গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

শনিবার, ২১ এপ্রিল, ২০১২


নীল আকাশে ভাসমান মেঘ
অ নু প ম চৌ ধু রী


কলেজ থেকে ফিরেই কেমন জানি আনমনা খারাপ লাগা চেপে বসল । দুপুরে খেতে বসেও খাওয়া হল না । রিমোট চেপে কোন চ্যানেলও  মন বসাতে পারছে না তাই কম্পিউটার খুলে বসে পড়ল ফেসবুকে । এখন আগের মতো ভাল লাগে না ফেসবুক । একটা বিতৃষ্ণা থেকে, বসা হয়ে উঠে না । তারপরও নাই মামার চেয়ে কানা মামার স্টাইলটা নিতে হল । বাইরের আবহাওয়াও তেমন সুবিধের না , পুরো আকাশ যেন মুখ ভার করে বসে আছে । মনে হচ্ছে একটু পর ধমক খাওয়া বালকের মতো অঝোরে কেঁদে ফেলবে । বাইরের অবস্থার সঙ্গে কম আওয়াজে বেজে চলল রবীন্দ্র সঙ্গীত
"আজি ঝর ঝর মুখর বাদর দিনে
জানিনে জানিনে কিছুতেই কেন যে মন লাগে না "
          এরই মাঝে ফেসবুক ওয়ালে চোখ পড়তেই দেখল ৬৫ টি নোটিফিকেশন, ৫ টা মেসেজ ও ৩ টা ফ্রেন্ড রকোয়েস্ট । আগে ঘুরে আসল ম্যাসেজ বক্স হতে , রাশেদ , চুমকি, সাথী , থিতি ও অপরিচিত এক ছেলের ম্যসেজ । অনেক উৎসাহ নিয়ে আগে ওই ম্যসেজ দেখল , লিখেছে - "আমার খুবই মন খারাপ, তাই তোমার সাথে বন্ধুত্ব করার জন্য হাত বাড়ালাম, তোমার হাতের স্পর্শ পেলে  ভাল লাগবে । ভাল লাগার উৎসবে মুখর হ’ক তোমার প্রতিটি ক্ষণ "। অনেক ভাবল তাথৈ, কি করবে বুঝে উঠতে পারছিলনা । অবশ্যই অপরিচিত রিকুয়েস্ট সে গ্রহণ করে না । আজ তার মন খারাপ এর মাঝে ওই ছেলেটার আকুতিটা  আরও মন খারাপ করে দিল । তাই কিছু না ভেবে কনফার্ম বাটনে চাপ দিল, সাথে সাথে  খুলে গেল নতুন বন্ধুর পুরো আকাশ । এভাবে অনেক উৎসাহে দেখতে লাগল ইনফো, ফটো, সবই ... কিন্তু কোথাও কোন ছেলের ছবি দেখল না , আর দেখলেও একটার সঙ্গে আরেকটা মিলল না । দেখল, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে  বাংলা বিষয়ে অনার্স পড়ছে । একই জায়গার ছেলে দেখছি । তারপর দেখল পুরো ওয়াল জুড়ে ছোট ছোট স্ট্যাটাস , বেশ মজার , বেশীর ভাগ কবিতার লাইন -  

যাপিত জীবন কলা         মধুর বাসনা ডালা
    খেয়ালিপনায় বাজে জাদুর বাঁশি,
স্বর্গ ফেরত মায়া           লেপটে যাওয়া কায়া
    নরম বালিশে গুঁজে মায়াময় হাসি

