গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

মঙ্গলবার, ২৭ মার্চ, ২০১২


  পরিবর্তন উদযাপন
   
অ নু প ম দা শ শ র্মা


ঘ্যাচাং করে ব্রেক কষল ঋষি। মেয়েটা বনেটের উপর হাত রেখে সামলাল। ক্রশিং পোষ্টের মাইক্র স্পীকার গাইছে....'যদি তারে নাই চিনি গো চিনি’....... ঋষি এক মুহূর্ত ভাবলো, তারপর ধরাম শব্দে গাড়ির বাইরে, মেয়েটির মুখোমুখি। হেডলাইটের ঝাঁঝালো আলোতেও মুখ বিচ্যুতিহীন। হাতের চাপে ঠেলে সিধে হতেই টালমাটাল।  ঋষি চট করে ধরে ফেলতে ঝড়ান ঝাঁকুনি মেয়েটির..'ছাড়ো..'
ঋষির চোখ দ্রুত জরীপ করল ... 'এত রাতে..কোন মোচ্ছবে? না বেরোলে চলছিল না?" ..'শাট্ আপ । আমার খুশী'..কপালে এসে পড়া চুল পিছনে পালাল ।... ... টাইট আকাশি জিনস্  আর পিংক টপ, কোন গয়না, সাজগোজ নেই। .... .হুম। তা মরতে আমার গাড়িটাই ভাল লাগল?  -ঋষির চোয়াল একটু শক্ত ।
মেয়েটি এবার হো হো করে হেসে উঠল, 'বিলিভ মী..আজ প্রথম...জাস্ট ফান্ করতে গিয়ে....ওরা কোথায় যে গায়েব হয়ে গেল....'
'ওরা ! রাফ গাইস্'
ডোন্ট সে সাচ...অল আর ক্লোজড টু মি
ইজ ইট সো? ও কে.. তা কিসের ফান্টা মারতে গেছিলে ?.
মেয়েটি এবার ঋষির কনুই ধরে দাঁড়াতে চেষ্টা করল।...’গুড নেম ? -ঋষি।...’পিংকি’..দ্রুত গাড়িতে বসে পড়ল সামলান পায়ে ।..’আঃ’..
কথাটা পেরেছিল সোহম।..'নাহ্..আজ শালা একটু ঢালবোই'
"সামলাতে পারবি না । বকোয়াস রাখ"...শ্রেয়া বলেছিল ।
"হি হি..তোদের ও খাওয়াবো"......পিংকি রেগে গেল..’বেশি বাড়িস না..’
সোহমের কপালে ছোট রেখার আভাস ।..’তোরা সেলিব্রেসিনের কিস্যু বুঝিসনা’
শ্রেয়ার একটু আলতো রাগ ।..’ এতবছর বাদে একটা  বদল। ভাল কথা । তা বলে এতটা....’
এতটা ?...বোগাস। একটা এরার শেষ। হ্যাভক চেঞ্জ । ফ্রেস বেঙ্গল...আর তোরা...’ সোহম আরো কঠিন ।
ও কে.... ও কে। যা খুশী কর ।‘.. পিংকি কুল ।
নিবাস কোথায় ?..ঋষি হেডলাইট নেবাল । সিগারেট মুখে লাল ইঙ্গিত। পিংকি চোখ বোজা....এলান ঘাড়।..’এখান থেকে প্রায় এক কিলোমিটার ।.............হোয়্যার অল গাইজ ? তোমায় একা ছেড়ে দিল’ ?- ঋষির চাহনিতে মৃদু হাসি ।
পিংকি সিধে হয়ে বসল। ‘আমি ওদের ছেড়ে এসেছি..’
অ...বেশ বেশ...’ চিলতে হাসি দিব্যি খেলছে ঋষির সারা মুখে ।
সহমতেই এককাট্টা সবাই। একসাথেই বেরোল। তিনজনের মুখেই খুশীর সুবাস। এতদিনের মেশামেশি। উপরোধে ঢেঁকি গিলতেই হয়।
কোনদিন যাঁর ঠোঁট এক কাপ চায়ের স্পর্শ পায়নি সেই উষ্ণ মরুভুমি মাদল তরলে জড়ালো পিংকির শরীর। শ্রেয়া অভ্যস্ত ।
কচি কচি সবুজ ঘাস এখন স্পর্শকাতর । কমলা চাদরে উদ্দিপ্ত চরাচর।  আধফালি চাঁদকে এক খামচা সাদা মেঘ ঢেকে দিয়ে আলো আঁধারির মাদারীর খেলায় সাঁঝ সুন্দরী ।  সোহম শ্রেয়ার কানের কাছে ঠোঁট আনলো। শ্রেয়া উচ্ছল।
ঋষির চোখ এবার পিংকির চোখে। আকাশের ফালি মেঘ সরতেই ধবল মায়ায় পথঘাট।– ‘ছেলেটা কদ্দুর এগিয়েছিল ?
পিংকি তড়াক করে সিধে,..শুয়োরের বাচ্চা’
ঋষি হেসে ফেলল,.."হা হা..বুঝতে এতটা সময় লাগে !"
শাল্লা ! ভেতরে ভেতরে এতটা পরিবর্তন’.... !
ওরা তিনমূর্তি লেকের ধার ঘেসে বাঁধান ইটের সরু পথ ধরে হাঁটছিল। টলোমলো তিনজোড়া পা।  শ্রেয়া মাঝে মাঝেই থমকে যাচ্ছিল।
বড্ড বেশি টেনেছি রে...তোরা এগিয়ে যা.... আসছি।‘..-শ্রেয়ার কোমরে হাত।...  'শিট্... থাক দাঁড়িয়ে..চল পিংকি..’ সোহম পিংকির হাত ধরলো ।  খানিকটা  এগতে রাস্তা বন্ধ মাটি ফেলাতে । ধরা হাতে সোহম ঘাসের পথে পা বাড়াল ।
ঋষি এবার লাইটার জ্বালালো। স্পস্ট  হল পিংকির ফরসা গালে নখের আঁচড়। বাঁ হাতের কনুইয়ের নীচে কালসিটে।
তাহলে পরিবর্তনের ফলটা তেতোই বেরলো!’..ঋষি নির্লিপ্ত ।
সোহম আমার স্কুল ফ্রেন্ড। কত আসা যাওয়া বাড়িতে । কি করে....’..পিংকির গলা ধরা। চোখের কোল চিকচিকে ।.’একটা চেঞ্জ এত নিচে নামাল....’
ঋষি এবার ঘুরে সিধে হল।  গাড়ির হেডলাইট অন এখন। ..’পিংকি, তোমার সেল টা অন করো , গাড়ি স্টার্টেড’ ।



