তৃতীয়নয়ন
অ
নু প ম দা শ শ র্মা
তখন সবে
একটা পাত শেষ হয়েছে। নিমন্ত্রিতের ভীড় বেশ জমেছে। অজস্র কচকচানি, হাসি উচ্ছাসের
মধ্যেই হঠাৎ বিকট বিলাপ চিৎকার। থতমত চোখগুলো সহসা স্থিমিত। হুড়মুড় করে বেশ কয়েকজন
দৌড়ে ঢুকলো ঠাম্মার ঘরে। ঠাম্মা দেয়ালে পিঠ রেখে বসে থরথর করে কাঁপছে। হাতের মুঠোয়
ভেলভেট কাপড়ের টুকরো। একেবারে ক্লাস
ওয়ানের বন্ধু সহপাঠি গোপালের নিমন্ত্রণ ফেরানোর প্রশ্নই ছিল না দেবলের । গোপালের
ছেলের অন্নপ্রাশন। বৃদ্ধ বাবা, মা, স্ত্রী, পুত্র আর অশীতিপর
বৃদ্ধা ঠাকুমা বিলাসীবালা। এই
নিপাট সংসারে আরো দুজন অতিথি পরমানন্দে পরিবারে আছেন, চল্লিশোর্ধ
শ্রীকান্ত ঘোষ এবং তাঁর মা হারা সন্তান কার্তিক। গোপাল বলেছিল, শ্রীকান্তকাকু অসাধারণ
কবিতা লেখেন, কিন্তু প্রচার বিমুখ, খানিকটা আর্থিক অভাব
অন্যতম কারণ। একটা
কাপড়ের দোকানে হিসেব রাখা কাজ ওঁর। এছাড়া দুটো প্রাইভেট টিউশন, ব্যাস। অথচ ওঁর ছেলে
কার্তিক চরম বকাটে, শাসনবিহীন অদম্য কৈশোর চুরি, পকেটমারিতে দিব্যি
নাম কুড়িয়েছে। শ্রী ঘরে বার দুয়েক কাটিয়ে এসেছে। আর বন্ধুপুত্র শ্রীকান্ত বাবা'র কোন এক
কৃতজ্ঞতাজনিত পূন্যলাভে ঠাঁই পেয়েছে সংসারে। ঠাম্মাকে
ধরে ধরে বিছানায় বসাল গোপাল। - কি হয়েছে বলতো? ঠাম্মা ধরা ধরা গলায়
জানাল, আমার
সোনার চেনটা নেই জরদা কৌটয় রে। 'সে কি ?' গোপাল আঁতকে উঠল।
ইতিমধ্যে
ভীড় বেড়েছে ঘরে। গোপালের বাবা অসিত সেন বললেন, থানায় ফোন কর। 'স্থানীয় থানা থেকে এলেন এ.সি. কল্যান সামন্ত। আদ্যোপান্ত
শুনে তাকালেন অসিত সেনের মুখে, 'মিঃ সেন বাড়িতে এত
অতিথি, বড্ড
কঠিন হয়ে গেল দেখছি।' অনেকের সাথে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গেল সন্ধ্যে থেকে
কার্তিক বেপাত্তা। অথচ একটিও কাজের ভার তাকে দেওয়া হয় নি। 'কার্তিককে ধরা হল মিনিট পাঁচ বাদেই, বাড়ির পাশে একটি
পুকুরের ধারে বসে বিড়ি ফুঁকছিল। মিঃ সামন্ত কাঁধ ধরে ঝাঁকুনি দিতেই কার্তিক চেঁচাল
আমি কিছু করিনি কোথাও, মাইরি বলছি। ঠাস করে একটা থাপ্পড় সাথে সাথে বাঁ গালে। আবার
থানার লক-আপ। জীপে উঠতে উঠতে
সামন্ত বললেন, দেখছি প্যাঁদানিতে মুখ খোলে কি না। ওখানেই দাঁড়ান দেবল
একঝলক দেখল শ্রীকান্ত তখন ভীড়ে মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে, হয়ত একটু আগেই
ডায়েরিতে লিখছিল, ডান হাতের মধ্যমায় কালির ছোপ। “চলুন, এবার ফেরা যাক”। দেবল
ঘুরল। বাড়িতে আনন্দ উৎসব হঠাৎ ঠান্ডা। “চিন্তা
করিস না, হার বেশিদুর যায় নি। ফেরত আসবেই, চলি”। গোপালের কাঁধে আলতো হাত রেখে দেবল বাইরে বেরিয়ে এল।
বাড়ি ফিরে
স্বস্তি মোটেই আসছিল না দেবলের । আবার বেরল।
আর্মহাস্ট স্ট্রিট কলেজ স্ট্রিট বেশি দূর নয়। দেবল ধীরে ধীরে হাঁটা শুরু করল।
মেডিকেল কলেজের মূল ফটকের সামনে যেতে যেতে হঠাৎ চোখ আটকে গেল দেবলের। কি আশ্চর্য!
শ্রীকান্ত এখানে কেন ? একটা বিড়ি সিগারেট দোকানের সামনে ঝোলান দড়ি থেকে আগুনে
সিগারেটে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে শ্রীকান্ত দ্রুত চলন্ত বাসে উঠে পড়ল। দেবল মোবাইলে ধরল
গোপালকে।“শ্রীকান্তকাকু এখন
কি করছে জানাতো”।
“কেন
বলত ? সে
বাড়িতে নেই। একটা ডায়েরী নিয়ে বেরিয়ে গেছে অনেকক্ষণ”।
দেবল এবার এগিয়ে গেল সেই সিগারেট দোকানে। উঁচু গুমটি
দোকানের উপর পান চিবানো নীচু হল।
- আজ্ঞে, বলুন।
- একটু আগে যে লোকটি
সিগারেট ধরাল এখানে নাম জানেন ? নাম
বলতেই দেবলের ভ্রু কুঁচকে গেল, পাশাপাশি জেনে নিল
কোন সময়ে উনি আসেন।
পরেরদিন প্রায় একই সময়ে দেবল হাজির ওই দোকানের একটু দূরে।
ঠিক একইভাবে সিগারেট ধরিয়ে হাঁটতে দেখেই দেবল পিছু নিল। দেবল দেখল শ্রীকান্ত বেশ
টানটান হয়ে একটু জোরেই হেঁটে দুটো দোকান ছাড়িয়ে পাশের সরু গলিতে ঢুকে পড়ল। দেবল
পিছন পিছন ঢুকে দেখল দোতলা ভাঙ্গাচোরা একটি বাড়ি। নীচে পাশাপাশি তিনটি ঘর, চার কোণার উঠোন বড়ই
পিচ্ছিল। শ্রীকান্ত কোথায় গেল
ভেবে ঠিক করার আগেই ভুস করে একটি লোক পাশে দাঁড়িয়ে।
- ব্রজেন বাবু আজ আর
বেরোবেন না, আপনি কাল আসুন। দেবল যেন অবাক হল, ' অ, তা ব্রজেনবাবুর যেটা
দেবার কথা ছিল আমায়?
