অহংকার
সুদীপ্ত
অফিস থেকে ফিরে জামা
খুলতে খুলতে বলল
---জানো কি হয়েছে
? এতদিন পর বন্ধুদের সাথে
সব একসঙ্গে দেখা হবে
। ফেসবুক টুইটার থেকে
সবাই নিজেদের এত বছরের
পুরনো বন্ধুদের খুঁজে পেয়েছে
। এমন কি যারা
বিদেশে চলে গেছে তারাও
---
পৃথার চা তৈরি হয়ে গিয়েছিল । টেবিলে নামিয়ে বলল --সত্যি ভাবা যায় না ।তারপর?
আনন্দে সুদীপ্ত বলে উঠল --এবার যাব আমরা। সেই পুরনো কলেজ ! সেই বন্ধু --কতবছর পর --আবার একসঙ্গে ।
সুদীপ্ত পড়াশোনা করেছে দিল্লির কাছে । বন্ধু মানে নানা প্রদেশের --কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী । তিনদিন তারা ঘুরবে, বেড়াবে ,খাওয়াদাওয়া । সব ব্যবস্থা দিল্লির এক বন্ধুই করে ফেলেছে । টাকাটা সবাই মিলে ভাগ করে নেবে ।অতএব গোছগাছ আর যাত্রা ।
হাওড়া স্টেশনে দেখা হল রায় দম্পতির সাথে । দুই বন্ধু গলা জড়াজড়ি হল ।পরিচয় হল দীপার সাথে । পৃথা বলল ---যাক বাবা ! বাঁচা গেল ! দুটো বাংলা কথা বলা যাবে ।দীপা পৃথা বেশ বন্ধু হয়ে গেল । রাজধানী ছুটল ----
বিশাল বড় রাজপ্রাসাদের মত হোটেল । বন্ধুরা একে একে গাড়ি থেকে নামছে । কেউ কাউকেই চিনতে পারছে না । প্রায় চল্লিশ বছর পর ---অনেক পালটে গেছে সব ।
আরে ইয়ার ! আরে দোস্ত ! বলে বুকে জড়িয়ে জড়িয়ে সে কি পিঠ চাপড়ানো ।
পৃথা ভাবছে ---বাঙ্গালীর পিঠ এবার বুঝি গেল ! বন্ধু পরিচয়ের পর তাদের মিসেসদের পালা ।
পৃথা অবাক হয়ে দেখছে আর ভাবছে --কি রঙ ! কি সাজগোজ ! যেন কোনদিন কোন দুঃখের আঁচ এদের স্পর্শ করেনি । মাখনের মত গালে লালচে আভা । বিশাল বড়লোক ! দামি ড্রেস ,জুয়েলারী ! হিরে প্লাটিনাম ঝকঝক করছে ।
কথা ইংরাজিতে বা হিন্দিতে ।পৃথা দীপা দুজনেই ইংরাজি হিন্দিতে একটু আধটু কথা বলছিল ।
বিরাট হলঘরের চারিদিকে বন্ধুরা বসেছিল । কে কোথায় চাকরি করে , কার ছেলেমেয়ে এখন কি করে ,মানে কার কি স্ট্যাটাস । এক এক করে নিজের কথা বলছে সব । অহঙ্কার গর্ব এবার ফুটে উঠছে চোখেমুখে । সবাই বিশাল মাপের চাকরি করে । ছেলেমেয়েরা বিদেশে পড়াশোনা করে । তাদের শিক্ষা দীক্ষা --কে কাকে টেক্কা দেবে ! সুদীপ্তর চাকরি খারাপ নয় । কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মাইনে অন্য প্রদেশের চেয়ে কম । মাথায় তার অনেক চাপ ।বাবা মা ভাই বোন --বোনের বিয়ে। একমাত্র সেই ছেলেমেয়ে পশ্চিমবঙ্গেই পড়িয়েছে ।
পৃথা বলল -- একটুও নিজেকে ছোট মনে করো না । আমাদের দেশেও পড়াশোনা হয় ।আমাদের ছেলেমেয়েও যথেষ্ট শিক্ষিত ।তবুও কেন যেন সুদীপ্তর হীনমন্যতা যায় না ।
দুটো দিন আনন্দে কেটে গেছে । নানা খাবার দাবার ।কন্টিনেন্টাল , থাই , চাইনিশ ,দেশি ,বিদেশি । শুধু বাঙালীর মাছের ঝোল ভাত বাদ । দীপা বোধ হয় সেটি মিস করছে ।
