গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

বৃহস্পতিবার, ৮ অক্টোবর, ২০২০

নীহার চক্রবর্তী

হীনশ্রী


বাজপুর মাঠে ভিখারি-সম্মেলন হচ্ছে শুনে তারাপদ হালদারের মাথায় যেন বাজ পড়ে গেলো ।

সে পাশের বাড়ির রমেন সাহাকে চোখ বড়-বড় করে বলল,'এও সম্ভব ? ওরা কি ভিক্ষে পায় না ? এত কী চাই ওদের ?

রমেন সাহা মুচকি-হেসে উত্তর দিলো,'সে পাবে না কেন । ভালোই পায় । তবে ওদের চাহিদা বুঝি পূরণ হয় না ।'

সঙ্গে-সঙ্গে তারাপদ হালদার বিরক্তির সুরে বলে উঠলো,'ঝ্যাঁটা মার । মানুষে আর কত দেবে ? সম্মেলন-ফম্বেলন করে কিচ্ছু হবে না । তবে একবার দেখলে হয় ওরা কি বলে । তুমিও চল আমার সাথে । শুরু হয়ে গেছে না ?'

রমেন সাহা তাকে হেসে বলল,'শুরু হয়ে গেছে । চলুন তবে দেখে আসি বাবুরা কেমন ঝ্যাঁটা খায় ওদের কথায় ।'

তার কথা শুনে বেশ রেগে উঠলো তারপদ হালদার ।

সে তাকে বলল,'বাজে কথা বল কেন ? এ কেমন অসভ্যতা,শুনি ? বাবুরা কেন ঝ্যাঁটা খাবে ? তোমাকে যেতে হবে না । আমি একাই যাচ্ছি ।'

'বেশ । তাই হোক । আমাকে জানিয়েন কিন্তু ওরা কি কি বলল ।'

বলে রমেন হালদার মুখে চাপা-হাসি নিয়ে তার বাড়ির গেট ছেড়ে পথের দিকে পা রাখল ।

 

তা তারাপদ হালদার বাজপুর মাঠে এলো । তবে শুরুতেই সে প্রমাদ গুণতে শুরু করলো ।

মনে-মনে সে বলল,একটা ধাক্কা খাওয়ার ভয় থাকতেই পারে । তাই বেশ খানিক দূর থেকে শুনি ।

মাঠের ওপরে যে পথ সেখানে সে দাঁড়িয়ে পড়লো চুপিসারে ।

ওদিকে তখন শুরু হয়ে গেছে ভিখারিদের উচ্চবাচ্য । আর কীসব কথা সব !

একটা ঝ্যাঁটা নয় । হাজার-হাজার ঝ্যাঁটা ভিখারিদের কথায় ।

এক ভিখারি মাইক্রোফোনে মুখ রেখে চেঁচিয়ে বলে বসলো,'ওরা বাবু না হাতী । বাবু হলে অন্যের পয়সা হাতাতে চায় না । এখন শালা সব বাবুই এক । এদের মুখোশ এবার আমরা খুলে দেবো । দশ টাকার কয়েনের এক পয়সা কম  আমরা আর নেবো না ।'

তারপরে আর এক ভিখারি বেশ সরোষে বলল,'অনেক বাবু এখানে ঘাপটি মেরে আছে । আমাদের সব কথা শুনছে । আমাদের তাতে কিচ্ছু এসে যায় না । সব বজ্জাত ।'

 

দুই ভিখারির কথা শুনে এলাকার অন্যতম বাবু তারাপদ হালদারের মেজাজ সপ্তমে উঠে গেলো ।

তার আবার সন্দেহ হল,আমাকে দেখে কিছু বলল না তো ? অতএব আর একটু আড়ালে থাকি ।

তবে তার মেজাজ গরম করা গেলো না । অনেক চেনা মানুষ তখন হাততালি দিচ্ছে ভিখারিদের কথায় । বেশ তারা খুশি তারা বাবুদের বেজ্জতিতে । তাদের অনেককেই বেশ চেনে তারাপদ হালদার । তাদের দেখে  খুব রাগ হল তার । কিন্তু কিছু বলা যাবে না তখন ।

আর এক ভিখারি তখন কথা বলতে শুরু করেছে ।

সে হেসে-হেসে মজার সুরে বলতে থাকলো,'কিছু হাড়কিপটে বাবু আছে । আমি কিন্তু তাদের মধ্যে একজনকে এখান থেকে বেশ দেখতে পাচ্ছি । একটু সরে গেলো মনে হচ্ছে । কালই ওর বাড়ি গিয়ে মজা বোঝাচ্ছি ।'

বলেই সে একা-একা একচোট হেসে উঠলো । তার হাসির সঙ্গে যোগ দিলো আরও অনেকেই ।

তারাপদ হালদার বিলক্ষণ বুঝে গেলো ভিখারিটা তাকে দেখেছে ।