গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

রবিবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০২০

বৈশাখী চক্রবর্তী

অসদ্ বিম্ব

 আমি সুধন্য স্যানাল।
রিটায়ার্ড কেন্দ্রীয় সরকারি উচ্চ পদাধিকারী কর্মী। বিপত্নীক।
স্ত্রী স্কুল শিক্ষিকা ছিলেন। একমাত্র পুত্রসন্তান কর্মসূত্রে হায়দ্রাবাদে সেটেল্ড। তার স্ত্রী ও পুত্র অর্থাৎ আমার বৌমা ও নাতি সূদুর মেলবোর্নে। সেখানে বৌমার নাচের ইনস্টিটিউট। অতএব এটা খুবই সহজে অনুমেয় যে আমার পুত্র সেখানে যাবার চেষ্টায় আছে। স্ত্রীর মৃত্যুর পর চন্দননগরের বিশাল পৈত্রিক বাড়ি ছেড়ে এই মোহন কমপ্লেক্স-এর সেভেন্থ ফ্লোরের তিন কামরার ফ্ল্যাটে উঠেছি।

           এই ফ্ল্যাটের ইন্টিরিয়ার আমার পছন্দে সেজে উঠেছে। ইস্ট ফেসিং টপ ফ্লোরের জন্য খরচ একটু বেশি হয়েছিল ঠিকই কিন্তু টাকার অভাব তো সুধন্য সান্যালের নেই তাই দেড় লক্ষটাকা বেশি খরচ করতে অসুবিধা হয় নি। এতোদুর পড়ে হয়তো অনেকেই একটা চাপা দুঃখ দুঃখ শ্বাস ফেলেছেন । ভাবছেন আহা,ভদ্রলোক একেবারে একা,নিঃসঙ্গ,অসহায়। কিন্তু সত্যি বলতে কী এর কোনটাই আমি নই। নই কারণ মন থেকে একাকীত্বের দুঃখ অনুভব করি না। না স্ত্রী বিয়োগেও নয়।

        তপন আর মানিক আমার দুই হাত। তপন কাগজের ডিলার। নিজের দোকান আছে বইয়ের কলেজস্ট্রিটে। আর মানিক আমার হেল্পিং হ্যান্ড। সে এই বাড়ির সব কিছু দেখাশনা করে।
        বই আমার খুব বড় বন্ধু। আশৈশব আমি পড়তে ভালবাসি। তপনের সঙ্গে যোগাযোগটা এই কারনেই। গান শুনি। তবে বুঝি না তেমন। রবীন্দ্রসংগীত শোনা অভ্যেস হয়েছিল মৈত্রেয়ীর জন্য। হ্যাঁ ,মৈত্রেয়ী আমার পরলোকগতা স্ত্রী। নিজে হিন্দি ওল্ডিজ ভালবাসি। কিশোর কুমার ফেবারিট। বই ছাড়া আর একটা শখ  হল স্বাস্থ্য চর্চা। এই তেষট্টিতেও পাঁচ সেট না পারলেও তিন সেট ব্যাডমিন্টন খেলতে পারি।দমে অসুবিধা হয় না। স্ট্রেচ বা স্পট জাম্পেও না। প্রতিদিন সকালে তিন কিলোমিটার দৌড় মাস্ট। কোন নেশা নেই। হলিউড মুভি মাঝে মধ্যে দেখি। আমি একেবারেই মিশুকে নই। কিন্তু এই কমপ্লেক্সের মোটামুটি সকলে আমাকে চেনেন আমি ভাল খেলি বলে। আমি তেমন কাউকে চিনে উঠিনি গত দু’বছরে। ন্যাশনাল লেভেল পর্যন্ত ব্যাডমিন্টন খেলেছি এককালে,ফুটবলও। পরে ছেড়ে দিতে হয় পড়াশনার জন্য। নভেল বড় একটা পড়ি না। কবিতা এক্কেবারেই না। সাবজেক্ট ওরিয়েন্টেড বই পড়তে ভালবাসি। সাইকোলজি,হিস্ট্রি,জিয়োলজি,এনথ্রো-পোলজি বেশ লাগে। কেমিস্ট্রি,অংক আমার প্রিয়। চাল-ডালের কেমিস্ট্রিটাও আমার  হাতে বেশ হয়। মাংসটাও রাঁধতে পারি। বেড়াতে ভীষণ ভালবাসি। জঙ্গল ফেবারিট।

