি । হাসতে
হাসতে তার চোখে জল এসে যাচ্ছিল। উঃ, রাঙ্গা যেন
কি...মাগো, এত হাসাতেও পারে ! দীপাণ্বিতা, ওর বড় দিদি ঘরের এক কোনে একটা পুরোন দিনের পালঙ্কের ওপর
বসে মায়ের শাড়ীর ফলস পাড় সেলাই করে দিচ্ছিল। ছুটকির হাসির শব্দে এদিকে ফিরে হাসি
হাসি মুখ করে ছোট বোনের দিকে তাকিয়ে রইল। রাঙ্গা মানে ছুটকির ওপরের বোন ঠিক কি
বলেছে দীপা খেয়াল করেনি। ওদের হাসি দেখতে দেখতে তার মুখেও হাসির ছটা লাগল। হেসে
বললে--এ কি রে, কি হয়েছে আমায় বলবি তো ? ছুটকি
আবারো খানিকটা হেসে নিয়ে বল----রাঙ্গাকে জিজ্ঞেস কর দিদি, আমি আর হাসতে পারছি না, আমার পেট
ব্যথা করছে। বাপ রে, মেরে ফেলল
আমায়।
আজ কদিন হল
ওরা চারবোনে মা-বাবার কাছে এসেছে। চারজনেই সংসারে ব্যস্ত । সকলের সঙ্গে সকলের দেখা আজকাল আর হয়েই উঠছে না। একজন
থাকে তো আর একজনের আসা হয়না। তিনজন থাকে তো চারের জনের আসা হয় না। তাই এবারে অনেক
প্ল্যান-প্রোগ্রাম করে এখানে আসা হয়েছে । কতদিন পর
আসা, ফাঁকা জায়গা, চারিদিকে
প্রচুর গাছ-পালা । বেশ
লাগছে জায়গাটা। এখন যেন কেমন অন্যরকম লাগছে, বেশ
নতুন-নতুন। চারবোনের মধ্যে দীপা মানে দীপাণ্বিতাই বড়, থাকে কলকাতায়। মেজ বোন অনামিকা, যার ডাক নাম অনু, থাকে
হায়দ্রাবাদে । সেজ
রাঙ্গা, যার ভাল নাম প্রমিতা , সে থাকে সুদূর আমেরিকার শিকাগো শহরে। তার আসা দু/তিন বছরে
একবার। বলতে গেলে প্রায় দু-বছর পর সে এলো। আর এই উপলক্ষ্যেই ওরা বোনেরা সকলে এখানে
এসেছে মা-বাবার কাছে। ছোট বোন হল ছুটকি, যার ভাল নাম
শমিতা, সে থাকে পাটনায়। বোনেরা সকলেই দুরে। প্রত্যেকের সংসার বড়
হয়ে যাচ্ছে, ছেলেমেয়ারাও বড় হচ্ছে, এবার থেকে তো মা-বাবার কাছে আসাই বন্ধ হয়ে যাবে সংসারের
চাপে। তাই একরকম জোর করেই ওরা এসেছে এখানে কয়েকদিনের জন্য। কয়েকটা দিন একসঙ্গে
এখানে কাটিয়ে আবার যে যার নিজের জায়গায় ফিরে যাবে । মা-বাবা আবার সেই একলা। খারাপ লাগে, কিন্তু কি আর করা !
মায়ের
শাড়ীটার ফলস পাড় সেলাই শেষ করে সূতোটা দাঁত দিয়ে কেটে ছুঁচটা সূতোর বান্ডিলে গেঁথে
বিছানায় রাখল দীপা। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে শাড়ীেটা গোছাতে গোছাতে রাঙ্গার দিকে চেয়ে
বললে-- কি সুন্দর রংটা রে...মায়ের খুব পছন্দ হয়েছে শাড়ীটা। রাঙ্গার মুখটা একটু
উজ্জ্বল হল। বলল...জমিটাও বেশ ভাল, নারে দিদি ? আচ্ছা, মায়ের একটা এমনি দেখতে শাড়ী ছিল না, দিদি? আমার সেটার
কথা মনে হতেই এটাই নিলাম। ছুটকি একটু ছটপটে ধরণের । সকলের ছোট বলে কিনা জানা নেই, ছেলেমানুষি আছে স্বভাবে। উঠে দাঁড়িয়ে বললে-- কমলসায়র যাবি, দিদি? কতদিন
যাইনি, চ না , দিদি...
