গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

সোমবার, ২২ জুন, ২০২০

দীপলেখা মুখার্জি

নীল জল


লিসা বছর এগারোর মেয়ে, মা আর দিদির সাথে শরণার্থী শিবিরে থাকে।বাবা তার কাঁটারার পারয় করতে গিয়ে  গুলিতে মারা গেছে। কে মেরেছে,  কেন মেরেছে, কি হয়েছিলা,  লিসা তার কিছুই জানে না। জানতেও চায় না। এই মুহূর্তে তার জল তেষ্টা পেয়েছে খুব। মায়ের কাছে অনেক বায়না করে এক ঢোক জল পেয়েছে, তাও মা চুলের মুঠি ধরে টেনে তবে দিয়েছে। এখানে প্রত্যেকের বরাদ্দ মাপা জল। তিন দিন আগে মা একটা ভিজে কাপড় দিয়ে তার, দিদির আর নিজের গা মুছেছে। 

একটু রাগ করেই লিসা কাঁদতে কাঁদতে বেশ কিছুটা দূরে চলে এসেছে।  এখান থেকে কয়েক লাখ শিবিরের অনেকটাই দেখা যায়। একটু উচু টিলা মতোন। একটা ঝোপের ছায়ায় বসে নুড়ি পাথর নিয়ে খেলতে খেলতে জলের কষ্ট প্রায় ভুলেই গেছিলো সে। একটা স্নেহ মাখানো গলার আওয়াজ পেয়ে উপরে তাকিয়ে দেখলো একজন মহিলা। তার হাতে একটা বড় প্যাকেট চিপ্স আর জলের বোতল। প্যাকেটটা থেকে চিজের গন্ধে তার টপ করে এক ফোঁটা লাল গড়িয়ে পরল জামায়। মহিলা তার কাছে বসে পড়ল,  হাত বাড়িয়ে বলল, হাই! আমি মাইলি,  তোমার নাম কি? লিসা ভেবলার মতো তাকিয়ে বলল, লিসা।
মহিলাটি ব্যাগ থেকে একটি রুমাল বের করে, তার হাত দুটো মুছে দিল। আর হাতে দিল চিপ্সের প্যাকেটা। লিসা টপাটপ কয়েকটা খেয়ে নিল লজ্জা না করে। কোন সকালে মা 'লেপ্সি 'খাইয়ে দিয়েছিল একটু। তারপরই লোভীর মতো তাকাল জলের বোতলটার দিকে। মাইলি হেসে তার বোতল লিসার হাতে দিল। আর ওর জল চিপ্স
  খাওয়ার সাথে সাথে অনেক কথা জিজ্ঞাসা  করতে লাগল, আর খাতায় লিখতে লাগল। নিজের গলার স্কার্ফটা তার গলায় পরিয়ে, অনেক ছবিও তুললো।
লিসা কে আদর করে, বলল স্কার্ফটা আমি তোমায় গিফট দিলাম।আর এই জলের বোতলটাও। টা টা।

এদিকে লিসা এক দৌড়ে তার মায়ের কাছে গিয়ে নেচে নেচে জল খেতে লাগলো, খানিক ফুরর করে মুখ দিয়ে আকাশের গায়ে ছিটতে লাগল। ভাবখানা এমন দেখো এক ঢোক জল দিতে চাইছিলে না, মারছিলে,  এটা আমার জল। আমি যা ইচ্ছে করবো। কিন্তু তার মা দ্রুত তার হাত থেকে বোতলটা কেড়ে উচু তাকে রেখে দিল। কড়া গলায় বলল, নষ্ট করার মতো আমাদের কোনো কিছুেই নেই। কেউ দিলেও নেই, কুড়িয়ে পেলেও নেই।
মাইলি একটা বিদেশী  কাগজের দফতরে কাজ করে। কালই ইউরোপ ট্যুর করে আজ এসেছে মধ্য প্রাচ্যের এই শরণার্থী শিবিরের উপর কাজ করতে। আগামীকাল থেকে কাজে লাগার কথা। শরীরটা বিশেষ ভালো নেই, হালকা জ্বর আর গলা ব্যথা । তবু আজ বেড়াতে বের হল, হঠাৎ এই লিসা কে দেখে আটকে গেল। যেন দেব শিশু। নীল গাঢ় চোখ, মখনের মতো গায়ের রং, একমাথা সোনালি চুল। ময়লা নোংরা কাপড় জামাও সেই দেব সুলভ সৌন্দর্য ঢাকতে পারেনি।
রাতে
  তার তোলা ছবি গুলো এডিট করতে করতে তার নি:সন্তান জীবন লিসার জন্য কষ্টে হু হু করে উঠল !