- আচ্ছা, প্যাকেট রেডি আছে
কাল নেবেন।
- একবার আনো না
প্যাকেট, আজকের মালটা দেখি একবার। দেবলের সুর নরম। লোকটি পিছু ফিরে
চট করে পিছনের খোলা ঘরে ঢুকে একটা ভাঁজ করা না আটকান প্যাকেট নিয়ে এসে দেবলের
সামনে ভাঁজ খুলতেই দেবলের তীক্ষ্ন চোখে পড়ে গেল 'চট্টগ্রাম' লেখা ঠিকানার মধ্যে।
ভেতরে দুটো ডায়েরী, পাতা ওল্টাতে বুঝল শ্রীকান্তের কবিতা। তাহলে শ্রীকান্ত
এখানে ব্রজেন বাবু!
- আচ্ছা , ঠিক আছে । দেবল
প্যাকেট ফিরিয়ে দিয়ে দুটো দশ টাকা হাতে গুঁজে দিয়ে বলল, আমি আজ এসেছি জানিও
না কেমন। পরদিন দেবল গোপালদের
বাড়ি গেল। "শোন, কাকুর সাথে একটু গল্প করব। অসিত
সেন সোফায় বসলেন, পাশের চেয়ারে দেবল আর গোপাল।
- শ্রীকান্তকাকুর
সম্পর্কে মানে আপনাদের পরিবারে ওঁর..। হাত তুলে থামিয়ে দিয়ে একটু চুপ থেকে শুরু
করলেন অসিত সেন।
শিবাশিষ ছিল আমার ছেলেবেলার অন্তরঙ্গ বন্ধু। অনেক ভাল গুনের
মধ্যে বদ গুন ছিল অতিরিক্ত মহিলাসঙ্গ লোভ। একদিন খবর এল সে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে
একটি যুবতীকে নিয়ে, খবর এল কদিন পর সেই যুবতীকে বিয়ে করে রয়েছে বেহালায় ভাড়া
বাড়িতে। বছর দেড়েক আর কোন খবর নেই, ওকে প্রায় ভুলতেই
বসেছি হঠাৎ একদিন এক বর্ষার রাতে তোমার কাকিমা আমাকে ঠেলে তুললো ঘুম থেকে। বাইরের
দরজায় কেউ জোরে জোরে কড়া নাড়ছে। ' কে ?' জিজ্ঞাসা করতে ভারী
গলা এল, আমি শিবু দরজা খোল তাড়াতাড়ি। অবাক হলাম, শিবাশিষ এত রাতে !
- কি দরকার এত রাতে ? ভেসে এল, 'আগে দরজা খোল
দাঁড়াতে পারছি না জলের ঝাপটায়। দরজা খুলতেই হুড়মুড়
করে সে ঘরে ঢুকল। মাথা বেয়ে ঝরঝর করে জল গড়াচ্ছে, তাঁর দুহাতে আঁকড়ে
ধরা পলিথিন মোড়া একটি শিশু তিন কি চার মাসের। আমরা হতভম্ব কি বলব ভেবে পাচ্ছি না
দেখে শিশুটিকে সে বিছানায় শুইয়ে দিল। তারপর শিবুর জলদগম্ভীর গলা ফেটে পড়ল কান্নায়।
দুহাত জড়ো করে বলল, আমার একমাত্র সন্তান, তোদেরকেই দিয়ে গেলাম, ওকে বাঁচা তোরা ওর
মা আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। আমার মাথা ঠিক নেই। আমরা কিছু বলবার
আগেই প্রায় দৌড়ে ঘর ছেড়ে বৃষ্টিতে মিশে গেল শিবু। শ্রীকান্ত নাম তোমার কাকীমার
দেওয়া। দেবল আবার জিজ্ঞাসু, কোনদিন বাবা ছেলের
সাক্ষাৎ হয় নি?
- হয়েছে, বহু বছর পর। একদিন শীতের সন্ধ্যায়, শ্রীকান্ত তখন যুবক। একমুখ দাড়ির ভেতর শিবুকে চিনতে আমার ভুল হয়নি। শ্রীকান্ত জানত তাঁর অতীত তাই সহজেই গল্পে মেতে গেল শিবুর সাথে। আমি একটু বাইরে বেরিয়ে যখন ফিরলাম দোকান থেকে সে চলে গেছে আর আসেনি কোনদিনই। শ্রীকান্তের স্ত্রী কার্তিকের জন্মের সাথে সাথেই গত হয়েছিলেন।
- হয়েছে, বহু বছর পর। একদিন শীতের সন্ধ্যায়, শ্রীকান্ত তখন যুবক। একমুখ দাড়ির ভেতর শিবুকে চিনতে আমার ভুল হয়নি। শ্রীকান্ত জানত তাঁর অতীত তাই সহজেই গল্পে মেতে গেল শিবুর সাথে। আমি একটু বাইরে বেরিয়ে যখন ফিরলাম দোকান থেকে সে চলে গেছে আর আসেনি কোনদিনই। শ্রীকান্তের স্ত্রী কার্তিকের জন্মের সাথে সাথেই গত হয়েছিলেন।
- বেশ। শ্রীকান্তকাকুর
ঘর টা একবার দেখতে পারি?
- শ্রীকান্ত ঘরে তালা
দিয়ে টিউশন করতে গেছে, যদিও আরেকটি চাবি থাকেই আমার কাছে ।
দেবল ঘরে ঢুকে তাকে সাজান এক একটা ডায়েরী খুলে কিছু পাতায়
চোখ বোলাল। বেশ কিছু ম্যাগাজিন, দেশ পত্রিকা ঘাটতে
ঘাটতে একটা পাতায় চোখ আটকে গেল। নিজের পকেট থেকে ছোট নোট প্যাডে লিখে নিল কিছু
দ্রুত।
পরের দিন। সকাল দশটা। দেবল হাজির কলকাতা কর্পোরেশনের মূল
বিল্ডিংয়ে। আধঘন্টা পরে যখন বেরিয়ে এল দেবলের মুখে প্রাক শরতের নীল আকাশ ঝকমক
করছে। বাড়ি ফিরে মিনিট দশেক কথা হল ফোনে পুলিশ অফিসার সামন্তের সাথে। আর একটি ফোন, গোপালকে। 'সন্ধ্যের আকাশ এখন ভেজা তুলোর জল ঝড়াচ্ছে মাঝে মাঝে। ভাদরের
অসময়ের খাবলা বৃষ্টি কিছুটা হলেও বাইরে মানুষজন কমিয়েছে। দেবল এখন গোপালের বাড়িতে।
আজ শ্রীকান্তের টিউশন তাও তাঁকে বাড়িতেই থাকতে বলা হয়েছে।দুশ্চিন্তার মুখ নিয়ে
শ্রীকান্ত গালে হাত দিয়ে চেয়ারে বসে। তাঁর মুখোমুখি চেয়ারে বসে পরপর অসিত সেন, গোপাল, দেবল।
শ্রীকান্তের চোখে চোখ রেখেই দেবল বলল, কাকু কার্তিকের কাছ
থেকে হার এখনও পাওয়া যায় নি। যাকগে, নতুন কি লিখলেন
দেখান তো। 'হ্যাঁ দেখাচ্ছি।' শ্রীকান্ত উঠে তাক
থেকে একটি নতুন ডায়েরী নামাল। দেবল দেখল ডায়েরীর পাশে রাখা নতুন ডট পেন।
- এই ধরনের কলম কবে
থেকে ব্যবহার করছেন?