যাবি রাঙ্গা ? রাঙ্গাকে ছুটকি দিদি বলে না, নাম ধরে ডাকে। দীপা একবার ওর দিকে তাকিয়ে বলল... --আবার
কমলসায়র...! মনে নেই পড়ে যাওয়া...আর তারপর সেই মার খাওয়া? পুরোন কোন স্মৃতি মনে করে হাসি হাসি মুখ করল দীপা।
--কিসের মার..., আমি জানি, দিদি ? রাঙ্গা বলে
উঠল। --তুই সেবার আসিসিনি , তোর বিএসসি
পরীক্ষা চলছিল...ছুটকি কমলসায়র গিয়ে আছাড় খেয়ে হাত-পা ছড়িয়ে একশা...শেষে বিষ্ণুদা
এসে হিড়ি হিড়ি করে টেনে নিয়ে এসে ধরে দু-ঘা... --বিষ্ণুদার কাছে মার খেয়েছিলি...হিহি
করে হেসে উঠল রাঙ্গা। ছুটকির মানে লাগল...উষ্মা প্রকাশ করে বলে উঠল... --ভাগ
রে...বিষ্ণুদা যেন তোকে কখন কিছু বলে নি...এই দিদি, আজকে
বিষ্ণুদাদের বাড়ি যাবি? কতদিন
দেখিনি ওদের। চল না দিদি, আমরা সবাই
মিলে একবার ঘুরে আসি। যাবি রাঙ্গা?’ বিষ্ণুদাদের
বাড়ি, তপুদি, এইসব নানান
কথার মাঝে বাবা আর অনুর গলার আওয়াজ পাওয়া গেল। অনু বাবাকে সঙ্গে নিয়ে বাজারে
গেছিল। ওরা বোনেরা যে কদিন থাকে, চেষ্টা করে
মা-বাবার যে কোন কাজে একটু সাহায্য করতে। বাজারে না গেলেও চলত, রামেশ্বর নামে ছোট একটা ছেলে যাকে কিনা বাড়ির টুকটাক
কাজের জন্য রাখা হয়েছে, সে ছিল।
কিন্তু অনু যেতে চাইল। জানে, বাবা একরাশ
জিনিস্পত্র কিনে নিয়ে আসবেন। বাড়ি এলে মায়ের কাছে বকুনি শুনতে হবে, তাই সঙ্গে যাওয়া । রামেশ্বরের
হাতে একটা বিরাট বড় থলি, আনাজপাতি
আছে । বাবার হাতে একটা ছোটমতন আর অনুর হাতে
একটা অপেক্ষাকৃত বড় থলি, যাতে ফল
কিনে আনা হয়েছে। ছুটকি বাবার হাত থেকে থলিটা নিতেই ব্রজেন্দ্রনাথ হাসি হাসি মুখে
বললেন---ছোটন, আজ তোর পছন্দের মাছ এনেছি...ইলিশ আর
পমফ্রেট। --যাঃ, রাঙ্গা যে খায় না বাবা, দিদিও ইলিশ ভালবাসে না। কেন এত আনলে ? --আরে, ওদের জন্যও
আছে, রুই আর ছোট মাছ। খা, না...কে কি
খাবি। অনু দিদির দিকে তাকিয়ে নীচু স্বরে বললে--‘গোটা বাজার
তুলে এনেছে, আমি কিন্তু এর মধ্যে আর নেই, দিদি । এবার যা করার তুই কর। মা কি করে এবার দেখে যা...’বলে মুচকি হাসল। ছুটকি চাপা গলায় বললে--বাবা, মা কিন্তু রেগে যাবে, এত মাছ
এনেছ। --না না, এখন তো্রা আছিস তো, কিছু বলবে না। আবার না নিয়ে এলেও তো তোরা চলে গেলে তখন
বলবে, আমি নাকি তোদের কিছু খাওয়াইনি...বলে একটু হাসি হাসি মুখ
করলেন। রেনুকণা কখন এসে দাঁড়িয়েছেন ওরা খেয়াল করেনি। একটু ছদ্ম রাগ দেখিয়ে মেয়েদের
দিকে তাকিয়ে বললেন--‘মা, তাহলে শুধু রাগই করে !’ মাছের থলিটা
রামেশ্বরের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন--‘যা, কুয়োতলায় মুনেশ্বরী আছে, ওকে
