গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

সোমবার, ৪ নভেম্বর, ২০১৯

সুদীপ কুমার দাস

সুতোয় বাঁধা মন



দাদীর ঘরে উঁকি মারে স্বপ্না।সকাল সাতটা বাজে।দাদী এখনও বিছানায়। খুব অবাক হয়।স্বপ্না জানে দাদী প্রতিদিন ফজরের নামায পড়ে।এরপর  বাগানে কিছুক্ষণ হাঁটাহাটি করে।ফিরে এসে বিছানায়  তসবী নিয়ে বসে।মাঝে মাঝে সকালে দাদীর ঘরে উঁকি মারে স্বপ্না।তাকে দেখলেই দাদী একগাল হেসে বলবে-কি ভাই আজ কলেজ নেই?
স্বপ্না দরজার কাছ থেকেই দাদীকে ডাক দেয়।দাদীর সাড়া নেই।লেপ মুড়ি দিয়ে দাদী বিছানায় শুয়ে আছে।ভেতরে প্রবেশ করে সে।বিছানার কাছে গিয়ে ডাক দেয়-দাদী তুমি এখনও ঘুমিয়ে? ওঠ।তবুও দাদীর সাড়া নেই।লেপ সরিয়ে স্বপ্না ভীষণ ধাক্কা খায়।দাদীর শরীর একদম ঠান্ডা।শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ।স্বপ্না মূর্তির মত দাঁড়িয়ে থাকে। গাল বেয়ে ঝর ঝর করে জল ঝরতে থাকে।দাদী চুপচাপ শুয়ে আছে।পড়নে তার শাড়ি।তবে অবাক করা বিষয় হলো দাদী শাড়ির উপর দাদার পছন্দের নেভী ব্লু শার্ট পড়ে আছে।সে জানে দাদী দাদাকে খুব ভালোবাসতো।দাদী কত গল্প বলতো স্বপ্নাকে।তবে সব গল্পের নায়ক একজনই হতো।আর সে হলো দাদা।স্বপ্নার বাবা যখন খুব ছোট তখন স্বপ্নার দাদা বিমান দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিল।

লিলি কিছুদিন যাবৎ তার মেয়ের মধ্যে কিছুটা পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছে।স্বপ্না দাদীর ঘরে গিয়ে চুপ করে বসে থাকে।কখনও নিজের মনে কথা বলে।কখনও হো হো করে হাসে।লিলি বিষয়টি হাসানকে জানিয়েছে।হাসান শুনে হো হো করে হেসে বলেছে যে ওদের বয়সে এমনটাই স্বাভাবিক।

সেদিন স্বপ্না দাদীর সাথে গল্প শেষ করে বেরুনোর সময় দরজায় মায়ের মুখোমুখি পড়ে যায়।
-তুই কি ওই ঘরে কারও সাথে কথা বলছিলি?
-কার সাথে কথা বলবো?ঘরে তো কেউ নেই।
মায়ের কথার উত্তর দিয়েই স্বপ্না নিজের ঘরে চলে যায়।লিলিও মেয়ের পিছু নিয়ে মেয়ের ঘরে যায়।স্বপ্না পড়তে বসে।লিলি মেয়ের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।
-তুমি কি কিছু বলবে,মা?
-তোর মধ্যে একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করছি মা।তুই ইদানিং একা একা কথা বলিস।একা একাই হাসিস।
-কি সব বলছো মা?
-আমি ঠিক বলছি।
-আচ্ছা মা,দাদী কি জানতো ওই দিনই সে মারা যাবে?আর কি আশ্চর্য দেখো দাদার শার্ট গায়ে জড়িয়েই দাদী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো।

স্বপ্নার কথায় লিলি মনে মনে খুব অবাক হয়। ভাবে কি পরিমাণ ভালোবাসা থাকলে মানুষ এমন আচরণ করে।
-তোর দাদী তোর দাদাকে অসম্ভব ভালোবাসতো।
লিলির কথা শুনে সেতু লজ্জা পায়।স্বপ্না তা খেয়াল করে।লিলি আরও কিছুক্ষণ মেয়ের পাশে দাঁড়িয়ে থাকে।তারপর রান্না ঘরের দিকে চলে যায়।সেতু স্বপ্নার বিছানায় গিয়ে বসে।
-কি দাদী,এত লজ্জা?
-ভূতের বুঝি লজ্জা পেতে নেই?
স্বপ্না ও সেতু একই সঙ্গে উচ্চস্বরে হেসে উঠে।রান্নাঘর হতে লিলি স্বপ্নার হাসির শব্দ শুনতে পায়।মনে মনে ভাবে,মেয়েকে ডাক্তার দেখানো প্রয়োজন।