- না, মানে আগের কলমটার
প্যাঁচ কেটে যাওয়াতে...
- অ,
তা আগের কলমেটা দেখান দেখি, প্যাঁচ কেমন কাটলো। শ্রীকান্ত একটু ভেবে
ড্রয়ার থেকে ভাঙ্গা কালি কলম বের করে দিল দেবলের হাতে।
- এটাই আপনার প্রিয় কলম, এভাবে প্যাঁচ কাটলো? শ্রীকান্ত
মাথা নাড়ল, পুরোনো হয়ে গেছে।
- না। পুরোনো হয় নি।
দেবলের চোয়াল কঠিন।
শ্রীকান্তের প্রশ্নভরা চোখকে সাক্ষী রেখে দেবল চেয়ার ছেড়ে
উঠে পড়ল, এগিয়ে গেল সামনের বই, ম্যাগাজিন সাজান
তাকে। বেশ কয়েকটি ম্যাগাজিনের ফাঁকে হাত ঢুকিয়ে বের করে আনল আরেকটি ঠিক একই দেখতে
কলম। প্যাঁচ কাটা। আর তখনি ঘরে ঢুকলেন অফিসার মিঃ সামন্ত।
- আসুন। ধরুন। দেবল
হাতে ধরা কলম বাড়াল। ' আস্তে আস্তে প্যাঁচ খুলুন।'
খুলতেই কলমের পেট
থেকে বেরিয়ে পড়ল ঠাম্মার একভরি হার! ঘরে এখন শুধুই নিঃশ্বাসের শব্দ। দেবল ফিরল
শ্রীকান্তর দিকে।
- তাহলে ব্রজেন বাবু, শেষ রক্ষা হল না।
মুহূর্তে শ্রীকান্তর মুখ পাংশুবর্ণ। অসিত সেন কিছু বুঝতে
পারছেন না।' কে ব্রজেন? ও আমাদের শ্রীকান্ত।' দেবল ঘুরল সামন্তর
দিকে। 'এবার নিয়ে আসুন।' মিঃ সামন্ত বাইরে
থেকে যাঁকে ঘরে আনলেন তাঁকে দেখে সবাই বিস্ময়ে হাঁ। ব্রজেন আর শ্রীকান্ত হুবহ এক
দেখতে। বিস্ময়ে গোপালের মুখ থেকে বেরল, টুইন !!
-এগজ্যাক্টলি। নাউ
আ্যরেস্ট হিম। তর্জনী ব্রজেনের দিকে।'
পরদিন। সময় সন্ধ্যা। শ্রীকান্তের ঘরে সবাই। কার্তিকও। ছাড়া
পেয়েছে।
- সবকিছু খুলে বল দেবল, কোন গন্ধ থাকলে
শ্রীকান্তকেও ছাড়ব না। অসিত সেন বললেন।
- খানিকটা আচমকাই
শ্রীকান্তকাকুকে দেখতে পাই কলেজ স্ট্রীটে, পিছু ধাওয়া করে
জানলাম সে ব্রজেন ওখানে। কারবার অনৈতিক। বিভিন্ন কবি লেখকের লেখা চুরি করে অন্যের
চাহিদামত প্রতিবেশী দেশে বিপননের বন্দোবস্ত করে মোটা কমিশনের বদলে। ধন্দ লাগল,
শ্রীকান্ত নিজেই যেখানে ভালো লিখিয়ে, এমন ধান্দার কি
দরকার ? হালকা তল্লাসী চালালাম এই ঘরে, ঘাঁটাঘাঁটিতে বেরিয়ে
পড়ল একটি ম্যাগাজিনের পাতার ভেতর এক ফালি কাগজ। একটি জন্মতারিখ সাল আর হাসপাতালের
নাম লাল কালিতে লেখা। গেলাম কলকাতা কর্পোরেশনের ডুপ্লিকেট বার্থ সার্টিফিকেট
সেকশানে। ওখানে সার্চ ফি জমা দিলে আ্যপ্লিক্যান্টকেই সার্চ করতে দেওয়া হয়। অতএব
মোটা রেজিস্টার এর নির্দিস্ট পাতায় সাল তারিখ সময় মেলাতেই জলের মত তরল হয়ে গেল
ব্রজেনের অস্তিত্ব।
যমজ পুত্র
সন্তান প্রসব করেছিলেন শিবাশিষের স্ত্রী। আমার ফোন পেয়েই কলেজ স্ট্রীটের বাড়ি থেকে
উদ্ধার করেছেন শ্রীকান্তকে সামন্তবাবু। পড়েছিল মুখ বাঁধা অবস্থায়।
- শ্রীকান্তকাকু
ব্রজেনকে কবে থেকে চিনতেন? গোপালের প্রশ্ন।
- মাস দুয়েকের সাক্ষাৎ
তবে ব্রজেনের অস্তিত্বের খোঁজ পেয়েছেন বহু আগেই, বাবার সাথে প্রথম
সাক্ষাৎ এর দিন। দুই মাস আগে
কলেজ স্ট্রীটে দুজন মুখোমুখি হতে নিজেদেরকে চিনে বুঝে নেয়। ব্রজেন বইপাড়ায় চেনা
মুখ। শ্রীকান্ত ধরেছিল তাঁর লেখা প্রকাশের জন্য কিন্তু জানতনা ব্রজেনের কুকর্ম।
ব্রজেনের হাতে শ্রীকান্তের ডায়েরী আসতেই বদমাইশি মাথায় চেপে বসে। পার্শ্ব অনুচরদের
সাহায্যে শ্রীকান্তকে আটকে রাখে ঐ বাড়িতে। আর নিজে শ্রীকান্ত সেজে চলে আসে এই
বাড়িতে।
- তার মানে হার চুরি
করেছিল ব্রজেন! অসিত সেন ধাতস্থ অনেকটাই।
- ঠিক তাই। কার্তিককে
থানায় নিয়ে যাবার সময় শ্রীকান্তের ভাবলশহীন মুখটা আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলাম
না। আচ্ছা এবার উঠতে হবে, রাত হচ্ছে বেশ। দেবল
চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল।
- তাহলে শ্রীকান্তের
একটাই অপরাধ ব্রজেনের ব্যাপারে না জানানো, তাই তো? অসিত সেনের চোখ
দেবলের দিকে। সোজা
টানটান দাঁড়ান দেবল ফিরল শ্রীকান্তর নীচু মুখের দিকে।
- আমরা জেনেছি চুরি যার মানে সে চুরি করতে অসমর্থ হলেও আদতে
চোর ই। হার চুরি করার পরিকল্পনা শ্রীকান্তর মস্তিস্ক প্রসূত। চলি এবার। শুভ রাত। 'দেবল দরজা খুলে
বেরিয়ে গেল সবার একরাশ মুগ্ধতা
ছড়িয়ে।
অব্যক্ত
“বালিকা মুন্নি এখন শ্রীমতি মন্দোদরী। বিবাহোত্তর জীবনে খুব
