নীল আকাশে ভাসমান মেঘ
কলেজ থেকে ফিরেই কেমন জানি আনমনা খারাপ লাগা চেপে বসল । দুপুরে খেতে বসেও খাওয়া হল না । রিমোট চেপে কোন চ্যানেলও মন বসাতে পারছে না । তাই কম্পিউটার খুলে বসে পড়ল ফেসবুকে । এখন আগের মতো ভাল লাগে না ফেসবুক । একটা বিতৃষ্ণা থেকে, বসা হয়ে উঠে না । তারপরও নাই মামার চেয়ে কানা মামার স্টাইলটা নিতে হল । বাইরের আবহাওয়াও তেমন সুবিধের না , পুরো আকাশ যেন মুখ ভার করে বসে আছে । মনে হচ্ছে একটু পর ধমক খাওয়া বালকের মতো অঝোরে কেঁদে ফেলবে । বাইরের অবস্থার সঙ্গে কম আওয়াজে বেজে চলল রবীন্দ্র সঙ্গীত
"আজি ঝর ঝর মুখর বাদর দিনে
জানিনে
জানিনে কিছুতেই কেন যে মন লাগে না "
এরই মাঝে ফেসবুক ওয়ালে চোখ পড়তেই দেখল ৬৫
টি নোটিফিকেশন,
৫ টা মেসেজ ও
৩ টা ফ্রেন্ড রকোয়েস্ট । আগে ঘুরে আসল ম্যাসেজ বক্স হতে , রাশেদ , চুমকি,
সাথী , থিতি ও অপরিচিত এক ছেলের ম্যসেজ । অনেক উৎসাহ
নিয়ে আগে ওই ম্যসেজ দেখল , লিখেছে - "আমার খুবই মন খারাপ, তাই তোমার সাথে বন্ধুত্ব করার জন্য হাত বাড়ালাম, তোমার হাতের স্পর্শ পেলে ভাল লাগবে । ভাল লাগার উৎসবে মুখর হ’ক তোমার
প্রতিটি ক্ষণ "। অনেক ভাবল তাথৈ,
কি করবে বুঝে
উঠতে পারছিলনা । অবশ্যই অপরিচিত রিকুয়েস্ট সে গ্রহণ করে না । আজ তার মন খারাপ । এর মাঝে ওই ছেলেটার আকুতিটা আরও
মন খারাপ করে দিল । তাই কিছু না ভেবে কনফার্ম বাটনে চাপ দিল, সাথে সাথে খুলে গেল নতুন বন্ধুর পুরো আকাশ । এভাবে
অনেক উৎসাহে দেখতে লাগল ইনফো, ফটো,
সবই ... । কিন্তু কোথাও কোন ছেলের ছবি দেখল না , আর দেখলেও একটার সঙ্গে আরেকটা মিলল না ।
দেখল,
চট্টগ্রাম
বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিষয়ে অনার্স পড়ছে
। একই জায়গার ছেলে দেখছি । তারপর দেখল পুরো ওয়াল জুড়ে ছোট ছোট স্ট্যাটাস , বেশ মজার , বেশীর ভাগ কবিতার লাইন -
“যাপিত জীবন
কলা
মধুর বাসনা ডালা
খেয়ালিপনায় বাজে জাদুর বাঁশি,
স্বর্গ ফেরত
মায়া
লেপটে যাওয়া
কায়া
নরম বালিশে গুঁজে মায়াময় হাসি”।
বুঝতে কষ্ট হলেও বেশ মজা পাচ্ছিলো । কার লেখা
বুঝে উঠতে পারছিল না , তবে এই লাইন গুলো
যে,
সে আগে পড়ে
নি তা ঠিক । হঠাৎ গানের
ফাঁকে শুনল ম্যেসেজের আওয়াজ । একি ! নতুন বন্ধু "নীল আকাশের" মেসেজ
। ক্লিক করতেই দেখল, বন্ধুতের হাত
বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য অনেক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন ।
নীল আকাশে
অধরা মেঘ কেমন লাগল বলতো ?
