শিকার পরবর্তী
সিনসিন করে ফ্যান চলছে।কম্বলে ঢাকা শরীলটা বুক অবধি।নার্সদিদি এসে ওষুধ
ইনযেশন দিয়ে গেছে তবুও ব্যাথা।কুনকুন করে চলে ব্যাথা তলপেটে। পেচ্ছাপের জায়গায় নল।সাড়
নেই।অনেক তুলো ফেলে দেয় ধাই ।রক্তে ভেজা ।ঠুসে দেয় লতুন তুলো।রিন রিন করে বইছে রক্ত
এখনো। পেত্থমে অজ্ঞান হয়ে পড়ে ছিলো রক্ত মেখে মেজেতে। হাসপাতালের মেজেয়
পড়ে থাকে রক্ত মেখে।
এধারে আরশোলা ওধারে ইঁদুর ছোটাছুটি। সে সময় যন্তন্নায় নাড়ী ছিঁড়ে
যাচ্ছে । তারপরে হোথায় এপক্ষের নোক টিভিতে খপর দিলে। হ্যাকন কল্পনা ইস্টার। শশুরের
সাতে শত্রুতা লতুন দলের নেতার। টিকিট লিয়ে মারপিছ এমন এক রাতে তুলে নিয়ে গেল একদল পিচাশ।
কিচু আর রাকলেনাকো শরম হায়া। দশজন মিলি........ওষুধের ঘোরেও শিউরে ওঠে কল্পনা।ন্যাংটো
করে ফেলে রেকে গেলো দাওয়ার কাচে।আর মনে নেই।
তারপর খপর হল মোবাইলে ,তার রক্ত মাকা ছপি.....কী নজ্জা
মাগো ! তকন ঠেকায় পড়ে কাউন্সিলার ,মন্তিরি আরো কত....।
শুনচে এই যে সুন্দর হাসপাতাল,নীল
দেয়াল ,নীল চাদর পাতা ,এত যত্ন আত্তি সব মন্ত্রী খরচ দিবে। নিজের থুতু নিজে গিলবে হা**।
আরো নাকি অনেক টাকা দেছে
।নার্স দিদি বলেচে ।সে টেকা তার নামে ।কিন্তুক তারে ত কেউ দিলুনি।সারা দিন এসব ভাবে
কল্পনা।
আরো খপর আসে ।শউরের সাতে কীসব রপা হয়ে মিটে গেছে গোলমাল
লতুন বাবুর। আসেনা শুধু তাকে দেখতে আর কেউ। না তার মাতাল মরদ না শউর না ছেলে মেয়ে।
কারো নাকি জানা নেইকো কলকাতা আসার পথ। এখেনে আসার পর একদিন এয়েচিলো বর।দূর থেকে উঁকি
দেলো।কতা কইলোনি।
ওরা নাকি তার নামে অনেক টাকা পেয়েছে। তবে আসেনা ক্যানে।
কল্পনা কাঁদে। কল্পনা
বাড়ির কথা ভাবে।কল্পনা সংসারে যেতে চায়।
একদিন মানিক এসেছিলো।তাদের গ্রামের ছেলে।কলকাতায় কাজ করে।
_____" কল্পনাদিদি
ওরা তোকে ঘেন্না করে।"
__"কারা"
___" তোর বর তোর
ছেলে মেয়ে ,শউর"
___" ক্যানে মানিক
কেনো নেবেনি আমাকে?"
মাথা হেঁট করে বসে থাকে
মানিক।
_____" তোকে এত আদরে রেকেচে ভুট ওবদি রে কল্পনাদি
।তারপর তোকে তাড়াবে "
_____" গেরামে ফেরত
নি যাবি মানিক ,এরা ত আমায় কত টেকা দেচে শুনিচি "
_____" সেসব তোর
শউর রেকে নেচে। ঘর তুলচে সে টেকায় । একন ত তোকে .......ইয়ে যারা কষ্ট দেলো
তাদের সাতে বন্দু হয়ে গেচে। উপর থিকা ওর্ডার নাকি!
______"কি অর্ডার"
___"ও তুই বুজবিনিকো।তবে
গেরামে তোর জায়গা নেই ।জেনে রাখিস কল্পনাদি"
সত্যিই ওরা বিদায় করে দেয় ।দুটো শাড়ি। শ পাঁচেক টাকা।
নিঃশব্দ ডুবসাঁতারে রাস্তা পার হয়।ফোন করে রাস্তার বুথ থেকে। বেজে যায় বরের মোবাইলটা।
মনে মনে বলে ' ওগো নিয়ে
যাও' ....সেকথা পৌঁছয়না। লোনা জল গরম হাওয়ায় শুকিয়ে যায়। ট্রেনে চড়ে বসে। সংগ্রামপুর
নেমে ভ্যান তারপর পায়ে হাঁটা পথ। ওখানেই গাছতলার জটলা থেমে যায় তাকে দেখে। থেমে যায়
পা। ঘোমটা তোলে। হাসির রোল।শশুর এগিয়ে আসে ,পাশে পিচাশ টা ,কী আশ্চর্য দুজনে পাশাপাশি।
চোখাচোখি হয় ।
____" তোকে ছেড়ে
দিল?তা এখেনে কেন"
___"ঘরে আসবনি তো
যাব কোথা "
____" না সে ঘরে
তোর আর জায়গা নেই। আমার ঘর অপবিত্তির করতে পারবোনাকো,কী বলো সবাই " শশুরের ডাকে
সরব গ্রামের মাথারা।
'বটেই ত', ' নষ্ট মেয়ে
মানুষ ঘরে কেন গেরামের পক্ষে ঠিক লয়"
___" আমার কী দোষ
বাবু " আর্তি চাপা পরে ঝড়া পাতার আওয়াজে, ডাল ভেঙে পড়ে হাওয়ায়
" তোর চলন ঠিক লয়
কই আমাদের ঘরে ত এমন হয়নিকো .........
