গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

শুক্রবার, ৩ মে, ২০১৩

তন্ময় ভট্টাচার্য


প্রমাণপত্রের খোঁজে


বারান্দায় বসে ইউনিভার্সিটির খাতা দেখছিল হিরন্ময়। অন্যান্যবার চাপ কম থাকে,এবার যেন রাজ্যের প্রেশার একার ঘাড়ে। বেলের শব্দে তাই বিরক্তির মুখ করে দরজা খুলেই দেখে,গোপলা। কথা বলার সুযোগ না দিয়েই একছুটে উঠে গেলো ছাদে। কবিতা ভাঁজবে হয়তো। নাহ...ছেলেটার মধ্যে গুণ ছিলো অনেক...কেন যে সব অবহেলায় নষ্ট করে!

"চেহারাটা ভেঙে গেছে কেন রে?" ছাদ থেকে নামার সময় গোপলাকে পাকড়াও করলো হিরন্ময়। লুকিয়ে সিগারেট খাওয়া ঠোঁট চেটে গোপলার উত্তর..."ওই...কলেজের দৌড়ঝাঁপ...শরীর আর দেয় না।" হালকা হেসে আবার প্রশ্ন-
"বলেছিলাম যে,আহ্নিক করিস ঠিকমতো?"
-"না গো...মানে...ওই আর কি...হয়ে ওঠে না।"
-"কেন বাবা? খুব সময় নষ্ট হয় কি? ধৈর্য ধরে করে দ্যাখ না,আনন্দ পাবি।"
-"মানে না বুঝেই করবো? অর্থ যদি ক্যাচই না করতে পারি,রিলেট করবো কি করে?"
- "আরে তুই যখন কোনো ওষূধ খাস, তখন কি জানিস এই ওষূধের প্রোডাক্ট কি কি? ভরসা করেই তো খাস। ঠকিস কি?"

আমতা আমতা করতে লাগলো গোপলা সিঁড়ির রেলিং এ বসে। নিস্তিক মন কিছুতেই যেন সায় দিচ্ছে না এই কথায়। পৈতে ঝোলে ঘরের হুকে। বহু ভেবে ভেবে যে বিশ্বাস খাড়া করেছে ঈশ্বরবাদের বিরুদ্ধে,এত সহজে ভাসিয়ে দেয়া যায় নাকি?
আবার জানতেও ইচ্ছে করছে সব,কবিতার খাতিরে...জ্ঞানের খাতিরে...

