গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

বৃহস্পতিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০১২

দুটি গল্প - 'নীড় ছোট' - মৌ দাশগুপ্তা ও 'শৈশবের কথা' - অনুপম দাশ শর্মা


নীড় ছোট

মৌ দাশগুপ্তা
       
কবিবন্ধু নীল আর ওর বউ আঁখির একান্ত অনুরোধে অনেকদিন পরে রবিবারের সকালটাকে চোখ মেলে দেখতে দেখতে চলেছি কলকাতা শহর ছাড়িয়ে শহরতলীর পথে প্রবাসী চোখে যাচাই করছি কতটা পালটে গেছে আমার চিরচেনা শহরের রঙ, তার পটভূমি !  নীল আর আঁখি দুজনেই আমার ছোটবেলার বন্ধু, এক পাড়াতেই বড় হওয়া, স্কুল থেকে কলেজে যাওয়াবৈবাহিক সূ্ত্রে বাংলার বাইরে থাকলেও প্রযুক্তি বিজ্ঞানের বদাণ্যতায় যোগাযোগে ভাঁটা পড়েনি নীলের খুব ছেলেবেলাতেই বাবা মা মারা যাবার কারণে ও ওর ঠাকুরদার কাছেই বড় হয়েছে রুদ্রদাদু আমাদেরও খুব আপনজন ছিলেন । আজ সেই রুদ্রদাদুর পারলৌকিক কাজ উপলক্ষ্যেই যাচ্ছি যতটা না রুদ্রদাদুর টানে, তার থেকে অনেক বেশী নীল, আর আঁখির মত সেই ছোটবেলার বন্ধুদের টানে, পিছে ফেলে আসা বাল্যকালের সেইগাছপালা, পুকুরঘাট,স্কুলবাড়ী,খেলার মাঠ,ঝোপ জঙ্গল, মেঠোপথ,রাস্তাঘাটের টানে। অবশ্য মিথ্যে বলব না, ঠিক এই সময়েই হঠাৎ করে কলকাতায় সপ্তাহ খানেকের একটা অফিসিয়াল ট্যুর পেয়ে যাওয়ায় আসার তাগিদটাও জোরলো হয়েছে তার জন্য অশ্য কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি,তবে সে প্রসঙ্গ এখানে অবান্তর
        
নীল ওদের বসতবাড়ীটা এক বৃদ্ধাশ্রম সংস্থাকে দান করে দিয়েছে, রুদ্রদাদুর কাজের দিনই ওখানে ওই বৃদ্ধাশ্রম সংস্থা তাদের নতুন একটি শাখার উদ্বোধন করছে, “নীড় সে অনুষ্ঠান দেখার আগ্রহটাও ষোলোআনা আছে বিকেলের দিকে বেশ ভারাক্রান্ত মনে ফিরছি,পুরানো পাড়া,পুরানো স্মৃতি,মনক ছুঁয়ে গেছে, নাড়া দিয়ে গেছে। কতদিন যে আমি ঘরছাড়া! এসে উঠেছি দক্ষিণ কোলকাতায় অফিসের গেষ্টহাউসে, নীলদের পুরানো ড্রাইভার পরেশদা আমায় পৌছে দেবার দায়িত্ব নিয়েছে ওর সাথেই টুকিটকি কথা বলতে বলতে চলেছি ডানলপ ব্রীজের কাছে এসে কি যেন মনে হল,পরেশদাকে বললাম,

