ডায়েরি
সন্ধ্যা ৭টা
:
এক্ষুনি ফেসবুকে একটা ছবি পোষ্ট করলাম। লাইক - কমেন্ট কিছুই পড়েনি এখনো। আমারই আঁকা
একটা ছবি। আমি যে আঁকতে পারি তা নিজেই জানতাম না। সকালে ঘুম থেকে উঠতেই নিজেকে এক ছিন্ন
ভিন্ন মানুষ বলে মনে হল। এমন অস্বস্তি হচ্ছিল যে বলবার নয়। সম্পূর্ণ নতুন এক 'আমি'
আবিষ্কৃত হলাম। একটা ঘোর লেগেছিল মগজে। ছবিটা হঠাৎই এঁকে
ফেল্লাম। এত সুন্দর হবে ভাবিনি কখনো। ছবিতে আমি একটা অরণ্যের তলে দাঁড়িয়ে। অথচ এমন
জায়গায় আমি কোনোদিন যাইনি। কেন এরকম আঁকলাম?
রাত ৯ টা
:
এতগুলো কমেন্ট পড়বে ভাবিনি। লাইক তো ৫০০ ছাড়িয়ে গেছে। সবাই প্রায় ন্যাকা
ন্যাকা কমেন্ট করেছে। 'সুইট' , নাইস
, কিউট , অসাম্ম '- অনেকে আবার 'শুভেচ্ছা , অভিনন্দন , ভাল লাগলো 'ইত্যাদি।
একটা মাকড়শার জালের মত অস্বচ্ছ পদার্থ ভেদ করে রেখেছে মাথাটাকে। কি
যে টানাপোড়েন হচ্ছে আমার মধ্যে তা বলে বোঝাতে পারবো না।
রাত ১২ টা:
রাত অনেক হয়েছে। ঘরের বাতি নেভানো। তবুও ভেন্টিলেটর দিয়ে এসে পড়ছে নক্ষত্র
ও ক্ষয়া চাঁদের নরম মিহি আলোর একটা সরু রেখা। সেই আলোতে একটা দরজা খুলে গেলো। আমি দেখতে
পাচ্ছি আমি সেই অরণ্যের তলে দাঁড়িয়ে। আমায় বিয়ে করবে বলে একটা মন্দিরে নিয়ে এসে ধোঁকা
দিয়েছে সূর্য। আমি সূর্য্যা কিংবা সূরী নই। আমার মনে হল অরণ্যটা বিহারের্। সূর্য ও
আমিও বিহার প্রদেশের অধিবাসী। আমার কৃষ্ণ মুখে চাঁদের আলো চকচক করে উঠলো। আমার গর্ভের
সন্তানকে অস্বীকার করেছে। এই জন্যই কি ছবিতে আমি নিজেকে গর্ভবতী এঁকেছি?
রাত ১.৩০ টা :
ঘুম ভেঙে গেলো। গলা শুকিয়ে কাঠ। যন্ত্রণায় মাথা ছিড়ে পড়ছে। অসম্ভব রকমের
অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ছে আমার সমস্ত শরীরে। আমি যেন বিষ পান করেছি। কান্না পাচ্ছে। ছিন্নভিন্ন
হয়ে পড়ছি ক্রমশ। আমি অসুস্থ হলাম কি করে? আমি তো সুস্থ ছিলাম সম্পূর্ণ?
দৃষ্টি আমার সিলিং ফ্যানে। শীতকালে ওখানে মাকড়শার ঝুল জমে।
পোকা গুলো আটকা পড়ে ছটফট করে। ঘরটা যেন শীত
-শীত হয়ে পড়ছে হঠাৎই। মাকড়শা গুলো আমায় ডাকছে। সূর্য এবার
আর আমার শরীরে ওর রোদ্দুর রেখে যেতে পারবে না। সূর্য এঘরের জানালা দিয়ে এসে পড়ার আগেই
আমায় পালাতে হবে জঙ্গলে। ঐ ঝুল আমি বিহারের জঙ্গলেও দেখেছি। শিশির গুলো বিন্দু বিন্দু
ঝুলে থাকে। সূর্য ওর ওপরও এসে পড়ে। কি সুন্দরই না ঝলসে ওঠে দ্যুতিময় হীরের মত! নাহ
, আমাকে যেতে হবে। আমার মনে মাকড়শার জালটা ছিড়ে যাচ্ছে।
তার আগেই আমাকে যেতে হবে।