ফুটবল খেলতে কে না ভালবাসে
ফুটবল
খেলতে কে না ভালবাসে, দড়াম করে এসে, দুম করে এসে বলে লাথি কষালাম, বল মধ্য গগনে
উঠে গেল। শরীরের বিভিন্ন মোচড় দিয়ে বিপক্ষের ডিফেন্ডারদের টপাটপ মাটিতে ফেলে
দিলাম। চোরাগুপ্তা লাথি মারলাম, কখন কনুই । আর নাটমেগ করতে পারলে তো কথাই নেই। আর
সবচেয়ে গুরুত্ম পূর্ণ হল গোল। সবাই গোল করতে চায় । বিশেষত পাড়ার ফুটবলে সবাই বলের
কাছে জটলা করে আর দুম দাম লাথি চালায়। মাঠের কুড়ি জন খেলোয়াড় এক দিকে বল কাড়াকাড়ি
করছে। আর বাকি মাঠে গরু ছাগল চড়ে বেড়াচ্ছে। কিন্তু তোমরা যারা পাড়ার ফুটবল খেলেছ
তোমরা জান যে ফুটবল খেলা একটা চিত্রনাট্যর মত। খেলোয়াড়রা এক এক বিচিত্র চরিত্রের
হয়। তাদের ঠিক লৌকিক ভাষায় বর্ণনা করা যায়না। কিন্তু এই সব নিয়েই মাঠে গোল হয়,
লোকের ঠ্যাঙে লেগে মাঠের বাইরে যায়। অনেকের প্রচণ্ড লাগে আর অনেকেরই ঠ্যাং ভেঙ্গে
যায় লাগে না। বিশ্বাস হচ্ছে না আমারও হয়নি। আমাদেরই এক বন্ধুর খেলতে খেলতে পায়ে
লাগল। খটাস করে আওয়াজ হল। আমরা ভয় পেয়ে ছুটে গেলাম।
“কি রে
কি হল?”
“মনে
হচ্ছে পা টা ভেঙ্গে গেল।”
‘’কি
করে বুঝলি? আর এত দাঁত কেলিয়েই বা বলছিস কেন?”
“আরে
যেরকম আওয়াজ হল। ”
“ব্যাথা
করছে না?”
“ব্যাথা
করলে কি দাঁত কেলাতাম?”
পা
ভেঙেছে না ভাঙ্গেনি এই নিয়ে কয়েক রাউন্ড তার্কিক আলোচনা্র (যেখানে হাইদেগার, ফুঁকো
কেউ বাদ যায়নি) দুদিন পর যখন ডাক্তারের কাছে গেলাম। ডাক্তার বলল “করেছেন কি? এতো
প্রায় দু টুকর হয়ে গেছে। “ তখনো দেখি সে দাঁত কেলাচ্ছে। ফুটবল মাঠ কত কিছুই না
দেয়। যেমন দুর্ধর্ষ দুশমনেরমত দুর্ধর্ষ সব উইঙ্গার দেয়। তারা এত জোরে আর এত আবেগে
দৌড়ায় যে তারা নিজেদের গোললাইনের থেকে বিপক্ষের গোললাইন ক্রশ করে চলে যায়, যেন
রেসে নেমেছে।
“ওরে
করিস কি দাঁড়া দাঁড়া”
বলতে
বলতে বিপক্ষের গোলকিক হয়ে যায়। আর এক প্রকার উইঙ্গার আমরা পেতাম যারা পায়ের ফাঁক
দিয়ে গলে যেত। এই আছে, এই নেই। হটাৎ করে মাঠের লাগোয়া ঝোপ থেকে বেড়িয়ে আসত। সে এক
বিশ্রি ব্যাপার, পাঁকাল মাছের মত সুড়ুত সুড়ুত করে ঢুঁকে পড়ত। আর কিছু ছিল ননীর
পুতুল। একবার লাগলেই হল, গড়িয়ে গড়িয়ে মাঠের এ প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত চলে যেত।
আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে বড় বড় আন্তর্জাতিক ফুটবলাররা পাড়ার প্লেয়ার দের থেকে এই ধরনের
অনুপ্রেরনা সব পেয়েছে। সেই সব কি আর বলবে তারা? কিছু ভিতু স্ট্রাইকারও ছিল যারা
ডিফেন্ডারদের চার্জ করতে দেখলেই পাঁচ মাইল দূর থেকে বলত
‘ মারিস
না, মারিস না , বড্ড লাগবে, বল দিয়ে দিচ্ছি”
আর বল
ছেড়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ত। আজ এমন একজনের কথা বলব যে এই সব রথী মহারথী দের ডিঙিয়ে লিজেন্ডের
পর্যায় চলে গেছিল। আমাদের বিখ্যাত গোলকিপার সুবোধ। না কোন ম্যাচ জেতায় নি বা
দুর্ধর্ষ সেভ করেনি। সে সদ্য বিয়ে করেছিল। কিন্তু বিয়ের দু মাসের মধ্যে বউ একবছরের
জন্য অফিসের কাজে বাইরে গেছিল, ব্যাস তারপর থেকেই শুরু হল তার ফোনালাপ পর্ব। সে এক
ভয়ানক ব্যাপার, ফোনের চটে তার হাতে স্পন্দিলাইটিস হয়ে গেল। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে ফোন
করছে, ঘুম থেকে উঠে ফোন করছে। সর্বত্র ফোন চলছে। অনেকদিন পর কান খোলা অবস্থায় দেখা
গেল। তাতে রীতিমত উৎসব লেগে গেল যে অনেকদিন পর এমন একটা বিরল ঘটনার ঘটেছে। সুবোধ
লজ্জা পেত, পাওয়ারই কথা, কিন্তু ফোন ছাড়ত না। এমনকি ফুটবল খেলার সময়, সে রাইট
ব্যাক থেকে গোলকিপার হয়ে গেল, শুধুমাত্র ফোনে কথা বলবে বলে। ওই একটা ম্যাচ সুবোধকে
আমরা গোলকিপার করেছিলাম। সেটাই ছিল প্রথম আর শেষ। খেলার শুরুতে আমাদের প্রাধান্য
ছিল। আমরা বিপক্ষে চেপে ধরেছিলাম, খেলাটা ওদের হাফেই হচ্ছিল। আর সুবোধ নিশ্চিন্তে
গোলপোস্টে হেলান দিয়ে ফোনে কথা বলছিল। কিন্তু হাওয়া সব সময় এক দিকে বয় না। ওরা
কাউন্টার অ্যাটাক করল। ওদের রোগা করে স্ট্রাইকারটা আমাদের সমস্ত ডিফেন্ডারকে
পেড়িয়ে আমাদের গোলের দিকে ছুটল। সামনে শুধু সুবোধ।
“সুবোধ,
বল বল, বল আসছে”
সুবোধ
দেখল, তার পরে ফোনে বলল
“শুনছ।
বল আসছে, একটু ধর।”
এই বলে
ফোন টা গোল পোস্টের সামনে ফেলে দুলকি চালে এগিয়ে এল। আলতো করে হাত বাড়াল। সেই হাত
উপেক্ষা করে জোরালো শট গোলে ঢুঁকে গেল। বিন্দুমাত্র হেলদোল না দেখিয়ে সুবোধ আবার ফোনটা
তুলে নিল।
“হ্যাঁ
বলো, গোল হয়ে গেছে।”