অযাচিতা
শ্রাবণের বর্ষণে মাঝে মাঝে দু-এক চুমুক জীবনানন্দ, যা লাগছে না! রবীঠাকুরেও কম মজা হত না। কেন যে শেষের কবিতা আগে থেকেই পড়া আছে, ধ্যাত। লোকাল বাস বলে কথা, সেই সাথে কোন সে ভূতে ভর করেছে মোটে তিন বার নষ্ট হয়েছে দু ঘন্টায়। মানুষের পায়ে পায়ে এক হাটু কাদা চলে এসেছে বাসের মধ্যে। একজনের ওপর অন্যজন দাড়িয়ে বাসের পরিবেশ ড্রাইভার-হেল্পারের মন মত করে তুলেছে। পাশের আসন হতে সিয়ামকে উদ্দেশ্য করে,
-এক্সকিউজ মি।
-আমাকে কিছু বলবেন? বাংলায় বলুন।
-কোথায় যাবেন?
-রাজেন্দ্রপুর।
-আর কতক্ষণ লাগতে পারে?
-ধারণা নেই, আন্দাজ ও করতে পারছি না।
এসব ব্যাপারে বিরক্তির সীমা নেই সিয়ামের। যত সব ন্যাকা ন্যাকা প্রশ্ন। ন্যাকামির সঙ্গা থাকুক আর নাই থাকুক প্রচুর উদাহরণ আছে ৮ থেকে ২৮ বছরের মেয়েদের মধ্যে।
বাসে আবার সমস্যা দেখা দিয়েছে। মানুষ-জনের মুখও বটে, যার যা আসছে বকছে ড্রাইভারকে; ইদানিং সবাই সংসদ অধিবেশন দেখে কিনা। ড্রাইভার বেটাও ভাল মত হজমি খেয়েই গাড়িতে ওঠেছে।
-আপনি বা.কৃ.বি. তে পড়েন?
-পড়তাম, কি করে বুঝলেন?
-আপনাকে দেখেছি বলে মনে হয়। আমিও রাজেন্দ্রপুর যাচ্ছি, আমার বাসা ওখানেই। ভাল কথা, আমি অযাচিতা আর আপনি?
-আপনি ভাল কথা একটু বেশি বলেন, আমি সিয়াম।
-আপনি বোধ হয় জব করেন, এসব বাসে কেন ওঠেন?
-ভলবো, স্ক্যানিয়া বা কাদা মাখা, যখন যেখানে ইচ্ছে।
-এসব কি?
-বাসের নাম।
-তার মানে আপনি জেনে শুনে বিষ পান করছেন।
-আমি রবীঠাকুর না, বিষকে এখন পর্যন্ত অমৃত ভাবছি।
সিয়ামের হেডফোন কানে লাগানো দেখেই বোঝা গেল ও আসলে কথা বলতে আগ্রহি না। অযাচিতা কি সব ভাবতে ভাবতে রাজেন্দ্রপুর চলে আসল। ভাবনায় মূলতবি দিয়ে নেমে পড়ল বাস থেকে। সিয়াম এদিক ওদিক না তাকিয়ে একটা রিক্সা নিয়ে বাসার দিকে রওনা হল।
অনেক দিন পর বাসায় আসলে যা হয়, কোথায় একটু বিশ্রাম নেবে তা না। সবাই ওকে নিয়ে মেতেছে, যেন হিমালয় চূড়া জয় করে এসেছে। “তোমার এস এম এস” বলে মুঠোফোনটা এগিয়ে দিল সিয়ামের ছোট ভাই। অপরিচিত নাম্বার আর লেখা,
দেখনি কি তুমি সেদিনের সেই কুয়াশা ঢাকা রাত?
তুষারে ঢেকে দৃঢ় হয়েছিল তোমার বালির বাধ।
যেই পাঠাক না কেন এস এম এস, হোক ভুল নাম্বারে, লাইন দুটো কিন্তু ভাল হয়েছে, এমনটিই ভাবল সিয়াম।
সেদিন তারাতারি ঘুমালো। পর দিন এলাকার সব বন্ধুদের সাথে দিন ভর আড্ডা। ছুটিতো আর সব সময় পাওয়া যায় না। রাতে বাসায় আসতেই বেজে ওঠে মুঠোফোন।
-কে বলছেন?
-আপনি তো সিয়াম বলছেন, তাই না?
-বলছি, আপনি কে?
-আমি অযাচিতা। ঐ যে বাসে কথা হয়েছিল।
-আপনাকে আমি ফোন নাম্বার দেই নি তো!