-জানিস,আমি তখন স্কুলে পড়ি।সবেমাত্র কবিতা লিখার বদ অভ্যাস তৈরি হচ্ছে।এর মধ্যে সোহেল ভাইয়া ঘটনা চক্রে সেই লেখা পড়ে ফেলে।আমি তো লজ্জায় লাল।
-কি কবিতা লিখেছিলে?
-এখন তো ভূত হয়ে গিয়েছি।ঠিকঠাক মনে নেই।
-না দাদী,তোমাকে বলতেই হবে।
স্বপ্না জেদ ধরে।সেতু সেই কিশোরী কালের মত লজ্জা পায়।
-আচ্ছা আমি লিখছি তোর খাতায়।তুই খাতা খোল।
স্বপ্না খাতা খুলে রাখে।আস্তে আস্তে সাদা পাতায় মেয়েলী হস্তাক্ষরে লেখা ভেসে উঠে।স্বপ্না পড়ে।
”তোমাকে দেখেছিলাম,-সময়?
সে এক ঘুঘু ডাকা দুপুর
 স্বপ্নডিঙ্গা ভেসে ছিল
ওই নয়ন মাঝে”।
-জানিস বোন,যখন কাউকে ভালোবাসা যায়।তখন তার চোখে চোখ পড়লে ডুবে যেতে হয়।যেন কোন এক অদৃশ্য শক্তি,গ্রাস করে নেয় সবকিছু।
সেতু কথা শেষ করে চুপ করে বসে থাকে।কিছুক্ষণ নিরবতা নেমে আসে সমস্ত ঘরে।
-দাদী,গল্প বলবে।
-তোর বাবা আসবে এখন এই ঘরে।তুই পড়।ঘুমানোর আগে গল্প বলবো তোকে।

হাসান স্বপ্নার ঘরে ঢুকেই সেই পরিচিত ঘ্রাণ পায়।যে ঘ্রাণ পেতো তার মায়ের শরীর হতে।মনে মনে ভাবে মেয়ে তার দাদীর সবগুনই পেয়েছে।তার মায়ের মুখটাই যেন কেটে স্বপ্নার শরীরে বসিয়ে দিয়েছে উপরওয়ালা।হাসান মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
-কিছু বলবে আব্বু?
-না আম্মা।
হাসান স্বপ্নার ঘর হতে বেরিয়ে আসে।
-মেয়েকে জিজ্ঞাসা করেছিলে?
লিলি প্রশ্ন করে।
-কি প্রশ্ন?
হাসান জানতে চায়।
লিলি খুব অবাক হয়।


স্বপ্না শুয়ে আছে।জানালা দিয়ে জ্যোৎস্নার আলো পড়ছে ঘরে।সেতু জানালার একপাশে দাঁড়িয়ে।
-দাদী,তোমরা কি লাকি ছিলে,না? সেই শিশুকাল হতে দুইজন একসাথে ছিলে।ভাবতেই কি আনন্দ হয়।
সেতু হাসে।স্বপ্নার কথার কোন প্রতি উত্তর দেয়না সেতু।স্বপ্না বিছানা ছেড়ে উঠে দাদীর পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।

সোহেল বরশীতে সুতো পড়াচ্ছিল।তার সামনে বসে আছে সেতু।ছোট্ট সেতু ফ্রক পড়া।সেতুর কোন আগ্রহ নেই বড়শীতে কিম্বা মাছ ধরায়।সেতুর ভালো লাগে সোহেল ভাইয়ার সাথে খেলতে।তার কাছে বসে থাকতে।সেতুর দাদা-দাদী বারান্দায় বসে দুই নাতী-নাতনীকে লক্ষ্য করছিল।
-তোমার নাতনীতো সোহেলের পিছই ছাড়েনা।
বজলুর সাহেব বলেন।
-দুইজন বেশ মানিকজোড়।
স্নিগ্ধা বেগম বলেন।
-আমরা কি অতদিন বেঁচে থাকবো?