          আচ্ছা,আপনাদের মনে হচ্ছে না এই এতক্ষণ ধরে নিজের ঢাক নিজে পেটাচ্ছি তা কেন? বা এই আত্ম সংকীর্তণ করে আপনাদের বহুমূল্য সময় নষ্ট করছি কেন?মনে হচ্ছে তো?
তাহলে মূল পয়েন্টেই আসি।

         একটা নতুন উপসর্গ দেখা দিয়েছে হালে।‘দিব্যি তাঁতি খাচ্ছিল তাঁত বুনে কাল হল তার হাল কিনে’ প্রায় সেই রকম আর কী। তপন বহু দিন ধরেই বলতো ‘সুধন্যদা একটা ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে ফেলো। সময় কাটবে ভালো’। আমি ব্যাঙ্গ করতাম। ‘নেই কাজ তো ফেসবুক ভাজ। যত্তো বাজে আড্ডা।’ কিন্তু অ্যাকাউন্ট খুলতে হল। আমার লিটিল শেন ওয়ার্নের জন্য। হ্যাঁ,আমার নাতি,একমাত্র বুকের চিনচিন। সে এখন আট। জিনের কোড মেনে ভাল খেলে এ বয়সেই।ব্যাডমিন্টন নয়, সরু সরু আঙ্গুলে নাকি লেগ স্পিন করে। আর ভাল রাগবি খেলে। স্কুল টিমে আছে। তার ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে ইপ্সিতা মানে বৌমা,ছেলের কথায় তাই অ্যাকাউন্ট খোলা। দু’বছরে বন্ধু মাত্র তেত্রিশ জন। প্রায় সবাই অপরিচিত। কিন্তু বেশ কিছু পেজ এর লেখা সময় হলেই পড়ি। এমনই একটা পুরাতত্ত্ব বিষয়ক পাতার মন্তব্য করতে গিয়ে পাই একটা নিটোল সুন্দর মন্তব্য। লেখার স্টাইলটিও অনবদ্য। নাম দেখলাম মৌমিতা সেন। লেখাটি এতো ভাল লেগেছিল যে ঢুঁ মারলাম প্রোফাইলে।জানলাম ইতিহাস তার বিষয়।এবং অনবদ্য লেখে। আর একটা জিনিস টেনেছিল খুব। সেটা তার প্রোফাইল ছবিটি। একরাশ কালো লম্বা লম্বা চুল,ছোট্ট টিপ,ভাসা ভাসা দুটো অদ্ভুত সুন্দর চোখ,হাসি কিন্তু হাসি নয় এমন এক্সপ্রেশন। কলেজে পড়ে বড়জোর। মেয়ের বয়সি হবে। তবু ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছিলাম। না,না,কোন লাভ এফেয়ার হয়নি। বরং বলতে পারি খুব বন্ধুত্ব হয়ে গেল। আমি সুধন্য সান্যাল কিছু তো পাল্টালাম ই। ছোট ছোট লেখা পোস্ট করতে শুরু করলাম। বেড়ানোর ছবিও। সে উৎসাহের সঙ্গে কমেন্ট করতো তার প্রাণোচ্ছল ভাষায়। সে কমেন্ট করলে আমি লাইক দিতাম। অবশ্য দেবার মতই কমেন্ট করতো সে। হিস্ট্রি পলিটিক্স সাইকোলজি বেশ কিছু বিষয়েই তার বেশ পরিষ্কার ও স্বচ্ছ ধারনা। এরপর ইনবক্স। মনে হয় কলেজ থেকে ফিরেই একটা মেসেজ সে করতো। করতো নয়,এখনও করে।

        একদিন বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে ভিজছে এমন একটা ছবি কভারফোটো করলো। ছবিটা নির্ঘাত মৌ এর বয়ফ্রেন্ডের তোলা। কারন সম্পূর্ণ পিছন থেকে তোলা। বেশ জোর বৃষ্টি। পুরোনো বাড়ির উঁচু এবং ধাপকাটা কাটা আলসে। আজানুলম্বা চুল ভিজছে। জল গড়িয়ে পড়ছে ঝরঝর। শাড়ির তলা থেকে পায়ের গোড়ালিটুকু শুধু দেখা যাচ্ছে। এতো ভালো লাগলো ছবিটা। খুব প্রশংসা  লিখে দিলাম ফোটোগ্রাফারের। ইনবক্সে তার আনন্দ উপচে পড়লো।