সুন্দর করে মানিয়ে চলা, মিথ্যে কথা বলা রপ্ত করেছেন শ্রীমতি । রান্নাঘরে গিয়ে আর হাতে
ফোস্কা ফেলেন না তিনি। ভালোই রাঁধতে জানেন। রাঁধতে রাঁধতে খোঁপাটাও দিব্যি বাঁধতে জানেন। সাদাকালো কিম্বা রঙ্গীন,পরনের শাড়িটির ভাঁজের ভেতর
নারী চরিত্রের চৌষট্টি কলা লুকিয়ে রেখে রাঁধাবাড়া, চলাফেরা, সবকাজই অনায়াসে করতে পারেন“ ।
নারী চরিত্রের চৌষট্টি কলা লুকিয়ে রেখে রাঁধাবাড়া, চলাফেরা, সবকাজই অনায়াসে করতে পারেন“ ।
এইটুকু লিখেই থামতে হল, পেনের রিফিল শেষ। নব্য লেখক দীপুর ব্যাগে অবশ্যি অন্য পেন আছে, কিন্তু
লেখার খাতা থেকে চোখ তুলতেই মেয়েটার সাথে চোখাচোখি হয়ে গেল।অবাক
কৌতুহলী দৃষ্টিতে এতক্ষণ ও দীপুর দিকেই তাকিয়ে ছিল, দীপু চোখ তুলে তাকাতেই অন্যদিনের মতই একটু ঘুরে বসে মুগ্ধ
দৃষ্টিতে গঙ্গার দিকে
তাকিয়ে রইল। দীপু জানে, আর
একবারও ও এদিকে তাকাবে না। মনে হয় দীপুর মত ওরও
বোধহয় পানিহাটির “বারো
শিবমন্দির” ঘাটটা খুব পছন্দের।
দীপুদের বাড়ীর ঠিক উল্টোদিকে যে নতুন
বিল্ডিংটা উঠেছে, তার তিনতলায় থাকেন
অবনীবাবু, মেয়েটি ওনার ভাগ্নী।দীপুদের কলেজেই
পড়ে।দীপু ফাইনাল ইয়ার আর
ইন্দ্রানী মানে এই মেয়েটি সবে ফার্স্ট ইয়ার। অবনীবাবুর একটিই মেয়ে, কঙ্কনা
।দীপুর ক্লাসমেট।সে এখন চুটিয়ে প্রেম করছে পাড়ার উঠতি হিরো
স্যান্ডির সাথে।প্রেম পাড়ার সবাইকে দেখিয়ে করলেও বাড়ীতে লুকাতে হয়, তাই
বোধহয় রোজ বিকালে পিসতুতো বোনটিকে সাথে করে গঙ্গার হাওয়া খাবার নাম করে আসে, এসেই স্যান্ডির হিরো হন্ডাটিতে সওয়ার হয়ে ঘুরতে বেড়িয়ে যায়,যতক্ষণ
না দিদিটি ফেরত আসে ততক্ষণ বেচারী ইন্দ্রানী একা একা
ঘাটের পাশে বাঁধানো গাছগুলোর কোন একটায় বসে একমনে নদীর দিকে তাকিয়ে থাকে। গতকয়েক মাস এক রুটিন চলছে। দীপুও
রোজ এখানে আসে।ঘরে একগাদা লোকের মাঝে
স্থির হয়ে বসে লেখার উপায় আছে নাকি? এদিকে
পরপর কয়েকটি ছোটগল্পকয়েকটা লিটিল ম্যাগাজিন আর মাসিক পত্রিকায় প্রকাশ হবার পর
থেকেই দিনরাত্তির
মাথায় গল্পের প্লট কিলবিল করে। এই গঙ্গার ঘাটের খোলা পরিবেশে সেগুলোকে লেখার সাদা পাতায় মুক্তি দিতেই দীপুও রোজই
মোটামুটি বিকালের দিকটাতেই
এসে বসে। আজ কিন্তু ইন্দ্রানীর দিকে তাকিয়ে সহজে চোখ ফেরাতে পারছে
না দীপু।
আজ দোল। সকালে
বোধহয় খুব রঙ মেখেছিল তার গোলাপী আভা এখনও মোছেনি কপালের,গালের ওপর থেকে।চুলে এখনও তেলের ছোঁওয়া পড়েনি বোধহয়। আলতো হাত খোঁপার বাঁধন এড়িয়ে চুলের
গুছিগুলো হাওয়ার ডাকে সাড়া দিয়ে আপনমনে খেলছে,নাচছে। কঙ্কনার মত সুন্দরী নয় ইন্দ্রানী,তবু শালীনতা মেশানো একটা আলগা
শ্রী মেয়েটাকে মেয়েটাকে অন্যরকম আকর্ষণীয়য করে তুলেছে। দীপুর তরুণ হৃদয় তার মনের সবটুকু ভালোলাগা দিয়ে মুহূর্তটাকে ধরে
রাখতে চাইছে। ঐ বাসন্তী হলুদ ছাপা শাড়ী,ঐ গালে হাত দিয়ে আনমনে বসে থাকা,ঐ অস্তগামী সূর্য্যের আলোকে সারা গায়ে মেখে উজ্জ্বল হয়ে ওঠা,সব আজ দীপুর চোখে অসম্ভব
সুন্দর লাগছে। হঠাৎই
ভালোলাগায় ছন্দপতন। স্যান্ডির বাইকটা বীভৎস যান্ত্রিক আওয়াজ তুলে ইন্দ্রানীর পাশে এসে থামলো। মৃদু
হাসিমুখে উঠে দাঁড়ালো ইন্দ্রানী, কঙ্কনার
সাথে কিছু একটা কথা বলে বাইকটা ঘোরালো স্যান্ডি, দু’বোনেও পা বাড়ালো
বাড়ীর দিকে। সামনের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল সুমন। স্যান্ডির একদা সাকরেদ। ওদের দেখে হেসে হাত নাড়লো। কি মনে করে হঠাৎ
স্যান্ডি বললো, “এই যে, দোলের দিনেও একা কেন বস ? আমার হবু
শালী ইন্দ্রানীকে দেখছিস তো? প্রেম
করবি তো বল নাম্বার লাগিয়ে দিই”। একঝলক ইন্দ্রানীকে মাথা থেকে পা অবধি জরিপ করে সুমনও
হালকাসুরে জবাব দিল, “না বস,আমি তো অলরেডি এনগেজড ।পরে কখনও..” বোধহয়
ওর স্থূল রসিকতায় অথবা জবাবের ভঙ্গীতে হো হো করে একসাথে হেসে উঠলো স্যান্ডি আর কঙ্কনা। ইন্দ্রানী হাসিমুখটা মুহূর্তে
অপমানে কালো হয়ে গেল। চকিতে
তাকাল দীপুর দিকে,কান্নার ফোঁটা গড়িয়ে পড়ল গাল বেয়ে,অন্য কেউ
দেখার আগে চট করে আঁচলে মুছে নিয়ে হাঁটার গতিটা একটু বাড়িয়ে দিল।
সেদিনের পর আর দেখা হয়নি দুজনের। গঙ্গার