-আমি সংগ্রহ করেছি। আপনার মনে আছে, এক দিন কে.এফ.সি.-তে একটা মেয়ের জুতা ছিড়ে গিয়েছিল আপনার সাথে ধাক্কা লেগে?
-হ্যাঁ,হ্যাঁ; মনে পড়েছে।
-তখন আমি সবে ভর্তি হই ভার্সিটিতে। তারপর আপনি আমাকে না দেখলেও আপনাকে অনেক দেখেছি ক্যাম্পাসে। তারপর আপনি পাশ করে চলে গেলেন।
-ও, আচ্ছা। আপনার সাথে কথা বলে ভাল লাগল। আমাকে এখন রাখতে হবে, আমি একটু বেশিই ক্লান্ত।
বলে লাইনটা কেটে দিল সিয়াম। তার পর আরো এক দিন কল দিল অযাচিতা, ব্যস্ততায় ধরা হল না সিয়ামের। ব্যস্ত মানুষের ভীরে আবার একদিন দেখাও হয়েছিল ওদের, হয়েছিল সামান্য বাক বিনিময়। তারপর আবারো একদিন ফোনালাপ। তারপর অনেক দিন হয়ে গেছে আর সিয়ামও চলছে নিজের গতিতে।
সমস্যা থেকে সব সময় দশ হাত দূরে থাকতে চায় সিয়াম আর সমস্যা কিনা ওকে ঘিরে ধরে। সেদিন অফিসে আসতে এমনিতেই দেরি করে ফেলেছে, তার ওপর এক গাদা কাজের চাপ। সবাই মিলে শত শত ভুল করে বসে থাকবে আর সামলানোর দায়িত্ব যেন সিয়ামের। অযাচিতা ধীর পায়ে অফিসে ঢুকে সোজা সিয়ামের ডেস্কে চলে গেল। ওর দিকে তাকিয়ে সিয়াম বলল,
-আপনি এখানেও চলে এসেছেন? এটা অফিস, ন্যাকামির জায়গা নয়। শুনুন, আপনাকে ভাল করে বলে দেই, আপনাকে আমার অসহ্য লাগে। দয়া করে আমার সামনে আসবেন না বা আমার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করবেন না।
অযাচিতা খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বলল,
-আমি একটা অফিসিয়াল কাজে এসেছিলাম আর জানতাম না আপনি এখানে জব করেন।
সেদিনের পর অযাচিতাকে আর কোথাও দেখা যায় নি।
শ্রাবণের বর্ষণে মাঝে মাঝে দু-এক চুমুক জীবনানন্দ, যা লাগছে না! রবীঠাকুরেও কম মজা হত না। কেন যে শেষের কবিতা আগে থেকেই পড়া আছে, ধ্যাত। লোকাল বাস বলে কথা, সেই সাথে কোন সে ভূতে ভর করেছে মোটে তিন বার নষ্ট হয়েছে দু ঘন্টায়। মানুষের পায়ে পায়ে এক হাটু কাদা চলে এসেছে বাসের মধ্যে। একজনের ওপর অন্যজন দাড়িয়ে বাসের পরিবেশ ড্রাইভার-হেল্পারের মন মত করে তুলেছে। পাশের আসন হতে সিয়ামকে উদ্দেশ্য করে,
-এক্সকিউজ মি।
-আমাকে কিছু বলবেন? বাংলায় বলুন।
-কোথায় যাবেন?
-রাজেন্দ্রপুর।
-আর কতক্ষণ লাগতে পারে?
-ধারণা নেই, আন্দাজ ও করতে পারছি না।
এসব ব্যাপারে বিরক্তির সীমা নেই সিয়ামের। যত সব ন্যাকা ন্যাকা প্রশ্ন। ন্যাকামির সঙ্গা থাকুক আর নাই থাকুক প্রচুর উদাহরণ আছে ৮ থেকে ২৮ বছরের মেয়েদের মধ্যে।
বাসে আবার সমস্যা দেখা দিয়েছে। মানুষ-জনের মুখও বটে, যার যা আসছে বকছে ড্রাইভারকে; ইদানিং সবাই সংসদ অধিবেশন দেখে কিনা। ড্রাইভার বেটাও ভাল মত হজমি খেয়েই গাড়িতে ওঠেছে।
-আপনি বা.কৃ.বি. তে পড়েন?
-পড়তাম, কি করে বুঝলেন?
-আপনাকে দেখেছি বলে মনে হয়। আমিও রাজেন্দ্রপুর যাচ্ছি, আমার বাসা ওখানেই। ভাল কথা, আমি অযাচিতা আর আপনি?
-আপনি ভাল কথা একটু বেশি বলেন, আমি সিয়াম।
-আপনি বোধ হয় জব করেন, এসব বাসে কেন ওঠেন?