ঢোঁক গিলে বললো- "আচ্ছা কাকান,রবীন্দ্রনাথের কবিতায় যেমন দর্শন আছে,তেমনি শাস্ত্রকার-দের শ্লোকেও তো দর্শন...সেটা কি উনাদের সাহিত্যকর্ম নয়? আমরা ঐশ্বরিক চিন্তা আনবো কেন?"
-"না,মোটেই শুধু সাহিত্যকর্ম নয়। গায়ত্রীজপের আগে বিশ্বামিত্র ঋষির নাম নেয়া হয় কেন? উনি দিব্যদৃষ্টি তে সব দেখেছিলেন..."
-"সে তো ভানুসিংহের পদাবলী'তেও আছে...লালনের গান,মঙ্গলকাব্য,বিদ্যাপতি...সবাই তো নিজের রচনায় নিজের নাম ঢুকিয়েছিলেন...নামটা অমর করার জন্যে নয় কি?"
-"একদমই নয়। দুর্গাপূজার আগে রামচন্দ্রের আরাধনা করে হয়...সামবেদের প্রতিটা ক্রিয়াকর্মের আগেই ঋষিদের স্মরণ করা হয়...যারা রচয়িতা...উনাদের কি স্বার্থ ছিলো? টাকা-পয়সা? নোবেল প্রাইজ পাবেন?"
-"জনসেবা"
-"ঠিক তাই। জানিস তো,ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয় বৈশ্য শূদ্রের মধ্যে কেবল..."
-"আচ্ছা এই শ্রেণীবিভাগ আসছে কেন? বাকিদের কি শাস্ত্রচর্চার অধিকার নেই?"
-"শ্রেণীবিভাজন নয়। প্রত্যেকটা ক্রিয়ার নির্দিষ্ট কারণ আছে। ব্রাহ্মণরা এই যে 'ওঁ" উচ্চারণ করেন, স্ত্রীলোক অথবা অন্যান্যদের মানা, কেন বল তো?"
-"ওই যে 'ওঁ' কারের সাথে নাভি থেকে সুষুম্নাকান্ড দিয়ে কি একটা ভাইব্রেশন..."
-"হ্যাঁ। সেই ভাইব্রেশন সকলে নিতে পারবে না বলেই তাদের 'ওঁ'কার জপ মানা। এই জন্যেই মহাপ্রভু বলেছিলেন, অক্ষরব্রহ্ম নাম নিলে সমান ফল পাওয়া যায়"
-"এই যে বললে,ব্রাহ্মণ ছাড়া অন্যদের ক্ষতি হবে, কি ক্ষতি?"
- "আরে বাবা সূক্ষ্মতাকে তুই দৈনন্দিন জীবনে বুঝতেই পারবি না। এই যে তুই জপ করিস না, লক্ক্য করে দেখবি, মন চঞ্চল হয়ে যায়। একাগ্রতা আসবেই না। ঋষিরা এমনি এমনি বলেছিলেন নাকি? তাদের কথার কোনো ভিত্তি নেই?"

আমসি মুখে ভাবতে লাগলো গোপলা,কি বলা যায়... যতটা জানার নিংড়ে নিতে হবে আজ...
-"আচ্ছা কাকান,হিন্দুশাস্ত্রমতে মানুষের সৃষ্টি কি করে?"
-"আদি পিতা ব্রহ্মা পৃথিবীতে তাঁর প্রজা পাঠিয়েছিলেন প্রাণসঞ্চারের জন্যে...জানিস তো, চৌষট্টি লক্ষ জন্মের পর মানব্জন্ম প্রাপ্তি হয়।"
-"তাহলে ডারউইন যে বলেছেন বিবর্তনবাদ,সেটা মিথ্যে?"
-"দ্যাখ,একটা ধর্মতত্ত্ব,একটা বিজ্ঞানতত্ত্ব। বিজ্ঞান কি? বিশেষ জ্ঞান...ধর্মচেতনা না থাকলে, দর্শন না থাকলে কোনো কিছুর গভীরে যেতে পারবি?"

মহা ফাঁপরের মধ্যে পড়লো গোপলা। কি করে যায়! মনটা নরম হয়ে আসছে যে!
-"আচ্ছা এখন চলি গো...পরে আসবো আবার।"
-"পালাবি? আয়। ভালো থাকিস।"

বাড়ি ফিরে পৈতেটা সাইডব্যাগের মতো গলায় ঝুলিয়ে বিড়বিড় করে গায়ত্রী জপ শুরু করলো গোপলা। পাঁচ...ছয়...সাত...ধুর শালা! কি হবে এই বোরিং প্রলাপ বকে? সূক্ষ্ম আনন্দের ঠ্যাকা নাই। যা আছে বেশ আছি।

শুতে যাওয়ার আগে গোপলা শুনতে পেলো হালকা কন্ঠস্বর...ঠিক যেন মধ্যরাতের আকাশবাণী...পাশের বাড়ি থেকে ভেসে আসছে হিরন্ময়ের রবীন্দ্রনাথ-
"যাহা যায় আর যাহা কিছু থাকে,
সব যদি দিই সঁপিয়া তোমাকে
তবে নাহি ভয় সবই যেগে রয়
তব মহামহিমায়..."