বুঝতে কষ্ট হলেও বেশ মজা পাচ্ছিলো । কার লেখা বুঝে উঠতে পারছিল না , তবে এই লাইন গুলো যে, সে আগে পড়ে নি তা ঠিকহঠাৎ গানের ফাঁকে শুনল ম্যেসেজের আওয়াজ  কি ! নতুন বন্ধু "নীল আকাশের" মেসেজ । ক্লিক করতেই দেখল, বন্ধুতের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য অনেক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন ।
নীল আকাশে অধরা মেঘ কেমন লাগল বলতো ?
আসলে তাথৈএর প্রোফাইল নাম ‘অধরা মেঘ’তাই এমনটি লিখল বন্ধুটি । অনেক ভাবার মিছিল শেষে জবাব দিল - হুম, ভাল ।
নীল- কেমন আছ বন্ধু ?
অধরা- ভালো, তুমি ?
নীল- এইতো ভাসমান মেঘ যেমনটি থাকে, উড়ছে উড়ছে । আর খানিক বাদে কেঁদে হালকা হবে তেমনি
অধরা- এই যা ! তুমি করে বললাম । ডোন্ট মাইন্ড ।
নীল- ইট'স ওকে বন্ধু , আমরা প্রায় সমবয়সী , কোন সমস্যা নেই ।
এভাবে কথা চলল অনেকক্ষণ   তখন গোধূলি বেলার ক্লান্ত সোনালি আভা উঁকি দিচ্ছিল তাথৈ'র জানালায় 
কেমন জানি এক পশলা বৃষ্টির মতো মেঘ সরে দেখা মেলল শুকপক্ষীর ।
একই ভাবে চলতে লাগল দিনের পর দিন ,বাড়তে লাগল তাদের বন্ধুতের ঘনত্ব । দিনে দু'তিন ঘণ্টা চলে ভাবের আদান-প্রদান । এই ভাবে কেটে গেল প্রায় ৩/৪ মাস । একদিন অধরা (তাথৈ) জিজ্ঞেস করল, আচ্ছা তোমার প্রোফাইল পিকচার কই ?
নীল- ছবি দিয়ে কি হবে ?
অধরা- কি হবে মানে ?
নীল- একটা মানুষের গুণই হল সবকিছু , চেহারাতে কি এসে যায় ।
অধরা- হুম, তা ঠিক , তারপরও একটা মানুষকে চেনার প্রধান উপায় তার চেহারা
নীল- আমাকে দেখার কিছু নেই , আমি খুব বিশ্রী, কালা , তাই ছবি আপলোড করি না । হা হা হা হা হা ।
অধরা - হাসছ কেন ?
নীল- এমনিতে, একটা কথা উত্তর দাও, তোমার আসল নাম কি ?
অধরা- না, বলব না । কেন ‘অধরা মেঘ’ সুন্দর নয় কি ?
নীল- তা কেন হবে , অনেক সুন্দর নাম । না , আসলে আমার  নাম অনিন্দ্য চৌধুরী । তাই বলা ?
অধরা - হুম, দেখলে , ক্যামনে আসল নাম বেরিয়ে এল । হা হা হা হা হা হা । আমার নাম তাথৈ রায় 
নীল- অনেক সুন্দর নাম ।
অধরা- ধন্যবাদ , তোমার নামটাও অনেক সুন্দর ।  