-      
চলো পরেশদা, একটু দক্ষিণেশ্বর ঘুরে যাই,কতদিন যাই নি। আমি না আস্তিক না নাস্তিক, কিন্তু দক্ষিণেশ্বরের কল্পতরুর দিকের গাছপালা ঘেরা গঙ্গার তীর আমার বড় প্রিয় খুব মন টানে। আজকাল সেখানেও দেখি বড্ড লোকের ভীড় তাও পায়ে পায়ে গঙ্গার তীর ধরে হাঁটতে থাকি তাদের সাথে আনমনে শেষ বিকালের নরম লাল আলোয় মন্দ লাগছিল না। একজায়গায় দেখি খানিকটা জটলা।লোক আসছে, যাচ্ছে, দাঁড়াচ্ছে, তাও খানিকটা ভীড় কিন্তু জমাট বেঁধেই থাকছে ভীড় এড়িয়েই চলছিলাম কিন্তু কৌতুহল জিনিষটা বড় সাংঘাতিক, বিশেষত আমার এই মেয়েলী কৌতুহল এগিয়ে গেলাম কাছাকাছি হতেই গান ভেসে এল এই করেছো ভালো নিঠুর হে..ভরাট গলা, সুরে বা শব্দে ভুল নেই তবে গায়কের দমে একটু যেন টান পড়েছে খালি উদাত্ত গলায় কেউ যেন আপনমনে গেয়ে যাচ্ছেন আরেকটু এগিয়ে যাই শান বাঁধনো গাছের তলায় এক বৃদ্ধ চোখ বুঁজে গান গাইছেন ঝুপড়ো চুল,একমুখ না কাটা দাড়ি, অপরিচ্ছন্ন পোশাক, কিন্তু ভিখারীও নন আশেপাশে নজর করে কোন দানপাত্র-টাত্রও তো দেখলাম না সামনে মাটির ওর বেশ কিছু  খুচরো পয়সা ছড়ানো আমার সমনে দাঁড়ানো ভদ্রলোকটিও দেখলাম একটা পাঁচ টাকার কয়েন ছুঁড়ে দিলেন বিচ্ছিরিভাবে কয়েনটা উড়ে গিয়ে গায়কের কাঁধে লেগে কোলের ওপর পড়ল গান থামলগায়ক চোখ মেলে তাকিয়ে মুচকি হেসে কয়েনটা তুলে মাথায় ঠেকালেন সামনে পড়ে থাকা কয়েনগুলো থেকে কয়েকটি তুলে নিয়ে নোংরা পাঞ্জাবীর পকেটে রাখলেন এবং সামনে দাঁড়ানো লোকেদের ভ্রূক্ষেপমাত্র না করে ভীড়ের দিকে পিঠ করে যেখানে বসেছিলেন সেখানেই শুয়ে পড়লেন ভীড় পাতলা হতে লাগলো, আমিও হাঁটা দিলাম

খানিকক্ষণ এলোমেলো হেঁটে গঙ্গার ওপর সূর্যডোবা দেখে ফিরছি, দেখি আমার ঠিক সামনেই সেই গায়ক ভদ্রলোক ধীরপায়ে হাঁটছেন মুখে কিন্তু গান চলছে হে মোর দেবতা... হঠাৎ কাশির দমকে গান বন্ধ কি মনে হল এগিয়ে গিয়ে ব্যাগের থেকে জলের বোতলটা বার করে দিলাম হাত মাথা একসাথে নেড়ে না বললেও কাশির দমকে বেসামাল হয়ে পাশেই কাঠের বেঞ্চের ওপর বসে পড়লেন তখনও জলের বোতলটা বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছি বলেই হয়ত হাত বাড়িয়ে নিলেন, খানিকটা আলগোছে গলায় ঢাললেন,ধাতস্থ হয়ে প্রথম কথা বললেন, কবিগুরু তোমার মঙ্গল করুন মা জীবনে যেন অমৃতের সন্ধান পাও মনে হোল কোথাও কবে শুনেছি কথাটা, ঠিক মনে পড়ছে না আন্দাজে বললাম, আপনাকে দেখেছি কোথাও ! আপনি কি কখনো বেলঘরিয়াতে থাকতেন ? ঝুঁকে পড়া দেহ খানিকটা বুঝি ঋজু হল,অন্তত আমার তো তাই লাগলো,মুখটা গঙ্গার দিকে  ফিরিয়ে স্পষ্ট গলায় বললে-  না মা, আমি জাত ভিখিরী, আমার কোন ঘরবাড়ী নেই আজ এখানে কাল ওখানে,গান গাই আর হাত পাতি, সেরকম কোথাও দেখে থাকবেন। ওহ্ আচ্ছা, আমি এগিয়ে গেলাম, পথের মোড়ে, ট্রাফিক সিগন্যালে রবিঠাকুর, পানের দোকানে এফ এমে রবিঠাকুর, সিনেমায় রবিঠাকুর আর এখন ভিক্ষাতেও রবিঠাকুর! ভাবনাটা মাথায় আসতেই পিছিয়ে এলাম

