গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

বৃহস্পতিবার, ২২ আগস্ট, ২০১৯

সুবীর কুমার রায়

মহাদেব বাবু



ঠিক সন্ধ্যার মুখে অন্যান্য দিনের অভ্যাস মতোই, স্ত্রীর হাত থেকে চায়ের কাপটা নিতে গিয়ে মহাদেব বাবু একটু অবাক হলেন। স্ত্রীর এক হাতে চায়ের কাপ, অপর হাতে একটা বেশ বড় কাচের প্লেট। ঘাড় উঁচিয়ে প্লেটটার দিকে তাকিয়েই জিভে জল এসে গেল। কাচের প্লেটে টম্যাটো সস্, রাই, পেঁয়াজ ও শসা কুচি দিয়ে সাজানো তাঁর সবথেকে প্রিয় খাদ্য, একটা বেশ বড়সড় ফিশ ফ্রাই রাখা।
মহাদেব বাবু একজন অত্যন্ত শান্তশিষ্ট নিরীহ গোছের মানুষ। কারও সাথে কোনদিন তাঁর বিবাদ হয়েছে, একথা তাঁর কোন অপছন্দের মানুষও মনে করতে পারবেন না। দোষের মধ্যে তিনি একটু ভালোমন্দ খেতে ভালবাসেন। যদিও রক্তচাপ, সুগার, কোলেস্টেরল, গৃহকর্ত্রীর শাসন, ইত্যাদি নানাবিধ অন্তরায়, তাঁকে সেই আনন্দ থেকে দীর্ঘদিন বঞ্চিত করে রেখেছে।
হাসিমুখে স্ত্রীর হাত থেকে প্লেটটা নিয়ে, আগুন গরম ফিশ ফ্রাইটায় বেশ খানিকটা সস্ মাখিয়ে মুখের কাছে এনে একটা বড়সড় কামড় বসাতে যাবেন, স্রীর ধাক্কায় ঘুমটা ভেঙে গেল। না, এখন তো সন্ধ্যা নয়, সকালবেলা। এক কাপ চা আর একটা সুগার ফ্রী বিস্কুট হাতে ধরিয়ে দিয়ে স্ত্রী বললেন, “যত বয়স বাড়ছে তত যেন তোমার ঘুম বাড়ছে। মুখ ধুয়ে চা খেয়ে বাজার নিয়ে এসো। আর হ্যাঁ, আজ কিন্তু রেশন তোলার দিন, রেশন তুলে গমটা একবারে ভাঙিয়ে নিয়ে আসবে, নাহলে রাতে রুটি হবে না। জলখাবারের মুড়ি আর ছোলা ভেজানো কি এখন খাবে, না ঘুরে এসে খাবে”?
মহাদেব বাবু মুখ ধুয়ে চা বিস্কুট খেয়ে বাজারের থলি ও রেশন কার্ড নিয়ে যাওয়ার সময় মিনমিনে গলায় বললেন, আজ আমার খিদে নেই, কিছু খাবো না। রাস্তায় বেরিয়ে মহাদেব বাবুর মনে হলো, খনার বচন নিয়ে আমরা যতই মাতামাতি করি না কেন, সাহেবরা আমাদের থেকে অনেক সুসভ্য ও শিক্ষিত জাত। কাজেই তাদের বচনের কাছে খনার বচন? কিস্যু না, স্রেফ নস্যি নস্যি। আমরা ভোরের স্বপ্ন সত্যি হয় বলে যতই লাফালাফি করি না কেন, সাহেবরা অনেক বুদ্ধিমান জাত। ‘মর্নিং শোজ দি ডে’ তো সেই সাহেবদেরই কথা, সেকথা মিথ্যা হবার নয়।
ধীরে ধীরে বেজার মুখে তিনি বাজারের পথ ধরলেন।