তবু সুখে থাক
আফরাব দুবাইতে কাজ করে ।
টাকা মাঝেমাঝে বাড়িতে পাঠায় । পাড়ার সবাই জানে । কিন্তু অবাক হওয়ার পালা
আসে আফটতাব বাড়ি ফিরে এলে ।
খুব চেনা আফতাবের ভাবটাই বদলে যায় ।
সবার সাথে কথা বলে না । বেশ বেছে-বেছে মানুষের সাথে কথা বলে ও । তারা তো
ওকে ধনকুবের ভেবে পাগল । পিছে লেগে থাকে ওর । কিছু খেতেও পায় চায়ের বা মিষ্টির
দোকানে ।
কিন্তু আফতাবের পাড়ার ছেলে মনির একদম পাত্তা দেয় না আফতাবকে ।
কিছু কথা বলে সবাইকে অখুশি করে ।
হেসে-হেসে বলে,'আমি খোঁজ নিচ্ছি দুবাইতে ও কি করে । নিশ্চয় তেমন কিছু না ।'
রেগে অনেকেই তখন বলে ওঠে,'বাজে কথা বল না । হিংসে কর বুঝি ? ওর মতো হয়ে
দেখাও তো ।'
শুনে স্মিত-হেসে ও উত্তর দেয়,'আমি বেশ আছি আব্বার ছোটো দোকান সামলে ।'
তা খবর চলে আসে একদিন । আফতাবের সঙ্গে দুবাইতে থাকে জিয়াউর । সে পাশের
গ্রামের ছেলে ।
একদিন তার সাথে দেখা হতেই মনির তাকে জিজ্ঞেস করে,'তোমার সঙ্গেই তো আফট্যাব
তোমার সঙ্গে থাকে ? তা তোমরা কী কর ওখানে ?'
সে কিছুসময় চুপ করে থাকার পর সখেদে বলে,'কি আর করি ওখানে । ভিক্ষে করতাম
পথে নেমে । দুবাই-এর পুলিশ দেখলেই আমাদের পিছনে ছোটে । কি যে লজ্জা । তাই চলে
এসেছি একেবারে । আর যাচ্ছি না ।'
শুনে যারপরনাই অবাক মনির ।
বিস্ময়ের সুরে বলে,তাই বুঝি ? এমা ! কিন্তু আফতাব তো ভালো পয়সা পাঠায়
শুনেছি । কোথা থেকে অত আসে ?'
জিয়াউর এবার মুচকি-হেসে উত্তর দেয়,'ভিক্ষার পয়সাও কম না ওখানে । বিদেশীরাই
দেয় । ওদের মন বেশ বড় । ওদের দেশে তো ভিখারি নেই । তাই কষ্ট পেয়ে বেশ দেয় । ওই
জমিয়ে-জমিয়ে আর কি । তবে পাঠাতে সময় লাগে বেশ ।'
মনির আর শুনতে চাইলো না । মুখে চাপা হাসি নিয়ে বাড়ি ফিরে এসে সে খবর
চারদিকে ছড়িয়ে দেয় ।
কিন্তু ও ছড়াবার আগেই ভিখারি আফতাব পাড়ি দিয়েছে দুনবাই-এর দিকে ।
তবে জলে গেলো না ছড়ানো ।
অনেকে শুনে রেগে-মেগে বলল,'এবার আসুক । দেখাচ্ছি মজা । ভিখারির পিছনে কে
ছোটে রে ? ছিঃ...'
কিন্তু মনিরের মা মনিরকে পইপই করে বলে,'কাউকে অসম্মান করতে নেই । ভিখারি
বলে আফতাবকে ছোটো করিস না । আল্লাহ্ বুঝে গেলে গুনাহ হবে খুব তোর ।'
মার কথায় মনির থেমে গেলো । কিন্তু পাড়ায় কিছুদিন ধরে আফতাবের বিরুদ্ধে নানা
কথা উঠলো । খুব লজ্জা পেলো মনির ।
একদিন আফতাবের মার কাছে গিয়ে ও অমায়িক-হেসে বলল,'এবার ও এলে আমিও ভাবছি
দুবাই যাবো ।'
সে পুত্র-গর্বে একমুখ হেসে বলল,'খুব ভালো হয় তবে । ছেলেটা আমার ওখানে একা
।'
মিছে কথা বলে মনির এভাবেই নিজেই নিজের প্রায়শ্চিত্ত করতে চাইলো । হতে পারে
ঠিক না এটা । কিন্তু দুই মায়ের বুক তো শান্ত হল । সেই বা কম কিসের ।