       তুমি গানকাকু না ?  আধো অন্ধকারে লোকটা চমকালো কিনা বুঝতে পারলাম না অবশ্য আমি নিজেই তখন উত্তেজিত ভাবে বলে চলেছি, -আমায় চিনতে পারছ না গানকাকু? আমি নন্দন নগরের মিষ্টু গো, সেই যে আমাদের বাড়ী তুমি গান গাইতে যেতে,আমি একবার তোমার পকেটে পিঁপড়ের বাসা রেখে দিয়েছিলাম, মনে পড়ছে? আরেকবার তোমার মায়ের দেওয়া হারমোনিয়মটা সারাতে আমার জমানো পয়সা সব তোমায় দিয়েছিলাম, কিন্তু তুমি নাও নি, মাকে ফেরত দিয়ে গেছিলে, কিছ্ছু কি মনে নেই তোমার ? গানকাকু আমার ছোটবেলায় গলায় হারমোনিয়ম ঝুলিয়ে এইরকম পথে পথে গান গেয়ে বেড়াতেন পোশাক  জীর্ণ হলেও ময়লা থাকত না। পরিস্কার দাড়ি গোঁ কামানো হাসি খুশী মুখ, উল্টে আঁচড়ানো চুল, রবীন্দ্রঙ্গীত ছাড়া অন্য কিছু কোনদিন গাইতে শুনি নি। নির্দিষ্ট কিছু আয়ের পর আর গান গাইতেন না।দাঁড়াতেনও না। ওনার জীবনের ট্রাজেডি জানতাম,সে অন্য গল্প।  আজ তা শেষাংশও জানলাম। মানুষের লোভ, হিংসা আপনজনকেও পর করে দেয়। আবার মায়া মমতা তো পরকেও আপন করে

গানকাকু আমার কেউ নন। মনেও তো ছিল না এতদিন তবু বড় মায়া হোল কিন্তু করার তো কিছু নেই আমি স্বয়ং প্রবাসী দিন অফিসের কাজে এসে উঠেছি গেষ্টহাউসে, কি যে করি ! সূর্য্য ডুবে গেছে, অন্ধকারে ঘন হয়ে আসছে,লোকজনের ভীড়ও পাতলা হয়ে গেছে অনেক দুঃখের কান্না ঝরিয়ে দুহাটুতে মাথা গুঁজে আমার সামনে বসে জীবনযু্দ্ধের এক পরাজিত সৈনিক ফেলে যেতে মন সরছে না আবার কি যে করবো সেটাও মাথায় আসছে না হঠাৎ হাতের মোবাইলটা বেজে উঠলো, “নীড় ছোট ক্ষতি নেই, আকাশ তো বড়...”, পরেশদার ফোন,  দিদি, সন্ধ্যর পর জায়গাটা ভালো না। রাস্তাও অনেকটা যেতে হবে এবার বেরিয়ে এসো

       হ্যাঁ, যেতে তো হবেই নীলকে ফোন করলাম, আজ আর যাওয়া হল না রে নীল, কালই না হয় যাবো, আাপাতত তোর নীড়”-এই ফিরছি এক ডানা ভাঙ্গা পাখী নিয়ে, ঠাঁই দিবি তো? চোখের ফ্রেমে বৃষ্টি এলো ঝাপসা হলো দৃষ্টি ভাঙ্গা চোরা  মন জুড়ে আজ  নতুন খুশির সৃষ্টি সেই খুশিতে ভিজলো দু'চোখ, ভিজলো আমার মন চরিত্ররা পালটে গেছে কাহিনী চিরন্তন" । .