ঘাটে আর আসেনি ইন্দ্রানী, কলেজেও দেখা হয়নি। বোধহয় মামার আশ্রয় ছেড়ে বাড়ী ফিরে গেছিল, তবে দীপুর মন থেকে
সেদিনের ভালোলাগাটুকু নিয়ে যেতে পারে নি। তারপরে
গঙ্গার বুক বেয়ে অনেক জল বয়ে গেছে, অনেকগুলো
দিনরাত পার করে এসে সেদিনের
দীপু আজ ঘোরতর সংসারী। গল্পলেখার নেশাটা হারিয়ে ফেললেও ডায়েরী লেখার বদভ্যাসটা কিন্তু ছাড়তে পারেনি।
বাড়ীর সবাইকে নিয়ে পূজোর ছুটীতে বেড়াতে এসেছে কাশী,মথুরা,বৃন্দাবন।কন্ডাক্টেড টু্যর। দীপুর মায়ের আগ্রহটাই বেশী। সাতসক্কালে বাড়ীর সকলে পূজো দিতে পান্ডার
সাথে মন্দিরে গেলেও দীপু একা চলে এসেছে দশাশ্বমেধ
ঘাট।কত গল্প শনেছে,কত গল্পে
পড়েছে কিন্তু চোখে দেখা এই প্রথম।কত লোকের ভীড়,কথা,কত মুখ,কত হাঁটার ভঙ্গী,কত চাউনী, কত
কথকতা। দুচোখ ভরে খালি দেখে যাওয়া,দেখা তো
নয়, যেন চোখ দিয়ে গোগ্রাসে খাওয়া। লেখার জন্য হাতটা
নিসপিশ করে ওঠে। হঠাৎ চোখে পড়ে খনিকটা দূরে
ঘাটের সিঁড়িতে বসা এক সাদা শাড়ী পড়া মাঝবয়সী মহিলা এত লোকের ভীড়েও কেমন সবার থেকে আলাদা হয়ে আনমনে গালে হাত দিয়ে
একদৃষ্টিতে গঙ্গার দিকে তাকিয়ে আছেন।পাশে
স্তুপীকৃত জামাকাপড়। সঙ্গীসাথীরা বুঝি স্নানে
গেছেন।দৃশ্যটায় নতুনত্ব কিছু নেই। হঠাৎই
পৃথুলা এক মহিলা সিঁড়ি দিয়ে
নামতে গিয়ে কোনভাবে পড়ে গিয়ে জোরে চেঁচিয়ে কেঁদে উঠলেন। আশেপাশের লোক দৌড়ে এল। আওয়াজে
আকৃষ্ট হয়ে সাদা থান পড়া মহিলাও ঘাড়
ঘুরিয়ে তাকালেন। চোখাচোখি হল দীপুর সাথে। অচেনার ভঙ্গীতে লহমা মাত্র দীপুকে দেখে মহিলা চোখ সরিয়ে নিয়েও
হঠাৎ ছিলে ছেঁড়া ধনুকের মত চমকে উঠে ভালো
করে তাকালেন দীপুর দিকে,হাতে ধরা
ডায়েরীটার ওপর দিয়ে দৃষ্টিটা আবার
চোখে এসেই থামল। দীপুর অবাক চোখের দৃষ্টি অনুসরণ করে নিজের দিকে একপলক তাকিয়েই পাশে রাখা জামকাপড়ের গোছা সামলে ত্বড়িত পায়ে
সিঁড়ি বেয়ে লোকের ভীড়ে যেন বেমালুম মিশে গেলেন।
অজান্তেই অনেকক্ষণ আটকে রাখা
শ্বাসবায়ূটা দীর্ঘশ্বাস হয়ে বেরিয়ে এল। দীপুর
কলম লিখে নিল ওর মনের অব্যক্ত কথাগুলো। “প্রথম দেখাতেই মনে রঙ ধরিয়েছিলে ফাগের দিনের রঙীন বেশে , গোধূলীবেলায়, তবু মুখ
ফুটে কিছু বলতে পারিনি।আজ বিজয়ার প্রভাতে সামনে এলে শিউলী সাদা রঙে সেজে, অমল
আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে, আজও আমার
মনের কথা কিন্তু অব্যক্তই রয়ে গেল”।
স র দা র ফা রু ক
ছোট শহরটায় তখন খুব আলোচিত রবজেলের
ঘোড়া । স্বাস্হ্য ,সৌন্দর্য আর গতির অনেক উপমা তৈরী
হয়েছিলো এই ঘোড়াটিকে নিয়ে । রবজেল যখন তার লাল ঘোড়াটার পিঠে চেপে মুকুন্দপুর থেকে
শহরের দিকে আসতো ,তখন তাকে দেখে মনে হতো পঙ্খিরাজে
চড়ে সে রূপকথার জগৎ থেকে বেরিয়ে এসেছে । যদিও রবজেলের পেশা ছিলো বাপের মতোই ঘোড়ার
গাড়ির গাড়োয়ান ,তবু যখন সে গাড়ি চালাতো আর যখন সে
ঘোড়ার পিঠে চেপে ঘুরতো - এই দুইয়ের অনেক পার্থক্য ছিলো । গাড়ি চালানোর সময় তাকে
অন্য সব গাড়োয়ানদের মতো লাগলেও , ঘোড়ার পিঠে
চড়ে বেড়ানোর সময় তার চোখ মুখে অন্যরকম একটা দ্যুতি ,অন্যধরনের একটা অহংকার খেলা করতো ; মনে হতো সে যেন এক দিগ্বিজয়ী সেনাপতি । মাথায় বাঁধা
ছিন্ন গামছাটাকে মনে হতো শিরস্ত্রাণ ! তাগড়া ঘোড়াটাকে দেখে মনে হতো যেন যৌবনের
প্রতীক , লোকজন নির্ণিমেষে তাকিয়ে না থেকে
পারতোনা ।
মুকুন্দপুর থেকে শহরের দিকে আসতে প্রথমে একটা তিন রাস্তার
মোড় , লোকে বলতো তে’মণি । এই তে’মণিতেই ভাদু
বিশ্বাসের দোকান আর ছিদেম কামারের কামারশালা ।একটা বুড়ো অশত্থ গাছ ঘিরে সান
বাঁধানো বসবার জায়গাও ছিলো ।লোকজনের দুপুরবেলার বিশ্রাম আর বৈকালীন আড্ডার স্হান
।সন্ধ্যা নামলেই ঘরে ফেরা ,কারন তখনো এই শহরে বিদ্যুৎ আসেনি ,শুধু মাঝে মাঝে শোনা যেতো মুন্সিগঞ্জ
পর্যন্ত খুঁটি গাড়া হয়েছে ।
ছিদেম কামারের দোকানে তৈরী হতো
লাঙ্গলের ফলা ,গরুর গাড়ি আর ঘোড়ার গাড়ির চাকার
বেষ্টনি , হাসুয়া ,বঁটি । রেললাইনের পাত কেটে তার উপর হাতুড়ি
দিয়ে পিটাতে পিটাতে গান গাইতো ছিদেম - আমার সাধ মেটেনা লাঙল চইসে …!
