গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

সোমবার, ৪ মার্চ, ২০১৩

অ র্দ্ধে ন্দু শে খ র গো স্বা মী


মহাপ্রস্থান

         বাবা অকালে চলে গেলেন। আকস্মিক পথ-দুর্ঘটনায়। সে বছরই কলেজে পা রেখেছে হিমেশ। মাকে নিয়ে অগাধ জলে পড়ল সে। কেউ সাঁতার জানে না। না মা, না সে। বাবার ছায়ায় নিশ্চিন্ত ডাঙ্গায় বাস করতে এমনই অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিল তারা যে কখনও এই পরিস্থিতি হতে পারে এমনটা কল্পনাতেও আসেনি। তার বাবা, পঁয়তাল্লিশ বছরের যুবক হ্যাঁ, বাবাকে যুবকই মনে হত তার। সটান চেহারা, সদাই ব্যস্ত, হো হো করে এমনই উচ্চকিত হাসত যে বিষণ্ণতা তাদের বাড়ির ছায়া মাড়াতেই সাহস করত না। বাড়ি ফেরার ঠিক ছিল না কোনও। সংবাদপত্রের চাকরি, খবরের খোঁজে শহর-গঞ্জ তোলপাড় করে বেড়াত। দু-চার দিন পর ফিরত যখন বাড়িতে, পাড়া-পড়শিরা জেনে যেত যে   সাংবাদিক প্রবর বাড়ি ফিরলেন। ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করতে না করতেই এক হাতে ছেলে আর এক হাতে বউকে নিয়ে প্রায় কাঁধে তুলে নেওয়ার জোগাড়। মা যখন ছাড়ো ছাড়ো বলতে বলতে দুমদাম কিল মারছে বাবার পিঠে, হিমেশ তখন হা হা করে বাবার হাসিতে হাসি মেলাচ্ছে। এরপরই বাবা তার গালে গাল ঠেকিয়ে বিছানায় ছুঁড়ে দেবে তাকে আর মাকে বুকের কাছে সরিয়ে এনে চকাস্‌ করে সশব্দে চুমো খাবে। ছাড়া পেয়ে লজ্জারুণ মা সটান রান্নাঘরে,  --এত বড় ছেলের সামনে...... ইত্যাদি ইত্যাদি কী সব বিড়বিড় করতে   করতে।   

         ছবিটা হারিয়েই গেল চিরতরে। বাবার অফিসের লোকেরা যখন বাবার দেহ নিয়ে এল বাড়িতে, মা অজ্ঞান আর সে দুঃস্বপ্নের ঘোরে। ঘোরের মধ্যেই দাহকাজ হয়ে গেল। বাড়ি ফিরেও ঘোর কাটল না। বাবার সহকর্মীরাই যা যা করতে হয় সব করলেন, যা যা বলতে হয় সব বললেন। কিছুই মাথায় ঢুকল না না তার, না মায়ের। তিনদিনের মাথায় মায়ের ঘন ঘন অজ্ঞান হওয়াটা বন্ধ হল বটে, কিন্তু তার মস্তিষ্কের ক্রিয়া চালু আছে বলে মনে হল না।