শেষের দিনে বড় হলঘরে শ্যাম্পেনের বোতল খোলা হল । সামনে স্টেজ মাইক্রোফোন । হেঁড়ে গলায় এবার এক ভদ্রলোক মহম্মদ রফির একটা গান গাইলেন । অজস্র জায়গায় সুর নড়ে গেল ।রফির গান গাওয়া এত সোজা নয়। দিল্লির মিসেস কাপুর একখানা গজল গাইলেন ।
এবার সুদীপ্ত পৃথাকে বলল -যাও তুমি একখানা গান গাও । অনেকক্ষন ধরে যে গানখানা মনের মধ্যে গুন গুন করছিল সেইটা দিয়ে শুরু করল --''পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায় ! ''
গান শেষ কিন্তু তার যে কি মানে , কেউ বোঝেনি । রায়বাবু উঠলেন ।বুঝিয়ে দিলেন ইংরাজিতে , পৃথা তখন ভাবছে --আশ্চর্য! এরা রবীন্দ্রনাথ জানে না ? তিনি তো বিশ্বকবি ।
এবার কেউ একজন বলল --এক হিন্দি গানা শুনাইয়ে না ম্যাডাম ! পৃথা ভাবছে কি গাইবে ---অমনি অন্তর থেকে কেউ বলল --ভারতীয় রাগসঙ্গীত গাও ! খেয়াল , ঠুমরী , কাজরী , ভজন ! সব গানই তো হিন্দি । বেজে উঠল শ্রীকৃষ্ণের বাঁশী । রাধা চলেছে অভিসারে --''নিরভরন ক্যায়সে যাউ সখি অব ''---- ''চলরি হোরি খেলন সজনী ''। কখন সে রাধা কখনও সে মীরা , আত্মমগ্ন দরবারী কানাড়ায় --
''ঘর জানে দে ছোড় মেরি বৈয়া '' রাধার বিরহ মিলন অভিসার ফুটে উঠেছে সাধিকার মুখে চোখে । এই পৃথিবীতে সে আর নেই ।
সামনে টেবিলে পড়ে আছে শ্যাম্পেনের বোতল , তুচ্ছ যত পোশাক , বিলাস , ব্যসন ,ভোগ --- মিথ্যে যত অহঙ্কার ।
পৃথার চা তৈরি হয়ে গিয়েছিল । টেবিলে নামিয়ে বলল --সত্যি ভাবা যায় না ।তারপর?
আনন্দে সুদীপ্ত বলে উঠল --এবার যাব আমরা। সেই পুরনো কলেজ ! সেই বন্ধু --কতবছর পর --আবার একসঙ্গে ।
সুদীপ্ত পড়াশোনা করেছে দিল্লির কাছে । বন্ধু মানে নানা প্রদেশের --কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী । তিনদিন তারা ঘুরবে, বেড়াবে ,খাওয়াদাওয়া । সব ব্যবস্থা দিল্লির এক বন্ধুই করে ফেলেছে । টাকাটা সবাই মিলে ভাগ করে নেবে ।অতএব গোছগাছ আর যাত্রা ।
হাওড়া স্টেশনে দেখা হল রায় দম্পতির সাথে । দুই বন্ধু গলা জড়াজড়ি হল ।পরিচয় হল দীপার সাথে । পৃথা বলল ---যাক বাবা ! বাঁচা গেল ! দুটো বাংলা কথা বলা যাবে ।দীপা পৃথা বেশ বন্ধু হয়ে গেল । রাজধানী ছুটল ----
বিশাল বড় রাজপ্রাসাদের মত হোটেল । বন্ধুরা একে একে গাড়ি থেকে নামছে । কেউ কাউকেই চিনতে পারছে না । প্রায় চল্লিশ বছর পর ---অনেক পালটে গেছে সব ।
আরে ইয়ার ! আরে দোস্ত ! বলে বুকে জড়িয়ে জড়িয়ে সে কি পিঠ চাপড়ানো ।
পৃথা ভাবছে ---বাঙ্গালীর পিঠ এবার বুঝি গেল ! বন্ধু পরিচয়ের পর তাদের মিসেসদের পালা ।
