গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

মঙ্গলবার, ৩ এপ্রিল, ২০১২

অনু গল্প 'খিদে' - মেঘ অদিতি


          খিদে

        মে ঘ অ দি তি 

চৈত্রের দুপুর রোদ।
ফকিরগঞ্জ বাজার থেকে ঘেমে নেয়ে বাড়ি ঢুকছে করিম। পেট খিদেয় চুঁইচুঁই, তৃষ্ণায় বুক চৌচির। কিস্তির টাকা সময়ে শোধ না দিতে পারায় সুদের হার বাড়ার চিন্তা মাথাটা খামচে ধরে আছে বাড়িতে পা রাখতেই বিনবিনে কান্নার সুর করিমের মেজাজটাকে আরও খিটখিটে করে দিল।
দাওয়ায় বসে করিম হাক দেয়, ও রেজি! এক গিলাস পানি দে দেহি !
কান্নার আওয়াজ সাময়িকভাবে থামে। গ্লাস এনে করিমের সামনে ধরে মুখ ঘুরিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে রেজি বার বার শাড়ির আঁচলে

        ঢকঢক করে পানি শেষ করে গ্লাস ফেরত দিতে গিয়ে করিমের নজর পড়ল উনুনে আঁচ পড়েনি আজ উঠানের এক প্রান্তে শুধু মাথার উপরে ছাউনি দেওয়া চারদিক খোলা রান্নার জায়গাটা আজ বড় শুনশান। একখানা বটি কেবল কাত হয়ে শুয়ে আছে কুলোর গায়ে খচে যাওয়া মেজাজ সামলে করিম গ্লাস ফেরত দেয়।
-খাওন দে রেজি
রেজি চুপ
-মায়ে কই ?
রেজি মুখ ঘুরিয়ে নিঃশব্দ এবারও
-কীরে নবাবের বেডি ! ওই ... ওই... কথা কানে যায় না তর ?
এবারে  কান্না ভেজা গলায় রেজি উত্তর দেয়, মায়ে কই জানি না
-জানস টা কী তুই ?  খাওন দে কইতাছি
- রান্দি নাই... খাওনও নাই  গ্লাস হাতে নিয়ে ঘরে ঢুকে যায় রেজি পিছনে রেখে যায় চৈত্রের তীব্র ঝাঁঝ

         হঠাৎ তখন কোথা থেকে ডালে ফোঁড়নের গন্ধ বাতাসে ম ম করে ছড়িয়ে পড়ে বউয়ের শ্লেষ মাখা কথা আর কিস্তির টাকা ফেরত দিতে না পারার চিন্তাকে সরিয়ে মাথায় ঢুকে হুটোপাটি করে পেটের খিদে। আর ঠিক সে সময়ই করিমের মা করিমের সামনে এসে মুখে কাপড় গুঁজে ফুলে ফুলে কাঁদে।
-কী হইছে মা?
-তোর বোয়েরে জিগা। কী অফরাদ করছিলাম আমি খুদা..এমুন কুলইক্ষণা মাইয়া কেন আমরার ঘরে আইছে সারাদিন খাইটা মরি আমিতাইনে পায়ের উপ্রে পা তুইল্লা আরাম করে আমারে কয়, তুই বাজার না করলে সে রানতো না
       
        করিমের পেটে আবারও খিদে মোচড় দিয়ে দিয়ে ওঠে ।  মাথায় কিলবিল করে লক্ষ সরীসৃপউঠে দাঁড়িয়ে সটান ঢুকে যায় ঘরের ভেতর
চুলের মুঠি ধরে টানতে টানতে দাওয়ায় এনে চড়াও হয় রেজির ওপর একটানা কিল ঘুষি লাথির চালিয়ে করিমের খিদেভাব আরও বেড়ে যায়
ক্ষুধার্ত করিম হামলে পড়ে রেজির নাক কান ঠোঁট কামড়ে কামড়ে খায়
   
                            ----- x ------