         নিতান্তই অল্প বয়সে তার কাগজের থেকে একটি অনাথ আশ্রমের উপর রিপোর্টিং করতে গিয়ে রিপোর্টের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রমান করতে সঙ্গে একটি অনাথ কিশোরীও নিয়ে এসেছিল বাবা। সেই কিশোরীই হিমেশের মা। আর বাবার ইতিহাস তার নিজেরও জানা  ছিল কিনা সন্দেহ। ফলে তাদের জ্ঞাতিগুষ্টির অ্যাকাউন্টে ঢ্যাঁড়া। বাবার অবশ্যি বন্ধুবান্ধব কম ছিল না। তাঁরা সামাজিক নিয়ম অনুযায়ী যেটুকু করার সেটুকুই করলেন। শ্রাদ্ধশান্তি হয়ে গেলে নিয়ম অনুযায়ী বেপাত্তাও হয়ে গেলেন। তবে বাবার সহকর্মীরা তার পরিবারের পাশে দাঁড়ালেন। বোঝা গেল, বাবাকে তারা ভালবাসতেন। খুবই নাকি জনপ্রিয় ছিল বাবা। ভালো ভালো খবর করত। সে সব খবরের কদরও হত। কিছুদিন আগেই একটি বিভাগের সম্পাদক করা হয়েছিল তাকে। চিফ এডিটর আশিস সান্যাল খুবই নাকি স্নেহ করতেন বাবাকে। বিশাল মেদবহুল চেহারা তাঁর, বাতের ব্যথায় খুবই কষ্ট পান। কদাচিৎ তিনি অফিসের বাইরে যান। তিনিও এসেছিলেন শ্রাদ্ধের দিন। হিমেশের কাঁধে হাত রেখে বলেছিলেন, -- চিন্তা করো না, গ্র্যাজুয়েশনটা কমপ্লিট কর। তারপর কাগজের অফিসেই নিয়ে নেব তোমাকে। কাজকর্ম শিখিয়ে নেব। তদ্দিন সংসার খরচের সংস্থান অফিসই করবে। তোমার মাকে এই কবছর মাসে পাঁচ হাজার করে পেনশন দেবে। তোমার বাবা বাড়ি করার সময় অফিস থেকে যা লোন নিয়েছিল সেটা শোধ হতে এখনও যেটুকু বাকি আছে সেটা অফিস মকুব করে দিচ্ছে। প্রভিডেন্ট ফান্ড আর গ্র্যাচুইটি বাবদ টাকাটা ভালো জায়গায় রাখার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। তার সুদ আর পেনশনের টাকায় মনে হয় সংসারটা চালিয়ে নিতে পারবে তোমার মা। সুরেশ তো কোনদিন ভবিষ্যতের কথা ভাবতো না! বলেই একটা দীর্ঘশ্বাস মোচন করেছিলেন তিনি।

         সেই প্রথম সংসার-চালানো শব্দটা বোধের মধ্যে ঢুকেছিল হিমেশের। প্রতিদিনের খাওয়া-পরা, পড়াশোনা চালানোর জন্যে টাকা আয় করতে হয়, বাবা বেঁচে থাকতে তার কথাবার্তায় সেটা টের পায়নি কখনও। সমস্যাটির মুখোমুখি হতে না হতেই তার এমন চমকপ্রদ সমাধানে জীবনের দিকে মুখ ফেরায় সে বাবার মৃত্যুর এগারো দিনের মাথায়। সবাই চলে গেলে বিছানায় বসে থাকা বিষাদের প্রস্তরমূর্তি মাকে জড়িয়ে তার মাথার উপর নিজের গাল ঠেকায়। তখন তার বুকে মাথা রেখে প্রবল অশ্রুস্রোতে জীবনের দিকে ফিরতে থাকে মা।

         অনাথ আশ্রমের পালিতা কন্যা, তার মা নিজের বর, ঘর এবং সন্তান পেয়ে এমনই পরিতৃপ্ত ছিল যে অন্য কোন পার্থিব বস্তুতে তার না ছিল আকর্ষণ, না ছিল আকাঙ্খা। তার জীবনের দুটি মাত্র আসক্তির পাত্রের মধ্যে সম্ভবত প্রবলতরটি এইভাবে অন্তর্হিত হওয়ায় নিরাসক্তির আবরণে নিজেকে জড়িয়ে সন্তানের মুখ চেয়ে নিজেকে সাংসারিক কর্তব্যের  দৈনন্দিনতায় আবদ্ধ করে ফেলল মা। ফলে, সংসারে টাকাপয়সার অভাব টের পাওয়া না গেলেও তাদের ছোট্ট দুকামরার বাড়িটিতে আনন্দের যে সুবাতাস বইত, তা চিরতরেই বন্ধ হয়ে গেল।  

