গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

রবিবার, ১৬ জুন, ২০১৩

প্রীতম ভট্টাচার্য্

বাঁচার স্বপক্ষে

চিৎ হল, উপুড় হল, খানিক এপাশ-ওপাশ করল তবুও ঘুম এলো না অতঃপর মশারির ভেতরে বিছানার উপর উঠে বসল সোহম আজ রাত্রে শোয়া ইস্তক আত্মহত্যাশব্দটা ওর মাথার উপর ভেতর বিন-বিন করছে। বহুরকম ধনাত্মক ভাবনা ভাবতে চেয়েছে, নানাভাবে প্রিয়জনদের কথা, প্রিয় ঘটনাবলীর ছবি মনের মধ্যে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করছে। কিন্তু অস্থিরতা কিছুতেই কাটেনি টানতে- টানতে মাথার চুল খাড়া হয়ে গেছে, ঢোক গিলে গিলে গলাটা শুকিয়ে খটখটে একফোঁটা তন্দ্রাও আসেনি।

অগত্যা মশারি তুলে খাট থেকে নেমে পড়ল। আলো জ্বালল। জল খেল। এবং ডাইরি খুলে লিখতে বসল। ডাইরির পাতার মাঝ- বরাবর লম্বা একটা দাগ কাটল। বাঁদিকে উপরে লিখল আমি কেন বাঁচতে চাই,” ডানদিকে উপরে আমি কেন বাঁচতে চাই না ” ও কেন বাঁচতে চায় সে কথাটা অনেকক্ষণ ধরে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ভাবল কিন্তু বাঁচার স্বপক্ষে একটাও জুতসই কারণ খুঁজে পেলো না শেষে কেন বাঁচতে চা্য না তার সপক্ষে ভাবতে লাগলো। বন্যার জলের মতো ধেয়ে এলো কারন গুলো ও লিখে ফেলল
এক , আমি প্রায় অনাথ বাবা নেই মা যে অবস্থায় বেঁচে আছেন তাতে আমার মতো ছেলে থাকা বা না থাকা তার কাছে সমান।
দুই,  আমি কাউকে ভালবাসিনি, কেউ আমাকে ভালবাসেনি আমার কোন পিছুটান নেই।
তিন, আমার যে নিকট আত্মীয়ের সংসারে আমি বোঝার মতো চেপে বসে আছি আমি না থাকলে তাদের কোন অসুবিধা নেই। অবশ্য আমি মরে গেলে আমার সৎকার, শ্রাদ্ধাদির জন্য যে খরচাটুকু হবে তা করতে দাদা বৌদির বুকে একটু বাজবে। যদিও উত্তরাধিকার সুত্রে প্রাপ্ত আমার একমাত্র সম্পত্তি তাঁরা পেয়ে যাবেন।
চার,  আমি হার্টের রুগী, অধিক পরিশ্রমের ক্ষমতা আমার নেই, আমার তেমন শিক্ষাগত যোগ্যতাও নেই যার জোরে অদূর ভবিষ্যতে আমি কোন চাকরি পেতে পারি। আর আমার মতো সহায়সম্বলহীনের পরিশ্রমহীন ব্যবসার কথা ভাবাটা বাতুলতা
এমতাবস্থায়......

ঘুমে আচ্ছন্ন সোহম শুনতে পেল বৌদি চিৎকার করছেন রোজই সকালে সোহমের উদ্দেশ্যে নিয়মমাফিক বৌদি এটা করে থাকেন। তাই ওর কোন ভাবান্তর হল না কিন্তু ভাইপো পিকলুর কান্না শুনে ওর তন্দ্রা পুরোপুরি কেটে গেলো ও কান খাড়া করে ঘটনাটা বুঝতে চাইল শুনল বৌদি বলছে, - ‘অ্যা ! কাকুর সঙ্গে ইস্কুলে যাবো ! ঐতো কাকুর ছিরি ! কাকুর সঙ্গে থেকে থেকে কাকুর মতোই হও এসব কথাও সোহম বহুবার শুনেছে গণ্ডারের চামড়ায় আজকাল ওসব আঘাতের কোন প্রতিক্রিয়া হয় না কিন্তু এবার প্রতিক্রিয়া হল, যখন পিকলু এসে দরজায় দুম্-দুম্ করে কিল মারতে লাগলো আর কাঁদতে লাগলো,
- ও কাকু ওঠো না, আমায় ইস্কুলে নিয়ে চলো না, ও কাকু.........
পড়িমরি করে মশারি তুলে দরজার কাছে ছুটে এলো সোহম। খিল খুলে দরজাটা টানতেই দরজার সঙ্গে সঙ্গে পিকলুও হুমড়ি খেয়ে পড়ল ওর পায়ের কাছে এক ঝটকায় পিকলুকে কোলে তুলে নিয়ে ওর মুখটা চুমোয় ভরিয়ে দিতে দিতে সোহমের মনে পড়ল কাল রাতের ডাইরির কথাটা
বাঁচার সপক্ষে মাত্র একটা কারণের প্রবল তোড়ে না বাঁচার সপক্ষে সব কারণগুলো খড়ের কুটোর মতো ভেসে যেতে লাগলো।