হাঁপরের টানে আগুন ফণা ধরতো , আর হাতুড়ির ঘায়ে আতশবাজির মতো - নক্ষত্রের
মতো অজস্র স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে পড়তো চারপাশে ।
তে’মণির বাম
দিকের রাস্তাটা রেলস্টেশনের দিকে চলে গেছে আর সোজা রাস্তাটা বাজারের দিকে । রেলস্টেশনটা
ছিলো খুব জমজমাট , কেননা তখনো
বাস চলাচলের কোন রাস্তা তৈরী হয়নি । স্টেশনের দুদিকেই প্লাটফর্ম ,আর ওপর দিয়ে কাঠের ওভারব্রীজ ।অর্জুনের
চায়ের দোকানে ট্রেনের সময় হলে প্রচুুর ব্যস্ততা । অন্য সময় বেকার লোকজন কাঠের
বেঞ্চিতে বসে গুলতানি মেরে সময় কাটাতো ।কাঁচের বয়ামে রাখা থাকতো নানখাটাই (লোকে
নাংখাটাই বলতো ),কুকিজ ,লিলি বিস্কুট আর টোস্ট ।লোকজন চায়ের মধ্যে
বিস্কুট চুবিয়ে খেতে খেতে নানারকম গল্প করতো ।আইয়ুব খান থেকে শুরু করে শেখ মুজিব , ভাসানী নিয়ে তুমুল তর্ক জুড়লেও শেষমেষ
ক্লান্ত কুকুরের কান্নার মতো করে বলে উঠত -
কিডা দেশের রাজা হইল্যো তা দিয়ে আমাগোর কিহবে ? আমরা তো -ত্যাকুনও যা একুনও তাই ।
এসব কথার পর একটা বিষাদ ঘিরে ধরতো লোকজনকে ,কারো আর কিছু বলতে ইচ্ছে করতো না ।
কখনো কখনো আড্ডাধারীদের উৎসাহ ফিরিয়ে আনতে কেউ রূপছায়া
সিনেমায় দেখা সর্বশেষ সিনেমায় কবরী বা ববিতার সৌন্দর্য আর অভিনয় নিয়ে আলোচনা শুরু
করতো ।
- ববিতারে
দেখলি মনে হয় আকাশির পরী !
একজন বলতে না বলতেই আরেকজন প্রতিবাদ করে উঠতো -
আরে থো দিনি তোর ববিতা আর কবরী , সেদিনকের ছুড়ি !সুজাতার পাট দেখিছিস ? ওই যে কি এক বইয়ে -ধুর শালা মনে করতি
পারছিনে-ওইযে সুজাতার স্বামী তারে বৌ স্বীকার না কইরে তাড়ায়ে দিলো -তারপর সুজাতা
জোঙ্গলে যাইয়ে কাইন্দে কাইন্দে
গান বোলছে…..।
আরেকজন হয়তো তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে উঠলো -
কয়ডা বই দেখিছিস -এতো কতা বুলিস ? যেবার বই
দেখিছিস , নীলোর নাচ
দেখিছিস ? নীলোর নাচ দেখলি
ওইসব কান্নাকাটির পাট ভুইলি যাতিস ।
কেউ কেউ আবার খুব বাস্তববাদী ধরনের ,তাদের মতে এইসব নায়িকাদের নিয়ে আলোচনা
নিরর্থক , কারণ তাদেরকে
অন্য কিছু দূরে থাক - চোখের দেখাটাও দেখা সম্ভব না। সমাধান হিসাবে শহরের
দক্ষিণপ্রান্তে অবস্হিত নিষিদ্ধপল্লীতে রাবি বা ফতের ঘরে যাওয়াই ভালো ।নতুনদের
মধ্যে জাহানআরার নামও খুব শোনা যাচ্ছে ।কিন্তু তাদের পারিশ্রমিকের বিষয়টি উত্থপিত
হলেই আবার আড্ডায় শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়ে যেতো
- এতো টাকা কনে
পাবো , বাপ শালাতো জমিদারি রাইখে যাইনি !
সুবল শহরের একমাত্র ধোপা । কয়লার
উনুনে মেশিন গরম করে সারাদিন কাপড় ইস্ত্রি করেও তিন ছেলেমেয়ের সংসার চালাতে কষ্ট
হতো ।লোকজনের বাবুয়ানার শখ খুব , কিন্তু টাকা
দেয়ার বেলায় যতো মুচিগিরি !তারপর কয়লার জোগাড় করা ।লোকোমোটিভ ট্রেনের
ফায়ারম্যানদের পটিয়ে কয়লা পেতে হয় ।গোয়ালন্দ লোকাল এলেই দুই ছেলে দিলিপ আর নব ছুটে
যেতো । লাঠির আগায় নধর লাউ অথবা কুমড়া বেঁধে ইঞ্জিনরুমের দিয়ে এগিয়ে দিলে কিছুক্ষণ
পরে একটা মাঝারি গোছের কয়লার চাঙড় ফেলে দিতো ফায়ারম্যান ।দুয়েকজন আবার এতো হারামি
ছিলো - লাউটা ঠিকই নিয়েছে ,কিন্তু কয়লা আর ফেলেনা ।তারপর দেখা
যেতো শয়তানের বাচ্চাটা মাথা বাড়িয়ে দাঁত কেলিয়ে হাসছে ।
সুবল ধোপার আরেকটা সমস্যা ছিলো গাঁজার নেশা । তার ভাষায়
- রিশা উঠলি আর
হুশ থাকেনা- বউ, ছেইলে মেইয়ে কিছুই মোনে থাকেনা
-ভগমান গাছগাছড়ার মধ্যি এতো গুন দিয়েছে .. ।
একেকদিন নেশা করে মেঘের ভেতর নাকি ভগবানকেও দেখতে পেতো
সুবল !
- তুরা শালা কানা , ওই দ্যাখ শাদা মেঘটার উপর পা রেইখে ভগমান
দাঁড়িয়ে আছে , মুখি লম্বা লম্বা দাড়ি , দেখিছিস ,
দেখিছিস
?
রক্তবর্ণ চোখ নিয়ে ঘোর লাগা গলায় সুবল বলতো ।অনেকেই
তামাশা দেখতো ।কেউ কেউ ক্ষেপে গিয়ে বলতো , শালা মালাউনরে ঠাকুরির পুকুরি চুবো - রিশা
কইরে শালার মাতা গরম হইয়ে গেছে !