         এইভাবে কেটে গেল তিনটে বছর। ইংরাজি সাহিত্যে সাম্মানিক সহ স্নাতক হল হিমেশ। আশিস সান্যাল প্রতিশ্রুতিমতো তাকে তাদের রিপোর্টিং বিভাগে শিক্ষানবিশ হিসেবে যুক্ত করে নিলেন। কাগজের কনিষ্ঠতম স্টাফ রিপোর্টারটি এক নতুন জগতে পদার্পণ করল। প্রথমে তাকে কপি লিখতে শেখানো হল। আশিস সান্যাল তাঁর হাজারো ব্যস্ততার মধ্যেও তার দিকে সতর্ক নজর রাখলেন। দেখা গেল, হিমেশের ভাষা ঝরঝরে, মেদহীন। প্রকাশভঙ্গীও আকর্ষণীয় যাকে বলে পারফেক্ট রিপোর্টিং ল্যাঙ্গুয়েজ। সে দ্রুত ভাবে বলে লিখতেও পারে তাড়াতাড়ি। সান্যাল প্রীত হলেন। ছমাসের শিক্ষানবিশি পর্ব শেষ   হতে একজন বরিষ্ঠ সাংবাদিকের সঙ্গে তাকে জুতে দেওয়া হল রিপোর্টিং-এর কাজে। হিমেশ বুঝল, খবর লেখাটা যত সহজ, জোগাড় করাটা ততটাই কঠিন। সিনিয়ারের কায়দা-কৌশলগুলি সে লক্ষ্য করত ঠিকই, কিন্তু সেগুলিতে রপ্ত হতে হলে প্রথমত দরকার প্রচুর সোর্স; দ্বিতীয়ত দরকার, অল্প সময়ে মানুষের মন বুঝে তদনুযায়ী নিজের কথাবার্তার ধরন পালটানো। হিমেশ লড়ে যেতে লাগল। আরও মাসতিনেক পরে তাকে ইন্ডিপেন্ডেন্ট রিপোর্টিং-এর দায়িত্ব দেওয়া হল। তার আগে সান্যাল একদিন তাকে নিজের চেম্বারে ডেকে পাঠালেন। ততদিনে মানুষটিকে ভালো করে চিনে নিয়েছে হিমেশ। তাঁর চেহারাটি বিশাল ও জড়দ্গব হলেও মস্তিষ্কটি প্রবল ক্ষুরধার। এবং তাঁর চোখের সংখ্যা কম করেও এক ডজন। তবে কোন এক অজ্ঞাত কারণে হিমেশের প্রতি তাঁর অহেতুক পক্ষপাত। কারণটি অনাবিষ্কৃত হলেও হিমেশ তার ষোল আনা সুযোগ নিতে পিছপা হয় না।

