গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

শুক্রবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৮

নীহার চক্রবর্তী

গহন মায়া 
 
ওপার বাংলার ফারুক এপার বাংলায় বেড়াতে এসেছে ওর এক ফেসবুকের বন্ধু মন্মথদের বাড়িতে । শুরুতে ওকে দেখে মন্মথর মা,বাবা আর দিদি খুব চমকে উঠলো । পরের ফারুকের ব্যবহারে তারা সবাই মুগ্ধ । মন্মথর তো আনন্দের শেষ নেই ।
ফারুক মন্মথদের বাড়িতে ছিল চারদিন । তার মধ্যে একদিন ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ ছিল । ফারুক নিজে খেলে । ঢাকার মাঠে গিয়ে দেশের জয়ের জন্য চিৎকার করে অন্যের গলা কান ফাটায় ।
এবার সমস্যা তৈরি হল । বাংলাদেশ ভালো খেলতে শুরু করলে ফারুন বারবার চেঁচাতে শুরু করলো । বেমালুম ভুলেই গেলো ও এখন ওর ভারতের মাটিতে । বন্ধু মন্মথ আর ওর পরিবারের সবাই ভারতের নাগরিক ।
মন্মথ একবার খুব বিরক্তির সঙ্গে বলল ফারুককে,''তোমার বোঝা উচিৎ এ দেশ বাংলাদেশ নয় । ভারত । এ দেশ তোমাদের স্বাধীনতা পেতে সাহায্য করেছে একসময় ।''
মন্মথর কথা শুনে ফারুক হেসে ফেললো ।
ও হেসে-হেসে বলল,''সব মানছি । কিন্তু আমার মন-প্রাণ হুড়ে আমার প্রিয় দেশ । আমি এখানে দেশ-বিদেশ বুঝি না ।''
সেইথেকে সে রাতে ফারুকের সঙ্গে মন্মথর এক ব্যবধান তৈরি হয়ে গেলো । ভারত জিতেছে সে ম্যাচে । ফারুক ভারতীও দলের প্রশংসা করলো বেশ । কিন্তু মন্মথ তা কানেও নিলো না । বিরক্তি আর বিরক্তি তখন ওর । মন্মথর বাবাও খুশী নয় ফারুকের ব্যবহারে ।
সে রাতেই ফারুক সিদ্ধান্ত নিতো দেশে ফেরার । মনে মনে বলল,আর একদিন থাকা যেতো । কিন্তু আর এক মুহূর্ত থাকলে আমার দেশের অপমান । আস্র নয় । সকাল হলেই দেশের দিকে পা বাড়াচ্ছি ।
তাই করলো ফারুক । ভোরে ঘুম থেকে উঠে মন্মথকে জানিয়ে দিলো ওর সিদ্ধান্ত । মন্মথর তাতে কোন হেলদোল নেই । ওর বাবাও শুনল ।
সে বিরস=বদনে বলল,''ঠিক আছে ।''
কিন্তু মন্মথর মা শুনে চমকে উঠলো ।
 
সে ফারুকের হাত ধরে সস্নেহে বলল,''আর একদিন থেকে গেলে হয় না,বাবা ?''
ফারুক তখন ছলছল চোখে প্রায় অস্ফুট-গলায় তাকে বলল,''আর হয় না,মা । আমি আমার দেশের সম্মান বাঁচাতে মরীয়া । তার সাথে আপনার সম্মানও জড়িত । আপনার দেশ ছিল তো সেই পাবনা । তবে ? আসি,মা । সবাই মিলে ভালো থাকবেন ।''
সেই প্রথম । সেই শেষ ফারুক আসে এপার বাংলায় । তারপর আর ভাবতেই চায়নি । অন্য দেশে যাওয়ার সুযোগ ছিল ওর । তাও হেলায় দূরে সরিয়ে দিয়েছে । নিজের দেশের ধূলি-কণা দেহমনে মাখতে ও কি যে আনন্দ পায় । সে আর ভাষায় কহতব্য নয় ।