২
অনেক জোরে ছুটছে কল্পনা
।চটি ছিঁড়ে যায়। কাঁটা বেঁধে পায়ে । জল পড়ে আবার শুকোয় আবার পড়ে। রাতে এক কোনে হাসপাতালের
কোনে। নার্সিং হোমের গেটের ভেতর মিছে বলে বলে।
ভাবতেই থাকে কল্পনা।
ভেবেছে কল্পনা অনেক ভেবেছে। পথ হারিয়েছে । দিন আর রাত।
মেঘ জল আর শীত সব এক হয়ে গেছে।
শেষে শিয়ালদহ স্টেশনে
রাত।সে রাতে এক দল ভিখিরি আসে গালি দেয় লাথি মারে "ঐডা আমার জায়গা","হেইটে
আমার","দূর হ"।রাত বাড়ে ঝগড়া হতে হতে গল্পের ছেঁড়া টুকরো সকলেরই প্রায়
এক গল্প তবু ওরা হাসে।তবু যৎসামান্যর সংসার করে।কল্পনার চোখের জল শুকিয়ে কালি।রাত দুটোর
দিকে ওরা সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে।কে কার বাচ্চা রাকবে আজ।কিসের এত ব্যস্ততা।ওরা হলদে দাঁতে
হাসে।এক বুড়ি হাত ঘুরিয়ে কোমর বেঁকিয়ে নেচে নেয় এক পাক।ওরে সোনার চাঁদেরা আসবে এবার।কল্পনা
হেসে ফেলে।রাতে সেবা দিতে হয় জি আর পি,টেস্টকি ওলা,পুলিশের ছোটো বাবুরা।কল্পনা শিউরে
ওঠে।"ওরে আমাদের কিসের ই বা কী।ওদের জন্য একেনে বিনি পয়সায় থাকি।বাচ্চা চাইলে
বাচ্চা না চাইলে খসে।কেউ ঝামেলা করেনা রেপ করে না।পুজোয় শাড়ি,বাচ্চা রা ফিরিতে ইস্কুলে
পড়ে।আর কী চাই।
সত্যি ত আর কী চাই।ভাবে
কল্পনা।
না সে রাত তাকে সেবা দিতে হয়নি।আস্তাকুড় থেকে ঘেয়ো কুকুরের
সঙ্গে ওদের মতো ভাগ করে খেতে পারেনি এঁটো আধপচা খাবার।
এ স্টেশন থেকে সে স্টেশন।শিয়ালদহ
স্টেশনের এ প্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত ভিক্ষা করে কল্পনা।
তারপর জীবন ফিরে তাকালো
ঠিক মৃত্যু র সীমান্তে এসে। কোনো এক বিশেষ তিথিযোগে।
13নং প্ল্যাটফর্মে ট্রেনটা ঢুকছে।
হাতটা টেনে ধরে বলিষ্ঠ
এক হাত।আতংকে ফিরে চায় কল্পনা।
তারপর কেটে গেছে অনেক
বছর।
শামীম মণ্ডল।পাশের
মোসোলমান গাঁয়ের ছেলে ছিলো।
আমিনা মরে গেলো কলেরায়।
এখন কল্পনা হাসিনা বিবি।বোরখা
পরে।হাসান শুধু বিয়ে করতে চেয়েছিলো।সে মজুর ধর্ম নেই তার।কল্পনা ইমামের কাছে নিজের
ইচ্ছে প্রকাশ করেছে।যে ধর্ম তাকে নগ্ন করেছে তাকে ছেড়ে সে ভোরের আজান পড়েএখন।
সে শামিমের বিবি।কলকাতা থেকে অনেক দূর পুরোনো দিল্লির এক
কামরার ঘর সাজায়।বেশি বয়সের সন্তান মকবুল আর আমিনার ছেলে মইদুল দুজনে ইস্কুল যায়।সেও
রাতের ইস্কুলে পড়ে শামীম ঘরে ফিরলে।লুকোনো বাক্সে রাখা শাখা পলাটা একদিন
ফেলে দেয় জলে।সামনে খুশির ঈদ।