         তাঁর চেম্বারে ঢুকতেই সান্যাল বললেন, -- বসো।
তারপর নিজের চেয়ার ঘুরিয়ে তার মুখোমুখি হলেন। চোখ থেকে চশমা খুলে টেবিলে রাখলেন। তারপরে বললেন, -- এখন থেকে তুমি প্রকৃতপক্ষে সাংবাদিকের কর্মজীবনে ঢুকতে চলেছ। চ্যালেঞ্জিং জব। ইন্টারেস্টিং বাট টাফ। সফল সাংবাদিক হতে গেলে কয়েকটা ব্যাপারকে বেদ-বাইবেল মানতে হবে। সেগুলো বলি, মন দিয়ে শোন। এক, সাংবাদিকদের কোন ডিউটি-আওয়ার্‌স নেই। যেখানেই থাকো বা যাই করো না কেন, সর্বত্র চোখ-কান খোলা রাখবে। দুই, খবরের ঘ্রাণ আছে, সেই শক্তি অর্জন করতে হবে। তিন, রুটিন রিপোর্টের জন্য সরকারি-বেসরকারি সমস্ত কেন্দ্রে আমাদের কাগজের সোর্স আছে। তার লিস্ট আমি তোমাকে দিয়ে দেব। কিন্তু তার বাইরে সেন্‌সেশনাল খবরের জন্য তোমাকে নিজেকেই সোর্স জোগাড় করে নিতে হবে। এর জন্যে কোন ধরা-বাঁধা সূত্র নেই, য়্যু হ্যাভ টু অ্যাডপ্ট ইন্‌ডেজেনাস মেথড। চার, সোর্সের অনুমতি ব্যতিরেকে কোন কিছুর বিনিময়েই তার নাম প্রকাশ করবে না। করলেই তোমার সাংবাদিক জীবন শেষ। পাঁচ, ভালো খবরের জন্য অনৈতিক, এমনকি বেআইনি পদ্ধতি গ্রহন করাও মার্জনীয় অপরাধ। দায়িত্ব কাগজের। সোর্সকে ঘুষ দেওয়া আবশ্যিক কর্ম। কাগজ সেই ব্যয় বহন করবে। ছয়, সাংবাদিকের সততা একটু ভিন্ন বস্তু। খবরের স্বার্থে কপট বাক্য, কপট আচরণ সম্পূর্ণ নির্দোষ। খবর ধরে তা অতিরঞ্জিত করে পরিবেশনযোগ্য করবে, এতো অতি মামুলি কথা; কিন্তু ভিত্তিহীন কল্পনা থেকে খবর নির্মাণ আমাদের কোডে অমার্জনীয় অপরাধ। সর্বশেষ সূত্রটি বহুশ্রুত হলেও খবরের এর চেয়ে যথার্থ সংজ্ঞা এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। সেটি হল, কুকুর মানুষকে কামড়ালে
হিমেশ আশিস সান্যালের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বাক্যটির পাদপূরণ করল। তারপর বলল, -- বড্ড ক্লিশে হয়ে গেছে জেঠু।
সান্যাল মৃদু হেসে বললেন, -- এটাকে ফেলে দেওয়ার আগে যথার্থতর কিছু তৈরি কর।
হিমেশ বলল, -- মানুষ মরলে সেটা খবর নয়, মরা মানুষ বেঁচে উঠলে সেটা খবর।
সান্যাল বললেন, -- হল না। মানুষ কখনও হয়ত বা কুকুরকে কামড়াতেও পারে, কিন্তু মরা মানুষ বাঁচে না কখনও।  

                                                   দুই

         বছর দেড়েক কেটে গেছে। হিমেশ খারাপ করছে না। কিন্তু আলোড়ন সৃষ্টি করবে এমন কিছু খবর এখন পর্যন্ত করে উঠতে পারেনি। একটা তদন্তমূলক রিপোর্টিং- এর সুযোগ এসেছিল। সেটাও তার বুদ্ধির দোষে ফসকে যায়। শিয়ালদার ফ্লাই-ওভারের নীচে বসা এক হকারের সঙ্গে ভাব জমিয়ে টুকটাক খবর পেত। একদিন সে শিয়ালদার এক গোডাউনের কথা তাকে জানায়। সেখানে ব্যবহৃত ডিসপোজেব্‌ল সিরিঞ্জ পরিষ্কার করে বিভিন্ন কোম্পানীর জাল লোগো লাগিয়ে প্যাকেটিং হয়। হিমেশকে সঙ্গে নিয়ে সে একদিন আড়াল থেকে গোডাউনটা দেখিয়েও আনে। উৎসাহিত ও উত্তেজিত হিমেশ তার সঙ্গী ফটোগ্রাফারকে নিয়ে প্রথমে আমহার্স্ট স্ট্রীট থানায় গিয়ে ওসিকে জানায়। নিজেদের প্রেস কার্ড দেখিয়ে তাকে অনুরোধ করে তৎক্ষণাৎ গোডাউনটিকে তল্লাসি করতে। ওসি একজন সাব-ইন্‌সপেক্টর ও দুজন কনস্টেবলকে তাদের সাথে পাঠান। কিন্তু সেখানে গিয়ে আপত্তিকর কিছুই পাওয়া গেল না। পুলিশ তিনটির ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ হজম করে ফিরে এল দুজন।
আশিস সান্যাল বললেন, -- এই বুদ্ধি নিয়ে ইনভেস্টিগেটিং রিপোর্টিং করবে! থানায় গিয়েছিলে কী করতে?
হিমেশ বলল, -- হাতেনাতে ধরিয়ে দেব বলে। তাছাড়া আমাদের নিরাপত্তার কথাও ভেবেছিলুম।
সান্যাল বললেন, -- এ ধরনের খবর যদি সত্যিই করতে চাও তাহলে ছদ্ম পরিচয়ে গোপন ক্যামেরা নিয়ে যেতে হবে। থানাকে ঘুণাক্ষরে জানানো চলবে না। তুমি কি ভাবো থানার অজ্ঞাতে এসব কাজকর্ম চলে? তোমরা থানায় ঢুকে মুখ খোলার সঙ্গে সঙ্গে মোবাইলে খবর চলে গেছে যথাস্থানে। আর এদের ব্যবস্থা এমনই যে আধঘন্টা সময় পেলেই সব নিখুঁতভাবে সরিয়ে ফেলবে।  
মাথা নীচু করেছিল হিমেশ। আর মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিল স্বীকৃতি পাওয়ার মত কিছু একটা করে দেখাতেই হবে তাকে।   

