গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

সোমবার, ৪ মার্চ, ২০১৩

দে বা শী ষ দে


পরিণতি

খনও প্রাণটা বের হয়নি।  হাতটা একটু উঠিয়ে নিজের দিকে দেখিয়ে বৃদ্ধ বললেন - মাকে নিয়ে চলুন আপনারা, যা শাস্তি দেবার দিন, কোনো খারাপ লাগবে না, এত চিন্তা করছেন কেন আপনাদের ডিউটি তো আপনাদের করতেই হবে, তাই না ? তাহলে দেরি কেন ? কাঁপা কাঁপা গলায় বাহাত্তর বছর বয়সের বৃদ্ধের কথায়  ডিউটি অফিসার ও তার তিন জন সহকারি পুলিস অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে, ভেবে পায় না কী করবে।

                         স্পন্দন গোস্বামী আর অরুণিমা গোস্বামীর বহূ বছর আগে আলাপ, আলাপ থেকে ভালোলাগা, আর ভালোলাগা ত্থেকে ভালোবাসা, ভালোবাসার পরিণতি গড়ায় বিবাহে। প্রায়  পঁয়তাল্লিশ বছর আগে ইলেক্টিকাল ইঞ্জিয়ার স্পন্দন গোস্বামীর সাথে অঙ্কন শিল্পী অরুণিমার খুব ঘটা করে বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের পর থেকে  তারা কেউ কাউকে এক রাত্রি ছেড়ে থাকেনি। অসম্ভব ভালোবাসা দুজনের মধ্যে। প্রায় দুবছর পর তাদের একটি কন্যা সন্তান হয় ।  নাম রাখে লালিমা। লালিমাকে নিয়ে স্পন্দন আর অরুণিমার সুখের সংসার । ক্রমে লালিমা বড় হতে থাকে। প্রতি ক্লাশে প্রথম হওয়া লালিমা এক সময় ভর্তি হয় বেঙ্গল ইঞ্জিনীয়ারিং কলেজে পাশ করার পর ভালো চাকরিও পেয়ে য়ায় লালিমা। দিন যায়। লালিমা বিয়েতে মত দেয় না। বাবা মাকে নিয়েই চিরকাল থাকতে চায় সে। সময় এগিয়ে চলেস্পন্দন গোস্বামী চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করে। মাঝে মাঝে অরুণিমার  অঙ্কন প্রদর্শনী হয়, ওরা তিন জনে দেখতে যায়। লালিমা অফিস থেকে ফিরলে রোজই ওদের আড্ডা চলে প্রায় দুই থেকে তিন ঘন্টা আসে বিভিন্ন প্রসঙ্গ, ঘটে যাওয়া ঘটনার অণুরণন। ভালোই কাটতে থাকে ওদের তিন জনের জীবন।

         হঠাৎ একদিন সুখের সংসারে চুপিসারে ঢুকে পড়ে কালো মেঘ। অফিস যাওয়ার পথে এক বাস দুর্ঘটনায়  মৃত্যু হয় লালিমার । স্পন্দন আর অরুণিমা একা হয়ে যায়। দুজন দুজনকে সান্তনা দেয় । আগের সেই সাজানো সংসার কেমন প্রাণহীন হয়ে পড়ে

        খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলতে থাকে গোস্বামী পরিবার। বার্ধক্যও ঠিক ততটাই তাড়াতাড়ি গ্রাস করতে থাকে ওদের। নতুন সঙ্গী হিসাবে  অসুখআসে ওদের দুজনের কাছে। লেগেই থাকে কিছু না কিছু। একজনের কিছু হলে অন্য জন সেবা করে। আস্তে আস্তে দুজনেই প্রায় বিছানা নেয়। অদ্ভুত এক ভীতি ওদের গ্রাস করে । ওরা দুজনেই ভাবতে থাকে একজন চলে গেলে অন্য জন থাকবে কি করে, কি নিয়ে বাঁচবে অপর জন। কেউ কাউকে ছেড়ে থাকতে চায় না। স্পন্দন গোস্বামী মনে মনে ভাবে যদি সে আগে মারা যায় তবে অরুণিমার কি হবে, কে তাকে দেখবে, একই চিন্তা সারাদিন তার মাথায় ঘুরতে থাকে।
         একদিন সকালে , চিন্তার ভারে ক্রমশ কুঁকড়ে যাওয়া স্পন্দন গোস্বামীর চোখ মুখ চিক চিক করে ওঠে। বৃদ্ধ ও বৃদ্ধা নিজেদের মধ্যে বেশ কিছুক্ষন কথা বলে নেয়। এর পর বৃদ্ধ স্পন্দন গোস্বামী রান্নাঘর থেকে দু-গ্লাস সরবৎ নিয়ে আসে। এক গ্লাস তুলে দেয় অরুণিমার  হাতে। কেঁদে ফেলে বাহাত্তরের বৃদ্ধ। অরুণিমার নিস্প্রান দেহটা বিছানায় এলিয়ে পড়ে। আস্তে আস্তে এগিয়ে যায় বৃদ্ধ । নাড়ী দেখে স্ত্রীর। মুখে চোখে শান্তির ছাপ ফুটে ওঠে তাঁর ।

        পড়েথাকা আরএকটা  গ্লাস তুলে নেয় নিজের জন্য । অর্ধেকের বেশি ঢেলে ফেলে মুখে। বাড়ির কাজের লোক দরজা ধাক্কাতে থাকে। সাড়া না পেয়ে পাশের ফ্লাটের লোকদের ডাকে সে। পুলিশ আসে......... বৃদ্ধ স্পন্দন গোস্বামীকে অ ম্বুলেন্সে  তোলে হসপিটালের উদ্দেশ্যে।  কিন্তু মাঝ পথেই স্পন্দন গোস্বামীর প্রাণ নিস্তেজ হয়ে যায়। পৌঁছে যায়  অরুণিমার কাছে।