সংজ্ঞা
এবছর মাসখানেক আগে থাকেই অতীন ঝামেলায় পড়েছে। এমনিতে পুরো অনুষ্ঠানের ছকটা বাঁধাধরা। ফলে সে ব্যাপারে মাথা ঘামাতে হয় না। কিন্তু এবার কিঞ্চিৎ ঝামেলা হচ্ছে। আসলে ওই নরেন। এমনিতে এসব ব্যাপারে ওর কোন উৎসাহ কোনদিনই নেই। কিন্তু ওকে না রেখেও তো উপায় নেই। হাজার হোক আজকাল মুকুন্দপুরে ওই তো সব ব্যাপারেই মাথা। ওকে দূরে রাখলে মেলাটাই না পন্ড হয়ে যায়। কিন্তু এ হেন নরেন এসে যে প্রস্তাব দিল, তাতে অতীনের মাথা চক্কর কেটে ওঠে । এ বুদ্ধি ওর মাথায় যোগাল কে ! নিশ্চয়ই ঘোষালবাড়ির তপন।
অতীন বড়
সমস্যায় পড়েছে। সমস্যা অবশ্য অতীনের নয়। সমস্যা গোটা ক্লাবের, বা আরো
ব্যাপক অর্থে ধরলে গোটা অনুষ্ঠানটার। মুকুন্দপুর পরিবেশ মেলার এবছর রজতজয়ন্তী।
স্বভাবতই অন্যান্যবারের থেকে একটু বেশি জাঁকজমক করেই মেলা আয়োজনের চেষ্টা হচ্ছে।
সব জায়গাতেই মেলার চেহারা যা হয়, এটাও তার
থেকে আলাদা কিছু নয়। মাঠের চারদিকে স্টল – জামাকাপড়, খাবার, ঘর সাজানোর জিনিষ ইত্যাদি। মাঝখানে মঞ্চে
সন্ধ্যে থেকেই নাচ-গান-নাটক। হ্যাঁ, পরিবেশ দূষণ সংক্রান্ত সেমিনার, পোস্টার
প্রদর্শনী, বিতর্ক ও
রচনা প্রতিযোগিতাও অবশ্যই থাকে। সাতদিন ধরে মুকুন্দপুরের লোকজন বেশ চুটিয়েই উপভোগ
করে এই মেলা। আর অতীন! সেক্রেটারি হিসাবে মেলার দিনগুলো ছাড়াও আগের হপ্তাদুয়েক
রাতের ঘুম বাড়িছাড়া হয়ে যায়।
এবছর মাসখানেক আগে থাকেই অতীন ঝামেলায় পড়েছে। এমনিতে পুরো অনুষ্ঠানের ছকটা বাঁধাধরা। ফলে সে ব্যাপারে মাথা ঘামাতে হয় না। কিন্তু এবার কিঞ্চিৎ ঝামেলা হচ্ছে। আসলে ওই নরেন। এমনিতে এসব ব্যাপারে ওর কোন উৎসাহ কোনদিনই নেই। কিন্তু ওকে না রেখেও তো উপায় নেই। হাজার হোক আজকাল মুকুন্দপুরে ওই তো সব ব্যাপারেই মাথা। ওকে দূরে রাখলে মেলাটাই না পন্ড হয়ে যায়। কিন্তু এ হেন নরেন এসে যে প্রস্তাব দিল, তাতে অতীনের মাথা চক্কর কেটে ওঠে । এ বুদ্ধি ওর মাথায় যোগাল কে ! নিশ্চয়ই ঘোষালবাড়ির তপন।
- ভালই
বলেছিস নরেন, কিন্তু
লোকে কি মেনে নেবে! অতীন সাবধানে বিরোধিতা করে, যাতে নরেন আবার বিগড়ে না যায়।
- আরে ধুর, লোকে নেবে না মানে! তোকে মাথায় তুলে নাচবে।
আমার চ্যালারা তো ঠিক করেই রেখেছে, তোকে
সম্বর্ধনা দেবে, সঙ্গে
আমাকেও। অতীন ব্যোম
মেরে যায়। কি বোঝাবে এই অপগন্ডকে! খানিক মাথা চুলকে বলে, ‘না, মানে, ব্যাপারটা
কি বলতো, এটা তো
পরিবেশ মেলা; এখানে’...
- দাঁড়া, দাঁড়া, সেটাও ম্যানেজ হয়ে যাবে।
- মানে! অতীন
হতভম্ব।
- শোন তাহলে, পরিবেশ হল দুটো শব্দের জোড়, পরী আর
বেশ। মানে, সুন্দরী
মেয়েদের পোষাক। তাহলে পরিবেশ মেলাই তো ফ্যাশান শোয়ের আদর্শ জায়গা। এদ্দিন তোরাই সব
ঘুলিয়ে রেখেছিলি। আর ওসব ধান্দাবাজি চলবে না। তুলনামূলক শব্দতত্ত্ব নিয়ে নরেনের
লেকচার শুনতে শুনতে অতীন ভাবে, সংজ্ঞার এমন বিবর্তন সংজ্ঞা হারানোর থেকে ভাল কিনা।
ভাগ্যিস, এখানে
বইমেলা হয় না! নাহলে ইংরেজি শব্দের বাংলা উচ্চারণ ধরে নরেন হয়তো তারই প্রদর্শনী
চেয়ে বসতো ! ভাগ্যিস!!