ধারাবাহিক হ্যান্টেড কাহিনী—৪৬
পূর্ব বর্ধমান--ভূতুড়ে কাহিণীর সন্ধানে
পূর্ব বর্ধমানের কেতু গ্রামের রায় পাড়ার বাসিন্দাদের
বিবৃতি ছিল এমনটাই--
এ গ্রামে গত দু বছরের মধ্যে পনের জন গ্রামবাসী
রহস্য জনক ভাবে আত্মহত্যা করেছে। এদের সকলকেই নাকি আত্মহত্যায় প্ররোচনা দিয়েছে
এই গ্রামের পাশের জঙ্গলের এক পাকুড় গাছে বাসা বেঁধেছে এমন একটা ভূত। আত্মহত্যা এদের মধ্যে বেশীর ভাগ গলায় ফাঁস লাগিয়ে করেছে।
কেবল দু’জন সাঁতার
জানা সত্ত্বেও জলে ডুবে মারা গেছে। গ্রামের লোকে বলে, ওই দু’জনকে ভূতেই ডুবিয়ে মেরেছে গো ! সন্ধে হতে না হতেই গ্রামের সমস্ত
রাস্তা-ঘাট একদম স্তব্ধ হয়ে যায়। ছোট বড় বুড়ো সবাই ভয়ে ঘরের বাইরে বের হয় না। এ
গ্রামের প্রায় চার শ পরিবারের বাস। গ্রামের অনেকেই নাকি নিজের চোখেই দেখেছে ভূত।
গ্রামের বাসিন্দা, পুতুল রায় বলে, স্নান করতে গিয়ে দেখি একটা হাওয়া উঠলো, ঘূর্ণি হাওয়ার মত হয়ে সেটা আমার
আশপাশে পাক খেতে থাকলো। তারপর মনে হল হাওয়াটা যেন আমার শাড়ির মধ্যে ঢুকে গেছে।
তাড়াতাড়ি ঘরে এলাম, মাথাটা আমার কেমন ঝিমঝিম করতে লাগলো। কেমন অসুস্থ লাগছিল নিজেকে !
এমনি গ্রামের অঞ্জন মাঝি বলল, একদিন মাঝ রাতে আমি কোন কাজে
ঘরের বাইরে বেড়িয়েছি। হঠাৎ দেখলাম, আমার কিছুটা দূর দিয়ে
লম্বা-চওড়া একটা মেয়ে ছেলে হেঁটে যাচ্ছে। আমি তো চেনার চেষ্টা করলাম এ গ্রামে এত
লম্বা মেয়েছেলে কে হবে ! দেখতে পেলাম তার পরনে লাল মত শাড়ি। মাথায় ছিল তার বড় মত
ঘোমটা। মুখটা তার ঘোমটার নিচে ঢাকা থাকায় তাকে চিনে উঠতে পারলাম না। আমি ডাক দিতে গেলাম তারে, কেডা গো তুমি ? কিছু বলার আগেই হঠাৎ দেখি চোখের
পলকে সে অদৃশ্য হয়ে গেল !