একেবারে মাছগুলো ধুয়ে, বেছে দিতে
বল। কখন যে এত রান্না করে উঠতে পারব জানি না। আর তোরা বাবা এবার জলখাবার খেয়ে নে, কি বেলা করিস অকারণ! ‘ চারবোনে
জলখাবারের পালা শেষ করে সবে আবার জমিয়ে আড্ডায় বসতে যাবে, ছুটকি বায়না ধরল...চল না দিদি, সবাই মিলে একটু ওপাড়ায় ঘুরে আসি। একবার বিষ্ণুদাদের বাড়িও
ঘুরে আসা হবে । ছোড়দি, যাবি?’ অনুর খুব
একটা ইচ্ছে না থাকলেও দিদির কথা ভেবে রাজি হল। মা’কে বলে গেল
এখুনি ঘুরে আসছে। একবার সকলের সঙ্গে দেখা করে আসবে । বাবা ছাতার কথা মনে করিয়ে দিলেন, কিন্তু ছুটকি তাড়া লাগাল--‘তোরা যেন
কি...বেড়াতে যাচ্ছিস নাকি? যাবি তো
নিজেদের জায়গায়...চল তো ! ‘ চারবোনে
ফটক খুলে বাইরে এল।
দীপা হঠাৎ
একটু অন্যমনস্ক হয়ে আছে বলে ছুটকির কথাটা ঠিক শুনতে পায়নি। এবার ছুটকির দিকে চেয়ে
বলল--কি বলছিলি আমাকে? ছুটকি বলল
--তুই কবে শেষ এসেছিস এখানে, দিদি?’ মনে করতে ইচ্ছে করছিল না দীপার। শুকনো মুখে বললে...’ কি জানি, বিয়ের পর
ঠাকুমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলাম, তখন তো
ঠাকুমা ছিলেন, তোর জামাইবাবুর সঙ্গে এসেছিলাম, তারপর আর আসিনি...অনেকদিন...’ কতদিন? অত মনে
নেই...হবে বছর পনের/ষোল, কেন? --আমিও কতদিন আসিনি দিদ।--রাঙ্গা বলল। আসলে, মা-বাবা তো যেখানে থাকবে , সেখানেই
আমাদের যাওয়া, বল দিদি? আমি তো
ঠাকুমা মারা যাবার সময়ও আসতে পারিনি। তুই এসেছিলি ছোড়দি...অনুর দিকে তাকিয়ে
জিজ্ঞেস করল রাঙ্গা। হুঁ...কি যেন ভাবতে ভাবতে উত্তর দিল অনু। সে দিদিকেই দেখছে।
দিদি কি শেষ অবধি যাবে বিষ্ণুদাদের বাড়ি, টেনে নিয়ে
যাবার কি মানে হয় ! বেশ চড়া রোদ। ছাতা সঙ্গে নিয়ে এলেই হত। ছুটকির তাড়ায় আনা হল
না। রাঙ্গারই কষ্ট হচ্ছিল। এদিক-ওদিক তাকাতে তাকাতে যাচ্ছিল সবাই। রাঙ্গা একটা আম
গাছ দেখে বাচ্চা মেয়ের মত জোরে বলে উঠল...ছোড়দি, সেই
আমগাছটা, মনে পড়ছে ? --পড়ছে না
আবার! মুচকি হেসে বলল অনু। ‘ --গাছে উঠে
নামতে আর পারিনা। একে -তাকে বলি, যে যায়
এখান দিয়ে, তাকেই বলি নামিয়ে দিতে। শেষে বিষ্ণু দা
কোথা থেকে খবর পেয়ে পাঁজাকোলা করে নামিয়ে কান টেনে ধরে এক ধমক। বাবা!, বিষ্ণুদার কি রাগ! সব সময় গার্জেনগিরি...!! --গার্জেন তো
ছিলই। কত বড় আমাদের থেকে। দিদি, তোর চেয়েও
বড় ছিল, না বিষ্ণু দা......ছুটকি এতক্ষণ পরে কথা
বলল। দীপার আর যেতে ইচ্ছে করছিল না। কি হবে এসব কথা ভেবে। তার আর ভাল লাগে না।
