লিপির
কথাকলি
লিপির মান অভিমানের পালা শেষ। আজকে দুপুর
৩টেয় যথারীতি আবার ফোন এল ভার্জিনিয়া থেকে। মনটা খুশীতে টগবগ করে উঠল আমার।
ওর কথা দিয়ে আমি আমার লেখার ঘর সাজাই। বড়
মজার কথা বলে লিপি। মনে কিছু রাখে না । এক কথায় অত্যধিক সরল। যা ওর বড় গুণ।
ক্রিং ক্রিং ক্রিং..
- হ্যালো
! কে লিপি ? কেমন
আছিস ?
- ভাল
রে। আমার ওপর রাগ করিসনিতো ? তবে
কি জানিস চাকরি বাকরির যা অবস্থা । মন মেজাজ আমাদের একদম ভাল নেই । খুব পূজা-আচ্চা
করছি আজকাল । বল্লাম: -বাহ
! ভাল ত ।
- না
রে পূজোতেও কি মন ঠান্ডা থাকছে? যা বিচ্ছিরি মন আমার। তিতাসের জন্য মা
মঙ্গলচন্ডীর পূজো করছি । সেদিন ভট্টাচার্জ্জী মাসীমা বললেন করতে । মা
ও দেশ থেকে বারে বারে বলছেন যাতে পূজোটা করি। সব বিপদ নাকি কেটে যাবে। বল্লামঃ
- বাহ!
গেল রেগে, ধুশ
! তুই খালি বাহ! বাহ! করছিস কেন রে আজকে? আমি বল্লামঃ -আমি
ত পূজোতে বিশ্বাস করি খুব। সে যে যাই বলুক । ছোটবেলাকার অভ্যাস কি ছাড়া যায়?
- তা
ঠিক । তবে
একটা মুশকিল হয়েছে রে ভিষণ । কি করে তোকে বোঝাই। বেশ গম্ভীর লাগল ওকে। জিগেস
করলামঃ - কি
মুশকিল? শেষে
বলল, ওর
মুশকিলের কথাঃ
-গত
মঙ্গলবার ভোর চারটেয় উঠে চান টান করে মাসীমা যেমনটি বলে দিয়েছিলেন ঠিক তেমনটি করে
একটা ছোট টুলের ওপর লাল কাপড় পেতে তার ওপর একটা ঘট রেখে নানা রকম ফল, ফুল, মিস্টি
সাজিয়ে দিয়ে ধূপকাঠি ,
পিদিম জ্বেলে রেখেছিলাম । এবার একটা লাল পাড় শাড়ি পরে
মঙ্গলচণ্ডির বই নিয়ে পূজোয় বসলাম। কি ব্যাপার হলো বল দেখি? বল্লামঃ
কি ? মিমি আর তুকাই ঘুম থেকে উঠে
পড়েছিল নাকি ? না
তিতাস কিছু চাইছিল
? বললঃ
ধ্যাত্, নাঃ ! তিতাস অফিস যাবার আগেই
তাই পূজো শেষ করে ফেলি তো । কাজেই ওসব কিছু না । আমি
ত পূজো টুজো করি না বিশেষ,
তাই নিয়ে আমাকে তিতাস কত কিছু বলে । কিন্তু
আমি ওসবে বিশ্বাস করতাম না কোনকালে। যাই হোক, পূজোয় বসলাম। ধূপকাঠি
জ্বেলে ব্রতকথা পড়তে শুরু করলাম। যতবার পড়ছি ততবার মনটায় বাজে বাজে চিন্তা আসতে
শুরু করল। আগে আসছিল না বই পড়ার সাথে সাথে আসতে শুরু হলো। তাড়াতাড়ি করে বই পড়া
সেরে ফেলে নমস্কার করছি আর কি খাব সারাদিন, রিংকির শাড়ির মত একটা পূজোয়
শাড়ি কিনব কিনা, কবে
কে কি বলেছে -এসব মনে আসছিল । আমার কি আর পূজো করা হলো বল ? তিতাসের জন্য যে মানসিক
রেখেছিলাম তা আর পূরণ হবে না । কি করি আমাকে একটা উপায় বলে
দে প্লিজ।বল্লাম,
-চিন্তা
করিস না । সবার এরকম হয়,
কেউ প্রকাশ করে আবার কেউ করে না ।
মা মঙ্গলচণ্ডী ও তো আমাদের মতন মেয়ে কাজেই
নিশ্চিন্তে থাক, মা তোর মনের কথা শুনেছেন ।
তোর মানসিক করা সফল হবে দেখিস। হেসে
ফেললো আমার কথা শুনে। মনে হলো বেশ খুশী হয়েছে । আমি এবার বেশী হাসি নি, কারণ
এরকম বান্ধবী হারাতে আমি মোটেই রাজী নই । ---টিং টিং টিং টুং টাং ... আমার সেল
ফোনে এই মিউজিক টা দেওয়া আছে । নম্বর দেখে দেখি লিপি ।
- হ্যাল
উ উ উ সীমা ! বঙ্গসম্মেলনে গেছিলি ?
