সুন্দরী
মিত্রপক্ষ সাই
আজ দুপুরটা ছিল অন্যরকম । কেন জানিনা , অন্য রকম একটা দূপুর । লোহার কড়াইয়ে তেঁতুল আর পাঁচ ফোঁড়নের সম্বর দিয়ে ঢক ঢক করে জল ঢালতেই ছ্যাঁত করে উঠলো তপ্ত লোহা । তেঁতুলের অম্বল দিয়ে এক পেট ভাত খেয়ে সবে দিবা নিদ্রার প্রস্তুতি নিচ্ছি , এমনি সময় একটা হলুদ প্রজাপতি এসে ঢুকলো ঘরে । চৈত্র দূপুরের যা তেজ ! ভাবলাম দূপুরের অতিথিকে জল, বাতাসা দিই । একটা মাটির সরায় দুটি বাতাসা আর চায়ের কাঁপে একটু জল দিয়ে বসে থাকলাম ।
আজ দুপুরটা ছিল অন্যরকম । কেন জানিনা , অন্য রকম একটা দূপুর । লোহার কড়াইয়ে তেঁতুল আর পাঁচ ফোঁড়নের সম্বর দিয়ে ঢক ঢক করে জল ঢালতেই ছ্যাঁত করে উঠলো তপ্ত লোহা । তেঁতুলের অম্বল দিয়ে এক পেট ভাত খেয়ে সবে দিবা নিদ্রার প্রস্তুতি নিচ্ছি , এমনি সময় একটা হলুদ প্রজাপতি এসে ঢুকলো ঘরে । চৈত্র দূপুরের যা তেজ ! ভাবলাম দূপুরের অতিথিকে জল, বাতাসা দিই । একটা মাটির সরায় দুটি বাতাসা আর চায়ের কাঁপে একটু জল দিয়ে বসে থাকলাম ।
আমার
আতিথেয়তা পছন্দ হয়নি বোধহয় । ছুয়েও
দেখল না । যে
পথে এসেছিল সে পথেই উড়ে গেল হলুদ প্রজাপতি আমার ঘর ছেড়ে । চোখটা সবে লেগেছে, এমনি সময় বাঁশের দরজায় ঠকঠক মৃদু আওয়াজ । এই অসময়ে আবার কে এলো ! দরজা খুলতেই দেখি
সুন্দরী, নির্ঘাত আমায় আবার গালিগালাজ করতে এসেছে । চোখ ছল ছল করছে । ঘরে বসালাম । রোদে ঘেমে নেয়ে এক্কেবারে হাঁপাচ্ছে। কি ব্যাপার সুন্দরী, এই সময়ে ! আজ তো কিছু আনিনি তোমার বাগান থেকে
! ধপ করে মাটিতেই বসে পড়লো । প্রজাপতির
জল, কিছু না বলেই কাপ উপুড় করে গলায় ঢাললো । বাতাসাটা ছুয়েও দেখল না একবার । আমার হলুদ প্রজাপতির জল শেষে কিনা সুন্দরীর
পেটে ! আসলে
ওর সঙ্গে আমার আজীবনের শ্ত্রুতা । ওর
পেঁপে, সজনে, লেবু, লঙ্কা, কাঁচা আম আমি নিজের মনে করে সবসময় খেয়েছি । পান এনে দিয়ে, বই নিয়ে পালিয়েছি। ইচ্ছে করেই খপ করে হাত
চেপে ধরেনি আমার। গালাগাল
করেছে । কে শোনে কার কথা ।
- আবার কাল আসবো সুন্দরী । কচুর শাক করে রেখো তো বাদাম দিয়ে । আমায় দেখলেই তাড়ায় আবার ডেকে সন্দেশও খাওয়ায় । খিস্তিটা মুফতে পাই। আমায় মিনসে বলে ডাকে । আমি ডাকি সুন্দরী । রংটা এক্কেবারে কচি আমপাতার মতো । ব্যাতিক্রম শুধু একাদশীর দিন , সেদিন আবার
সুন্দরী শান্ত, স্থির, ধীর । কি যেন ভাবে, কাকে যেন সারাদিন খুঁজে বেড়ায় ।
- এই
মিনসে নে এটা ধর ।
- কি আবার! ভেবেছিলাম লেবু হবে বা পেয়ারা । খুব বেশী হলে নারকেল নাড়ু । হাত বাড়ালাম সুন্দরীর দিকে মুচকি হেসে ।
সুন্দরী আমায় যা দিল হাতে, আমি অবাক !
কালচে হয়ে যাওয়া সোনায় বাধানো সাদা পাথরের একটা নাকছাবি । মুহূর্তেই মাথাটা যেন ঘুরে গেল।
অবাক আমি, এটা কেন ? আমাকে কেন ? কি করবো এটা !