অভাবের দিন আর কাটেনা ।একদিন রেলের
ওয়াগন থেকে কিছু চাল সরায় সুবল । এসব তখন অনেকেই করতো , কিন্তু দুর্ভাগ্য সুবলের -ফুড গোডাউনের
সাহেবের হাতে ধরা পড়ে যায় হাতেনাতে ।সাহেব এমনিতে দয়ালু মানুষ- নামেই সাহেব । আসলে
তাঁরও বিরাট সংসারের বোঝা । তবু বিপদে আপদে অনেককেই ২/৪ সের চাল গম দিয়ে সাহায্য
করেন ।কিন্তু ডেমারেজের সিলিং থেকে মাল কম পড়লে তারও চাকরী নিয়ে টানাটানি পড়ে
।এবকমই এক সময়ে সুবলকে চুরি করতে দেখে ফুডের সাহেবের রাগ চরমে ওঠে । তিনি বাসার
সামনের পিটুলি গাছের সাথে সুবলকে বেঁধে পেটাতে থাকেন ।
খবর পেয়ে দিলিপ আর নব দূর থেকে চোখ মুছতে মুছতে বাবাকে
দেখে । কিছুক্ষণ পর সাহেবের রাগ পড়ে এলে নরম গলায় বলেন - আমাকে বললে পারতিস ….।
ছাড়া পেয়ে সুবল কারো সাথে কোন কথা
বলেনা । সোজা আবগারীর দোকানে গিয়ে দুই ভরি গাঁজা কেনে । কল্কেটা নিয়ে চলে যায়
রেলের গুমটি ঘরের দিকে ।কয়েকটা জোর টান দিতেই শরীরের ব্যথা বিষ কমে যেতে থাকে ।
পাখির পালকের মতো দেহটা হাল্কা হয়ে যায় ।একধরনের দিবা স্বপ্নের ভেতর লাঞ্ছনা ভুলে
যেতে যেতে অলীক দর্শনে দেখতে পায় - রবজেলের ঘোড়ার পিঠে চেপে সে টেন ডাউন ঝটিকা
এক্সপ্রেসের সাথে পাল্লা দিচ্ছে ।রেললাইনের সমান্তরাল বন্ডবিলের রাস্তায় ছুটতে ছুটতে শেয়াকুল ঝোপের কাঁটায় লাল ঘোড়ার পা গুলো রক্তাক্ত হয়ে যাচ্ছে
- তবু হ্রেষাধ্বনি তুলে ভগবানের দিকে -মেঘের দিকে ছুটে যাচ্ছে রবজেলের ঘোড়া ।
ছোট কাকিমা
ম ধু ছ ন্দা পা ল
[ গল্প না বলে লেখাটিকে স্মৃতি কথা বলাই ভালো, যার মধ্যে পাঠক হয়তো গল্পের কিছু উপাদান খুঁজে পেতে পারেন । একটা বিশাল বড় যৌথ পরিবারে জন্ম হওয়ার সুবাদে নানান চরিত্র দেখার সুযোগ হয়েছিল । এরা যে সকলেই বাড়ির লোক তা নয় , অনেক অনাত্মীয় , কর্মচারী , ইত্যাদিও আছে । প্রত্যেকের চরিত্রেরই কিছু না কিছু বৈশিষ্ট ছিল ,সেগুলো নিয়েই লেখার চেষ্টা করি ।]
ছোট কাকিমা
ম ধু ছ ন্দা পা ল
[ গল্প না বলে লেখাটিকে স্মৃতি কথা বলাই ভালো, যার মধ্যে পাঠক হয়তো গল্পের কিছু উপাদান খুঁজে পেতে পারেন । একটা বিশাল বড় যৌথ পরিবারে জন্ম হওয়ার সুবাদে নানান চরিত্র দেখার সুযোগ হয়েছিল । এরা যে সকলেই বাড়ির লোক তা নয় , অনেক অনাত্মীয় , কর্মচারী , ইত্যাদিও আছে । প্রত্যেকের চরিত্রেরই কিছু না কিছু বৈশিষ্ট ছিল ,সেগুলো নিয়েই লেখার চেষ্টা করি ।]
এবারে
ছোট কাকিমা । ছোটো কাকিমার সঙ্গে আমার যে কেমন সম্পর্ক ছিল ঠিক বলে বোঝানো যাবেনা । যখন থেকে
মনে পড়ে ছোটোকাকিমার কাছাকাছি নিজেকে দেখতে পাই । আমি ডাকতাম ছোটমা বা ছোটাইমা বলে আর ছোটকাকীমা আমায় ডাকতো মেমবুড়ি
।
কেমন দেখতে ছিল তখন কিছুই খেয়াল করিনি এখন
যখন ভাবি , মনে হয় বেশ লম্বা , ভালো স্বাস্থ্য, আর অনেক চুল
মাথায় । একটা বড় হাত খোঁপা করা থাকতো । খুব আমুদে , হাসিখুশী । দুপুরে যখন বিশ্রামের সময় তখন চুল খুলে দিতাম । কতকি করতাম চুল
নিয়ে । দুই বিনুনি ।
চারগুছির বিনুনি । পাশে সিঁথি কেটে চুল আঁচড়াতাম । কোনদিন কোন আপত্তি করেনি । হাতে একটা গল্পের
বই নিয়ে একমনে পড়ে যেত । শীতকালে ছাদে সতরঞ্চি কিংবা মাদুর পেতে জ্যাঠাইমা শুতো আরাম করে আর ছোটকাকীমা গল্পের বই পড়ে শোনাত । বেশির ভাগ বইই ছিল
আধ ছেঁড়া প্রবাসী কিংবা ভারতবর্ষ । এক
সময় এগুলো
আমাদের বাড়িতে নিয়মিত আসতো । তারপর সাত হাত ঘুরে ঘুরে তাদের অবস্থা তখন একেবারেই জীর্ণ । কিন্তু তাতে কিছু যেত
আসতোনা । সেই বই গুলো তারপর সকলের হাতে হাতে ঘুরত। শ্বশুর বাড়ি থেকে আসা দিদিদের
থেকে আমাদেরও ।
শীত যখন
কমে আসতো, ছাদে তখন আর
থাকেনা কেউ । দুপুরে আমরা ছোট কাকিমার ঘরের সামনের বারান্দায় লুডো খেলতে বসতাম । আমি , ছোড়দি , লালুদা আর ছোটকাকিমা । মনে আছে রোদ্দুর ঘুরতে ঘুরতে মুখে এসে পড়লে পাশের কাপড়
শুকোতে দেওয়ার তারে
একটা গামছা ঝুলিয়ে রোদ আটকানো হত । কতো কাজ যে করতো । সব সময়
ব্যাস্ত।
ছাদে বড়ি দিচ্ছে ক্যাম্পখাটের ওপর কাপড় পেতে । জ্যাঠাইমা আর
ছোটকাকিমা । দুদিন পর সেই বড়ি সুদ্ধু কাপড় বড়ি ভেতর দিকে রেখে জানলায় ঝুলিয়ে দেওয়া হত জানলার শিকের
সঙ্গে বেঁধে । ভালো করে শুকানর জন্যে । কি প্রাণশক্তি অবাক হয়ে ভাবি ।
লক্ষ্মী পুজোর জোগাড় করছে, গোছা গোছা লুচি রুটি বেলছে , অতিথি আপায়্যন করছে , বাড়ীতে বিয়ে হলে বরের সঙ্গে ঠাট্টা ইয়ার্কি করছে আর কতো বলবো !
মাঝে মাঝে আমাদের বলতো ফিস্ট করবি ? আমরা তো একপায়ে খাড়া । বলল চাঁদা তোল তাহলে ।
শুরু হোল বাড়ির বড়দের কাছ থেকে চাঁদা তোলা । যে যেমন পারছে দিচ্ছে । দু’আনা , চারআনা । যথেষ্ট সেই সময় । আমাদের বাড়ির সব চাইতে বড় দাদা লালুদা । জ্যাঠামনির বড় ছেলে । ছোটরা সকলে ভয় পেত । রাশভারি । আমাকে
ভালবাসত খুব । বৌদিও । যাই হোক দুপুরে লালুদার চেম্বার থেকে আসার
সময় হলেই আমাকে সকলে মিলে ঠেলে দিত চাঁদা চাইতে । লালুদা জিজ্ঞেস করতো কত দেবো ?
চারআনা / আটআনাই চাইতাম । সেই অনেক । একবার মনে আছে লালুদা জিজ্ঞেস করেছে কতো দেবো ? বললাম চার আনা । লালুদা
বলল ব্যাস ? বললাম
ত্তাহলে আটআনা দাও । লালুদা আবার বলল ব্যাস ?