লিপি হ্যালো না বলে হ্যাল উ উ বলে। মজা
লাগে খুব ।
আমি বল্লামঃ -নারে এবার আর যাওয়া হলো না ।
অক্টোবরে কালি পূজোর সময় হলিউড যাবার প্ল্যান করছি। কারণ আমার মাসতুতো দেওর থাকে
এ্যরাইজোনা। ওরা ডিসেম্বরে নিউ জার্সি মুভ করে যাচ্ছে । -তোর
হলিউড দেখা না
? আগে তো গেছিলি। -হলিউড
টা খালি দেখা হয় নি। এবার তো সান ফ্রান্সিসকোয়
বঙ্গ সম্মেলন হল তাই না? লিপি
তুই গেছিলি নাকি
?
- না, এবার
আমরা গেছিলাম তিতাসের বন্ধু রিপন নতুন এসেছে দেশ থেকে তাই এবার ফোরথ অফ জুলাইতে
বস্টন গেছিলাম । বাহ্! না বলে বল্লাম তারপর? কারণ বাহ্ বল্লেই ও রেগে যায়।
আমার আবার ব্যাড হ্যাবিট-- বাহ্ বলা । ওকে
রাগালে কিছুই বলবে না তার চেয়ে ''তারপর" ই বলা শ্রেয় ঠিক করলাম । বুঝে
গেলাম ও নতুন কিছু বলবে বলেই ফোন করেছে। আর আমি তো তাই চাই, ও
যদি ঘুণাক্ষরেও জানতে পারে ওর কথা লিখি তাহলে "আমার একদিন কি ওর একদিন "
হয়ে যাবে ।
- কবে
গেছিলি বস্টন ? ব্যাস
এবার চুপ করে শোনার পালা আমার। আমার কাজ শেষ ।
- আর
বলিস না...কোথাও যাওয়া মানে তো পোঁটলা পুঁটলি নিয়ে যাওয়া। আর জানিস ত আমাকেই গাড়ি
চালাতে হয় । পেছনে দুটো কার সিটে মিমি আর তুকাই আর উনি পাশে বসে খালি "উফ ! ঠিক
করে গাড়ি চালাবে তো ।"
- কেন
বল তো ? ওনার
ঘুমের অসুবিধে করছি । কিছু না বলে চুপচাপ ক্যাসেটে গান শুনতে শুনতে আর নিজেও গুন
গুন করে গান গাইতে গাইতে গাড়ি চালাচ্ছি আপনমনে । এইবার
উনি শুরু করলেন...কি যে সব প্যানপ্যানানি গান শোনো তার ঠিক নেই, ঘুম
এসে গেছে ওইজন্য। দেখো আমি গাইছি " শুধু দূরে থাকো /কেন আড়াল রাখো/ কে থুমি
কে থুমি / কল করো /আমায় হ্যারাস করো... বল্লামঃ চুপ করবে ? না...
গাড়ি থামিয়ে তোমার বেসুরো ভুল ভাল গান শুনব? এই তো ঘুমিয়ে একেবারে নাক
ডাকছিলে আর আমি এ গানটা খুব ভালভাবে জানি । বিয়ের আগে যখন হস্টেলে থাকতাম
গাইতাম । সে কি বলে জানিস ? বলেঃ- জানি
না আমি গাইলেই তুমি এরকম করো। গানের কি ভুল আছে শুনি ? তুমি না হ্য় বিয়ের আগে গাইতে আর
আমি বিয়ের পরে গাইছি। গান তো একই। আহা! রিপনের বউটাকে দেখিনি সেদিন ফোনে কি মিষ্টি
করে কথা বলছিল ঠিক টলিউডের ন্যাকা ডবল মুনের মতন। আমার আবার একটু মেয়েদের ন্যাকা
ন্যাকা কথা ভাল লাগে শুনতে। স্কুল , কলেজ তারপর থেকেই তো এই আমেরিকায় । সাদা
মেয়েদের ভাল লাগে নি কারণ ওরা ন্যাকা কম। ওই জন্যেই তো শান্তিনিকেতনী মেয়ে বিয়ে
করেছি ।
আমি বল্লামঃ -তাহলে এইভাবেই কাগজে বিজ্ঞাপন
দিতে পারতে যে ন্যাকা মেয়ে চাই ! তাহলে আর বিয়ের পরে একেবারে প্যানাপ্যানানি গান
গাইতে ও শু্নতে। আর তোমার ওই "কে থুমি কে থুমি" গাইতে হতো না। হাঃ
হাঃ হাঃ করে হেসে উঠল জানিস তো? বলে এসে গেছি এসে গেছি আমার লিপি বধু হে। তোমাকে
এনকারেজ করব বলে এত কথা বললাম । তাই দেখতে দেখতে আমরা এসে গেলাম । এবার দেখো ভেতরে
গিয়ে কার্পেটের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে কথা বলবো। তুমি যে আমার "দিল কো
রানী" আর " ডায়না অফ হার্ট" কি বলবি এই মানুষটাকে বল ? বল্লামঃ
- তোকে
খুব ভালবাসে তিতাস। তোরা দুজনেই হিউমারাস। নাইন্টি নাইন পারসেন্ট নয় ফুল হানড্রেড
পারসেণ্ট মেড ফর ইচ আদার যেন ডাফ -টেল=জয়েন্ট । বেশ হাসি হাসি ভাবে বলেঃ - আর
কিছু না ।।