আসলে তাথৈএর
প্রোফাইল নাম ‘অধরা মেঘ’ । তাই এমনটি
লিখল বন্ধুটি । অনেক ভাবার মিছিল শেষে জবাব দিল - হুম, ভাল ।
নীল- কেমন আছ
বন্ধু ?
অধরা- ভালো, তুমি ?
নীল- এইতো
ভাসমান মেঘ যেমনটি থাকে, উড়ছে উড়ছে ।
আর খানিক বাদে কেঁদে হালকা হবে তেমনি ।
অধরা- এই যা
! তুমি করে বললাম । ডোন্ট মাইন্ড ।
নীল- ইট'স ওকে বন্ধু , আমরা প্রায় সমবয়সী , কোন সমস্যা নেই ।
এভাবে কথা
চলল অনেকক্ষণ ।
তখন গোধূলি
বেলার ক্লান্ত সোনালি আভা উঁকি দিচ্ছিল তাথৈ'র জানালায় ।
কেমন জানি এক
পশলা বৃষ্টির মতো মেঘ সরে দেখা মেলল শুকপক্ষীর ।
একই ভাবে
চলতে লাগল দিনের পর দিন ,বাড়তে লাগল তাদের বন্ধুতের ঘনত্ব । দিনে দু'তিন ঘণ্টা চলে ভাবের আদান-প্রদান । এই ভাবে
কেটে গেল প্রায় ৩/৪ মাস । একদিন অধরা (তাথৈ) জিজ্ঞেস করল, আচ্ছা তোমার প্রোফাইল পিকচার কই ?
নীল- ছবি
দিয়ে কি হবে ?
অধরা- কি হবে
মানে ?
নীল- একটা
মানুষের গুণই হল সবকিছু , চেহারাতে কি এসে যায় ।
অধরা- হুম, তা ঠিক , তারপরও একটা মানুষকে চেনার প্রধান উপায় তার চেহারা ।
নীল- আমাকে
দেখার কিছু নেই ,
আমি খুব
বিশ্রী,
কালা , তাই ছবি আপলোড করি না । হা হা হা হা হা ।
অধরা - হাসছ
কেন ?
নীল- এমনিতে, একটা কথা উত্তর দাও, তোমার আসল নাম কি ?
অধরা- না, বলব না । কেন ‘অধরা মেঘ’ সুন্দর নয় কি ?
নীল- তা কেন
হবে ,
অনেক সুন্দর
নাম । না ,
আসলে আমার নাম অনিন্দ্য চৌধুরী । তাই বলা ?
অধরা - হুম, দেখলে , ক্যামনে আসল নাম বেরিয়ে এল । হা হা হা হা হা হা । আমার নাম তাথৈ রায় ।
নীল- অনেক
সুন্দর নাম ।
অধরা-
ধন্যবাদ ,
তোমার নামটাও
অনেক সুন্দর ।
এরি মাঝে
তাদের সেল নাম্বার দেয়া , ভালবাসি বলা সবই হল , শুধু দেখাটায় বাকি ছিল । তাথৈ কে অনিন্দ্য দেখেছে , কিন্তু তাথৈ অনিন্দকে দেখে নি । তাথৈ
কিন্তু দেখতে বেশ ! পড়ে চট্টগ্রাম কলেজ সেকেন্ড ইয়ারে । অনিন্দ্য তাথৈ' কে দেখে আর তাথৈ না দেখে, তার গুণ কে অনেক ভালবেসে ফেলেছে । একটা
সুন্দর সময় দেখে তাদের দেখা হওয়ার সিধান্ত হয় । সামনে ১৪ ফ্রেব্রুয়ারি ভালবাসা
দিবসে তারা দেখা করার সময় ঠিক করল । সেদিন মুসলিম হলে ছবি দেখার পরে দেখা করবে বলে
