গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

রবিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

নির্মাল্য চট্টোপাধ্যায়


ঘুম

দাদা সব আছে , পছন্দ হবে আসুন আসুন। ও দাদা এদিকে ...... দাদা সব একদম ফ্রেস। (চোখ টিপে) বাঙালি নেপালি বাইরের ষ্টেটের আছে। আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে ফাস্ট টাইম, এক্কেলাস জিনিস আছে দাদা, এ লাইনে পাঁচ বছর স্যান্ডেল ঘসা হয়ে গেছে, এখন কাস্টমারের মুখ দেখে বুঝে নি কে কি খুঁজছে। একটানা বলে চলেছে,পাক্কা সেলস ম্যানের মতই গছানোর ধান্দা কমিশন পাবার জন্য।
সিগারেটের শেষ টুকু চটি তে পিষে অরচিস্মান জিগ্যেস করল কোন ঘরে জেতে হবে। টার্গেট ফুলফিলের খুশি নিয়ে ‘আসুন আসুন এদিকে’ প্রেমচাঁদ বড়াল স্ট্রিটের এক ফালি গলিতে ঢুকে পড়লো ছেলেটি, সাথে পা বাড়াল অরচিস্মান।
এই ডলি বলে ডেকে নিজেই সস্তার পর্দা উঠিয়ে ঢুকে গেলো ছেলেটি। চাপা স্বরে কথা বলেই বেরিয়ে এলো খানিক পরে। ‘চলে আসুন দাদা। ডলি পরে আসছিরে দাদা কে দেখিস’ চোখ টিপে বলে চলে গেল চেলেটি ।

সাদামাটা একটা ঘর পুরনো দিনের খাট দেওয়ালে ঝোলানো একটা সস্তার আয়না যাতে নিজেকে দেখে নিতে নিতেই ডলি বললও আসছি অরচিস্মান ঘরটা গ্লোবের নীল চোখের মত করে একবার ডান একবার বাম দিক দেখে নিলো। খাটের ডান পাসের আয়না-তালি পর্দা টা দেখে নিজের মনেই হেসে ভাবতে লাগলো এই পর্দা এই ঘরের আর্থিক অবস্থার মাপকাঠি আর কোন পস এলাকার হাজার স্কোয়ারফিট ফ্ল্যাটে থাকলে গর্বিত দম্পতি বলে উঠবেন সাউথ সিটি মলের অমুক দোকান থেকে কেনা নকশী কাঁথা ডিজাইন, কস্টলি।

সম্বিৎ ফিরে পেল, পর্দা সরিয়ে ডলি জানতে চাইল রাম না হুইস্কি ? মাথা নেড়ে লাগবেনা জানালো অরচিস্মানশুনেই ভুরু কুঁচকে ডলি বলে ‘অন্য কিছু লাগলে বোল ওই বিসু কে মাল কিনে আনতে বলি’
-কিছু লাগবেনা, আমি খাইনা   আপনা্কে কতো দিতে হবে ? ওই ছেলেটি বলেনি আমায়।
- ২৫০ দিন। জামার বুক পকেট থেকে দুটো একশ টাকার আর একটা পঞ্চাশ টাকার নোট বের করে এগিয়ে দিল। টাকাটা হাতে নিয়ে আবার পর্দার পেছনে চলে গেলো ডলি, ওটাই ওর অন্তঃপুর, ঘরের মধ্যে একফালি ঘর। মুহূর্তেই ফিরে এসে খাটের বালিশ ঠিক করে তাকালো, যেন অরচিস্মানের হুকুমের তামিল করতে ও প্রস্তুত, ২৫০ টাকায় কিনেছে ওকে আর ওর শরীরটাকে
‘জানলা টা বন্ধ করে দেবেন’হো হো করে হেসে উঠলো ডলি, ‘এখানে কেউ কারোর ঘরে উঁকি মারে না ভদ্দর লোকদের মত’ঠিকি বলেছে ডলি, এইখানে ক্রেতা আর খদ্দের মাঝে কি হচ্ছে তা নিয়ে কারোর মনে কোনও কৌতূহল নেই, মনে মনে আওড়াল অরচিস্মান। ‘না তবুও বন্ধ করে দিন অন্ধকার আমার ভালো লাগেক্রেতার নির্দেশ পালন করল ডলি।
ডলির চোখে ঈষৎ বিরক্তি এমন অদ্ভুত খদ্দের সামলাতে আগে হয়নি, তাই নিজেই ব্লাউজের হুক খুলতে শুরু করতেই, অরচিস্মান হাত তুলে নিষেধ করলো। ‘কি করবে বলতো মাইরি, এই বিসে হারামি কে আগেও বলেছি খদ্দের বুঝে আনবি’
‘আমি একটু ঘুমবো’