গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

রবিবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০২০

নীহার চক্রবর্তী

স্বখাত-সলিলে


কাউন্সিলার অরুণ সাহা কি আর বলেছিল । তেমন কিছুই না ।
ভোটের মাস দুয়েক আগে সে তার প্রতিবেশী রমেন হালদারকে বলে,'সত্যিই পাড়ার ড্রেনগুলোর অবস্থা খুব খারাপ । এবার দেখছি ।'
সঙ্গে-সঙ্গে রমেন হালদার মুখে চাপা-হাসি নিয়ে তাকে বলে বসে,'কতবছর পর যে একটা সত্যি কথা বললেন । তা কতবছর হবে,দাদা ? আমি ঠিক মনে করতে পারছি না ।'
শুনে যারপরনাই অবাক কাউন্সিলার ।
সে খুব বিরক্ত হয়ে তাকে বলে,'এ আবার কেমন কথা । আমি কি শুধু মিথ্যা কথাই বলি ? বুঝলাম না ।'
তখন রমেন হালদার অমায়িক-হেসে উত্তর দেয়,'আপনি মিথ্যা কথা বলেন না সে আমি বেশ জানি । এই তো কদিন পর থেকেই পাড়ায় ঘরে-ঘরে বলতে শুরু করবেন কবে ভোট আর কাকে দিতে হবে । এটা সত্যি না বুঝি ? আসলে তখন আমার কি এক মনে হচ্ছিলো । তাই সরি ।'
রমেন হালদারের কথা শেষ হতেই কাউন্সিলার রেগে-মেগে হনহন করে হাঁটতে হাঁটতে পাড়া থেকে বেরিয়ে গেলো ।
পিছনে রমেন হালদার হাসছিল বেশ । তবে সব দেখে-শুনে । কাউন্সিলারের কৃপা পেতে অনেকেই তার ইতিমধ্যে শত্রু হয়ে গেছে ।
তা সেই ভোট চলে এলো ।
কাউন্সিলার অরুণ সাহা সেদিনের সেই রাগে রমেন হালদারকে কিছু বলল না । তার অনুপস্থিতিতে বাড়ি যায় । ভোটের জন্য তার স্ত্রীকে খুব কাকুতি-মিনতি করে সে । সে তেমন গুরুত্ব না দিলে তার দুই ভোটার ছেলেমেয়েকে ধরে । তারা আবার 'কাকু' বলে অনেক হেসে তার বুকে সাহস যোগায় ।
পরে শুনে রমেন হালদার হাসতে হাসতে প্রায় লুটিয়ে পড়ে মাটিতে । চেপে ধরে তার বৌ ।
সে খুব কষ্টে হাসি চেপে রাখে তাকে বলে,'দেয়ালেরও কান আছে জানো কি ? অমন করতে নেই গো । আর তোমার বুকের অবস্থাও ভালো নেই ।'
ভোটে কাউন্সিলার তার প্রতিপক্ষর থেকে পাঁচ ভোট কম পেয়ে হেরে গেলো । মাথায় যেন বাজ পড়ে গেলো তার । মনে-মনে খুঁজতে থাকলো সেই পাঁচজনকে । অনেককেই বলল । কেউ তেমন কিছু বলতে পারলো না । কমবেশি অনেকেই হতাশ তখন ।
শেষমেশ একদিন অরুণ সাহাকে অবাক করে দিয়ে রমেন হালদার তার কাছে এগিয়ে গিয়ে বলল,'আমি খুঁজে দেখছি সেই পাঁচজনকে । ইয়ার্কি পায়া হ্যায় ? এমন কাউন্সিলার আর পাবে ?'
সঙ্গে-সঙ্গে টনক নড়ে গেলো বিদায়ী কাউন্সিলারের ।
সে প্রায় চেঁচিয়ে বলে উঠলো,'চুপ...'
অট্টহাসি হাসি হেসে রমেন হালদার বলে উঠলো,'এখনো গলির মোড়ে পচার চপের দোকান বসেনি,দাদা । বিকালে বসলে জানাবো ।'
তারপরেই সে পগার-পার ।
বাড়ি গিয়ে সব বলে রমেন হালদার এমন হাসতে থাকলো তার প্রভাবে পরিবার পর্যন্ত হেসে গড়াগড়ি গেলো ।
তেমন কিছু না বুঝে বাড়ির কাজের মাসীটাও বেশ জোরে-জোরে হাসতে থাকলো । হাসির ব্যাপারে সে আবার চারজনের থেকে কয়েক কাঠি ওপরে ।
কিন্তু আর একজন ভোটার কে ?
অরুণ সাহার বৌ না তো ? সে তো একবছর পর বাড়ি ফিরেছিল ভোট দিতে । আবার অবশ্য ফিরে গেছে ।