আমিতো অবাক বললাম এক টাকা । লালুদা এবারেও বলল ব্যস ? আমার দৌড় ঐ খানেই শেষ । বললাম হ্যাঁ । টাকা পকেট থেকে বের করে আমার হাতে দিতেই আমিতো আমার দলের কাছে হাজির । ওমা , খুশী হবে কি ! সবাই মিলে বকুনি দিল আমায়, কেন আমি আরও চাইলামনা । আমার মোটেই ভালো লাগলোনা ব্যাপারটা । এই তো অনে্ আরও চাইব কেন?
কি রান্না হতো এখন আর মনে নেই । বোধহয় লুচি আলুরদম এই রকম কিছু হবে ।
যা যা লাগবে রান্নায় সব কিনে আনত আমাদের
দলের ছেলেরা । ছোটকাকিমাকে জিজ্ঞেস করে । তারপর দু’তলার চওড়া
বারান্দার এক কোনে ষ্টোভ জ্বালিয়ে ছোটকাকিমার তদারকিতে রান্না । কি যে মজা আর আনন্দ করে শালপাতায় খাওয়া হতো বলতে পারিনা । এদিকে
যেমন কলাপাতার চল আমাদের ওদিকে শালপাতার । কি
সুন্দর একটা গন্ধ পাওয়া যেত শালপাতার ।
মার কাছে শুনেছি ছোটোকাকিমা মার কাছ থেকে আমাকে আর ছোড়দিকে পিসিমার মারফৎ চেয়ে নিয়েছিল দেখা শোনা করার জন্যে । ছোট কাকিমার একমাত্র সন্তান আমাদের রাঙাদি আমার বড়দির থেকে বয়সে কিছু বড় । হয়তো ছোটদের নাড়াচাড়া করার শখ মেটেনি তাই । ছোড়দি মাকে ছাড়েনি । ও
মায়ের সঙ্গেই লেপ্টে থাকতো । ভোরবেলা
হাঁড়িতে করে চায়ের জল বসতো আর
আরেকটা হাঁড়িতে ছাঁকা হত । এই চা বরাবর ছোটকাকাকেই করতে দেখেছি । হয়তো অতখানি চা সামলাতে একজন বলিষ্ঠ মানুষের প্রয়োজন ছিল । তাই এই কাজটার ভার
হয়তো নিজের ওপর নিয়েছিল ছোটকাকা । এরকম অনেক ঘরোয়া কাজ করতে দেখেছি
ছোটকাকাকে । সেলাই মেসিন চালিয়ে সারা বাড়ীর লেপের ওয়াড় ,বালিশের ওয়াড় সেলাই
করতেও দেখেছি । যে কথা বলছিলার, চা করা হয়ে গেলে বাড়ীর কাজের লোক
থেকে আরম্ভ করে বাড়ীর
সদস্যরা সবাই জমা হতো আমাদের
বড়সড় রান্না ঘরে । ছোটকাকা সবাইকে চা পরিবেশন করতো ।
ততক্ষণে হয়তো রান্নার ঠাকুর এসে গেছে । এক বিরাট বড় কাঁসিতে আটা বের করে দিয়ে চা খেত ছোটকাকিমা ।
ঘুরে ঘুরে । বসার ফুরসত কই ? মনে পড়ে ঠাকুরকে আরও ভালো করে আটা ঠাসতে বলতো নাহলে লুচি নরম হবেনা । দিনে রাতে পঞ্চাশ জন করে খাওয়ার লোক । পিসিমা আর মা তরকারি কাটতো । রান্নার বালতির জলে ধুয়ে বড় বড় বারকোষে তুলে রাখতো । ঠাকুর ঘরের সামনের বারান্দায় হতো তরকারি কাটা । রান্নার ঠাকুরের সঙ্গে জ্যাঠাইমা আর ছোট কাকিমাও থাকতো রান্না ঘরে।
আমাদের
সকালের জলখাবার ছিল মোটামোটা আটার লুচি আর আলু পটলের বা আলু কুমড়োর, আর শীতকাল হলে আলু ফুলকপির
তরকারি । সারা বাড়ির লোকের জন্যে লুচি হতো অনেক । বেলে দিত
ছোটকাকিমা । তারপর সবাইয়ের নামে নামে গুছিয়ে রাখতো ।
আমাদের মানে ছোটদের জন্যে এক একটা বড় কাঁসার বগি থালায় চারজনের এক সঙ্গে আর বড়দের জন্যে পদ্মকাটা রেকাবিতে । সারাদিন
চরকির মতো ঘুরে ঘুরে কাজকরে যেত । বিকেলে স্কুল থেকে ফিরে কি খাব তাও ছোট কাকিমার জানা । আমি ভাত ভালবাসি ছোড়দি লুচি । আমার জন্যে মাঝে মাঝে আমার প্রিয় বাটি
চচ্চড়ি করে রাখতো । পুতুলের বিয়ের ঝক্কি
সামলে আমাদের আনন্দের
থলি উপুড় করে দিয়েছে । মর্নিংশোয়ে বাঙলা সিনেমা আসতো তাতেও আমাদের সঙ্গি করতো ছোট কাকিমা
।
অনেক ঋণ আমার ছোট কাকিমার কাছে
। মনে আঘাত দেওয়ার লোক তখনও ছিল , তেমন সময় প্রলেপ দিতেও সেই মা আর ছোট কাকিমা । ভোরবেলা সকলের
আগে উঠে শুদ্ধ কাপড় পরে ঠাকুর ঘরের কাজ দিয়ে দিন শুরু হত । আমি পায়ে পায়ে । আর রাতে বোধহয় রান্নাঘর বন্ধ করে সবার পরে ওপরে উঠে দিন শেষ হত ।
চিরকাল আমাদের সংসারের
কেন্দ্রবিন্দু আমাদের পিসিমার ডানহাত আর সবচেয়ে
ভরসার জায়গা
। পিসীমা চলে যাওয়ার পর শ্মশান যাত্রীরা রওয়ানা হওয়ার সময় ছোটকাকিমার হাহাকার করে কান্না আমি এখনও ভুলতে পারিনি । জীবনে সেই প্রথম ছোট কাকিমাকে কাঁদতে দেখেছিলাম ।
পরে আমি যখন সংসারী । মাঝে মাঝে এসে সহজে সংসার চালানোর জন্যে কতো টিপস
দিত । সবকটা কাজে
লেগেছে । রাঙাদি
একমাত্র সন্তান । শেষ বয়সে রাঙাদির কাছেই ছিল দুজনে ।
মাঝে মাঝে ফোন করে আসতে বলতো , বিশেষ করে ছোটকাকা । তখন আমাদের শান্তিমামাও থাকে রাঙাদির
বাড়ী । একদিন আমি গেছি দেখি ছোটকাকিমা বাড়ি নেই । শান্তিমামা বলল “ছোড়দিকে পাবি কোথায় ? পাড়ায় মেয়েরা একটা ফাস্টফুডের দোকান করেছে, সেখানে ওদের সাহায্য করতে যায় রোজ !”
তো এই ছিল আমার ছোটমা । সদা তৎপর । সবাইয়ের পাশে ।