বজলুর সাহেব বলেন।
-কতদিন?
স্নিগ্ধা জানতে চায়।
-যেদিন ওদের বিয়ে হবে।
কথা শুনে স্নিগ্ধা অবাক হয়ে স্বামীর দিকে চেয়ে থাকে।ঠিক এই সময় সানি বাসায় ফেরে।সানি বজলু সাহেবের বড় মেয়ে।স্বামী মারা যাওয়ার পর বাপের বাড়িতেই থাকে।স্থানীয় প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষিকা।বাসায় ঢুকেই সেতুকে দেখতে পায়।সে দৌড়ে গিয়ে সেতুকে কোলে তুলে নেয়।
-আমার সেতু মামনি,আমার সোনা।তুমি কখন এলে?
-কিছুক্ষণ আগেই এসেছি ফুপি।
এ কথা বলেই সেতু কোল থেকে নেমে পড়ে।সোহেল ছিপ নিয়ে ততক্ষণে উঠে দাঁড়িয়েছে।হাতে আটার দলা।
-জেলে আব্বাজান,আপনি কি মাছ ধরবেন?
-জ্বি,আম্মাজান।আপনার কথা অতীব সত্য।
-সন্ধ্যার আগেই আপনি ফিরবেন?
-আশা করা যায়।ছেলে তার মায়ের একান্ত অনুগত।
মেয়ে আর নাতির কথা শুনে বজলু সাহেব আর স্নিগ্ধা হো হো করে হেসে উঠে।সোহেল বাড়ির পিছনের পুকুরে মাছ ধরতে রওনা দেয়।
-সেতু মা,তুই পুকুর পারে যাসনা।
সানি বলে।
সেতু আর পিছন ফিরে তাকায় না।সেও সোহেলের পিছনে দৌড় দেয়।

-তোমাদের শিশুকাল কত সহজ আর সুন্দর ছিল,তাই না দাদী?
স্বপ্নার কথায় সেতু উত্তর দেয়না।সে তখন দেখছে মাছে ফাতনা নড়াচ্ছে আর এক কিশোর উত্তেজনায় ছটফঠ করছে।


কমলাপুর রেলষ্টেশনে নেমেই সোহেল মামাকে দেখতে পায়।সোহেল তার আম্মাকে হাত ধরে নামায়।
-ট্রেন লেট করলো অনেক।
আরমান বলে।
-রাতে সেতাবগঞ্জ হতে উঠেছি।জার্নি যেন শেষ হতেই চায় না।
সানি বলে।
আরমান তার বোন আর ভাগ্নেকে সাথে নিয়ে গাড়িতে তোলে।আরমান সিদ্ধেশ্বরীতে নিজস্ব ফ্ল্যাটে থাকে।বাড়িতে এসে সানি কাউকে পায়না।
-সেতুর স্কুল খোলা?
-হ্যাঁ আপা।তোরা খেয়ে নিস।আমি অফিসে চললাম।সেতুর আম্মা পাঁচটায় ফিরবে।সেতু কোচিং শেষে সন্ধ্যা সাতটায় ফিরবে।
আরমান ওদের রেখে চলে যায়।কাজের বুয়া এসে ওদের খেতে ডাকে।

অন্যরকম এক উত্তেজনা আজ পেয়ে বসেছে সেতুকে।কোন ভাবেই নিজেকে বসে আনতে পারছে না সে।ওর কেবলই মনে হতে থাকে ক্লাসগুলি আচমকা লম্বা হয়ে গিয়েছে।
-সেতু তোর কি হয়েছে আজ?
-কই কিছুনাতো।
রানুর কথায় সেতু উত্তর দেয়।
-কিছু একটা হয়েছে? ক্লাসে তোর কোন মনযোগই ছিল না।
ছুটির পর রানু আর সেতু বাড়ির পথ ধরে।বাড়ি থেকে ওদের স্কুল হাঁটা দূরত্বে।
রানুর কথার কোন উত্তর দেয় না সেতু।
দু’জনে কিছুক্ষণ চুপচাপ হাঁটতে থাকে।পাশ দিয়ে দুইজন মধ্যবয়স্ক ব্যক্তি হেঁটে যায়।