পাভেল আল ইমরান


হাত ফসকানো আলো 
পিস্তলটি হাতে নিয়ে নিপুণ চালকের মতো দোকানে হাঁটা লোকজনের দিকে তাক করলো সান্তস । স্কুলের বিজ্ঞান কক্ষে স্যারকে দেখেছেন অণুবীক্ষণ যন্ত্রে এক চোখ বন্ধ করে অন্য চোখের পূর্ণ শক্তি প্রয়োগ করে লক্ষবস্তু নজরের দখলে আনতে। সান্তস তেমনি চোখ ছোট করে নিশানা পোক্ত করলট্রিগারে চাপ দিতে আঙ্গুল প্রস্তুত করলো। চাপ দিলো নিশানা বরাবর- ডিরেক্ট দোকানীর বুক ! তারপর ফিরিয়ে নিয়ে নলটি মুখের কাছে এনে ফুঁক দিয়ে নিল। তৃপ্তির মুচকি হাসিতে ভাবল - এতদিনে আমি আসল জিনিসটা হাতে পেলাম। এটা দিয়ে তার অনেক কাজ। ভোরে স্কুলে যাবার বেলায় এলিভেটর থেকে নামলেই পচামুখা ক্যারাল্লিয়ান বুড্ডাটাকে দেখতে হয় । এলিভেটরে চারজন বয়স্ক লোক চড়তে পারে। একদিন চারজন বয়স্ক লোকের সাথে সান্তসসহ পাঁচজন উঠতেই ক্যারাল্লিয়ান বুড্ডা চ্যাঁচানো শুরু করল...