অস্থির-অস্থির লাগছিল। কি ছিল, কি ছিলনা, এসব কথা আজ আর ভেবে কি লাভ! যা হতে পারত, তা তো আর কেউ হতে দেয়নি। আজ আর ভেবে কি হবে ! কেন হয়নি..., না একজায়গায় শ্বশুরবাড়ী, ছিঃ । কেন, না...ওদের অবস্থা ভালো নয়। কেন, ...না বিষ্ণু ভালো খুব একটা ভালা চাকরি করে না। কেন, না...... ভাল লাগছিল না দীপার। মুখ আরো শুকনো হয়ে এসেছে।
মনে মনে ফিরে যাবে ঠিক করল। অনুকে বলল...’আমি ফিরে
যাই। আমার শরীরটা ভাল লাগছে না। সকালেই এত খাওয়া মনে হয় ঠিক হয়নি...তোরা যা রে, আমি বাড়ি ফিরে যাই...’ বাড়ির দিকে
পিছু ফিরল দীপা। ছুটকি কিছু বলার আগেই অনু ছুটকির হাত ধরে দিদিকে বললে--যা, আমরা একটু পরেই ঘুরে আসছি। তুই যেতে পারবি তো, দিদি? ‘ মাথা নাড়ল
দীপা। ছুটকি আবার কিছু একটা বলতে গিয়েছিল, অনু ওর
দিকে তাকিয়ে বলল...ছোট, ছোটর মত
থাকনা ! রাঙ্গা গম্ভীর হতে গিয়েও হেসে ফেলল...যাঃ--এখনও !!
এর-ওর বাড়ি
ঘুরে, রাস্তায় দু/চার জনের সঙ্গে কথা বলে বিষ্ণুদের বাড়ি যখন
তিনবোনে এল, তখন খানিকটা বেলা হয়ে গেছে। বাইরের দরজা
সেই আগের মত ভেজানো । বিষ্ণুদাদের
বাড়ির দরজা সবসময় খোলা। অতিথি নাকি নারায়ণ, তাই বাড়ির
দরজা বন্ধ রাখতে নেই--এটা কাকিমা বলতেন। তাই ঠিক পুরোপুরি খোলা না হলেও ওদের বাড়ির
দরজা কোনদিন বন্ধ থাকত না। আজকেও ভেজানো দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকে যাকে দেখল , রাঙ্গা আর ছুটকি প্রথমে তাকে ঠিক চিনতে পারেনি । তপুই এগিয়ে এসে অনুর হাতদুটো ধরল । --বাবা, কি ভাগ্যি
আমার...কতদিন পর তবু এলি আমাদের খবর নিতে, তাও আবার
একেবারে সবাই মিলে । কিন্তু আর একজন কই, সে আসেনি, নাকি এল না? রাঙ্গা অবাক
হয়ে তাকিয়ে ছিল তপুর দিকে। তারপর দুহাতে জড়িয়ে ধরে বললে...’বুড়ো হয়ে গেছ তুমি তপুদি । চিনতে পারিনি প্রথমে । না গো, দিদিও
আসছিল... শরীরটা খারাপ লাগছিল বলে চলে যেতে বল্লাম। আবার একদিন আসব সবাই
মিলে...আছি আমরা কদিন। তোমার কথা বল, তপুদি। ‘ কেঁদে ফেলল তপু।--আমার আর কি খবর দেব রে রাঙ্গা...বিষ্ণু
এখন একটু ভাল আছে। --কি হয়েছে বিষ্ণুদার, তপুদি? ও তো অনেকদিন ধরেই মানসিক হাসপাতালে আছে রে...আজ প্রায়
চোদ্দ/পনেরো বছর হয়ে গেল...এখন বাড়ি নিয়ে আসা যায়, কিন্তু
এখানে আসতে চায় না, ওখানেই
ওদের কাজ নিয়ে থাকে, ওরাও রেখে দিয়েছে।
এখানে আর কি আছে, বল? মা’ও তো নেই... আমি একাই বাড়ি আগলে আছি রে... ফুঁপিয়ে উঠল
তপু। কষ্ট হচ্ছিল অনুর। দিদি কি এজন্যই এল না? দিদি জানে
বিষ্ণুদার কথা---মনে মনে চিন্তা করছিল অনু। কথা ঘোরাবার জন্য তপুর দিকে তাকিয়ে
বলল---আর তোমাদের সেই লাইব্রেরীটা কি হল, তপুদি, আছে ওটা ? --ঘরটা আছে, অনেক বই