-বাপের বয়সী দুইজন কিন্তু কেমন বদ নজর।বুকের দিক থেকে চোখ সরায়ইনা।

সানি দরজা খুলে সেতুকে দেখতে পায়।কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে।
-ফুপি আমি কি দরজায় দাঁড়িয়ে থাকবো?
সানি দরজা থেকে সরে দাঁড়ায়।সেতু ভেতরে ঢুকে।সানি ওর পিছু নেয়।
-তোমার কি কিছু হয়েছে ফুপি?আমাকে চিনতে সমস্যা হচ্ছে?
সোহেল মাথা মুছতে মুছতে বসার ঘরে এসে সেতুকে দেখে মাথা মোছা থামিয়ে দেয়।
-তোমরা দু’জনই আমাকে নতুন দেখছো?
-তোর ওমন সুন্দর চুলের একি অবস্থা!
-বব চুল করে ফেললাম।যুগের হাওয়া।
-কি সর্বনেশে মেয়েরে তুই!
-ফুপি!
সানি আর কথা বাড়ায় না।রান্না ঘরে চলে যায়।
-আস্ত একটি বানরের মত দেখাচ্ছে তোকে।
কথাটা শেষ হতে না হতেই বই ভর্তি স্কুল ব্যাগ সোহেলের দিকে ছুটে আসে।সোহেল দ্রুত স্থান ত্যাগ করে
-কিছু পড়লো নাকি সোহেল?
সানি ঘরের ভেতর হতে বলে।
-না আম্মা।
সোহেল উত্তর দেয়।
-শব্দ হলো যে।
সোহেল আর উত্তর দেয়না।সে হাসি মুখে সেতুর দিকে তাকিয়ে থাকে।সেতুর ফর্সা মুখ লাল হয়ে আছে।সোহেল আবার মাথা মুছতে মুছতে ঘরের ভেতরে চলে যায়।সেতু কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে।সানি  সরবতের গ্লাস হাতে নিয়ে সেতুর সামনে আসে।


-যা জামা-কাপড় ছেড়ে ফ্রেস হয়ে আয়।তোর ফেবারিট বাদাম-পেস্তার সরবত করেছি।
-ফুপি আমার চুল ছোট করা কি ঠিক হয়নি?
-কেন ঠিক হবেনা?তোর যা ভাল লেগেছে তা তুই করেছিস।
-তবে কেন সোহেল ভাইয়া বানর বললো?
সানি ভাতিজির কথার কি উত্তর দেবে ভেবে পায়না।সে সোহেলকে ডাকে।
-কি ব্যাপার তুই সেতুকে বানর বলেছিস কেন?
-বানরের মত কাউকে যদি দেখতে লাগে তাকে বানর বলবো না আলীয়া ভাট বলবো,তুমিই বলো?
-ফুপি!
রাগে ক্ষোভে সেতু চিৎকার করে উঠে।

-কি চমৎকার আর মজার ছিল তোমাদের জীবন।
স্বপ্না ওর দাদীকে বলে।
-গল্প শেষ না হতেই এমন মন্তব্য করা ঠিক না।
সেতু বলে।
-কেন?
-গল্প শেষ হোক।তারপর মন্তব্য করাই ভালো।
-বুঝাই যাচ্ছে তোমাদের প্রেম ছিল বাধাহীন।উদ্যাম ছিল কি?
-কথা সত্য।বাধাহীন এবং উদ্যাম ছিল।আসলে বড়দের আলোচনা একদিন আমি শুনে ফেলেছিলাম।আমরা যখন বড় হবো তখন সোহেল ভাইয়ার সাথে আমার বিয়ে দেওয়া হবে।আমার তখন কৈশোর কাল।কি যে একটা অনুভূতি,বলে বোঝানো সম্ভব নয়।
-উনি কি তা জানতেন?
-না।
-তুমি কি পরে চুল আবার বড় করেছিলে?


-হ্যাঁ।আর জীবনের প্রথম ভুলটাও হয় সেই সময়।

সানি ভাইয়ের বাসায় ছেলেকে রেখে চলে যায়।সোহেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্যে কোচিং করবে।সেতুর মামা সিএণ্ডএফ এজেন্ট।ব্যবসায়িক কারণে দিনের বেশীর ভাগ সময় বাহিরে থাকে।মামী ব্যংকার।
-তোমার কোন অসুবিধা হচ্ছেনাতো মামা?
আরমান সোহেলকে বলে।
-না মামা।
সোহেল খেতে খেতে উত্তর দেয়।
-তোমার ফার্স্ট প্রাইওরিটি কি?
নীলিমা প্রশ্ন করে।
-বুয়েটে কম্পিউটার সায়েন্সে।
মামীর প্রশ্নের উত্তরে সোহেল বলে ।