-
চার আদমি ব্যস, চার আদমি। এক আদমি নিকালো। ... সান্তস অসহায় মুখে বলল
- ম্যায় ছোটা আদমি হায়কয়ি মুস্কিল নেহি হোগা  কিন্তু বেরসিক বুড্ডা তবুও তাকে কান ধরে নামিয়ে দিলো ! বাম হাতে কানের লতিটা ধরে সান্তস ভাবল আজ রাতেই সে ওটাকে সরিয়ে দেবে। কাল সকালে আর নাক সিটকে দিন শুরু করতে হবে না। সময় সুযোগ বুঝে মুটকি সুদখোর বুড়িটার পিলে চমকে দিবে , যে কিনা সারাক্ষণ মাংসের গন্ধ ছড়িয়ে গেইটের কাছেই ঘুরতে থাকে। সবচয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও গোপন যে মিশনে তার এই পিস্তল, তার শিকার হচ্ছে তার আব্বু ও আম্মু। তার আব্বু ভূমিহীন রঞ্জন চট্টোপাধ্যায় কলকাতা হতে সেই ৯৫'তে এসে এখন কলকাতা’র '' পর্যন্ত এমিরেতি ক্যামিকেলে সাফাই করে নিয়েছে । ভাগ্য ফিরিয়ে নাসিরিয়া মানি এক্সেঞ্জে জব করছে আম্মু -জুলিয়েট- এসেছেন ফিলিপিন থেকে।
          দেশে কখনো ফিরবে এমন চিন্তা শারজাহতে বৃষ্টি হবার চেয়েও অবাস্তব। সেও একটি বিজি সুপার মার্কেটের ক্যাশিয়ার। দু' মুখী স্রোতে সারাদিন ঘোত্তা খেতে থাকে তারা। কাজের গভীর অরণ্যে ভুলেই থাকে যে, অরণ্য প্রারম্ভে একটি খোপে দরজা বন্ধ একটি প্রাণী রেখে এসেছে- যে কিনা তাদের প্রতীক্ষায়। আব্বু-আম্মু শূন্যতায় সান্তস এখন ক্লান্ত। মাঝে মাঝে ওর ভেতর বিকল্প চিন্তা খেলে। এই আব্বু-আম্মুকে বদলিয়ে আনার যদি কোনো ব্যবস্থা থাকত ! রোবটের এখন বহুমাত্রিক ব্যবহার। কাছের মানুষজনের অভাব বুঝতে দেবেনা রোবট। অর্ডারকৃত স্বামী-স্ত্রী মিলে। তেমনি প্যারেন্টসও। মনের মতো আব্বু-আম্মু কিনে নিয়ে আসবে সে। সারাক্ষন কাছে রাখবে। আহ্লাদ মিটাবে। এই দু'টোকে ঘরে ধরে রাখার বহু ব্যর্থ চেষ্টায় পরাজিত সান্তসের শেষ ভরসা এই পিস্তলন দিন শেষে রঞ্জন-জুলিয়েট তাদের শারজায় ভাড়া নেওয়া বাড়িতে ফিরবে। বেল চাপতেই নিতিদিন সান্তস দরজা খুলে দেয়। আজ দরোজা থাকবে খোলা। ক্লান্তি তা গোচর করে ঘরে নিয়ে যাবে। এসিটাকে বাড়াবে- সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে গন্ধ মাখা পোশাক ছাড়বে- জাঙ্গিয়াটা নাকের কাছে এনে পরক্ষনেই নাকছিটকে ধুরঃ বলে দূরে ছুড়ে ফেলবে। ঝুলন্ত কণ্ঠে রঞ্জন বলবে  - সান্তস। রিমোটটা কোথায় রেখেছিস বাবু? দিয়ে যাবি? আব্বু টিভি দেখবো... জুলিয়েট ফ্রেস হয়ে আয়নার পাল্লাতে নিজের রূপের সর্বশেষ আপডেট পরখ করবে । সকলে এতক্ষণ যাবত তার কোন অবস্থাটা দেখে হাঁ খুলে তাকিয়ে ছিল, সে অবস্থাটা কি দৃষ্টির জন্য আরামদায়ক ছিল ? এমন ভাবতে ভাবতে হাঁকডাক দেবে 
- সান্তস, সান্তস। হয়ার আ ইউ ? আ ইউ স্লিপিং সাড়া না পেয়ে এদিক ওদিক তাকাবে, খুজবে, খোঁজার গতি বাড়াবে। ব্যর্থ হয়ে ব্রেক ফেল হওয়া গাড়ির মতো দিক্বিদিক গলার আওয়াজ চালাবে চোখ বড় বড় করে। রঞ্জন প্রকাণ্ড স্বরে বলে উঠবে 
-দরজা খোলা ছিল... সরি, ডোর ওয়াজ ওপেনড !  রুমের অগোছালো জিনিসপত্রের দিকে চেয়ে জুলিয়েট  -হয়াই আনটাইডি রুম ভড়কে যাওয়া রঞ্জন- জুলিয়েট ঘটে যাওয়া ঘটনায় নিজেদের দোষী ভাবতে থাকবে আর নিজেদের প্রবোধ দেবে
- "
