পারুলদির মাইনেটা রেখে যেও । চিৎকার করে পাপিয়া রাহুলের উদ্দেশ্যে বলে
ওঠে তারপর নিজের কাজে মনোনিবেশ করে। কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর আবার বলতে শুরু করে,পারুলদি
সেদিন বলছিল কোন বাড়িতে মাইনে দিতে দেরি করে না ঠিক সময় মতো দিয়ে দেয়। আমরাই দিতে দেরি
করি , আমার কিন্তু এসব শুনতে একদম ভালো লাগে না । অথচ দেখো আমিই কিন্তু পারুলদির সময়
অসময় ওকে দেখি, তিন তারিখ হতেই কথা শোনাতে শুরু করে দেয়। আর ভালো লাগে না । ভালোর জমানাই
চলে গেছে। রাহুল কোন কথার উত্তর না দিয়ে টাকাগুলো টেবিলের ওপর রেখে বেরিয়ে গেল । রান্না
ঘর থেকে উঁকি দিয়ে দেখল পাপিয়া আর নিজেকেই ধিক্কার দিয়ে বলল- ধুর কাকে বললাম- ওকে বলা
যা আর দেওয়ালকে বলাও তা । নিজের মনে বক বক করতে করতে আবার কাজে মন দিল। দুপুরের খাওয়া
সেরে খবরের কাগজটা হাতে নিয়ে টিভিটা চালিয়ে দিল, কদিন ধরে টিভিতে পাপিয়া করোনা ভাইরাস
নিয়ে নানা খবর শুনছিল। আর শুনছিল কিভাবে করোনার থাবা চীনের উহান শহরে বসিয়েছে, মনে
মনে সত্যিকারেই একটা উৎকণ্ঠা হচ্ছিল।তারপর পাপিয়া দেখল ভারত তথা সারা পৃথিবীতে কীভাবে
এই মারণ ভাইরাস মহামারি রূপ নিল । এখন সারা বিশ্বে লকডাউন চলছে ।
আজ ওর ভীষণ করে পারুলদির
কথা মনে হচ্ছে, এই দুঃসময়ে ওরা কি করছে ! ঠিক মতো ওদের খাওয়া জুটছে তো? নানা প্রশ্ন
ঘিরে ধরে ওর মনে- ওদের কথা ভাবার তো কারুর সময় নেই । যে কাজগুলো করার অভ্যাস ছিল না,
সেগুলো করতে হচ্ছে আজ প্রতিদিনের সাংসারিক জীবনে। ভাবতে ভুলে যাই ওদের কথা, ভুলে যাই
খেটে খাওয়া মানুষদের কথা । ভাবতে ভাবতে মনটা ভারী হয়ে গেল পাপিয়ার। খুব মনে হচ্ছে পারুলদির
কথা । ও মাঝে মাঝেই বলতো ওর বরের শরীর খারাপের কথা, একটা কিডনি নাকি নষ্ট হয়ে গেছে-
চিকিৎসা করার মতো অতো টাকা নেই। তার ওপর ওর ছেলেটা মদ খেয়ে এসে বউকে খুব মারধোর করে
। আচ্ছা এসময় এখন ওরা কী করছে? এই রকম নানা প্রশ্ন পাপিয়ার মাথায় ভিড় করে আসে । রাহুল
অফিসের কাজ নিয়ে বসার ঘরে ল্যাপটপ নিয়ে বসেছে ,পাপিয়া চা নিয়ে ঢুকতেই ওর দিকে একবার
আড় চোখে একবার দেখে নেয় । চা টা রেখে ও বলতে শুরু করলো, আমার এক টা কথা বলার আছে ।
রাহুল মুখটা না সরিয়ে বলে, বলো কি বলার আছে । আমি ঠিক করেছি পারুলদি কাজে এলে ওর পুরো
মাইনেটা দিয়ে দেবো- ও যতই আমার সাথে ঝগড়া করুক। হয়েত কতো কষ্টে আছে- রেশন টা ঠিক করে
পাচ্ছে কি না ঠিক নেই । তাই আমি ঠিক করেছি পুরো মাইনে দেবো- দরকার হলে একটু বেশী দিয়ে
দেবো,কি বলো? মনের মধ্যে এক ভীষণ রকম বেদনা অনুভব করে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে সে বলে ওঠে-
ঈশ্বর খেটে খাওয়া মানুষদের ভালো রেখো আর পৃথিবীকে করোনা মুক্ত করো ।