আমি কিন্তু ভাবছিলাম অন্য কথা। মিশনে পড়াশনা তাই শৃঙ্খলা একটা ছিলই। তাছাড়া  খেলাধুলা আর পড়াশনা করে আর প্রেম করা হয়নি। সত্যি বলতে মাস্টার ডিগ্রি কমপ্লিট করার একবছরের মধ্যে সরেস একখানা চাকরি। তাই বাবা-মাও দেরি করেন নি। একদিন বাবাই সরাসরি জিজ্ঞেস করলেন—‘তোমার কি পছন্দের কেউ আছে?নইলে আমরা মেয়ে দেখতে পারি। আমার ‘এতো তাড়াতাড়ি!’—কথাটাকে বাবা জাস্ট পাত্তাই দিলেন না। এক মাসের  মধ্যে বাংলার দিদিমনি মৈত্রেয়ী সিলেক্ট হয়ে গেল। পাত্র হিসেবে আমি গেছিলাম বটে তবে নাকচ করার কোন কারন ছিল না। সুন্দরী চাকুরিরতা সঙ্গিতজ্ঞা কর্মনিপুণা। আর কী চাই। অতএব বসন্তে কুহু কুহু সাঁনাই বেজে উঠলো।মনের মধ্যে বেশ আনন্দের বুদবুদ।  কোঁকড়ানো চুল,সিঁদুরের টিপ,লিপস্টিক রাঙা ঠোঁট। আহা। কিন্তু—
  
   এই কিন্তুটাই বড় বাস্তব। হোঁচট   খেলাম ফুলশয্যার রাতেই। গঙ্গার ধারে ফেব্রুয়ারীতে গরম পড়ে না। কিন্তু তবু আমি টেনশনে ঘর্মাক্ত। রজনীগন্ধা মোড়া পালঙ্ক। ঘোমটা পড়া বৌ। তার আগে অনেক অদ্ভুত সব আচার অনুষ্ঠান হয়েছে। পাঞ্জাবীর পকেটে ওয়েডিং রিং,আর বালিশের পাশে একটা প্যাকেট। খান চারেক খোলা জানলা দিয়ে যে চাঁদের আলো আসছিল তার চেয়েও উজ্জ্বল আলো আমার শয্যায়। ঘোমটা সরাতে সরাতে গলাটায় যতটা আবেগ আনা যায় এনে বলছিলাম—‘কভি কভি মেরে দিল মে খ্যায়াল আতা হ্যায়,কে তুমকো বানায়া গ্যায়া হ্যায় মেরে লিয়ে—’খিলখিল করে হেসে উঠেছিল ঘোমটা পড়া মৈত্রেয়ী। ‘খুব হিন্দি ফিল্ম দেখেন।  তাই না?তাই এমন নাটুকে। ’যথারীতি আরো ঘাবড়ে গেছিলাম। তারপর তো আরো সাংঘাতিক হল প্যাকেট মোড়ানো উপহার খুলে। সোজা বলেদিল যে ‘ওসব মেমসাহেব মার্কা’  কায়দা করে শরীর দেখানো রাত্রিবাস পড়তে তার ভারী লজ্জা করবে। অতএব। দু’টো বাক্য। আমি নড়বড়ে। অনেক কিছু বলা যেত কিন্তু ইচ্ছা আর হয়নি। মৈত্রেয়ী এক্কেবারে পারফেক্ট গৃহিনী  ছিল কিন্তু পারফেক্ট দোসর নয়। বা ঠিক উল্টোটা। আমি তার পারফেক্ট ম্যাচ ছিলাম না। ঠিক দু’বছর বাদে বাবান। তারপর আরো বছর খানেক হবে। কোন একটা এসে কম্পিটিশনে প্রথম হল আমার লেখা প্রবন্ধ। বিদেশী এক ইনস্টিটিউট প্রাইজ মানি অথবা ফুল ফ্যমেলী চারদিন তিন রাত মলদ্বীপ ফ্রি বেড়ানোর অফার দেয়। মৈত্রেয়ী টাকাটা একসেপ্ট করতে জোর করলো। প্রায় তিরিশ হাজার টাকা। ভবিষ্যতের জন্য ফিক্সট হয়ে গেল। সে পারফেকশনিস্ট, সে প্রাকটিক্যাল। কিন্তু আমি যে কী? আমি নিজেই ভুলে গেলাম। ইদানিং  মৌ যখন ছবি দেয়, গল্প করে,ওদের খুনসুটি ওদের লুকিয়ে বেড়ানোর ওদের সিনেমা দেখার গল্প করে আমার কোথায় যেন একটা চিনচিন করে। আজকালকার ছেলেমেয়েগুলো কত স্বচ্ছ। কত মনখোলা। ওরা জীবনটা উপভোগ করতে জানে। কী হল এতো হিসেব করে। বুড়ো বয়সের জন্য অকারণ সঞ্চয় করে। ভোগ তো করতে পারলে না?একটা ম্যাসিভ স্ট্রোক ব্যাস্। চন্দননগরের বাসায় তবু অনেক চিহ্ন রয়ে গেছে। এই ফ্ল্যাটে তো কিচ্ছু রাখিনি আমি। তার সংসারে তাকে সাজিয়ে রেখে আসি। কিন্তু আমার তো সংসার নয়। একটুকরো বাসা। এখন প্রচুর বেড়াই। ছবি তুলি। কিন্তু ইচ্ছা পূরণ হয় না। শখ গুলো আরো কাঁটার মত বেঁধে। যে বয়সে যেটা।