ঠিক হল । খানিক আড্ডা দিয়ে ফুচকা খেয়ে বাড়ি ফিরবে । ১৩ ফেব্রুয়ারি এপাশ - ওপাশ
করেও ঘুম হল না কারোরই । রাতে ফোনে চলল অনেক কাহিনী । আমাকে দেখে কি করবে , আমায় যদি পছন্দ না হয় , এই রকম অনেক কথা ।
সকাল হল, দুপুরে ২ টার টিকেট নিল তাথৈ । এদিকে
অনিন্দ্যর সেল ফোনে সংযোগ দেওয়া যাচ্ছিল না , এমনিতেই মাথা খারাপ । তার উপর নাম্বার বন্ধ । যাক এই ভেবে তাথৈ ছবি দেখতে ঢুকে পড়ল ।
অনিন্দ্য ১০ মিনিট পর টিকিট কেটে কোন মতো আবছা আলোতে একটা সিটে গিয়ে বসে পড়ল । অন্ধকারে ভালো করে দেখা যাচ্ছে না সিট গুলো
। তারপরও কোনমতে বসে গেল, আলো-আধারি মায়ায় সবার দৃষ্টি তখন মুভি স্ক্রিনে, চলছে “রোমিও-জুলিয়েট” । হঠাৎ চেয়ারের হাতলে হাত রাখতে স্পর্শ হল
পেলব এক হাত । বড় কাটের চুড়িও , সরি বলে কোন মতে হাত সরিয়ে নিল ।
তাথৈ অনেক
বার ফোনে ট্রাই করেও ব্যর্থ হল । মাথা খারাপ এমনিতেই , তার উপর দু’পাশে দুটা ছেলে । মনে মনে প্রতিজ্ঞা ক’রলো, আর কখনো ওই বেয়াদবের সাথে কথা
বলবে না ।
হঠাৎ বিরতি আসায় হলের আলো জ্বেলে উঠল । অনিন্দ্য আস পাশের বসা মুখের ভীড়ে খুঁজতে
লাগল তাথৈ’কে । অনেক খোঁজা পরে পাশে বসা , মেয়েটির মুখে চোখ পড়তেই চমকে উঠল অনিন্দ্য
। তার পাশেই বসা তাথৈ । আবার নিভে গেল হলের আলো, ছবি শুরু হ’লো । এবার আলো আধারিতে
নিজের সেল ফোন বের করে খুদে বার্তা পাঠাল তাথৈ’ র সেলে । তাথৈ বুঝতে পেরে নিজের ফোনে চোখ দিতেই দেখল – “কেমন দেখছ মুভি, একা একা, পাশে আমি হলে বেশ মজা হত, তাই না ?
এই ম্যসেজ
দেখে তাথৈ নিজের সেল ফোন অফ করে দিল । মুভি স্ক্রিনে চলছে রোম্যান্টিক দৃশ্য
। এবার অনিন্দ্য ইচ্ছে করে , তাথৈ’র হাতে হাত রাখল । সঙ্গে সঙ্গে তাথৈ তেলে
বেগুনে জ্বলে,
বলে উঠল-
ষ্টুপিড ! মেয়ে দেখলেই গা ঘেষতে ইচ্ছে করে, তাই না ?
অনিন্দ্য- হ্যাঁ , তাই মনে হয় । আসলে তোমার মতো সুন্দরী মেয়ে হলেতো কথাই নেই ।
তাথৈ এবার
চিৎকার করবে ভাবল ,সাথে সাথে
মুখ চেপে ধরল অনিন্দ্য । এবং বলল , নীল আকাশে ভাসমান মেঘটা আজ বড্ড রাগল , বা!! রাগলে তোমায় অনেক মিষ্টি লাগে । একটা পিঙ্ক কালারে গোলাপ বের করে
বলল –
ভাসমান মেঘের
এই ক্ষুদ্র উপহার , সাথে অফুরান
ভালবাসা তোমার জন্য ।