দিন চার পরে লিসার একটু জ্বর, গলা ব্যাথা, সাথে কাশি। শ্বাস কষ্ট।
দেখতে দেখতে ঘরে ঘরে, আগুনের মতো অজানা রোগ ছড়িয়ে পরল। এই রোগে মরতে লাগলো শয়ে শয়ে, রোগ
  থেকে রেহাই নাকি এক মাত্র হাত ধোয়া, ১৫ মিনিট অন্তর।  তারা খাবার জল পায়না। হাত ধোবার জল কোথায়?  তার চেয়ে মৃত্যু অনেক সহজলভ্য । পৃথিবী তার অসহায় মানুষের বোঝা কমাতে লাগলো হাজারে হাজারে ।

নেদারল্যান্ডসের হেগের একটা ফ্ল্যাট, কিছুদিন আগেই  সেরে উঠেছে মাইলি । যদিও  সে খুব বেশি ভোগেনি এই রোগে।লিসা বছর এগারোর মেয়ে, মা আর দিদির সাথে শরণার্থী শিবিরে থাকে।বাবা তার কাঁটারার পাড় করতে গিয়ে  গুলিতে মারা গেছে। কে মেরেছে,  কেন মেরেছে, কি হয়েছিলা,  লিসা তার কিছুই জানে না। জানতেও চায় না। এই মুহূর্তে তার জল তেষ্টা পেয়েছে খুব। মায়ের কাছে অনেক বায়না করে এক ঢোক জল পেয়েছে, তাও মা চুলের মুঠি ধরে টেনে তবে দিয়েছে। এখানে প্রত্যেকের বরাদ্দ মাপা জল। তিন দিন আগে মা একটা ভিজে কাপড় দিয়ে তার, দিদির আর নিজের গা মুছেছে। 

একটু রাগ করেই লিসা কাঁদতে কাঁদতে বেশ কিছুটা দূরে চলে এসেছে।
  এখান থেকে কয়েক লাখ শিবিরের অনেকটাই দেখা যায়। একটু উচু টিলা মতোন। একটা ঝোপের ছায়ায় বসে নুড়ি পাথর নিয়ে খেলতে খেলতে জলের কষ্ট প্রায় ভুলেই গেছিলো সে। একটা স্নেহ মাখানো গলার আওয়াজ পেয়ে উপরে তাকিয়ে দেখলো একজন মহিলা। তার হাতে একটা বড় প্যাকেট চিপ্স আর জলের বোতল। প্যাকেটটা থেকে চিজের গন্ধে তার টপ করে এক ফোঁটা লাল গড়িয়ে পরল জামায়। মহিলা তার কাছে বসে পড়ল,  হাত বাড়িয়ে বলল, হাই! আমি মাইলি,  তোমার নাম কি? লিসা ভেবলার মতো তাকিয়ে বলল, লিসা।
মহিলাটি ব্যাগ থেকে একটি রুমাল বের করে, তার হাত দুটো মুছে দিল। আর হাতে দিল চিপ্সের প্যাকেটা। লিসা টপাটপ কয়েকটা খেয়ে নিল লজ্জা না করে। কোন সকালে মা 'লেপ্সি 'খাইয়ে দিয়েছিল একটু। তারপরই লোভীর মতো তাকাল জলের বোতলটার দিকে। মাইলি হেসে তার বোতল লিসার হাতে দিল। আর ওর জল চিপ্স
  খাওয়ার সাথে সাথে অনেক কথা জিজ্ঞাসা  করতে লাগল, আর খাতায় লিখতে লাগল। নিজের গলার স্কার্ফটা তার গলায় পরিয়ে, অনেক ছবিও তুললো।
লিসা কে আদর করে, বলল স্কার্ফটা আমি তোমায় গিফট দিলাম।আর এই জলের বোতলটাও। টা টা।