        এই তো গত শনিবার রাতে ইনবক্সে মৌ কী উচ্ছল। অভিজিতের সঙ্গে খুব একপ্রস্থ ঝগড়া করেছে সে। হনিমুনে কোথায় যাবে তা নিয়ে বচসা। মৌমিতা পাহাড়  ভালবাসে তাই অভিজিতের পছন্দ কাশ্মীর আর অভিজিৎ ভালো সাঁতার কাটে তাই মৌয়ের পছন্দ আন্দামান। এই নিয়ে দুজনের ঝগড়া। মান-অভিমান। আড়ি-ভাব কত কী!কত জীবন্ত ওরা!ওদের সম্পর্ক। আর মৈত্রেয়ী! কত কষ্টে জোগাড় করেছিলাম ওর স্কুলের ফোন নাম্বার। শুধু একবার দেখা করবো। একবার জানতে চাইবো কোন বিশেষ পছন্দের জায়গা আছে কী না?জানি আমার ওপর ছেড়ে দেবে। বলবে —‘আপনার যা পছন্দ।’আর আমি অমনি কাজিরাঙায় কোন ফরেস্ট বাংলো বুক করবো। ব্রহ্মপুত্রের ওপর সূর্যাস্ত আর রাতে জঙ্গলের শব্দে দুরু দুরু বুকের নরম তুলতুলে একটা মিষ্টি মেয়ে। কিন্তু—    আবার এক ঘোর বাস্তবের খোঁচা। মৈত্রেয়ী ফোন ধরেই বলেছিল ‘বলুন ’। ‘একবার দেখা করলে—’
‘হেডমিস্ট্রেসের ঘরের নাম্বার,যে নাম্বারে আপনি ফোন করেছেন। বড়দি এখন নেই। আপনি নিঃসংকোচে বলতে পারেন।' অত্যন্ত সংকুচিত  ভাবে বলেছিলাম ‘বিয়ের পর বিশেষ কোন জায়গায় হনিুমুনে যাবার ইচ্ছা—’

‘অষ্টমঙ্গলার পর হাতে আর তিনদিন ছুটি থাকবে। সামনেই স্কুলে অ্যানুয়াল পরীক্ষা তাই কাছাকাছি কোথাও  গেলেই হয়। তবে দীঘা নয়। ’অগত্যা তিনদিন পুরী। মৈত্রেয়ী যে আনরোমান্টিক ছিল তা নয়। কত রাত জাগতাম আমরা! মৈত্রেয়ী গাইতো। রবীন্দ্রসংগীত। সেই গান শুনে শুনেই তো রবীন্দ্রগীতি চেনা আমার। কী সুন্দর সেলাই করে দিত রুমাল। টিফিন করে দিত পাল্টে পাল্টে। বসে থাকতো না এক মুহূর্ত। ভবিষ্যতের নাতি নাতনীর জন্য সুন্দর সুন্দর কাঁথা বানিয়ে রাখতো। সোয়েটার। আচ্ছা ও কি জানতো ও থাকবে না?ভবিষ্যতের বৌমার জন্য আশির্বাদের গয়না। প্রথম বিবাহ বার্ষিকী তে দেবে বলে বকুল ফুল ডিজাইনের মালা। কত দামী!

        প্রথম প্রথম মনে হত হয়তো পছন্দের কেউ ছিল। আমাকেই পছন্দ নয়। কিন্তু তন্ন তন্ন করে চেষ্টা করেও তেমন কিছু পাইনি। বরং একদিন শুনে আবার কলকল খলখল করে হেসেছিল। কী এক অপমান যেন! দুর্ এসব মনে করে এখন আর কী হবে?