         গতকাল একটি ছেলের সাথে আলাপ হল হিমেশের। অদ্রি বসু। একটি বহুজাতিক সংস্থায় নেটওয়ার্ক অ্যাডমিনিস্ট্রেটর। হিমেশের স্কুলের সহপাঠী গৌরব ওই সংস্থাতেই আছে। সফ্‌টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। সে কিছুদিন আগে অদ্রির কথা বলেছিল। অদ্রির বাবা
রাজ্য সরকারের একজন উচ্চপদস্থ অফিসার। কয়েকমাসের মধ্যেই অবসর নেবেন। তিনি নাকি এক অদ্ভুত মানুষ। অফিসে অফিসারের মতই থাকেন। কিন্তু বাড়িতে আর পাঁচটা সংসারী মানুষের থেকে একেবারেই আলাদা। আজীবন নিরামিষভোজী মানুষটি ইদানীং নাকি খাওয়াদাওয়া অত্যন্ত কমিয়ে দিয়েছেন। অফিসে আসার আগে দুটো রুটি, একটা কলা এবং এক গ্লাস দুধ খান। অফিসে তাঁকে টিফিন করতে দেখা যায় না। বাড়ি ফিরে আড়াইশো গ্রাম ছানা খান শুধু। সবচেয়ে মজার ব্যাপার, বাড়িতে একটিমাত্র অন্তর্বাস পরে মেঝেতে আসন পেতে তার উপর পদ্মাসনে বসে সারারাত কাটিয়ে দেন। সে সময় তাঁর চোখ থাকে নিমীলিত। ফলে জেগে থাকেন নাকি ঘুমিয়ে পড়েন বোঝা যায় না। একদিন এক আশ্চর্য দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেছে অদ্রি। তার মা স্বর্গতা, কাজেই বাবা একাই থাকেন তাঁর ঘরে। সেদিন মধ্যরাতের পরে অদ্রির ঘুম ভেঙ্গে যায়। পেটের মধ্যে প্রবল অস্বস্তি। টয়লেটে যেতে হয় তাকে। ফিরে এসে নিজের ঘরে ঢুকতে গিয়ে হঠাৎ-ই  কৌতূহল হয় তার। বাবা কি সত্যিই সারা রাত ওইভাবে থাকে? ভেজানো দরজা সামান্য ফাঁক করে উঁকি দেয় সে। স্বল্পালোকিত ঘরে মেঝেতে পদ্মাসনে বসে ও কে? বাবা? চোখ সরু করে সে। হ্যাঁ, বাবাই তো! কিন্তু এ কোন বাবা? এ তো তার সাত বছরের জন্মদিনে যে বাবার কোলে বসা তার ছবি দেখেছে এ তো সেই বাবা! ঘন কালো চুল, টানটান শরীরের চামড়া এ তো রীতিমতো যুবক! স্বপ্ন দেখছে ভেবে অদ্রি নিজের গালে চিমটি কাটতে কাটতে রক্তাক্ত করে ফেলে, কিন্তু তার স্বপ্ন ভাঙ্গে না। অবশেষে ভৌতিক দৃশ্য দেখছে ভেবে ভয় পেয়ে সে নিজের ঘরে গিয়ে বিছানায় শুয়ে বালিশে মুখ গোঁজে।

                                         [ পরের অংশ ... আগামী সংখ্যায় ]