যদি ওকে সাথে নিয়ে যেতাম- ওকে একা রুমে রেখে যাওয়া ঠিক হয়নি- ফিরে পেলে এমন ভুল আর হবে না..." চোর গেলে বুদ্ধি বাড়ে। অসতর্কভাবে রাখা জিনিসপত্র চুরি হবার পরে গেরস্ত ভাবে- হয়তো ওই রকম করে রাখলে চুরি হতোনা, অমন কাজটা না করলেই মালগুলো চুরির হাত থেকে বাঁচানো যেত। - এমন রোগে ভুগতে থাকা আতঙ্কিত ত্রস্ত রঞ্জন-জুলিয়েট কে আরও ক' ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে তাদের পিঠে ঠেকানো পিস্তলের নল। সংশয় কাটিয়ে তারা নিশ্চিত হবে যে- সান্তস দুষ্কৃতিকারীদের দ্বারা অপহৃত। এবং তারা এখন ওদেরও পটল তুলবে। হায়রে, যেখানে এখন পটল ভাজা মেখে জম্পেশ রাতের খাবার হতো- সেখানে পটল তুলতে ব্যস্ত থাকতে হবে অগৌরবে! কয়েক সেকেন্ডে তারা নিজের কৃতকর্মে চূড়ান্ত দোষ স্বীকার করে স্বতিরস্কার করবে। আর প্রতিজ্ঞা করবে - এই বিপদ মুক্তি পাক শুধু, কখনোই আর বাবুকে একা বাসায় রেখে যাবো না । ঠিক তখনি সান্তসের আসল চেহারা দেখবে তার দুনিয়ার সব অদ্ভুত ও চমকপ্রদ খেলনায় বোঝাই এই কিড হাউজে দাড়িয়ে পিস্তলটি মুঠোয় পুড়ে ভাবছিল সান্তস।
মা জুলিয়েটের আজ ছুটির দিন , তাই ওকে ঘুরাতে নিয়ে এলো শারজাহ সিটি সেন্টার। ভেবে সান্তস আরেকবার তৃপ্ত রঙের হাসি ভাসাল মুখে। ও মুখেই পাশ ফিরে দেখে পাশের মহিলাটি তাঁর আম্মু নয়।যাকে নির্ভর করে সে নিশ্চিন্ত মনে খেলনা পিস্তলটি ঘুরিয়ে ঘারিয়ে দেখে কল্পনার জগত সৃষ্টি করছিল।জুলিয়েটের সাথে হাটতে হাটতে কখন যে সে খেলনার দোকানে ঢুকে পড়েছে, বুঝতেই পারেনি; সাথে জুলিয়েট ঢুকেনি। এতক্ষণ দাড়িয়ে থাকা খেলনার দোকান, বিভিন্ন রঙের বাতিগুলো মুহূর্তে কেমন অচেনা আর তীক্ষ্ণ হয়ে উঠল। কান দুটো বন্ধ হয়ে আসছে, শব্দগুলো অদ্ভুত আকার ধারণ করে চোখে একটা আবছা চশমা খাবলে ধরেছে তার। থমকে থাকা ভাব নিয়ে ঝিম ধরা পায়ে সে এগিয়ে চৌদিকে তাকাল। কোথাও তার মাকে দেখা যাচ্ছে না। শারজাহ সিটি সেন্টারে হাজার লোকজন আসে। অসংখ্য ফিলিপিনোও আসে যাদের সবাইকে তার মায়ের মতো লাগে; কিন্তু কেউ তাঁর মা নয়- এই ভেবে তার মাথার ভেতর জল ঘোলা হতে লাগল। ক্রমেই সে কাঁদো কাঁদো হয়ে এদিক ওদিক দৌড়াতে লাগল। সে হারিয়ে গেছে ! তার আব্বু আম্মুর কাছ থেকে অনেক দূরে সে , কম করে হলেও দুই পৃথিবী দূরে- হাঁটলে যে পথ শেষ হবে না। তাই সে দৌড়াচ্ছে। উদ্দেশ্যহীন ছুট আর কান্নায় কৌতূহলি মানুষজন " কী হয়েছে?" জানতে চাচ্ছে চোখের ভাষায়। এমতাবস্থায় খপ করে কেউ একজন তার হাত ধরে ফেলে। ক্যারিফরের বিজ্ঞপ্তি মাইকে কিছুক্ষণ পরপর ফিলিফিনো কর্মী অস্পষ্ট ইংলিশে বলে যাচ্ছে 
- উয়ি'ভ গট আ ফেসলেস কিড নেমড সান্তস। ইফ এনিওয়ান কেন গিভ আপ্রপ্রাইট এভিডেনচ, কেন টেক হিম। ক্যারিফরের সারভিচ সেলে দাড়িয়ে আছে সান্তস কান্নায় ক্লান্ত মুখ। টি- শার্টের হাতা দিয়ে ঘষে চোখ আর নাকের পানি মুচ্ছে। একজন বাংলাদেশি তাকে ঠিকানা বৃত্তান্ত জিজ্ঞেস করছে। কন্টাক্ট ওয়ে জানতে চাচ্ছে; কিন্তু সে কিছুই বলছেনা। তার কাছে এই জায়গাটি গহীন জনহীন জঙ্গল লাগছিল। যার ভূমিটা কাদা-জল আর স্যাঁতস্যাঁতে। চারদিকে প্রচণ্ড ঠান্ডা। এমন ঠান্ডায় শুধু মায়ের উষ্ণ আদর প্রয়োজন। সে ভাবতে লাগল আম্মুর আদরের কথা। ক্লান্ত- শ্রান্ত জুলিয়েট ঘরে এলে সান্তস তাকে জড়িয়ে ধরত। আর বলত-