- মিনসে তোর নয়, ওই পোড়ামুখিটার জন্য । অমন চাঁদ পানা মুখে নাকছাবি না থাকলে সুন্দর দেখায় ! এটা ওকে দিস ।
কাকে...!
- তোর সুন্দরীকে । আমার রক্তকরবী দে মিনসে । আমি বের করে দিলাম বইটা বালিশের নীচে থেকে । কখন জানলো কে জানে, আমি এনেছি বইটা !
আর দাঁড়ালো না সুন্দরী । আমি হাঁ করে তাকিয়ে দেখছি জ্ঞানশূন্য হয়ে তাঁর চলে যাওয়া । একবারও পিছু ফিরে তাকাল না ।
- কি আবার! ভেবেছিলাম লেবু হবে বা পেয়ারা । খুব বেশী হলে নারকেল নাড়ু । হাত বাড়ালাম সুন্দরীর দিকে মুচকি হেসে ।
সুন্দরী আমায় যা দিল হাতে, আমি অবাক !
কালচে হয়ে যাওয়া সোনায় বাধানো সাদা পাথরের একটা নাকছাবি । মুহূর্তেই মাথাটা যেন ঘুরে গেল।
অবাক আমি, এটা কেন ? আমাকে কেন ? কি করবো এটা !
- মিনসে তোর নয়, ওই পোড়ামুখিটার জন্য । অমন চাঁদ পানা মুখে নাকছাবি না থাকলে সুন্দর দেখায় ! এটা ওকে দিস ।
কাকে...!
- তোর সুন্দরীকে । আমার রক্তকরবী দে মিনসে । আমি বের করে দিলাম বইটা বালিশের নীচে থেকে । কখন জানলো কে জানে, আমি এনেছি বইটা !
আর দাঁড়ালো না সুন্দরী । আমি হাঁ করে তাকিয়ে দেখছি জ্ঞানশূন্য হয়ে তাঁর চলে যাওয়া । একবারও পিছু ফিরে তাকাল না ।
পোস্ট
মাস্টারের মেয়ে ছিল । পদ্য
লিখত। রবীন্দ্রনাথ, শরৎ চাটুজ্যে গুলে খেয়েছে । আমি ‘রক্তকরবী’ প্রথম সুন্দরীর কাছ থেকেই
সন্তর্পণে চুরি করে এনেছিলাম, দিতে ভুলেও গিয়েছিলাম ইচ্ছে করেই । আজ ছিল দশমীর ভাসান । বাসন্তীর এই অসময়ে বাপের বাড়িতে আসাটা যেন
কেউ বিশেষ একটা পছন্দ করে না। তাই অনাদরেই আবার পাড়ি দেয় স্বামীর ঘরে ।
এতো রোদ্দুর সহ্য হয়নি সুন্দরীর । ঘরে গিয়েই ঘুমিয়ে পড়েছে নিশ্চিন্তে শীতল পাটিতে মাটির বিছানায় । উমনের চিৎকারে দৌড়ে গেলাম , ততক্ষণে হাত দুটি হিম হয়ে গেছে সুন্দরীর । হাতে ‘রক্তকরবী’র শেষ পাতাটি মুঠো করে ধরা, লাইন গুলি স্পষ্ট, 'ঐ দেখো, ধুলায় লুটচ্ছে তার রক্তকরবীর কঙ্কণ । ডান হাত থেকে কখন খসে পড়েছে । আজ সে রিক্ত করে দিয়ে চলে গেল...।'
এতো রোদ্দুর সহ্য হয়নি সুন্দরীর । ঘরে গিয়েই ঘুমিয়ে পড়েছে নিশ্চিন্তে শীতল পাটিতে মাটির বিছানায় । উমনের চিৎকারে দৌড়ে গেলাম , ততক্ষণে হাত দুটি হিম হয়ে গেছে সুন্দরীর । হাতে ‘রক্তকরবী’র শেষ পাতাটি মুঠো করে ধরা, লাইন গুলি স্পষ্ট, 'ঐ দেখো, ধুলায় লুটচ্ছে তার রক্তকরবীর কঙ্কণ । ডান হাত থেকে কখন খসে পড়েছে । আজ সে রিক্ত করে দিয়ে চলে গেল...।'
আমার হলুদ প্রজাপতিও আজ ভাসানে গেছে ।
সুন্দরীর শরীরে তেল হলুদ মাখাচ্ছি আমি, চাঁদের আলোয় সুন্দরীর রঙে ভাটা পড়েছে, চামড়া কুচকে গেছে অনেককাল।
রয়ে গেছে নাকছাবিটা এখনও অক্ষত আমার পকেটে । হায়রে নন্দিনী, তোমার জন্য আমার সুন্দরীর উপহার, নেবে না তুমি ?
রয়ে গেছে নাকছাবিটা এখনও অক্ষত আমার পকেটে । হায়রে নন্দিনী, তোমার জন্য আমার সুন্দরীর উপহার, নেবে না তুমি ?