বিষ্ণুকে দিয়ে আসি মাঝে মাঝে। এখনও বই পড়ার অভ্যাস টা আছে ! খারাপ লাগছিল
রাঙ্গার...সেই তপুদি! কি সুন্দর ছিল দেখতে! কেমন হয়ে গেছে, একা এত বড় বাড়িতা কি করে থাকে তপুদি ! একসময় তপুদি দিদিকে
খুব বকা-ঝকা করেছিল দিদির সঙ্গে বিষ্ণুদার বিয়েটা না হবার জন্য । বাবা-মাকেও অনেক বুঝিয়েছিল তপুদি, কিন্তু মা একেবারে জিদ ধরেছিলেন এখানে কিছুতেই মেয়ের বিয়ে
দেবেন না। বিয়েটা আর হয়ে ওঠেনি । আবার
একদিন সকলে মিলে আসবে বলে বাড়ি ফিরে আসে । ছুটকি কেমন চুপ মেরে গেছে । সে দিদির চেয়ে খানিকটা ছোট হলেও কিছু যে জানত না, বুঝত না...তা তো নয়! তপুদিকে দেখে আর কোন কথা সরেনি মুখ
দিয়ে। কত কষ্ট মানুষের, কেন এমন হয়
!
রাত্রে এই
কদিন ছুটকি দিদির সঙ্গেই শুচ্ছিল, রাঙ্গা আর
অনু অন্য খাটে। মায়ের পরেই দিদি তার সবচেয়ে প্রিয় । আজ আর সে দিদিকে বলার সাহস করল
না । রাঙ্গা ইশারায় তাকে ডেকে নিল নিজের কাছে।
খাবার পর আড্ডাও জমল না। সবাই কেমন থম মেরে গেছে। সেই হাসি, হই- চই সব থেমে গেছে। যেন কি একটা ঝড় বয়ে গেছে বাড়ির ওপর
দিয়ে। আরো অনেকটা রাত্রে অনু ধীরে ধীরে দিদির পিঠে হাত রাখল। নিঃশব্দে একটানা
কেঁদে চলেছে দীপা। কি গভীর দুঃখ,..., কাউকে বলে
বোঝাতে পারবে না... একটা মানুষের জীবন কিভাবে সবাই মিলে নষ্ট করে দিল। তপুদি তাকে
লুকিয়ে খবর পাঠিয়েছিল। সব জানে সে। কিন্তু কিছু করতে পারেনি । গলার কাছে একটা কষ্ট হচ্ছিল। এত ভালবাসত তাকে বিষ্ণূদা
! মৃদু স্বরে জিজ্ঞেস করল অনু...তুই জানতিস দিদি ? কান্নার
বেগ আরো বেড়ে গেল। তুই জানিস , বিষ্ণুদা
কোথায় আছে, দিদি? আর পারল না
দীপা। অনুর দিকে ফিরে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠল ...কি লাভ হল অনু...একটা মানুষের জীবন
এভাবে সবাই মিলে শেষ করে দেওয়ার, কি মানে হয়, বল আমাকে? আমার আর
বাঁচতে ইচ্ছে করে না রে...’ পাশের খাট
থেকে উঠে এল রাঙ্গা । কখন যেন
ছুটকিও । আজ কেউই ঘুমোতে পারে নি বোনেরা। একসঙ্গে
গা ঘেঁসাঘেঁসি করে শুয়ে থাকল চারবোনে। দিদির এই দুঃখকে ভাগ করে নিতে চাইল..কত কথা, কত স্মৃতি মনে পড়ছিল ওদের তিনজনেরই। আর পারল না
ছুটকি...বাচ্চা মেয়ের মত ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল দিদিকে জড়িয়ে ধরে... --বিষ্ণুদা তো
আমাদেরও দাদার মত ছিল, দিদি...আমরা
কেন কিছু করতে পারিনি ...আমরা কি করে ভুলে গেলাম বিষ্ণুদাকে...!কেন ভাবিনি
বিষ্ণুদার কথা...কেন, দিদি ?
গভীর একটা হাহাকার কোথাও যেন একসঙ্গে ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছিল
ওদের ।