শৈশবের কথা


অনুপম দাশ শর্মা


দুর্ভাগা এই প্রজন্ম। শৈশব নিয়মের কড়া গন্ডীতে বন্দী। মন  উচ্ছাসে ভরে যায় এমন উপাদান বড়ই অমিল । যা আছে তা যান্ত্রিক বোধে সৃজনশীলতার জীবাস্ম খোঁজার সামিল। যৌথ পরিবারের নানান গল্প গ্রন্থাগারের উই পড়া তাকে ঘুমায় আমরা দুই প্রজন্ম কলকাতায় বাস ঠাকুরদা ছিলেন বরিশালের 'কবিরাজ বৈদ্য'অনেক বছর পর খুঁজে পেয়েছিলাম তাঁর নামাঙ্কিত 'উপাধিপত্র' তৎকালীন সরকার বাহাদুরের দেওয়া ।  দেশভাগের পরেই নিজস্ব বসতবাটি ছেড়ে ঠাকুরদার কলকাতায় আগমন এবং সেই সময় রাণী রাসমনি অধিকৃত জমিতে খাজনার বিনিময়ে ছয়কাঠা  জমিতে টালি, টিনের দ্বিতল বাসা করা হল। আমার বাবা তাঁর সঙ্গীত প্রিয়তার জন্য চরণের ধূলি পেয়েছিলেন ওস্তাদ নারায়ন রাও যোশী'র কাছে নাড়া বেঁধে। কিন্তু আটজন সহোদর, সহোদরা এবং বৈবাহিক সুত্রে আত্মীয়স্বজনের একই বাড়িতে অবস্থানের ধাক্কা সামলাতে পারেনি অর্থ সাকুল্য কিছুদিন বাদেই ছেড়ে দিতে হল শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের তালিম তবুও বাড়িতে সংস্কৃতি চর্চার আবহ ছিল যথেষ্ট একজন প্রবীণ স্বাধীনতা সংগ্রামী যাঁকে আমি 'জ্যাঠামশাই' বলে হাজার আবদার করতাম, তাঁর কাছে পড়ার সুবাদে আলো করে ছিলেন আমাদের যৌথ পরিবারে উনি ছিলেন মাস্টারদা সূর্য সেন অনুগামী তাঁর স্ত্রী, কন্যা, জামাতা সবাই থাকত এক ছাতের নীচে।

        বাবা'র কাছে শুনেছিলাম অনেক সত্যি গল্প। কলকাতায় যে বাড়িতে প্রথম এসেছিলেন ঠাকুরদা 'লিজ' নিয়ে, সেই বাড়ির দোতলায় একটি ঘর দিন রাত বন্ধ থাকত। ঐ ঘরে কেউ না কি গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন। এমন শোনা গেছে রাতে নানান শব্দ হয় ভেতরে বন্ধ ঘরের দরজার নীচ দিয়ে সামান্য ফাঁকে দেখা গিয়েছিল কোন শাড়ীর আঁচল, উঁকি দিয়ে যেত সরে। পারতপক্ষে সন্ধ্যের পর ঐ ঘরের কাছে ঘেঁষতো না কেউই। তবু মধ্য রাতে কিছু বিশেষ মানুষজন মূল ফটকে টোকা মারলে বাবা কে তাঁদের নিয়ে আসতে হত সেই বন্ধ ঘরে টিন টন ভরা পেট্রল একে একে বের করে নিয়ে যেত 'গুপ্ত স্বদেশী বিপ্লবী'