       কিন্তু আজ আমি খুব এক্সাইটেড। আজ মৌকে দেখবো চাক্ষুষ। তার বাড়ি খুব দুরে নয়। হুগলি স্টেশনের কাছে। মৌ আমাকে কোন সম্বন্ধের নাম ধরে ডাকে না। আমার ছবি দেখে সে বিশ্বাসই করতে চায়না আমি তেষট্টি প্লাস।যদিও আমার তাকে বেশ কন্যাসমাই মনে হয়। মাঝে মাঝে অদ্ভুত সব আবদার করে। বেছে বেছে কিশোর কুমারের গান পাঠায়। ভাল বই রেফার করে পড়তে। তাই যখনই  জেনেছি সে হুগলিতে থাকে আমিই বললাম 'দেখা করি একবার পরদিন থেকে ঠিক জেঠু ডাকবে।' সঙ্গে সঙ্গে একগাদা লাভ ইমোজি পাঠিয়ে দিল মেয়ে। বার বার আমি মৌকে দেখি আর ভাবি মৈত্রেয়ীও তো এমন হতে পারতো?যাক গে স্ট্র্যান্ডের একেবারে উত্তর দিকের বেঞ্চে বসতে বলেছি আগে পৌঁছলে। আমি তো নাকি এখনও ইয়াং তাই একটু ফিটফাট। ব্লু জিনস সাদা টি শার্ট,ক্লিন শেভ,মাস্ক স্প্রে,ডার্ক ব্লু  স্নিকার।

      কেউ নেই প্রথম দু'তিনটে বেঞ্চে। আসেনি বোধহয়। হাতে একটা  শাড়ি। মৈত্রেয়ী কোনদিন শাড়ি কিনতে দিত না। আমি নাকি শুধু শুধু পয়সা নষ্ট করে দামী শাড়ি কিনি। তার ওই টাকায় পাঁচটা তাঁত কেনা হয়ে যাবে। স্কুলে পড়তে সুবিধা। আজ আশ মিটিয়ে একটা বালুচরী কিনেছি।একটু কালচে ঘেঁষা টুকটুকে লাল সোনালি কাজ। মৌ, মৈত্রেয়ীর মত ফরসা নয় কিন্তু বেশ উজ্জল মেয়েটা। আর সামনেই তো বিয়ে। ভালো মানাবে। কিন্তু—এখনো আসছে না কেন?একজন বয়স্ক সাদাচুলের মহিলা বসে আছেন।বেশ বড় খোপা। হয়তো রোজই আসেন। সূর্যাস্ত দেখতে। একদম সাধারণ সাদা খোলের তাঁত পরা। তার মানে লোকাল।চোখ দু'টো যেন চেনা! নাঃ, চোখে মোটা লেন্সের চশমা। একবার ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলেন যেন। আমার অস্থিরতা বাড়ছে। ফোন করছি। রিং তো হচ্ছে। ধরছে না কেন?সাইলেন্ট মোডে দেওয়া?কিছু হল নাকি?এতো উৎসাহ দেখালো। আজ সকালেও তো কথা হল!হঠাৎ কোন বিপদ।

             আকাশ জুড়ে অন্ধকার নেমে আসছে। ধীর পায়ে নেমে আসছে রাত্রি। পশ্চিমের আকাশ রঙ হারাচ্ছে। পাখিরা সেরে নিচ্ছে দিনশেষের কথা। ওই তো  সেই ফুচকাওয়ালা। যার কাছ থেকে কম্পিটিশন দিয়ে ফুচকা  খেয়েছিল দিন কয়েক আগেই মৌ আর অভিজিৎ। মৌ চল্লিশটা আর অভি বিয়াল্লিশ। হারানোর জন্য দু’টো বেশি। সারারাত তারপর বমি আর পায়খানা মেয়েটার। খুব কষ্ট পেয়েছিল।হেরে তবু কী আনন্দ!আজও ঘাড় ভেঙে খাবে বলেছিল!

          ভদ্রমহিলা কখন যেন চলে গেছেন। নাঃ আর আসবে না মেয়ে। সাড়ে সাতটা বাজলো। একবার জানাতে পারতো। ভাড়া গাড়িটা ওয়েট করছে। সত্যিই কী ভার্চুয়াল থেকে রিয়লিটিতে কেউ আসে? আসে না বোধ হয়। নইলে মৌ আসতো। আসতোই। কিন্তু—