-ভলবো, স্ক্যানিয়া বা কাদা মাখা, যখন যেখানে ইচ্ছে।
-এসব কি?
-বাসের নাম।
-তার মানে আপনি জেনে শুনে বিষ পান করছেন।
-আমি রবীঠাকুর না, বিষকে এখন পর্যন্ত অমৃত ভাবছি।
সিয়ামের হেডফোন কানে লাগানো দেখেই বোঝা গেল ও আসলে কথা বলতে আগ্রহি না। অযাচিতা কি সব ভাবতে ভাবতে রাজেন্দ্রপুর চলে আসল। ভাবনায় মূলতবি দিয়ে নেমে পড়ল বাস থেকে। সিয়াম এদিক ওদিক না তাকিয়ে একটা রিক্সা নিয়ে বাসার দিকে রওনা হল।
অনেক দিন পর বাসায় আসলে যা হয়, কোথায় একটু বিশ্রাম নেবে তা না। সবাই ওকে নিয়ে মেতেছে, যেন হিমালয় চূড়া জয় করে এসেছে। “তোমার এস এম এস” বলে মুঠোফোনটা এগিয়ে দিল সিয়ামের ছোট ভাই। অপরিচিত নাম্বার আর লেখা,
দেখনি কি তুমি সেদিনের সেই কুয়াশা ঢাকা রাত?
তুষারে ঢেকে দৃঢ় হয়েছিল তোমার বালির বাধ।
যেই পাঠাক না কেন এস এম এস, হোক ভুল নাম্বারে, লাইন দুটো কিন্তু ভাল হয়েছে, এমনটিই ভাবল সিয়াম।
সেদিন তারাতারি ঘুমালো। পর দিন এলাকার সব বন্ধুদের সাথে দিন ভর আড্ডা। ছুটিতো আর সব সময় পাওয়া যায় না। রাতে বাসায় আসতেই বেজে ওঠে মুঠোফোন।
-কে বলছেন?
-আপনি তো সিয়াম বলছেন, তাই না?
-বলছি, আপনি কে?
-আমি অযাচিতা। ঐ যে বাসে কথা হয়েছিল।
-আপনাকে আমি ফোন নাম্বার দেই নি তো!
-আমি সংগ্রহ করেছি। আপনার মনে আছে, এক দিন কে.এফ.সি.-তে একটা মেয়ের জুতা ছিড়ে গিয়েছিল আপনার সাথে ধাক্কা লেগে?
-হ্যাঁ,হ্যাঁ; মনে পড়েছে।
-তখন আমি সবে ভর্তি হই ভার্সিটিতে। তারপর আপনি আমাকে না দেখলেও আপনাকে অনেক দেখেছি ক্যাম্পাসে। তারপর আপনি পাশ করে চলে গেলেন।
-ও, আচ্ছা। আপনার সাথে কথা বলে ভাল লাগল। আমাকে এখন রাখতে হবে, আমি একটু বেশিই ক্লান্ত।
বলে লাইনটা কেটে দিল সিয়াম। তার পর আরো এক দিন কল দিল অযাচিতা, ব্যস্ততায় ধরা হল না সিয়ামের। ব্যস্ত মানুষের ভীরে আবার একদিন দেখাও হয়েছিল ওদের, হয়েছিল সামান্য বাক বিনিময়। তারপর আবারো একদিন ফোনালাপ। তারপর অনেক দিন হয়ে গেছে আর সিয়ামও চলছে নিজের গতিতে।
সমস্যা থেকে সব সময় দশ হাত দূরে থাকতে চায় সিয়াম আর সমস্যা কিনা ওকে ঘিরে ধরে। সেদিন অফিসে আসতে এমনিতেই দেরি করে ফেলেছে, তার ওপর এক গাদা কাজের চাপ। সবাই মিলে শত শত ভুল করে বসে থাকবে আর সামলানোর দায়িত্ব যেন সিয়ামের। অযাচিতা ধীর পায়ে অফিসে ঢুকে সোজা সিয়ামের ডেস্কে চলে গেল। ওর দিকে তাকিয়ে সিয়াম বলল,
-আপনি এখানেও চলে এসেছেন? এটা অফিস, ন্যাকামির জায়গা নয়। শুনুন, আপনাকে ভাল করে বলে দেই, আপনাকে আমার অসহ্য লাগে। দয়া করে আমার সামনে আসবেন না বা আমার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করবেন না।
অযাচিতা খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বলল,
-আমি একটা অফিসিয়াল কাজে এসেছিলাম আর জানতাম না আপনি এখানে জব করেন।
সেদিনের পর অযাচিতাকে আর কোথাও দেখা যায় নি।