বাড়ি, কোচিং সেন্টার আর পড়াশোনা নিয়ে বেশ ভালোই কাটছিল সোহেলের।কিন্তু এর মধ্যে সোহেলের জীবনে বিশাল এক ঘটনা ঘটে যায়।সেদিন ফার্মগেটে এসে জানতে পারে কয়েকদিন কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে।সে বাসায় ফিরে আসে।সেতু দরজা খুলে দেয়।
-কোচিং হলো না?
-না।
সোহেল ওর রুমে চলে যায়।গোসল সেরে পড়তে বসে।কিছুক্ষণ পর সেতু আসে অংক বুঝে নিতে।সেতুকে অংক বুঝিয়ে দেওয়ার সময় অদ্ভুত এক ঘ্রাণ পায় সোহেল।ভাবে মেয়েদের গায়ের গন্ধ বুঝি এমনই।খাতা ফিরিয়ে দেওয়ার সময় সোহেল সেতুর হাতের স্পর্শ পায়।
-তোর হাত এত গরম কেন বলতো?জ্বর এসেছে?
­-না।
অন্যরকম গলায় সেতু উত্তর দেয়।
সোহেল সেতুর দিকে তাকায়।তার মনে হয় এই সেতু তার অচেনা।তারপর যা হলো তাতে দু’জনের কারই নিয়ন্ত্রণে রইলো না।কে যে কার জামা খুললো কেউ বুঝতে পারলো না।সেতুর দুই স্তনে সোহেল পাগলের মত মুখ ঘঁষতে শুরু করে।আর সেতু আদুরে কন্ঠে শুধু বলতে থাকে-ছাড়ো সোহেল ভাইয়া,ছাড়ো।দুইজনে জড়াজড়ি করতে করতেই সোহেলের বীর্যপাত হয়ে যায়।সোহেল খুব লজ্জা পায়।

দাদীর গল্প শুনতে শুনতে স্বপ্না লজ্জায় লাল হয়ে উঠে।সেতু তা খেয়াল করে।
-লজ্জা কিসের?প্রতিটি মানুষের জীবনের স্বাভাবিক ঘটনা এটি।
-তারপর কি হলো দাদী?
-অনেক রাত হলো।এখন ঘুমো।আগামীকাল শুনিস।
স্বপ্না ঘুমিয়ে পড়ে।

হাসান সাহেব বাজার থেকে ফিরে লিলিকে ডাক দেয়।
-তোমার ফর্দি মোতাবেক সবকিছু এনেছি।
-উনাদের এরাইভেল কখন?
-আমি এয়ারপোর্ট যাচ্ছি।তুমি এইদিকটা গুছিয়ে নাও।
লিলি স্বপ্নাকে ডাক দেয়।
-মা,তুমি আজ আমাকে হেল্প করবে।
লিলি স্বপ্নাকে বলে।
-তোর এক নানু কানাডায় থাকেন।বহু বছর বাদে দেশে বেড়াতে আসছেন।তোর দাদী আর উনি একসাথে বড় হয়েছেন।উনার সাথে তোর দাদীর বিয়ে হওয়ার কথা ছিল।কিন্তু উনি বিদেশ গিয়ে এক রাশিয়ান মেয়ের প্রেমে পড়ে তাকেই বিয়ে করেন।পরে তোর দাদীর সাথে তোর দাদার বিয়ে হয়।পরে তোর দাদীর সাথে যার বিয়ে হয় তার নামও সোহেল।তোর দাদা ছিল তোর দাদীর চোখের মনি।
স্বপ্না কোন কথা বলে না।সে তাড়াতাড়ি তার ঘরে চলে আসে।দাদীকে খুঁজে।কিন্তু দাদী দেখা দেয়না।সে ফিরে এসে মাকে সাহায্য করতে লেগে যায়।অতিথিরা ঠিক সময় চলে আসে।এক বৃদ্ধ আর এক বৃদ্ধা।বৃদ্ধা বাংলা বোঝেনা।খাওয়া-দাওয়া শেষে স্বপ্না সোহেলকে একা পেয়ে যায়।
-আপনি আমার দাদীকে বিয়ে করলেন না কেন?দাদী কিশোরী বয়স হতে জানতো আপনি উনার স্বামী।
সোহেল অবাক চোখে স্বপ্নার দিকে চায়।স্বপ্না নয় সে দেখছে সেতুকে।

তারপর খুব নীচু স্বরে বলে-আমি বিষয়টি সম্পর্কে কিছুই জানতাম না।


লিলি মেয়ের ঘরে ঢোকে।স্বপ্না গভীর ঘুমে আছন্ন।হাতের কাছে ওর দাদীর অসমাপ্ত ডায়েরী। মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে লিলি বেরিয়ে আসে।স্বপ্না ঘুমের মধ্যে মিষ্টি হাসে।লিলি চলে গেলে সেতু বিছানার কাছে আসে।ডায়েরী আপনা আপনি খুলে যায়।একটি ফাঁকা পাতায় দ্রুত লেখা ভেসে উঠতে থাকে।