সন্ধ্যা এলেই এ গ্রাম একেবারে সুনসান হয়ে পড়ে। একটা
জন-মানবের টু শব্দটাও পাওয়া যায় না। হ্যাঁ নির্জনতার মাঝে শুনতে পাওয়া যায় ঝিঝি পোকার
ঝিঁঝি পোকার ঝিঁঝি-রব। এখানকার বাতাস তোলে শুকনো পাতার মর্মরধ্বনি, তাতে চারপাশের পরিবেশ আরও ভয়াবহ
হয়ে ওঠে। গ্রামের বাসিন্দা মাধুরী দাস বলে, আমার তো দিনের বেলায় বেরোতেই ভয় লাগে--মনে হয় এদিক
ওদিক থেকে কেউ যেন উঁকি মেরে আমায় দেখছে। ঘুরলি বাতাসের শব্দ শুনি আর আমার পরান
কেঁপে ওঠে ! সেই পাকুড় গাছ আর গ্রামের ভয়াবহ পরিবেশ এসব নিয়েই এখানকার
বাসিন্দাদের মনে ভীষণ ভয় চলছে।
এরপর শুরু হয় অনিষ্টকারী আত্মা-প্রেতাত্মাদের গ্রাম
থেকে দূরে সরাবার চেষ্টা-প্রচেষ্টা। এই ভয়াবহ অবস্থা থেকে নিজাত পেতেই শেষে শুরু
হয় নানা রকম পূজাআচ্চা বহর। গ্রামের মাতব্বররা তান্ত্রিক-ওঝাদের ডেকে আনে। তাদের
পূজা পাঠ, উচ্চস্বরে তাদের মন্ত্র উচ্চারণ
যেন গ্রামের পরিবেশকে আরও আতঙ্কিত করে তোলে। এমনি শত চেষ্টার পরেও নাকি এ গ্রামের
অলৌকিক, অলৌকিকতার ঘটনা আগের মতই চলতে
থাকে। আশপাশের গ্রামের জ্ঞানীগুণী জন অনেকেই বলছে, এটা মনের কুসংস্কার ছাড়া আর কিছুই নয় ! এর মধ্যে ভূত
বা অলৌকিকতার কিছু নেই। এর পাল্টা জবাবে গ্রামের লোকরা বলে, এমনি কথা দূর থেকে সবাই বলতে
পারে ! নিজের গ্রামে হলে তবেই সব বোঝা যায় !
এমনি রহস্যময় সংবাদ পাবার পরে এবিপি আনন্দের
প্রতিনিধিদল এক রাতে গিয়ে হাজির হলেন সে গ্রামে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে। সত্যি
রহস্যটা জানার জন্যে ওঁরা হাজির হন সেখানে। রিপোর্টাররা গ্রামের পাশের জঙ্গলের
ভেতরের কুখ্যাত সেই পাকুড় গাছ দেখতে গেলেন। গ্রামের লোকদের সাথে ওঁদের কথা
হল, দিন হোক আর রাতই হোক এই পাকুড়
গাছের কাছে এলে নাকি গ্রামবাসীদের শরীর কেমন ভারি ভারি লাগে ! অনুসন্ধান দল বারবার
লাইট জ্বেলে চারদিকে অলৌকিক রহস্যের খোঁজে লেগে গেলেন। অনুসন্ধানদল পাকুড় গাছে
কিছুই দেখতে পেলেন না। গাছের ওপরে শুধু একটা প্লাস্টিকের ফুল মালা ডালপালায় জড়িয়ে
ঝুলে থাকতে দেখা গেলো। এ.বি.পি.আনন্দের লোকরা গ্রাম ও তার আশপাশ ঘুরেও কোন রহস্য
খুঁজে পেলেন না।
এই গ্রাম নিয়ে, গ্রামের ভৌতিক পরিবেশ নিয়ে সমাজতাত্ত্বিকরা ও মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন, কোন জায়গায় কোন রকম আতঙ্ক ভয় যখন অনেক দিন ধরে চলতে থাকে তখন
একটা ভয়ের পরিবেশ ধীরে ধীরে এমনিতেই তৈরি হয়ে যায়। আর এ ভাবে ভয়ের সে সব কারণগুলি
নিয়ে স্থানীয় লোকজনের মন ভয়াক্রান্ত হয়ে পড়ে। এভাবে চলতে চলতে একটা সময় আসে যখন
সেখানকার বাসিন্দারা গণ-হিস্টিরিয়াতে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। আর এ অবস্থায় স্থানীয়
লোকদের শরীর ভারি বলে অনুভূত হতেই পারে। তাদের কাছে কোন শব্দকে অলৌকিক বলে মনে
হতেই পারে। কেউ যেন উঁকি মেরে দেখছে, হঠাৎ কেউ যেন আড়ালে চলে গেলো, বাতাসের মধ্যে ভৌতিক বা অলৌকিক
কিছু অস্তিত্ব তাদের নজরে আসতেই পারে। সমাজতাত্ত্বিকরা ও মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, এমনি ঘটনা দেশ বিদেশে এর আগেও অনেক জায়গায় লক্ষ্য
করা গেছে।