-
হোয়াট বট ফর মি আম্মু তাকে জড়িয়ে কোলে নিয়ে ছোট্ট গালে চুমু এঁকে বলত

-
মাই ডিয়ার বয় ! আই'ভ বট আ ডিফারেন্ট টাইপ চকলেট ফর ইউ।  কিচেনে রান্নারত মাকে সারাক্ষন জ্বালাত আর লাফিয়ে লাফিয়ে বলত 
- হোয়াট আর ইউ কুকিং, ,হোয়াট আর ইউ কুকিং ? আই'ল সি। 
ছয় বছরের সান্তস মেঝেতে দাড়িয়ে রান্না দেখার মতো লম্বা হয়নি, তাই জুলিয়েট ছোট টুলের উপর দাড় করিয়ে দেখাত তার রান্না, কতক্ষণ পরপর একেকটা লবিস্তার ভাঁজা সান্তসের মুখে পুড়ে দিত।  কান্নার বায়ু বেলুনের মতো পেট ফুলিয়ে বুকের উপর হাতির কদম ফেলল। গলাটা যেন ফেটে বেরুবে সেই বায়ু, অমনি সে মুখ দিয়ে নির্গমন করে দিলো কান্নার বাজ। বিব্রত স্টাফরা ওই বাজের উৎস খুঁজে পাওয়ার পূর্বেই সে দিলো ভোঁ দৌড়। পাগলের ভঙ্গিতে চারপাশ তাকিয়ে জুলিয়েটকে খুঁজচ্ছে। পিচ্ছিল মেঝেতে বার কয় পরে গিয়ে হাঁটুতে রক্তারক্তি। কিন্তু সেদিকে তার কোনো খেয়াল নেই। খুঁজতে খুঁজতে আবার কল্পনায় তার আব্বুর কোলে গিয়ে পড়ল।  প্রতিদিন বাপ-বেটা একসাথে গোসল করত। দুষ্টুমি -পানি ছুড়াছুড়ি- হাসাহাসি- আর তুমুল চিৎকারে বাড়িটা যেন উঠে যেত শুন্যে। রঞ্জন শাওয়ারের নিচে গা ভেজাতে ব্যস্ত যখন, সান্তস একটানে তার তোয়ালে খুলে নিতেই জমত আবার যুদ্ধ। গোসল শেষে গা মুছে সান্তস ভদ্রজনের মতো বাথরুম ত্যাগ করবে,এমন সময় রঞ্জন এক গাদা সোপফোম ওর শরীরে মাখিয়ে দিতেই সান্তস রেগে মেগে সিংহের মতো রঞ্জন-হরিণের উপর ঝাঁপিয়ে পড়তো।  এই ভাবনাগুলো ক্রমেই তাকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করছে। এই মুহূর্তে খুব করে চাচ্ছে আবার সেই সময়গুলোতে ফিরে যেতে। আম্মুর সেই জড়াজড়ি মাখা চুমু- নাক ঘষাঘষি। আব্বুর সাথে দাপাদাপি - তা যতো স্বল্প সময়ের জন্যই হোক-না কেন, তাই তো তার আধি- অরন্যের জোনাকি।