অপারগতা
মৃত্যুর পরে বেঁচে থাকার খুব ইচ্ছা জাগে তাঁর।
এই ইচ্ছাতেই কাজ করেন তিনি। মৃত্যু চিন্তা নেই তবুও মনে হয় এখনই যদি হয় শেষ সময়;
তাহলে! কোন কাজ আগামিকালের জন্য ফেলে রাখলে চলবে না। জীবনের শেষ মূহুর্ত কখন বলতে
পারে না কেউ! জীবন পাখির মতো; একটু আওয়াজ পেলেই ফুড়ুৎ।
সকলে বলে কবি। ওর লেখাগুলো কবিতা হয় কি না সে
বিষয়ে নিজেরই সন্দেহ আছে! কবিতার
বিধিবদ্ধ নিয়ম মেনে লিখেন না তিনি। ওর
কাছে কবিতা বহতা নদী;বাঁধ দিলে নদী আর নদী থাকে না যেমন তেমনি কবিতাকে সাজ- পোশাক পরালে কবিতা থাকে না। মনে হয় খোলামেলা নয় একটা আঁটশাট শব্দের গেরোয় বাঁধা কিছু কথা;
প্রাণহীন।
চন্দ্র শাসিত তিনি। মাঝেমাঝেই পাগলামি
ভর করে। চাঁদনি রাতে জোছনা মাথায় হাঁটে। কখনও ঝুম বৃষ্টিতে রাস্তায়। প্রায়ই পাখির
মতো দুহাত ছড়িয়ে ছাদে। লুনাটিক হলেও বাসা বদলের প্রয়োজন,
প্রয়োজন পেটপূজার; অর্থের খোঁজ করতে হয়। সে কারণেই একটা কাজ হাত নিয়েছেন তিনি। ফরমায়েসি;
স্বাধীনতার ইতিহাস।
স্বাধীনতার ইতিহাস লিখতে ইচ্ছা হয়নি এতোদিন;
ইচ্ছা করে না। এবার কাজটা নিয়েছেন তার গ্রামের কথা ছড়িয়ে
দেওয়ার জন্য; মানুষকে
জানাবার জন্য। অবহেলিত এই গ্রাম কীভাবে যুদ্ধে অবদান রেখেছিল তা জানাবার জন্য।
যারা নেই যুদ্ধে প্রাণ দিয়েছেন তাঁরা একদিন ছিলেন; দেশের আনাচ-কানাচে
ছিল তাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের ছোঁয়া, ছিল স্পর্শ।
তিনি এক উদ্ভট পারলৌকিক জালে আটকে যান।
স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা প্রাণ দিয়েছেন তাঁরা কী তাদের সাধের এই দেশে আসেন ?
তারা কী দেখতে পান তাদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার
অবমূল্যায়ন! বর্তমানের
এই দেশ দেখে কী তাঁদের আর একবার মরতে ইচ্ছা করে!
কীভাবে জানবে! যুদ্ধে
মৃত আত্মার কাছে জিজ্ঞাসা করলে উত্তর মিলবে!
কিন' কোথায় পাবেন তাঁদের।
তারুণ্যে আত্মা হাজির করার অভ্যেস ছিল। এই
বয়সে আবার ইচ্ছা করছে। যারা দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন তাঁদের ডেকে জানতে ইচ্ছা করছে
তাঁরা কী বর্তমানের বাংলাদেশ দেখে সুখে আছেন ? যখন দেশ সাজে স্বাধীনতা দিবসে, বিজয় দিবসে;তাঁরা কী
এই দেশের এই বিজয় উৎসব দেখে খুশি হন ?
প্রতিদিনের রক্তের মিছিল দেখে তাঁরা কী প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন! কবির এলোমেলো জট পাকানো মন লিখতে চায় না। কিন' লিখতে
তাঁকে হবেই।
কখনও হতে
পারবেন না রবীন্দ্রনাথ, নজরুল
কিংবা জীবনানন্দ তবুও হাতে কলম তুলে নেন তিনি।