পৃথা অবাক হয়ে দেখছে আর ভাবছে --কি রঙ ! কি সাজগোজ ! যেন কোনদিন কোন দুঃখের আঁচ এদের স্পর্শ করেনি । মাখনের মত গালে লালচে আভা । বিশাল বড়লোক ! দামি ড্রেস ,জুয়েলারী ! হিরে প্লাটিনাম ঝকঝক করছে ।
কথা ইংরাজিতে বা হিন্দিতে ।পৃথা দীপা দুজনেই ইংরাজি হিন্দিতে একটু আধটু কথা বলছিল ।
বিরাট হলঘরের চারিদিকে বন্ধুরা বসেছিল । কে কোথায় চাকরি করে , কার ছেলেমেয়ে এখন কি করে ,মানে কার কি স্ট্যাটাস । এক এক করে নিজের কথা বলছে সব । অহঙ্কার গর্ব এবার ফুটে উঠছে চোখেমুখে । সবাই বিশাল মাপের চাকরি করে । ছেলেমেয়েরা বিদেশে পড়াশোনা করে । তাদের শিক্ষা দীক্ষা --কে কাকে টেক্কা দেবে ! সুদীপ্তর চাকরি খারাপ নয় । কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মাইনে অন্য প্রদেশের চেয়ে কম । মাথায় তার অনেক চাপ ।বাবা মা ভাই বোন --বোনের বিয়ে। একমাত্র সেই ছেলেমেয়ে পশ্চিমবঙ্গেই পড়িয়েছে ।
পৃথা বলল -- একটুও নিজেকে ছোট মনে করো না । আমাদের দেশেও পড়াশোনা হয় ।আমাদের ছেলেমেয়েও যথেষ্ট শিক্ষিত ।তবুও কেন যেন সুদীপ্তর হীনমন্যতা যায় না ।
দুটো দিন আনন্দে কেটে গেছে । নানা খাবার দাবার ।কন্টিনেন্টাল , থাই , চাইনিশ ,দেশি ,বিদেশি । শুধু বাঙালীর মাছের ঝোল ভাত বাদ । দীপা বোধ হয় সেটি মিস করছে ।
শেষের দিনে বড় হলঘরে শ্যাম্পেনের বোতল খোলা হল । সামনে স্টেজ মাইক্রোফোন । হেঁড়ে গলায় এবার এক ভদ্রলোক মহম্মদ রফির একটা গান গাইলেন । অজস্র জায়গায় সুর নড়ে গেল ।রফির গান গাওয়া এত সোজা নয়। দিল্লির মিসেস কাপুর একখানা গজল গাইলেন ।
এবার সুদীপ্ত পৃথাকে বলল -যাও তুমি একখানা গান গাও । অনেকক্ষন ধরে যে গানখানা মনের মধ্যে গুন গুন করছিল সেইটা দিয়ে শুরু করল --''পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায় ! ''
গান শেষ কিন্তু তার যে কি মানে , কেউ বোঝেনি । রায়বাবু উঠলেন ।বুঝিয়ে দিলেন ইংরাজিতে , পৃথা তখন ভাবছে --আশ্চর্য! এরা রবীন্দ্রনাথ জানে না ? তিনি তো বিশ্বকবি ।
এবার কেউ একজন বলল --এক হিন্দি গানা শুনাইয়ে না ম্যাডাম ! পৃথা ভাবছে কি গাইবে ---অমনি অন্তর থেকে কেউ বলল --ভারতীয় রাগসঙ্গীত গাও ! খেয়াল , ঠুমরী , কাজরী , ভজন ! সব গানই তো হিন্দি । বেজে উঠল শ্রীকৃষ্ণের বাঁশী । রাধা চলেছে অভিসারে --''নিরভরন ক্যায়সে যাউ সখি অব ''---- ''চলরি হোরি খেলন সজনী ''। কখন সে রাধা কখনও সে মীরা , আত্মমগ্ন দরবারী কানাড়ায় --
''ঘর জানে দে ছোড় মেরি বৈয়া '' রাধার বিরহ মিলন অভিসার ফুটে উঠেছে সাধিকার মুখে চোখে । এই পৃথিবীতে সে আর নেই ।
সামনে টেবিলে পড়ে আছে শ্যাম্পেনের বোতল , তুচ্ছ যত পোশাক , বিলাস , ব্যসন ,ভোগ --- মিথ্যে যত অহঙ্কার ।