এরি মাঝে তাদের সেল নাম্বার দেয়া , ভালবাসি বলা সবই হল , শুধু দেখাটায় বাকি ছিল । তাথৈ কে অনিন্দ্য দেখেছে , কিন্তু তাথৈ অনিন্দকে দেখে নি । তাথৈ কিন্তু দেখতে বেশ !  পড়ে চট্টগ্রাম কলেজ সেকেন্ড ইয়ারে । অনিন্দ্য তাথৈ' কে দেখে আর তাথৈ না দেখে, তার গুণ কে অনেক ভালবেসে ফেলেছে । একটা সুন্দর সময় দেখে তাদের দেখা হওয়ার সিধান্ত হয় । সামনে ১৪ ফ্রেব্রুয়ারি ভালবাসা দিবসে তারা দেখা করার সময় ঠিক করল । সেদিন মুসলিম হলে ছবি দেখার পরে দেখা করবে বলে ঠিক হল । খানিক আড্ডা দিয়ে ফুচকা খেয়ে বাড়ি ফিরবে । ১৩ ফেব্রুয়ারি এপাশ - ওপাশ করেও ঘুম হল না কারোরই । রাতে ফোনে চলল অনেক কাহিনী । আমাকে দেখে কি করবে , আমায় যদি পছন্দ না হয় , এই রকম অনেক কথা ।
সকাল হল, দুপুরে ২ টার টিকেট নিল তাথৈ । এদিকে অনিন্দ্যর সেল ফোনে সংযোগ দেওয়া যাচ্ছিল না , এমনিতেই মাথা খারাপ । তার উপর নাম্বার বন্ধ যাক এই ভেবে তাথৈ ছবি দেখতে ঢুকে পড়ল । অনিন্দ্য ১০ মিনিট পর টিকিট কেটে কোন মতো আবছা আলোতে একটা সিটে গিয়ে বসে পড়ল । অন্ধকারে ভালো করে দেখা যাচ্ছে না সিট গুলো । তারপরও কোনমতে বসে গেল, আলো-আধারি মায়ায় সবার দৃষ্টি তখন মুভি স্ক্রিনে, চলছে রোমিও-জুলিয়েটহঠাৎ চেয়ারের হাতলে হাত রাখতে স্পর্শ হল পেলব এক হাত । বড় কাটের চুড়িও , সরি বলে কোন মতে হাত সরিয়ে নিল ।
তাথৈ অনেক বার ফোনে ট্রাই করেও ব্যর্থ হল । মাথা খারাপ এমনিতেই , তার উপর দুপাশে দুটা ছেলে । মনে মনে প্রতিজ্ঞা ক’রলো, আর কখনো ওই বেয়াদবের সাথে কথা বলবে না
হঠাৎ বিরতি আসায় হলের আলো জ্বেলে উঠল অনিন্দ্য আস পাশের বসা মুখের ভীড়ে খুঁজতে লাগল তাথৈকে । অনেক খোঁজা পরে পাশে বসা , মেয়েটির মুখে চোখ পড়তেই চমকে উঠল অনিন্দ্য । তার পাশেই বসা তাথৈ । আবার নিভে গেল হলের আলো, ছবি শুরু হ’লো । এবার আলো আধারিতে নিজের সেল ফোন বের করে খুদে বার্তা পাঠাল তাথৈর সেলে । তাথৈ বুঝতে পেরে নিজের ফোনে চোখ দিতেই দেখল – “কেমন দেখছ মুভি, একা একা, পাশে আমি হলে বেশ মজা হত, তাই না ? এই ম্যসেজ দেখে তাথৈ নিজের সেল ফোন অফ করে দিল । মুভি স্ক্রিনে  চলছে রোম্যান্টিক দৃশ্য । এবার অনিন্দ্য ইচ্ছে করে , তাথৈর হাতে হাত রাখল । সঙ্গে সঙ্গে তাথৈ তেলে বেগুনে জ্বলে, বলে উঠল- ষ্টুপিড ! মেয়ে দেখলেই গা ঘেষতে ইচ্ছে করে, তাই না ?   
অনিন্দ্য- হ্যাঁ , তাই মনে হয় । আসলে তোমার মতো সুন্দরী মেয়ে হলেতো কথাই নেই ।  
তাথৈ এবার চিৎকার করবে ভাবল ,সাথে সাথে মুখ চেপে ধরল অনিন্দ্য । এবং বলল , নীল আকাশে ভাসমান মেঘটা আজ বড্ড রাগল , বা!! রাগলে তোমায় অনেক মিষ্টি লাগে । একটা পিঙ্ক কালারে গোলাপ বের করে বলল ভাসমান মেঘের এই ক্ষুদ্র উপহার , সাথে অফুরান ভালবাসা তোমার জন্য ।