এদিকে লিসা এক দৌড়ে তার মায়ের কাছে গিয়ে নেচে নেচে জল খেতে লাগলো, খানিক ফুরর করে মুখ দিয়ে আকাশের গায়ে ছিটতে লাগল। ভাবখানা এমন দেখো এক ঢোক জল দিতে চাইছিলে না, মারছিলে,  এটা আমার জল। আমি যা ইচ্ছে করবো। কিন্তু তার মা দ্রুত তার হাত থেকে বোতলটা কেড়ে উচু তাকে রেখে দিল। কড়া গলায় বলল, নষ্ট করার মতো আমাদের কোনো কিছুেই নেই। কেউ দিলেও নেই, কুড়িয়ে পেলেও নেই।
মাইলি একটা বিদেশী  কাগজের দফতরে কাজ করে। কালই ইউরোপ ট্যুর করে আজ এসেছে মধ্য প্রাচ্যের এই শরণার্থী শিবিরের উপর কাজ করতে। আগামীকাল থেকে কাজে লাগার কথা। আজ হঠাৎ এই লিসা কে দেখে আটকে গেল। যেন দেব শিশু। নীল গাঢ় চোখ, মখনের মতো গায়ের রং, একমাথা সোনালি চুল। ময়লা নোংরা কাপড় জামাও সেই দেব সুলভ সৌন্দর্য ঢাকতে পারেনি।
রাতে
  তার তোলা ছবি গুলো এডিট করতে করতে তার নি:সন্তান জীবন লিসার জন্য কষ্টে হু হু করে উঠল !


দিন চার পরে লিসার একটু জ্বর, গলা ব্যাথা, সাথে কাশি। শ্বাস কষ্ট।
দেখতে দেখতে ঘরে ঘরে, আগুনের মতো অজানা রোগ ছড়িয়ে পরল। এই রোগে মরতে লাগলো শয়ে শয়ে, রোগ  থেকে রেহাই নাকি এক মাত্র হাত ধোয়া, ১৫ মিনিট অন্তর।  তারা খাবার জল পায়না। হাত ধোবার জল কোথায়?  তার চেয়ে মৃত্যু অনেক সহজলভ্য । পৃথিবী তার অসহায় মানুষের বোঝা কমাতে লাগলো হাজারে হাজারে ।
নেদারল্যান্ডসের হেগের একটা ফ্ল্যাট, কিছুদিন আগেই  সেরে উঠেছে মাইলি । টেস্টর রিপোর্ট পজিটিভ ।যদিও  সে খুব বেশি ভোগেনি।,এখন ঘড়িতে একটা ।
ঘুমের 50টা বড়ি এক সাথে জলে গুলে চুমুক দিল মাইলি।
তার মোবাইল ফোনে লিসার ছবি। নীল চোখে হাসছে । মাইলির কানে হাপরের মতো শ্বাস নেওয়ার শব্দ বাজচ্ছে। । হাজারে হাজারে হাঁপানির হাপরের শব্দ কানে নিয়ে  আস্তে আস্তে ঢোলে পড়লো বিছানায়, না ভাঙা ঘুমে। চোখের কোণে তখনও জলের ফোঁটা চিকচিক করছে ।এখন ঘড়িতে একটা ।
ঘুমের 50টা বড়ি এক সাথে জলে গুলে চুমুক দিল মাইলি।
তার মোবাইল ফোনে লিসার ছবি। নীল চোখে হাসছে । মাইলির কানে হাপরের মতো শ্বাস নেওয়ার শব্দ বাজচ্ছে। । হাজারে হাজারে হাঁপানির হাপরের শব্দ কানে নিয়ে  আস্তে আস্তে ঢোলে পড়লো বিছানায়, না ভাঙা ঘুমে। চোখের কোণে তখনও জলের ফোঁটা চিকচিক করছে ।