এক
অফিসে বুক সমান কিউবিকলে থুঁতনি ঠেকিয়ে
জাকির বলে,
-একটা কথা শুনসেন নি স্যার?
-কি কথা জাকির?
-এরিয়ারের টেকাটা দিব না।
-তা তো জানাইছিল। এ আর নতুন কি?
-আগে বলসিল না স্যার, বেতন বাড়িয়ে গত ২
বছরের এরিয়ারের টেকাটা দিব?
-হুম, তা বলসিল।
-এখন দিব না।
নিজেরও তো পাবার কথা। জিজ্ঞেস করলাম,
-তুমি কি কনফার্ম জাকির?
-জি স্যার। সিউর।
অফিরের তৃতীয়/চতুর্থ শ্রেণীর
চাকুরীজীবীদের এরকম টাকা-পয়সা সম্পর্কিত তথ্য আমি বিশ্বাস করি। ওদের ইনফরমেশনগুলোঅধিকাংশ
অথেনটিক হয়।
কিউবিকলে চেয়ারে বসে আছি। এখনক্লাস নিতেযাব।
স্টুডেন্টরা আসছে একে একে।
দুই
ক্লাস থেকে ফিরে চেয়ারে বসতেই জাকির এগিয়ে
আসে।
-স্যার, একটা কথা ছিল।
-বলকি কথা?
-ভাবসিলাম স্যার ঐ টেকাটা পাইলে মেয়ের
নামে ডিপোজিট করব। এইটা আর হইল না।
কথাটা শুনে চমকে উঠি। কত আর মাইনে তার?
৭/৮ কিংবা ১০ হাজার সর্বোচ্চ? কতই বা আর বাড়তে পারে মাইনে? ১ কিংবা ২ হাজার বড়জোর?
প্রতি মাসে বর্ধিত এই ক্ষুদ্র টাকাগুলো একত্রেজড়ো করে সেতার মেয়ের ভবিষ্যৎরক্ষা
করার একটা প্রয়াস চালাতে চাইছে। তার মেয়ের জন্য কিছু আগাম নিশ্চয়তা খুঁজতে চাইছে। অথচ
তার প্রাপ্যটা সে পাচ্ছে না। ভাবছি, আমিও কি পাচ্ছি প্রাপ্য?
মনটা বিষণ্ণ হয়ে গেল। কিছু বলা যাবে না,
কে কখন ক্লিকবাজি করে। চাকরিটাই খোয়া যাবে শেষে। কেবল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। এই
দীর্ঘশ্বাসের অধিকারটুকুই কেবল আমার নিজস্ব কথা। কেউ বুঝবে না এর অর্থবহতা।
পিঙ্ক তোয়ালে এবং একজন লুজার
-শরীরে একটাও স্পট নাই। উফ চামড়ার কি
কালার মাইরি!
-দেখলেন ক্যামনে?
-দুই প্যাগে কি আর এতো কিছু বলা যায়?
মুচকি হাসে কথক। যেন বলার বাহানায় সে
অতিরিক্ত এক প্যাগ চায়।
-কইয়া ফালান।
নতুন প্যাগ এগিয়ে দিতে দিতে শ্রোতা বলে।
-হয় কইয়াই ফালাই।
-কন না ক্যান?
-হয় কইয়াই ফালাইতাইলে, আরকি?
-বুজসি, পিক-টিক আছে নিচ্ছই?
-হয়। ৩ টা পরপর পাঠাইছিল। আহা! গোসলের পর
পিঙ্ক তোয়ালে জড়ানো শরীর-বুক থেকে ঊরু অবধি আর মাথায় হালকা আকাশি। ক্লিভেজ দেখা
যাচ্ছে। উফ!
-ভাই, দেখান না। প্লিজ!প্লিজ ভাই দেখান
না!
-দেখানো ঠিক হইব না। বইনে আমারে বিশ্বাস
করে।
-হে হে হে। কারে? আপনেরেনি?
-হয়।
-বালডা চিনে আপনেরে?
-শুরুর দিকে একদিন কইসিলাম, আমারে যে পিক
পাঠাও, লিক হইতেও তো পারে। তখন?
-কি উত্তর দিসিল মালে?
-কইসিল, আপনারে আমার চেয়েও বেশি বিশ্বাস
করি।
-হে হে হে। যদি জানতো বইনে-শালা আপনি
সেইরকম একটা অবিশ্বাসী, অয় আর কোনদিন নিজেরেই বিশ্বাস করতে পারতো না। নিজের উপর
নিয়ন্ত্রণ হারাইয়া ফেলতো কসম।
প্যাগের পর প্যাগ চলে আর রাত বাড়ে
মাতালদের ঘাড়ে চড়ে।
পিঙ্ক তোয়ালে গায়ে জড়ানো ছবিটা কল্পনায়
নেয় আশিকুর রাহমান। আশিকুর সুদর্শন যুবক, দীর্ঘ শরীর। ফর্সা মতন দেখতে। মাথায়
ঝাঁকড়া চুল। বাট লুজার হিসেবে হা হুতাশ করে সে নিয়মিত। হ্যাঁ, আশিকুর ওর দৃষ্টিতে
লুজারই বটে। অন্য সবদিক ঠিক থাকলেও-প্রেমের ক্ষেত্রে সে লুজার। বিলক্ষণ কু-ভাগ্য
তার। স্কুল জীবন থেকে অনেককেই পছন্দ করেছে তবে বলতে পারেনি কোনদিন। কিংবা বলেতে
যাবে, দেখে অন্যের সাথে ততদিনে জুড়ে গেছে সেই মেয়ে। কলেজে উঠে যাকে পছন্দ করেছিল,
অপেক্ষায় অপেক্ষায় একখানা চিঠি লিখে যেদিন দেখা করতে রওয়ানা হল সাত মেইল দুরের
গ্রামে, গিয়ে শুনে বিয়ে হয়ে গেছে মেয়েটার। বাড়িতে ফিরে আগুনে পুড়ায় চিঠি। এরপর
ভার্সিটিও সিদ্দিকুরকে তেমনি প্রেমিকাশুন্য করে রাখলো। চাকুরীতে ঢুকে তো আরও
বেখাপ্পা অবস্থা! আশিকুর লুজার । গল্প শুনে আর একটু পরপর আশিকুর বলে উঠে,
-আই এম এ লুজার।