        এমনতরো ভৌতিক আবেশ পেয়েছিলেন আমাদের পাড়ার এক প্রবীণ স্যাকরা বেলেঘাটায় একটি খাল আছে, যেটি কেষ্টপুর হয়ে চলে গেছে জনশ্রুতি, খালটি খনন করেছিলেন নবাব আলীবর্দী খাঁ ... তৎকালীন বর্গী ঠেকাতে তা বহুবছর পর খালের উপর কাঠের সেতু তৈরী হল এক বর্ষারাত , অন্ধকারে ওপার থেকে এপারে সেতু পার হচ্ছিলেন সেই স্যাকরা, গুরুপদ হঠাৎ পথ জুড়ে দাড়াল অত্যাধিক লম্বা এক ব্রহ্মদত্যি। সাদা ধবধবে চাদর গায়ে পতপত করে উড়ছে ভেজা বাতাসে গুরুপদ ঠকঠক করে কাঁপতে কাঁপতে নিজের পৈতে দেখিয়ে বলল, আমি নিরীহ ব্রাহ্মণ, কখন কারো ক্ষতি করিনি। রেহাই দাও পৈতার মহিমায় ব্রষ্ঞদত্যি উধাও এমন টুকরো টুকরো গল্পের (সত্যি?) ঝুড়িতেই সমৃদ্ধ হতাম নিজস্ব কাব্য ভাবনার অঙ্কুর বাড়িতে থাকত দুইজন ভাড়াটে তখন আমার সামনে উচ্চ মাধ্যমিক  ফাইনাল অনেক রাত অবধি পড়তাম বাড়ীর একধারে একটি ছোট্ট ঘরে। ঐ ঘরেই থাকত আমাদের বিবিধ বই, ম্যাগাজিন, পত্রপত্রিকার ওপেন ভল্ট জল জ্যান্ত ভুতের গল্প কিছু কম ছিল না বাবা বলেছিলেন ঐ বাড়ীর মূল ফটকের দরজার পাশে বাইরের রক এতটাই চওড়া যে সেখানে দিব্যি মশারী টাঙিয়ে রাত কাটান যেত হাওয়ার ফুরফুরে মেজাজে। ঠাকুরদা ওখানেই শুতেন গ্রীস্মে। এমন এক গ্রীস্মের রাত। ঠাকুরদা ঘুমাচ্ছেন। হঠাত্ই মশারীর নড়াচড়ায় ঘুম ভেঙ্গে গেল বিস্ময়ে দেখলেন মশারীর একপাশ নীচ থেকে তুলে ধরে মুখ বাড়িয়ে আছে এক স্কন্ধকাটা গলা থেকে কাটা , মুন্ডু নেই ঠাকুরদা চট করে তাঁর গায়ের পৈতা তর্জনীতে পেঁচিয়ে উঁচিয়ে ধরলেন। মূহুর্তেই ভ্যানিস। সব ভোঁ ভাঁ .. ।

        এমন একদিন জড়ান চোখে পরীক্ষার পড়া পড়ছি , পুরো বাড়ী অন্ধকার , নিদ্রায় মগ্ন সবাই আচমকা শুনতে পেলাম খসখস হেঁটে চলার শব্দ একটু দুরেই যে ঘরে পড়ছি তার পাশেই লম্বা দেওয়াল, ছাড়িয়ে এল টার্ন নিলে আমার এবং আরো চারটি ঘর পরপর। শব্দ শুনে পড়ার ঘর থেকে বেরোলাম টর্চ নিয়ে একটু হলেও বুকের ভেতর ছ্যাত্ করে উঠল অজানা বিপদের গন্ধে টর্চ জ্বালিয়ে ধীরে ধীরে এগোলাম সামনে কিছ্ছু নেই। অথচ কেন জানি কারোর শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুভুতি পাচ্ছি ঘাড় ঘুরিয়ে চারপাশে চোখ বুলালাম কিছুই নেই। টর্চের আলোর ফোকাস নীচে বাঁধান সিমেন্টের উঠোনে ফেলতেই গলা শুকিয়ে এলো। জোড়া জোড়া পায়ের ছাপ ধূলার। আমার যেন মনে হচ্ছে কারোর অস্তিত্ব আছে আশেপাশেই অথচ টর্চ সব জায়গায় ফেলেও কাউকে পেলাম না। নাহ ... এখানে থাকলে বাকী রাত দু চোখ এক করতে পারব না ভোরে যেতে হবে এক শিক্ষকের বাড়ী অতএব, পিছু সরলাম আর পড়া নয় এলাম ঘরে , ক্লান্ত শরীরকে ডেকে নিল ঘুম।

         ভোরে আর ওঠা হল না। ঘুম যখন ভাঙ্গল, ঘড়িতে প্রায় নয় টা উঠেই শুনলাম দু:সংবাদ মাঝখানের একটা ঘর ছেড়ে পাশের দুই ভাড়াটের ঘরের দরজা ভাঙ্গা। ঘর লন্ডভন্ড প্রায় যাবতীয় জিনিস চুরি হয়ে গেছে ইতিমধ্যে পুলিশ ও এনকোয়ারী সেরে গেছে। ঐ দুই ঘরের পরিবার আলাদা আলাদা নিমন্ত্রণ রক্ষায় বাড়ী ছিল না।


        কাউকে জানালাম না গত রাতের অভিজ্ঞতা। জানানো সম্ভব ছিল না। উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত ভুত দর্শন এমনভাবে ধাপ্পা দেবে কে জানত ... !