         
                                       

                                   সৎকার

                                    মৌ দা গু প্তা
         
     কিশোর পুরোহিত খুব সাত্ত্বিক ব্রাহ্ম, ত্রি-সন্ধ্যা গায়েত্রী জপ না করে জলগ্রহ করেন না, কথায় কথায় সংস্কৃত শ্লোক আওড়া, তাঁর উপস্থিতিতে অন্য স্থানীয় পূজারীরা ভূল মন্ত্রে বা ভুল উচ্চারণে পূজো করতে সাহস পাননাজন্মসূত্রে কলিঙ্গবাসী হলেও মাতৃভাষার মতই বাংলা বলেন.যৌথ পরিবার রয়েছে ওড়িশার যাজপুরে , উনি একাই কর্মসূত্রে থাকেন কলকাতায়. স্বপাকে খান, পূর্ণিমা একাদশী সব মানেন, অসম্ভব জাত্যাভিমানী.ধর্মের ব্যাপারেখুবগোঁড়া মাসের প্রথমে কোন এক শনি রবিবার মিলিয়ে ৫দিনের ছুটি নিয়ে দেশের বাড়ী যান , আজ চল্লিশ বছর সে নিয়মে কোন ব্যাঘাত হয়নি, কিন্তু গত মে মাসের গোড়ায় সেই যে বাড়ী গেছেন, মাসখনেক কেটেগেলেও আর ফেরত আসার নামটি নেই বয়স্কমানুষ, অসুখবিসুখতেইপারে, আর হালফ্যাশানের মোবাইল টোবাইল উনি পছন্দ করেননা, ব্যাবহার করেন না. অতএব অফিসের সহকর্মীরা ঠিক করল আর টা দিন দেখে বাড়ীর ঠিকানাতেই নাহয় খবর নেবেন

  এর মধ্যে বাড়ী থেকে কিশোরবাবুর দুই ছেলে এসে হাজির.বাবার খবর নিতে, তখন সবার টনক নড়ল, ব্যাপারটা কি ? অনেক খোঁজের পর জানা গেল , ট্রেনেই হার্ট অ্যাটাক য়হাসপাতালে যখন সহযাত্রীরা নিয়ে যান,তখন ডাক্তারদের আরকিছু করার ছিল না, ফাঁকতালে ওনার সর্বক্ষণের সঙ্গী খদ্দরের ঝোলা ব্যাগটা কেউ হাতসাফাই করে নেওয়ায় না ওনার টিকিট পাওয়া গেছিল না অন্য কোন পরিচিতি, ফলে বেওয়ারিশ লা হিসাবে মর্গে দিন পড়ে থাকার পরে সরকারীভাবে সৎকার হয়েগেছে
      
আরো ছোটাছুটির পর জানা গেল, হিন্দুব্রাহ্মকিশোর পুরোহিতের মুখাগ্নি সৎকার দূরেথাক, অগ্নি সংস্কারটুকুও জোটেনি সরকারী ডোম কংকাল বেচে আরো পয়সা পাবার লোভে মাটিতে কবর দিয়ে এসেছে, সত্যিই তো, বেঁচে থাকলেই জাত বেজাতের যত কচকচানি । মরার পরে মানুষের কোন জাত নেই!